পারিবারিক জীবনে অধীনস্ত খাদেমদের অধিকার
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ
ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল
আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা
আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র
মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
প্রাক-ইসলামিক এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে দাস-দাসী প্রচলন ছিল।
ইসলামের সুমহান শিক্ষায় মানুষের দাসত্বের শৃংখল থেকে মানবতা মুক্তি পেয়েছে।
বর্তমানে খাদেম বলতে পরিবারের মধ্যে বাসা-বাড়ির কাজের লোক, খেদমতগার ও
কর্মচারীগণকে বুঝায়। খাদিমগণ আমাদের মতই মানুষ হিসাবে
আমাদেরই অধীনে ন্যাস্ত থাকায় আমাদের উপর তাদের ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে। আমাদের সে
সব হক সম্পর্কে জানতে হবে এবং সচেতনতার সাথে হকসমূহ আদায় করতে হবে। যেমন-
খাদেমদের সাথে উত্তম
ব্যবহারঃ হযরত মা’রূর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে হযরত আবু’যর
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তখন তার পরনে ছিলো এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তার চাকরের পরনেও ছিলো ঠিক
একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাকে এই
ধরনের সমতার কারন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ একবার আমি এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা
সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আবু’যর, তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো বাতিল যুগের স্বভাব
রয়েছে। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায়
এবং নিজে যা পরে, তাকে তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য বেশী কষ্টকর। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে। - (সহীহ বুখারী)
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "আমি হযরত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ১০ বৎসর যাবৎ খেদমত করেছি, কিন্তু তিনি আমাকে কখনো উহ্ শব্দটিও বলেন নি, আর না কখনো বলেছেন যে, এটা কেন করছ বা ওটা কেন করনি।" -(বুখারী ও মুসলিম)
খাদেমদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করাঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দশ বছর রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে ছিলাম, (বলাবাহুল্য, সকল কাজ তাঁর মনের চাহিদা মোতাবেক
হত না),
কিন্তু কখনো তিনি ‘উফ’
শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। তদ্রূপ একথাও বলেননি
যে, এটা কেন করেছ? বা এটা কেন করনি? ঘরের কেউ কিছু বলতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বলতেন, বাদ দাও, যা হওয়ার ছিল, হয়েছে। -{বুখারীঃ হাদীস নং ২৭৬৮}
সহীহ আকিদা শিক্ষা প্রদানঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন : "হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখাতে চাই। তুমি আল্লাহর
অধিকারের হেফাযত করবে, আল্লাহও তোমার হেফাযত করবেন। তুমি
আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, তুমি তাঁকে সর্বদা সামনে
পাবে। যখন কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন
সহযোগিতা চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর জেনে রাখ! যদি পুরো জাতি যদি তোমার
কোন উপকার করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন উপকার
করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ
তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন ক্ষতি
করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না,
শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন।
কলমের লিখা শেষ হয়েছে এবং কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে।"
- [তিরমিযীঃ ২৫১৬]
সহীহ দ্বীন
শিক্ষা প্রদান করাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ ‘বেটা! সকাল-সন্ধ্যায় যদি এমনভাবে থাকতে পার যে, তোমার
মনে কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই তাহলে এমনভাবেই থাক। বেটা! এটি আমার সুন্নত। যে আমার
সুন্নতকে যিন্দা করে সে আমাকে ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে
থাকবে।’
-{জামে তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৬৭৮}
খাদেমদেরকে উত্তম
শিষ্টাচার প্রশিক্ষণঃ হযরত আবু হাফস উমার ইবনে আবু সালমা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তত্ত্বাবধানাধীন বালক
(খাদেম) ছিলাম। আমার হাত পাত্রের এদিক-ওদিক যেত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন : খোকা! আল্লাহর নাম লও, ডান হাতে খাবার গ্রহন কর এবং নিকটস্থ খাবার খাও।
এরপর থেকে আমি সর্বদা তাঁর শেখানো পদ্ধতিতেই খাবার খাই। -(বুখারী ও মুসলিম)
খাদেমদেরকে বিবাহ দেওয়াঃ আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ "তোমাদের মধ্যে যারা
অবিবাহিত, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের
মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরকেও। তারা যদি নিঃস্ব হয়,
তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়,
সর্বজ্ঞ।"
-(সূরা নুরঃ আয়াত ৩২)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের খাদেমদেরকে নেককার খাদেম
হিসাবে কবুল করুন এবং আমাদেরকে খাদেমদের হকসমুহ যথাযথ ভাবে আদায় করার তৌফিক দান
করুন! আ-মী-ন।