মহল্লাবাসীদের মাঝে মাসজিসমূহের খতিব ও ইমামগণের দায়িত্ব
মুসলিম উম্মাহর সম্মানিত ওলামাগণের
মধ্যে যারা বিভিন্ন মাসজিদের খতিব ও ইমাম হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিস এবং উম্মাহর মাঝে তাঁর সম্মানিত
প্রতিনিধি। শুধুমাত্র নামাজ পড়ানোই তাদের কাজ নয়, বরং তারা মহল্লাবাসীর ধর্মীয়,
আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জিম্মাদার। মনে রাখবেন! হাশরের ময়দানে তাদেরকে অবশ্যই তাদের
দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
খতিব ও ইমামগণের প্রথম কাজ হল-
মহল্লার যারা নামাজ পড়ে না, মাসজিদে আসে না, ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলে না বা
দ্বীনে হকের পরিপন্থি জীবনাচারে অভ্যস্ত তাদেরকে দ্বীনপন্থি, মাসজিদমুখী ও নামাজী
বানানোর জন্য মহল্লার মাঝে সর্বদা দাওয়াত, তাবলিগ ও নসিহত জারী রাখা। এজন্য
দেখা-সাক্ষাৎ, দোয়ার মাহফিল, বিবাহ অনুষ্ঠানসহ তাদের সাথে একত্রিত হওয়ার সকল
সুযোগকেই দাওয়াত, তাবলিগ ও নসিহতের কাজে লাগাতে হবে।
খতিব ও ইমামগণের দ্বিতীয় কাজ হল-
মহল্লায় যারা নামাজ পড়ে, মাসজিদে আসে এবং ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলার চিন্তা করে
তাদেরকে কুরআন ও ছুন্নাহ মোতাবেক তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে
মাসজিদে নিয়মিত ও পরিকল্পিত তালিম চালু করা। ইমামগণ ফজর, আছর বা ঈশাবাদ সংক্ষিপ্ত
মক্তব কায়েম করে মহল্লাবাসীকে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দিবেন ও কুরআন অনুযায়ী জীবন
গড়ার কৌশল (ছুন্নাহ) শিক্ষা দিবেন।
খতিব ও ইমামগণের তৃতীয় কাজ হল- সমাজ
সংশোধন। মহল্লাবাসীদের মাঝে প্রচলিত সকল প্রকার শিরকী, কুফরী, তাগুতী, জাহিলী ও
বিদআতী আকিদা-বিশ্বাস ও রসম-রেওয়াজ এর মূলোৎপাটন করে কুরআন ও ছুন্নাহর সহীহ আলো
সর্বত্র বিকশিত করার মাধ্যমে সমাজ সংশোধনের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক দ্বীনি মাজলিস ও মাসিক
তাফসির মাহফিলের ব্যবস্থা করা। এসব মাজলিস ও মাহফিলে সমালোচনা পরিহার করে পজিটিভ
আলোচনা করা।
খতিব ও ইমামগণের চতুর্থ কাজ হল-
জুমআর খুতবাহ। মহল্লাবাসীদের মাঝে দ্বীনি ইলম ওআমলের ঘাটতিগুলো খতিব ও ইমামগণের
সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। অতঃপর জুমআর খুতবাহ-কে এমনভাবে বিন্যাস করতে
হবে যাতে আরবী বছরের হিসাবে পঞ্চাশটি খুতবাহ-এর মাধ্যমে তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে
জীবন গড়ার প্রয়োজনীয় মৌলিক নসিহত মহল্লাবাসীদের সামনে উপস্থাপন এবং পরবর্তী বছর এর
পূনরায় আলোচনা করা যায়।
খতিব ও ইমামগণের পঞ্চম কাজ হল- সমাজ
কল্যান। মহল্লাবাসীদের মাঝে বিত্তবানদের সহায়তায় যারা অভাবী তাদের দারিদ্র বিমোচনে
সল্পপুজির স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ার
ব্যবস্থা করা, অভাবী রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং অভাবী মৃতদের সৎকারের
ব্যবস্থা করা। খতিব ও ইমামগণ জাতি,ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল ও মত নির্বিশেষে সবার
জন্যই এসব কল্যাণমূলক কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
সম্মানিত খতিব ও ইমামগণ হবেন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিস এবং তাঁর প্রতিনিধি। তারা কোন বিশেষ
দল, তরিকা বা ফিরকা পন্থী হবেন না, বরং দ্বীনপন্থী হবেন। তারা সকল ইসলামী
ব্যাক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান, দল, সহীহ তরিকা ও ফিরকার সাথে সুসম্পর্ক রাখবেন এবং
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সাধ্যানুযায়ী তৎপর থাকবেন। তারা সকল প্রকার দ্বীনি
কাজকেই নিজের কাজ মনে করবেন এবং সাধ্যমত সহায়তা করবেন।
সম্মানিত খতিব ও ইমামগণ
মহল্লাবাসীদের মাঝে কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকার দৃষ্টিভংগী বা আদর্শ প্রচার
করবেন না, ফিরকাবাজী বা বিতর্কে লিপ্ত হবেন না বরং শুধুমাত্র কুরআন ও ছুন্নাহর
মহাণ আদর্শ ও মৌলিক শিক্ষা তুলে ধরবেন এবং সে অনুযায়ী জীবন গড়ার কৌশল শিক্ষা
দিবেন। তারা মহল্লাবাসীদেরকে কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকা পন্থী বানাবেন না, বরং
শুধুমাত্র দ্বীনপন্থী তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে গড়ার চেষ্টা করবেন।
আশা করা যায়, তাদের মহান সাধনার ফলে
মহল্লাবাসীদের মাঝে আভ্যান্তরীন ভুল বুঝাবুঝি দুর হবে। ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হবে।
দলীয় চেতনা বিলুপ্ত হয়ে দ্বীনি চেতনা বিকশিত হবে। দলীয় প্রসারের প্রতিযোগিতার
পরিবর্তে ইসলাহী বা সংশোধনী প্রতিযোগীতা প্রাধান্য পাবে। আর তখনই গড়ে উঠবে মুসলিম
উম্মাহর মাঝে কাংখিত ছুন্নাহ ভিত্তিক ইসলাহ ও কুরআন ভিত্তিক ইত্তিহাদ। আসুন! আমরা
সবাই দলীয় মানসিকতা পরিহার করে দ্বীনপন্থী হই।

No comments:
Post a Comment