মক্তব কেন্দ্রিক মাসজিদে রমজান মাসে ইতিকাফ
আল্লাহর সন্তোষ ও মহব্বত অর্জন, নবুয়তের
জিম্মাদারী দায়িত্ব পালনের জন্য আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন, রহমত-
মাগফিরাত-নাজাত সহ রমজানের যাবতীয় নিয়ামত হাসিল ও মহিমান্বিত কদরের রাত প্রাপ্তির
আশায় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু
আনহুম)-গণের ন্যায় রমজানের শেষ দশক মক্তবের সবাইকে নিয়ে ইতিকাফ করতে হবে। কেবল
মসজিদে অবস্থান করার নাম ইতিকাফ নয় বরং এ সময় আমাদের ঈমানী, রুহানী,
ইলমী, আমালী ও আখলাকী ঘাটতিসমূহ পূরণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা
করতে হবে। সময় ও সুযোগমত সম্ভব হলে শায়েখের সংগে ইতিকাফে শামীল হয়ে অধিকতর বরকত
হাসিল করা যেতে পারে।
ইতিকাফের ফজিলত: রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি
রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করবে তা তার জন্য দুইটি হজ্জ ও দুইটি উমরার সমতুল্য হবে -(বায়হাকী)।
তিনি আরও বলেন : যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে খাঁটি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় ইতিকাফ
করবে, তার পূর্ববর্তী গোনাসমূহ ক্ষমা করে দেয়া
হবে -(দায়লামী)। ইতিকাফকে প্রানবন্ত করার জন্য কিছু নসিহত পেশ করছি। স্থানীয়ভাবে
এর আলোকে সম্ভাব্য পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।
ক) মাগরিব থেকে ইশাঃ
১। ইফতার ও সালাতুল মাগরিব
২। অজিফা আদায় (সকাল-সন্ধ্যার আমল)
৩। সহীহ তিলাওয়াত শিক্ষা : তাজবীদ বিষয়ক
আলোচোনা ও মাশ্ক।
খ) ইশা থেকে বিশ্রামঃ
১। সালাতুল ইশা ও তারাবীহ
২। দরুদের আমল (দুরূদ শরীফ-১০০ বার পাঠ)
৩। রাতের খাবার, পরবর্তী মাশআরা ও ইহতিছাব
গ) বিশ্রাম থেকে ফজরঃ
১। ঘুম/ পূর্ণ বিশ্রাম/ ব্যক্তিগত আমল
২। সালাতুত তাহাজ্জুদ ও সাহরী
৩। বিশ্রাম ও ফজরের প্র¯তুতি/
ব্যক্তিগত আমল
ঘ) ফজর থেকে চাশতঃ
১। সালাতুল ফজর ও অজিফা
২। পরবর্তী দিনের মাসআরা ও ইহতিছাব
৩। ঘুম/ বিশ্রাম ও ব্যক্তিগত আমল
ঙ) চাশত থেকে জোহরঃ
১। অজু, গোসল ও চাশতের নামাজ
২। তালীমুল কুরআন (তাজবীদ, মাশ্ক
ও দারস প্রশিক্ষণ)
৩। ব্যত্তিগত আমল, তিলাওয়াত ও
বিশ্রাম
চ) জোহর থেকে আছরঃ
১। সালাতুল জোহর
২। দ্বীনি আলোচনা, সামষ্টিক
অধ্যয়ন।
৩। আয়াত-দোয়া মুখ¯তকরা, তাজবীদ-মাশ্ক।
ছ) আছর থেকে ইফতারঃ
১। সালাতুল আছর
২। মাসআলা শিক্ষা ও উন্মুক্ত আলোচনা
৩। তওবা, ইস্তিগফার ও মুনাজাত
সাহরী, সূর্যোদয়, সূর্যা¯ত ও নামাজের সময়সূচীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয়ভাবে পরামর্শ করে সময়
নির্ধারণ ও বন্টন করে নিতে হবে। যারা শেষ দশক ছুন্নাত ইতিকাফ পালনে অক্ষম তারা যে
কয়দিন সম্ভব নফল ইতকাফ করতে পারেন বা শুধুমাত্র রাতগুলো ইতিকাফের নিয়াতে মাসজিদে
কাটাতে পারেন এবং উল্লেখিত সময়সূচীর আলোকে সময়-সুগোগমত তা’লীম
ও দোয়ায় শরীক হতে পারেন। মনে রাখবেন! শুধু মাত্র মাসজিদে খাওয়া, ঘুম ও বিশ্রামের নাম ইতিকাফ নয়, বরং প্রতিটি মুহুর্ত
আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্যে তা’লীম, জিকির ও ইবাদাতে অতিবাহিত করতে হবে। যাদের তিলাওয়াত সহীহ নয় তাদেরকে
অবশ্যই তিলাওয়াত সহীহ করতে হবে। যাদের তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে উঠেনি তাদেরকে
তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ইতিকাফে আসার সময় নিজের বিছানা-পত্র, থালা-বাটি, পানির পাত্র, মিসওয়াক,
ও প্রয়োজনীয় মালামাল সাথে নিয়ে আসতে হবে। নিজের মালামাল-বিছানা-পত্র
হিফাজত করতে হবে। অনুমতি ছাড়া অন্যের জিনিষ ব্যবহার করা যাবে না। মাসজিদের
পবিত্রতার প্রতি সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে। মাসজিদের অন্যান্য মুসল্লী, খাদিম ও মুতাকিফ ভাইদের হকের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।
ইতিকাফে মক্তবের কিছু সংখ্যক আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থীকে দ্বীনের মুয়াল্লিম
হিসাবে গড়ে তোলার জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যেমন- মক্তব পরিচালনা
প্রশিক্ষণ, তাজবীদ প্রশিক্ষণ, দারস্
প্রশিক্ষণ, আলোচনা প্রশিক্ষণ, উপস্থাপনা
প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য রমজান মাসে ইতিকাফ করতে হবে।
আমাদের দায়িত্ব : আমরা সবাই আল-কুরআনের ছাত্র হব। আজীবনের জন্য আল-কুরআনের
ছাত্র হব। মাসজিদে-মাসজিদে মহল্লায়-মহল্লায় আল-কুরআনের মক্তব গড়ব। মক্তবে সহীহ
তিলাওয়াতসহ পরিপূর্ণ দ্বীন শিখব। সাহাবাদের ন্যায় জীবন গড়ার কৌশল শিখব। কুরআনের
আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব। আল্লাহ আমাদের ইতিকাফকে তার নৈকট্য অর্জনের
ওয়াসিলা হিসাবে কবুল করুন! তার দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম
রাখুন এবং তাঁদের জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন। আ-মী-ন!

No comments:
Post a Comment