সমাজ সংশোধনে তালীমুল কুরআন মক্তবের ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি
রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র
মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
নবুওয়াতী দায়িত্ব পালনে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মক্তব : মানব জাতির হিদায়াতের জন্য নবুওয়াতের প্রথম যুগে রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আরকাম (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ঘরে তা'লীমুল কুরআন দারস বা মক্তব কায়েম করে নবুওয়াতের
দায়িত্বসমূহ পালন করেছেন। তাঁর এ মক্তব শুধু তিলাওয়াত শিক্ষা নয়, বরং পরিপূর্ণ দ্বীন শিক্ষা তথা নবুওয়াতের
যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম কেন্দ্র ছিল।
মদীনায় হিজরতের পর ইসলাম সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম
হওয়ার পরও মাসজিদে নববীতে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্তব ভিত্তিক
নবুওয়াতী দায়িত্বের কার্যক্রমসমূহ জারী ছিল। এর নিয়মিত ছাত্র ছিলেন আহলে সুফ্ফা ও মদীনার
অধিবাসীগণ এবং অনিয়মিত ছাত্র ছিলেন দুর-দুরান্তের অন্যান্য সাহাবাগণ। নামাজবাদ এবং জুম'য়ার খুতবার মাধ্যমে সেখানে
নিয়মিত সার্বক্ষণিক পূর্ণাংগ দ্বীনি তা’লীম, তারবিয়াত ও নসীহত জারী ছিল।
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতী
দায়িত্ব পালনে এই মক্তব এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, স্বয়ং আল্লাহ্ তা'য়ালা জিহাদের মত রাষ্ট্রীয়
গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেেত্রও সবাই এক সংগে বেরিয়ে না পড়ে প্রত্যেক কওমের কিছু সংখ্যক
গুণীজনকে রসূলের মক্তবে কওমের মুয়াল্লিম হিসাবে প্রশিক্ষণ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন ঘোষণা করেন: তাদের
প্রত্যেক বড় দল থেকে একটি অংশ কেন বের হয় না, যারা দ্বীনের জ্ঞান
অর্জন করবে এবং নিজ নিজ কওমের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করবে, যাতে তারা বাঁচতে পারে। -(সূরা তওবা : ১২২)
নবুওয়াতের নমুনায় সাহাবাগণের মক্তব : নবুওয়াতের জামানায়
বিভিন্ন অঞ্চলে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রেরিত প্রতিনিধিগণও
স্বীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কওমের হিদায়াতের জন্য নবুওয়াতের নমুনায় দারস বা মক্তব
ভিত্তিক দাওয়াত, তা’লীম
ও তাযকিয়াসহ নবুওয়াতের নমুনায় যাবতীয় কার্যক্রমসমূহ পরিচালনা করেছেন। খুলাফায়ে রাশিদীনের জামানায় খলিফার প্রতিনিধিগণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের সাথে
সাথে মাসজিদ কেন্দ্রিক দ্বীনি দারস বা মক্তব কায়েম করে নবুওয়াতের নমুনায় সার্বক্ষণিক
পূর্ণাংগ দ্বীনি তা’লীম, তারবিয়াত ও নসীহতের মহান দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজতন্ত্রের যুগেও গুরুত্বপূর্ণ সাহাবা
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণ উম্মাহর হিফাজতের জন্য মাসজিদে বা নিজ বাড়ীতে দারস বা মক্তব
কায়েম করে তা’লীম ও নসীহত জারী রেখেছেন। রাজতন্ত্রের জামানায় সাহাবাগণের যুগে হযরত আবূ হুরায়রা, হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস,
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ, হযরত আনাস ইবনে মালিক
ও হযরত আবূ সাইদ খুদরী ও হযরত হাসান ইবনে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) প্রমুখ অগ্রগণ্য। তাদের দারস বা মক্তবে ছিল নবুওয়াতের নমুনায় কুরআন ও সহীহ্ হাদীস ভিত্তিক দ্বীনের
তা’লীম ও গবেষণা।
নবুওয়াতের নমুনায় তাবিঈন ও তাবে-তাবিঈনগণের মক্তব : তাবিঈন
ও তাবে-তাবিঈনগণের যুগে উম্মাহর ইমাম ও আহলে বায়েতগণ (র) সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু
আনহু)-গণের পদাংক অনুসরণ করে মাসজিদে বা নিজ বাড়িতে দ্বীনি দারস বা মক্তব কায়েম করেছেন। তাদের মক্তবে ছিল কুরআন, হাদীস ও সাহাবা (রা)-গণের ফতোয়ার ভিত্তিতে
দ্বীনের তা’লীম ও গবেষণা। তারা ইসলামী আইন ও বিধি-বিধান শ্রেণীবদ্ধ করে ভবিষ্যত উম্মাহর জন্য দিক-নির্দেশনা
রেখে গেছেন। তাবিঈন ও তাবে-তাবিঈনদের যুগে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব, হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর, হযরত সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর, হযরত নাফে’,
হযরত হাসান বসরী, ইমাম যুহরী, ইমাম সুফিয়ান সওরী, ইমাম আওযাঈ, ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম হাম্মাদ, ইমাম আব্দুল্লাহ্ ইবনুল মোবারক, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম
মুহাম্মাদ, ইমাম ইউসুফ এবং আহলে বাইতের ইমামগণ (র) অগ্রণী ভূমিকা
পালন করেছেন। তাদের দারস বা মক্তব ভিত্তিক দ্বীনি কার্যক্রম
ছিল তৎকালীন ও অনাগত ভবিষ্যতের সমগ্র উম্মাহর জীবনের সমস্ত দিক ও ক্ষেত্রের জন্য অমূল্য
পাথেয়।
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম
অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন।
কোন একদল লোক যখন আল্লাহ তা'য়ালার ঘর সমূহের মধ্যে কোথাও একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ এবং পরস্পর
আলোচনা করতে থাকে তখন তাদের উপর সাকিনা অবতীর্ণ হতে থাকে, আল্লাহর
রহমত ও অনুগ্রহ তাদেরকে ঢেকে দেয়, ফিরিশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন
করে নেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফিরিশতাদের সামনে তাদের উল্লেখ করে থাকেন। - (মুসলিম)
রসুলুল্লাহ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নবুওয়াতের নমুনায় উম্মাহর সংশোধন এর যাবতীয় দ্বীনি কার্যক্রমের বুনিয়াদ শ্রেণী, পেশা ও বয়স নির্বিশেষে তালীমুল কুরআন
মক্তবের উপর প্রতিষ্ঠিত। মনে রাখবেন! তালীমুল কুরআন মক্তব শুধু তিলাওয়াত শিক্ষার
প্রতিষ্ঠান নয়, বরং পরিপূর্ণ দ্বীনি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেখানে মহল্লাবাসীগণ তাকওয়াবান মুসলিম
হিসাবে জীবন গড়ার মৌলিক নসিহত লাভ করতে পারে।
মক্তব কায়েম করতে হবে তালীমুল কুরআন ভিত্তিক : হযরত
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের
মধ্যে (আল্লাহর নিকট) সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে তা
শিখায়-(বুখারী ও তিরমিজী)। সুতরাং
প্রত্যেক ইমাম, মুয়াল্লিম ও মুবাল্লিগের অন্ততঃ একটি করে
তালীমুল কুরআন মক্তব থাকা উচিত। এই মক্তব মহল্লার মাসজিদে কায়েম করাই উত্তম।
মাসজিদে কায়েম করা সম্ভব না হলে দারুল আরকামের ন্যায় নিজ বাড়ীতে বা মহল্লার
অন্তর্গত কোন বন্ধুর বাড়ীতে এই মক্তব কায়েম করা যেতে পারে।
শিশুদের মক্তব : দেশের যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ
সকাল ১০টার দিকে শুরু হয়, সেখানে শিশুদের জন্য
ফজরবাদ মক্তব কায়েম করা যায়। যেখানে কেজি স্কুল বা প্রাথমিক বিদ্যালয় সকাল ৭/৮ টার
দিকে শুরু হয় সেখানে জোহরবাদ মক্তব কায়েম করা যায়। আছর ও মাগরিব-ইশাবাদ শিশুদের
মক্তব সমীচীন নয়, কারণ আছরবাদ তাদের শারীরিক ও মানসিক
বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও মাগরিববাদ তাদের ক্লাসের
লেখাপড়ার করার সময়।
বয়স্ক মক্তব : শিশু ব্যতীত যেকোন বয়সের পুরুষই বয়স্ক
মক্তবের শিক্ষার্থী হতে পারেন। ইশাবাদ বয়স্ক মক্তবের উপযুক্ত সময়, কারণ তারা সারাদিন পেশাগত কাজে
ব্যস্ত থাকে। ফজরবাদও শিশুদের পাশাপাশি আলাদা বয়স্ক মক্তব কায়েম করা যায়। বিভিন্ন
অফিসের সাথে যে মাসজিদ রয়েছে, সেখানে জোহরের নামাজের সাথে
সংক্ষিপ্ত মক্তব কায়েম করা যায়। আছরবাদও কোথাও কোথাও সংক্ষিপ্তভাবে বয়স্ক
মক্তব কায়েম করা যেতে পারে।
মহিলা মক্তব : বালেগা মেয়ে ও বয়স্কা মহিলাদের জন্য
মহিলা মুয়াল্লিম দ্বারা আলাদা মহিলা মক্তব কায়েম করতে হবে। তালীম করার মত উপযুক্ত
মহিলা মুয়াল্লিম পাওয়া গেলে তাঁর বাড়ীতে প্রতিবেশী মহিলাদের নিয়ে মহিলা মক্তব
কায়েম করা যায়। আছরবাদ মহিলা মক্তবের উপযুক্ত সময়, কারণ এ সময়ে তাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকে না। মনে
রাখবেন! মহিলা মক্তব কায়েমের ক্ষেত্রে পর্দার বিধান পালনে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
পারিবারিক মক্তব : সমাজের অন্তর্গত পরিবারসমূহ যখন সাহাবাগণের
পরিবারের ন্যায় আদর্শ পরিবার হিসাবে গড়ে উঠবে তখন ঐ সমাজ হবে মদীনাতুন্নবী (স)-এর
ন্যায় আদর্শ কল্যাণময় সমাজ। এ মহান লক্ষ্যেকে সামনে রেখে প্রতিটি পরিবারে
পারিবারিক তালীম চালু করার জন্য মহল্লাবাসী সবাইকে উৎসহিত করতে হবে। ঘুমের আগে
পরিবারের সদস্যগণ সবাই অল্প সময়ের জন্য একত্রিত হবেন এবং সংক্ষিপ্ত দ্বীনি তালীমের
ব্যবস্থা করবেন।
মনে রাখবেন! দারস বা মক্তব ভিত্তিক দ্বীনি কার্যক্রমই
রসুলুল্লাহ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতি দায়িত্ব পালন
এবং নবুওয়াতের নমুনায় সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহু), তাবিঈন, তাবে-তাবিঈন,
সলফে সলিহীন ও ওলামাগণের (র) অনুসৃত পন্থা। সুতরাং কোন প্রকার মনগড়া পন্থায় নয়,
বরং মহল্লাবাসীদের মাঝে তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে তালীমুল কুরআন মক্তবের বুনিয়াদী
কাজ পরিচালনা করতে হবে। যেমন-
মক্তবের প্রথম কাজ হল- মহল্লার যারা নামাজ পড়ে না,
মাসজিদে আসে না, ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলে না বা দ্বীনে হকের পরিপন্থি জীবনাচারে
অভ্যস্ত তাদেরকে দ্বীনপন্থি, মাসজিদমুখী, নামাজী ও তাকওয়াবান বানানোর জন্য মহল্লায়
সর্বদা দাওয়াত, তাবলিগ ও নসিহত জারী রাখা। এজন্য দেখা-সাক্ষাৎ, দোয়ার মাহফিল,
অনুষ্ঠানাদিসহ তাদের সাথে মিলিত হওয়ার সকল সুযোগকেই দাওয়াত, তাবলিগ ও নসিহতের কাজে
লাগাতে হবে।
মক্তবের দ্বিতীয় কাজ হল- মহল্লায় যারা নামাজ পড়ে,
মাসজিদে আসে এবং ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলার চিন্তা করে তাদেরকে কুরআন ও ছুন্নাহ
মোতাবেক তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাসজিদে নিয়মিত ও পরিকল্পিত
তালিম চালু করা। মুয়াল্লিমগণ ফজর, আছর বা ঈশাবাদ সংক্ষিপ্ত মক্তব কায়েম করে
মহল্লাবাসীকে সহীহ তিলাওয়াত শিক্ষা দিবেন এবং কুরআন-ছুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়ার
কৌশল শিক্ষা দিবেন।
মক্তবের তৃতীয় কাজ হল- সমাজ সংশোধন। মহল্লাবাসীদের
মাঝে প্রচলিত সকল প্রকার শিরকী, কুফরী, তাগুতী, জাহিলী ও বিদআতী আকিদা-বিশ্বাস ও
রসম-রেওয়াজ এর মূলোৎপাটন করে কুরআন ও ছুন্নাহর সহীহ আলো সর্বত্র বিকশিত করার
মাধ্যমে সমাজ সংশোধনের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক দ্বীনি মাজলিস ও মাসিক তাফসির মাহফিলের
ব্যবস্থা করা। এসব মাজলিস ও মাহফিলে বিতর্ক বা সমালোচনা পরিহার করে পজিটিভ আলোচনা করা।
মক্তবের চতুর্থ কাজ হল- জুমআর খুতবাহ নির্ধারণ। মক্তবের পরিচালক যখন সংশ্লিষ্ট মাসজিদের খতিব বা ইমাম হবেন, তখন মহল্লাবাসীদের
দ্বীনি ইলম ও আমলের ঘাটতিগুলো তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। অতঃপর
জুমআর খুতবাহ-কে এমনভাবে বিন্যাস করতে হবে যাতে আরবী এক বছরের পঞ্চাশটি খুতবাহর
মাধ্যমে তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে জীবন গড়ার জরুরী নসিহত মহল্লাবাসীদের সামনে
উপস্থাপন করা যায়।
মক্তবের পঞ্চম কাজ হল- সমাজ কল্যান। মহল্লাবাসীদের
মাঝে বিত্তবানদের উৎসাহিত করে যারা অভাবী তাদের দারিদ্র বিমোচনে সল্পপুজির স্থায়ী
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ার ব্যবস্থা করা, অভাবী
রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং অভাবী মৃতদের সৎকারের ব্যবস্থা করা। মক্তবের
পরিচালক জাতি,ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল ও মত নির্বিশেষে মহল্লাবাসী সবার জন্যই এসব
কল্যাণমূলক কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
মক্তবের পরিচালকগণ হবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিস এবং তাঁর প্রতিনিধি। তারা কোন বিশেষ দল, তরিকা বা
ফিরকা পন্থী হবেন না, বরং দ্বীনপন্থী হবেন। তারা সকল ইসলামী ব্যাক্তিত্ব,
প্রতিষ্ঠান, দল, সহীহ তরিকা ও ফিরকার সাথে সুসম্পর্ক রাখবেন এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ
করার জন্য সাধ্যানুযায়ী তৎপর থাকবেন। তারা সকল প্রকার দ্বীনি কাজকেই নিজের কাজ মনে
করবেন এবং সাধ্যমত সহযোগীতা করবেন।
মক্তবের পরিচালকগণ মহল্লাবাসীদের মাঝে কোন বিশেষ দল,
তরিকা বা ফিরকার দৃষ্টিভংগী বা আদর্শ প্রচার করবেন না, ফিরকাবাজী বা বিতর্কে লিপ্ত
হবেন না বরং শুধুমাত্র কুরআন ও ছুন্নাহর মহাণ আদর্শ ও মৌলিক শিক্ষা তুলে ধরবেন এবং
সে অনুযায়ী জীবন গড়ার কৌশল শিক্ষা দিবেন। তারা মহল্লাবাসীদেরকে কোন বিশেষ দল,
তরিকা বা ফিরকা পন্থী বানাবেন না, বরং সবাইকে শুধুমাত্র দ্বীনপন্থী তাকওয়াবান
মুসলিম হিসাবে গড়ার চেষ্টা করবেন।
আশা করা যায়, তাদের মহান সাধনার ফলে মহল্লাবাসীদের
মাঝে আভ্যান্তরীন ভুল বুঝাবুঝি দুর হবে। ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হবে। দলীয় চেতনা
বিলুপ্ত হয়ে দ্বীনি চেতনা বিকশিত হবে। দলীয় প্রসারের প্রতিযোগিতার পরিবর্তে
ইসলাহী বা সংশোধনী প্রতিযোগীতা প্রাধান্য পাবে। আর তখনই গড়ে উঠবে মুসলিম উম্মাহর
মাঝে কাংখিত ছুন্নাহ ভিত্তিক ইসলাহ ও কুরআন ভিত্তিক ইত্তিহাদ। আসুন! আমরা সবাই
দলীয় মানসিকতা পরিহার করে দ্বীনপন্থী হই।
আমাদের দায়িত্ব : আমরা সবাই আল-কুরআনের ছাত্র হব।
আজীবনের জন্য আল-কুরআনের ছাত্র হব। মাসজিদে-মাসজিদে মহল্লায়-মহল্লায় আল-কুরআনের
মক্তব গড়ব। মক্তবে আমরা সহীহ তিলাওয়াতসহ পরিপূর্ণ দ্বীন শিখব। সাহাবাদের ন্যায়
জীবন গড়ার কৌশল শিখব। কুরআনের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব। আল্লাহ আমাদের
সবাইকে তার দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! এবং তাঁদের বরকতময় জামাআতের
সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।

No comments:
Post a Comment