দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র কাজ হল আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীন। দুরদ ও সালাম
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ ও
বংশধর,
সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের
প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুল। নিশ্চয়ই
শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত।
পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যঃ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হল খিলাফাতের মর্যাদায় আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদাত। আল্লাহ তা'য়ালা মানব জাতিকে দুনিয়ায় তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত
করার জন্য সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ তা’য়ালা ইবাদাত প্রসংগে
তিনি বলেন : আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে কেবলমাত্র আমার ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।
(সূরা যারিয়াত : আয়াত- ৫৬)।
সুতরাং আল্লাহ তা’য়ালার সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্যে মানব জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত আল্লাহ তা’য়ালার বিধান ও রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
ছুন্নাহ মোতাবেক অতিবাহিত করাকে ইবাদাত বলা হয়। গোলামের নিজের কোন মত বা পছন্দ থাকে
না,
বরং তার প্রভুর মত ও পছন্দই গোলামের কাজ- এটাই ইবাদাতের মুল
শিক্ষা।
আল্লাহ তা’য়ালা দুনিয়ার বুকে
মানব জাতির খিলাফাত প্রসংগে সৃষ্টির সূচনা লগ্নে ফিরিশতাদের সাথে আলোচনা কালে ঘোষণা
করেন : “নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ার বুকে খলিফা পাঠাতে চাই।” -(সুরা বাকারাহ : ৩০)
মাখলুকের কাছ থেকে মানব জাতির খিলাফাতের বাইয়াতঃ খিলাফত হল আল্লাহর প্রতিনিধি ও সর্বোত্তম সৃষ্টি হিসাবে দুনিয়ার
সমগ্র সৃষ্টির উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা ও কর্তৃত্ব। হযরত আদম আলাইহিসসালাম-কে
সৃষ্টির পর আল্লাহর হুকুমে তাঁকে সিজদা (বশ্যতা স্বীকার) করে সমগ্র মাখলুক এর স্বীকৃতি
প্রদান করে। আল্লাহ তা’য়ালার খলিফা হিসাবে মানব জাতির দায়িত্ব হল আল্লাহ তা’য়ালার হিদায়াত
বা বিধান মোতাবেক সব কিছু পরিচালনা করা, নিজের মতে নয়,
যা মূলতঃ ইবাদাতেরই অংশ।
সুতরাং দুনিয়ার বুকে মমস্ত মাখলুকের মাঝে মানব জাতির পদবী হল-
মানুষ আল্লাহর খলিফা। আর তার দায়িত্ব হল আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত। তাই দুনিয়ার বুকে মানুষের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য হল খিলাফাতের
মর্যাদায় মহান রব্বুল ‘আলামীন আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদাত।
মানব জাতির নিকট আল্লাহর প্রভুত্বের বাইয়াতঃ হযরত আদম (আলাইহিসসালাম)- এর সাথে তার বংশধর সমগ্র মানব জাতির
রূহকে একত্রিত করে তাদের নিকট আল্লাহ তা'য়ালা তার প্রভুত্বের স্বীকৃতি আদায় করেন। তাঁর প্রভুত্বের বাইয়াতের ঘটনা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তা'য়ালা আল-কুরআনে ঘোষণা করেন :
-স্মরণ করুন! যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে
তাদের বংশধরদের বের করলেন এবং তাদের নিকট থেকে তাদের নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষ্য গ্রহণ
করলেন এবং বললেন : আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল : হ্যাঁ,
(অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক) এবং আমরা সাক্ষী রইলাম। এই স্বীকারোক্তি
ও সাক্ষ্য এ কারণে যে,
কিয়ামাতের দিন যেন তোমরা বলতে না পার- ‘আমরা তো এ ব্যাপারে কিছু জানতাম না। -(সূরা আ’রাফ : ১৭২)
হিদায়াতঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে
দুনিয়ায় মানব জাতির দায়িত্ব পালনের নির্দেশিকাসহ সার্বিক জীবন ব্যবস্থা বা সংবিধানকে
হিদায়াত বলা হয়। মানুষের কর্তব্য হল- নিজেরা সংবিধান, আইন-বিধি-বিধান ও নীতিমালা তৈরী না করে আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াতকে
আঁকড়ে ধরা।
মানব জাতির কল্যাণের মহান প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত নির্দেশিকা
প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : যুগে যুগে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য পথ-নির্দেশনা
যাবে,
যারা সে নির্দেশনা মেনে চলবে তাদের না কোন ভয় থাকবে, না তারা চিন্তাগ্রস্ত হবে (সূরা বাকারাহ : ৩৮)।
মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিসসালাম-কে দুনিয়ায় প্রেরণকালে
তিনি ঘোষনা করেন : “
অতঃপর তার প্রভু তাকে (আদম) নবী হিসেবে মনোনীত করলেন এবং তাকে
সঠিক পথে পরিচালিত করলেন। তিনি বললেন : তোমরা (মানব এবং শয়তান) উভয়ে একসাথে পরস্পরের
শত্রু হিসাবে জান্নাত থেকে নেমে যাও পরে আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে সঠিক পথের কোন
নির্দেশনা আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং কোন দুঃখ-কষ্টও পাবে
না। -(সূরা ত্ব-হা : ১২২-১২৩)
যুগে যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় মানব জাতির জন্য প্রেরিত
নির্দেশিকা বা হিদায়াতের যারা তোয়াক্কা করবে না তাদের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কেও তিনি
হযরত আদম আলাইহিসসালাম-কে দুনিয়ায় প্রেরণকালে সতর্ক করে দেন। এ প্রসংগে তিনি বলেন
:
-“
আর যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, তার জীবন-জীবিকা সংকুচিত করা হবে আর হাশরের দিন আমি তাকে অন্ধ
করে উঠাবো। সে বলবে: হে আমার পভু! আমাকে কেন অন্ধ করে উঠালেন? আমি তো দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছিলাম! তিনি বলবেন: ‘আমার আয়াতসমূহ তোমার কাছে এসেছিল, যেভাবে তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া
হয়েছে। যে বাড়াবাড়ি করে ও তার পভুর আয়াতসমূহে ঈমান আনে না, আমি এভাবেই তার প্রতিফল দেই। আর আখিরাতের শাস্তি অত্যন্ত কঠিন
এবং চিরস্থায়ী। -(সূরা ত্ব-হা : ১২৪-১২৭)
রিসালাত : আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিসসালাম-কে দুনিয়ায়
প্রেরণে পর থেকে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যুগে যুগে মানব
জাতির মাঝে অসংখ্য নবী-রসূল (আ) হিদায়াতসহ প্রেরণ করেছেন। সমস্ত নবী-রসূল (আ)- গণ আল্লাহর
মনোনীত প্রতিনিধি,
আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধানের জীবন্ত মডেল এবং মানব জাতির নেতা।
তারা আল্লাহদ্রোহী শক্তি বা তাগুতকে অমান্য করে আল্লাহর ইবাদাতের দিকে জাতিকে আহ্বান
করেছেন। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
-“নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মাতের নিকট এ মর্মে রসূল প্রেরণ করেছি
যে,
তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে অমান্য কর।” -(নহল : ৩৬)
সুতরাং আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত করতে হলে আল্লাহদ্রোহী শক্তি বা তাগুতকে চিনতে হবে এবং তাকে অমান্য
করে সেচ্ছায় আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতের দিকে নিজেকে রুজু করতে হবে। অন্যথায় কোন ইবাদাত
আল্লাহ তা’য়ালার মহান দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আল্লাহর তা’য়ালা বলেন : “দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। সুপথ গোমরাহীর
পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর উপর
বিশ্বাস স্থাপন করবে,
সে এমন এক মজবুত হাতল ধারণ করবে, যা কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।” (সূরা বাকারাহ : ২৫৬)
তিনি আরও বলেন : “যারা তাগুতের দাসত্ব থেকে দুরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ, অতএব আমার বান্দাগণকে সুসংবাদ দিন।” -( সূরা যুমার : ১৭)
আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতের সাথে
সাথে জীবনের কোন ক্ষেত্রে যদি তাগুতকে মান্য করা হয় বা প্রশ্রয় দেয়া হয় তাহলে তা শিরক
হিসাবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা’য়ালা এই ব্যক্তির
ঈমান ও শিরক মিশ্রিত আমল তথা ইবাদাত কোন কিছুই কবুল করবেন না।
আল্লাহর তা’য়ালা বলেন : “আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন আর তার চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
আর ঐ সমস্ত জালিমদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” -(সূরা মায়েদা : ৭২)
তিনি আরও বলেন : “যারা ঈমান আনবে এবং এর সাথে কোন প্রকার জুলুম (শিরক) মিশ্রিত করবে না, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত”। (আনআম : ৮২)
আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদাতের মৌলিক ভিত্তি হল ঈমানঃ আল্লাহ তা'য়ালার কোন বান্দা যখন অটল বিশ্বাসের সংগে ঘোষণা করেন : ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রসূল’ তখন তিনি আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদাতের মৌলিক স্তরে দাখিল হবেন। মু’মিনীনের স্তরে বহাল থাকতে হলে উক্ত ঘোষণার পরিপন্থী কোন আকিদা
ও আমলের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না। তাহলে তিনি আল্লাহর তা’য়ালার উপর মৌলিক ঈমান ও তাঁর গোলামী থেকে খারিজ হয়ে যাবেন।
আল্লাহ তা'য়ালার কোন বান্দা
যখন ঘোষণা করেন- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তখন আল্লাহর সমস্ত হুকুম মেনে নেয়া তার জন্য বাধ্যতামুলক হয়ে যায়। আর যখন ঘোষণা
করেন- মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রসূল, তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ মেনে নেয়াও বাধ্যতামুলক
হয়ে যায়। আল্লাহকে ইলাহ এবং মুহাম্মাদ (স)-কে রসূল হিসাবে মেনে নেয়ার পর আল্লাহর কোন
হুকুম পালন করতে বা রসূলের কোন আদর্শ মেনে চলতে কোন ওজর বশতঃ অপারগ হলে তিনি গুণাহগার
হবেন কিন্তু আল্লাহর গোলামী থেকে খারিজ হবেন না। আল্লাহ ইচ্ছা করলে মেহেরবানী করতঃ
বান্দার ওজর কবুল করে ক্ষমা করে দিতে পারেন বা ইনসাফ করতঃ গোণাহের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি
দিতে পারেন।
কিন্তু আল্লাহর কোন একটি বিধান বা রসূলের কোন একটি নীতি ও আদর্শ
মেনে নিতে অস্বীকার বা ইনকার করলে কিম্বা তার তুলনায় অন্য কোন বিধি-বিধান, আইন,
নীতি ও আদর্শকে উত্তম মনে করলে তিনি আল্লাহ তা’য়ালার গোলামী সম্পূর্ণ থেকে খারিজ হয়ে কাফির হয়ে যাবেন, অথচ অনেকেই তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন না।
বিভিন্ন প্রকার তাগুতের বিবরণ :
তাগুত হল- ঐ সব কর্তৃত্বশীল শক্তি, যারা আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত ও নবী-রসূল (আ) প্রদর্শিত আদর্শ
সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিত্যাগ করে নিজেদের খেয়াল-খুশী মোতাবেক রসম-রেওয়াজ, আইন-কানুন, বিধি-বিধান, নীতিমালা ও সংবিধান নিজেদের জন্য তৈরী করে নিয়েছে এবং তাদের
অধীনস্তদেরকে পরিচালনা করছে। যেমন-
ক) ব্যক্তিগত তাগুত : মানুষ যখন আল্লাহর হিদায়াত অমান্য করে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা তথা নাফসে আম্মারার
অনুসরণ করে,
আল্লাহ তা’য়ালার হুকুম আর রসুলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের তোয়াক্কা না করে মনের খেয়াল মোতাবেক জীবন, দেহ ও অধিনস্ত অংগ-প্রত্যংগসমূহ পরিচালনা করে- তাকে বলা হয় ব্যক্তিগত তাগুত বা নাফসে আম্মারা।
ব্যক্তিগত তাগুতের পরকালীন ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : অতঃপর
যে সীমালংঘন করে,
পৃথিবীর জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়, জাহান্নামই হবে তার আবাস। আর যে নিজ প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত
হওয়ার ভয়ে প্রকম্পিত হয় এবং নাফ্সের (প্রবৃত্তির) অনুসরণ হতে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই
হবে তার বাসস্থান। (সূরা নাযিয়াত : ৩৭-৪১)
তিনি আরও বলেন : “আর আমি বহু জ্বিন এবং মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে না, তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখার চেষ্টা করে না, তাদের কান আছে,
কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনার চেষ্টা করে না। তারা পশুর মত অথবা
পশুর চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট। বস্তুত তারাই উদাসীন”। (সূরা আরাফ : ১৭৯)
খ) পারিবারিক তাগুত : পরিবার প্রধানের দায়িত্ব হল স্বীয় পরিবার সাহাবাগণের (রা) পরিবারের ন্যায় আদর্শ
পরিবার হিসাবে গড়ে তোলা। আল্লাহ বলেন :
- হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিজনদেরকে সে আগুন
থেকে রক্ষা কর,
যে আগুনের জ্বালানী হবে মানুষ এবং পাথর, যে আগুনের পাহারাদার হবে নির্মম হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের অধিকারী
ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহর কোন আদেশের অবাধ্য হন না। বরং তিনি তাদেরকে যে কাজ করার আদেশ করেন, তারা তাই করেন। (সূরা তাহরীম : ৬)
কলুষিত হৃদয়ের কোন পরিবার প্রধান যখন আল্লাহর হিদায়াত অমান্য
করে যথেচ্ছা স্বীয় জীবন এবং পরিবারের সদস্যদের জীবন পরিচালনা করে, তখন তাকে বলা হয় পারিবারিক তাগুত। হাদীসে এই ধরনের পারিবারিক
তাগুতকে দাইয়ুস নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
গ) ভন্ড ধর্মীয় তাগুত : ধর্মীয় নেতাগণের দায়িত্ব হল- রসূলের ওয়ারিস হিসাবে আল্লাহর কিতাব ও ছুন্নাহর হিফাজত
করা। কিন্তু যখন তাদের মধ্যে কেহ তার দায়িত্ব ভুলে গিয়ে দুনিয়ার লোভে আল্লাহর নির্ধারিত
সীমারেখা লংঘন করে ফতোয়াবাজীর মাধ্যমে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম ঘোষনা করে এবং
জনগণ তা মেনে নেয়,
তখন তারা তাগুত হিসাবে পরিগণিত হয়। আল্লাহর হুকুম পরিত্যাগ করে
পন্ডিত ও নেতাদের হুকুম মানা শিরক। যেমন-
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিতগণ ও
সংসার-বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের
ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোন (হক)
ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র। -(সূরা তাওবা: আয়াত ৩১)
ঘ) সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় তাগুত : রাষ্ট্রনায়ক,
বিধায়ক, বিচারক, সমাজপতি ও প্রশাসকগণের দায়িত্ব হল- আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত অনুসারে
আইন প্রণয়ন,
শাসন পরিচালনা ও বিচার-ফয়সালা করা। কিন্তু কুরআন ও ছুন্নাহ লংঘন
করে নিজেরাই যখন আইন,
বিধি-বিধান ও নীতিমালা তৈরী করে প্রশাসন পরিচালনা ও বিচার-ফয়সালা
করে আর ক্ষমতার জোরে জনগণকে তা মানতে বাধ্য করে তখন তারা আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে নমরূদ, ফিরআউন,
কারুন হামান, আবু লাহাব আবুজাহেল-দের ন্যায় তাগুত হিসাবে গণ্য হয়।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যেঃ যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ করা হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান
এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে
যেতে চায়,
অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাগুতকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত
করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি তাদেরকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে। -[সুরা আন-নিসাঃ ৬০-৬১]
- তারা কি জাহেলী আইন ও
শাসন চায়? বিশ্বাসী কওমের জন্য আল্লাহর আইন ও শাসনের চেয়েকার আইন ও
শাসন উত্তম হতে পারে, (আল- মায়েদাহ: ৫০)
- “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়সালা করলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর নিজেদের কোন ব্যাপারে
অন্য কোন সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে
সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।” -(সূরা আহযাবঃ ৩৬)
- তোমরা কি
ধর্মগ্রন্থের অংশবিশেষে বিশ্বাস কর ও অন্য অংশে অবিশ্বাস পোষণ কর? অতএব তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কী
পুরস্কার আছে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত পাঠানো হবে
কঠোরতম শাস্তিতে। আর তোমরা যা করছো আল্লাহ্ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন। -(সূরা বাকারাহঃ
আয়াত-৮৫)
ইবলিসি তাগুতঃ ইবলিস আল্লাহ
ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে মানুষদেরকে প্ররোচিত করে। ফলে মানব জাতির মাঝে শুরু হয় সেচ্ছাচারিতা, নাস্তিকতা, পূর্ব পুরুষদের প্রচলিত
রসম,
মুর্তিপুজা, প্রকৃতিপুজা,
জাহিলিয়াত বা মূর্খতা, মানব রচিত তন্ত্র-মন্ত্র ও বিধি-বিধানের অন্ধ অনুসরণ। যেমন-মহান আল্লাহ্ রাব্বুল
‘আলামীন বলেনঃ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন
বলেনঃ "যখন আমি ফেরেশতাদেরকে
বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে
ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার
পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ
তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমরা যে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ
করেছে তা কত নিকৃষ্ট!" -[আল কুরআন; সুরাহ কাহাফঃ আয়াত-৫০]
-“হে ঈমানদারগণ! শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে চলো না। যে কেউ তার
অনুসরণ করবে তাকে সে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ করার হুকুম দেবে। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর
অনুগ্রহ ও করুণা না থাকতো তাহলে তোমাদের একজনও পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহই
যাকে চান তাকে পবিত্র করে দেন এবং আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞাত”। - (সুরা নুর: ২১)
তিনি আরও বলেন : “হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না,
সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ। -[সুরা ইয়াসিনঃ ৬০-৬১]
তিনি আরও বলেন : তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন
শয়তান বলেঃ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ তাআলাকে
ভয় করি। -(সূরা আল হাশরঃ ১৬)
তিনি আরও বলেন : ''তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুর
ইবাদত করে, যারা না পারে তাদের ক্ষতি করতে আর না পারে কোন ভাল করতে এবং বলে,
এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। আপনি বলে দিন! তোমরা কি
আল্লাহকে আসমান ও জমিনের মধ্যে ঐ জিনিস শিখাতে চাও যা তিনি জানেন না। তারা যে
সমস্ত শিরক করছে আল্লাহ পাক এর ত্থেকে পবিত্র ও উচ্চ।'' -[সূরা
ইউনুস : ১৮]
তাগুতকে মান্য করাই হল আল্লাহ তায়ালার নাফারমানী, সীমালংঘন, শিরক এবং আল্লাহদ্রোহীতা।
সকল প্রকার তাগুককে অমান্য করে আল্লাহ তা’য়ালার মহান দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করাই হল আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদাত।
ইবাদাত শুধুমাত্র আল্লাহ তা’য়ালার নিমিত্তঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : জেনে রাখ! নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত শুধুমাত্র আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ
ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা
তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর
নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের
ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। -[আল কুরআনঃ
৩৯:৩]
- “কোন কোন মানুষ (ঈমান ও কুফরির) মাঝামাঝি থেকে দ্বিধার সাথে আল্লাহর
ইবাদাত করে। এরপর তার যদি পার্থিব কোন কল্যাণ হয় তাহলে সে প্রশান্তি লাভ করে, কিন্তু তার যদি কোন ক্ষতি হয় বা তার উপর যদি কোন বিপর্যয় নেমে
আসে,
তাহলে সে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। এতে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়
জায়গায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বস্তুত এটাই হল সুস্পষ্ট ক্ষতি।” (সূরা হজ্জ : ১১)
আল্লাহ তা’য়ালার
ইবাদাতের জন্য তাঁর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন হল ইসলামঃ মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হল
ইসলাম। সুতরাং যদি কেউ
আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত করতে চায় তাহলে তাকে আল্লাহর দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন
করতে হবে এবং ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে হবে। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ্
রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
-“নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন হল
ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা
মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশত, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।” -[সুরা আলে ইমরান: ১৯]
-“ তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে দ্বীন (ইসলাম)-এর
উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির
রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না”। -[সূরা রুমঃ আয়াত নং-৩০]
- “যে নিজেকে নির্বোধ করে রেখেছে সে ব্যক্তি ছাড়া কে আর ইব্রাহীমের
আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে?
অথচ ইব্রাহীমকে আমি পৃথিবীতে (নেতা ও নবী) মনোনীত করেছি। আর
নিশ্চয়ই আখিরাতেও সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। যখন ইব্রাহীমকে তার প্রভু বলেছিলেন
: আত্মসমর্পণ কর। তখন ইব্রাহীম বলেছিলেন : আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট আত্মসমর্পণ
করলাম। ইব্রাহীম ও ইয়াকূব তাদের সন্তানদের বলেছেন : হে আমার সন্তানেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ
তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলিম না হয়ে কখনো মৃত্যুবরণ
কর না। (বাকারা : ১৩০-১৩২)
- “ হে আহলি কিতাব! ইব্রাহীম সম্পর্কে তোমরা কেন বিতর্ক কর? অথচ তাওরাত ও ইনজীল তো তাঁর অনেক পরে নাযিল হয়েছিল, তাহলে কি তোমরা বোঝো না! হ্যাঁ, তোমরা তো সেসব লোক যারা এর আগে এমন বিষয়ে বিতর্ক করেছো, যে বিষয়ে সামান্য হলেও তোমাদের কিছু জ্ঞান ছিল। কিন্তু এখন সে
বিষয়ে কেন বিতর্ক করছো যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞানই নেই? আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। ইব্রাহীম ইয়াহূদী ছিলেন না এবং খৃষ্টানও ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন
একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। মানবজাতির মধ্যে ইব্রাহীমের
ঘনিষ্ঠতম মানুষ তারা যারা তাঁর অনুসরণ করেছে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠতম হলেন এই নবী আর যারা
ঈমান এনেছে। আর আল্লাহ মুমিনগণের অভিভাবক।” (আলে ইমরান : ৬৫-৬৮)
- “ তারা বলে- ইহুদী হও অথবা খৃষ্টান হও, তাহলে তোমরা হিদায়াত পাবে। আপনি বলুন! আমরা বরং একনিষ্ঠভাবে
ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করব আর ইব্রাহীম মুশরিক ছিলেন না। তোমরা বল! আমরা ঈমান এনেছি
আল্লাহর প্রতি,
আল্লাহ যা আমাদের প্রতি নাযিল করেছেন ও যা নাযিল করেছেন ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধরদের প্রতি আর মূসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবীগণকে
তাদের প্রভুর নিকট থেকে যা দেয়া হয়েছে তার প্রতিও। আমরা তাঁদের মধ্যে কোন পার্থক্য
করি না আর আমরাতো আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী। কাজেই তারাও যদি তোমাদের মত ঈমান আনে
তাহলে তারা হিদায়াত পাবে আর যদি তারা ঈমান না এনে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তারা শত্রুভাবাপন্ন আর তাদের বিরুদ্ধে আপনার জন্য আল্লাহই
যথেষ্ট। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।” -(সূরা
বকারাহ : ১৩০-১৩৪)
-“
(হে রাসূল!) আপনি বলুন, হে আহলি কিতাব! এস আমরা এমন একটি কথায় ঐক্যবদ্ধ হই, যে কথাটি তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে অভিন্ন। সে কথাটি হল- আমরা
যেন আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত না করি, তাঁর সাথে যেন কাউকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ যেন তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে
প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ না করি। এ কথার পরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বলুন : তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম (আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী)।” -(সূরা আলে ইমরান : ৬৪)
- “বলুন! আমার পালনকর্তা আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত
দ্বীন,
দ্বীনে ইব্রাহীম, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের
অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।” - (সূরা আন’আম : ১৬১)
- “তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক,
তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।” -[আল কুরআনঃ সূরা আল-ইমরানঃ আয়াত ৮৩]
- “কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন চায়
তা কখনো গ্রহন করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” - ( সূরা আলে ইমরান:৮৫)
- “তারা চায়
তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে। কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পূর্ণতা দান
না করে ক্ষান্ত হবেন না, তা কাফেরদের কাছে যতই অপ্রীতিকর হোক না
কেন। আল্লাহই তার রসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে
সকল প্রকার দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ
করুক না কেন।” -(সুরা তাওবা,৩২-৩৩)
- "হে ইমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি দ্বীন থেকে
বিমুখ হয়ে যায়, (তাহলে) অচিরেই আল্লাহ তা'আলা এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে আল্লাহ্
তা'আলা ভালবাসবেন এবং তারাও আল্লাহ্ তা'আলাকে ভালবাসবে। তারা হবে মুমিনদের প্রতি বিনয়-নম্র এবং কাফেরদের প্রতি
হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ তা'আলা সু প্রশস্ত, মহাজ্ঞানী।"
-{সুরা মায়িদাহঃ ৫৪}
- “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) বিধিবদ্ধ করে
দিয়েছেন; (তা হচ্ছে ঐই জীবন ব্যবস্থা) যার ব্যাপারে
তিনি নূহ (আ:) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আমি (আল্লাহ) তোমার কাছে যে ওহী
পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম
তা হল, তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এই ব্যাপারে একে অপরের
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” -(সূরা শু’রা ২৬:১৩)
-“আর তাদেরকে এই
মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর দ্বীনের প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে কেবল তাঁরই ইবাদাত করে;
আর তারা যেন (একাগ্রচিত্তে) নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে
আর এটাই হলো সঠিক ও সুদৃঢ় বিধান।” - (সূরা বাইইয়্যেনাহঃ ৫)
-“ হে ঈমানদার
গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর
না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। অতঃপর তোমাদের মাঝে পরিস্কার
নির্দেশ এসে গেছে বলে জানার পরেও যদি তোমরা পদস্খলিত হও, তাহলে নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ,
পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।” -[সূরা
বাকারাহঃ আয়াত ২০৮-২০৯]
- “হে
ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করো
না। আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে একত্রে শক্তভাবে আকড়ে ধরো এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” - (সূরা আল ইমরান : ১০২-১০৩)
বিভিন্ন প্রকার শিরকের বিবরণঃ
ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শরীক করাঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “(হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমি তো একজন মানুষ তোমাদেরই মতো, আমার প্রতি অহী করা হয় এ মর্মে যে, এক আল্লাহ তোমাদের ইলাহ, কাজেই যে তার রবের
সাক্ষাতের প্রত্যাশী তার সৎকাজ করা উচিত এবং বন্দেগীর ক্ষেত্রে নিজের রবের সাথে কাউকে
শরীক করা উচিত নয়”। -[সুরা আল কাহফ : আয়াত ১১০]
অবিশ্বাসীদের
সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তার
সংঙ্গীগণের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যাতীত যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা এক
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।”-(সূরা মুমতাহানাহঃ ৪)
তিনি আরও বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।
তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তোমাদের
কাছে যে সত্য আগমণ করেছে, তারা তা অস্বীকার করছে। তারা
রাসূলকে এবং তোমাদেরকে বহিস্কার করে, এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি
লাভের জন্যে এবং আমার পথে জেহাদকরার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে
কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণকরছ? তোমরা যা
গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, তা আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে
যে এটা করে, সে সরল পথহতে বিচ্যুত হয়ে যায়।” -(সূরা মুমতাহানাহঃ ১)
ভালবাসায় আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করাঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের
প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি
ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায়
বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন-কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই
উপলব্ধি করে নিত যে,
যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে
কঠিনতর।”
-(সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ৯৬)
তাওয়াক্কুলের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শরীক করাঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না। আর যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর উপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত। -[আল কুরআন: সূরা আলে- ইমরান, আয়াত ১৬০]
জীবন-মৃত্যর ব্যপারে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত
রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান
দেবো”। - [আল কুরআনঃ সূরা আল-ইমরানঃ
আয়াত ১৪৫]
তিনি আরও বলেনঃ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কাফের হয়েছে এবং নিজেদের ভাই বন্ধুরা যখন কোন অভিযানে
বের হয় কিংবা জেহাদে যায়,
তখন তাদের সম্পর্কে বলে, তারা যদি আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে মরতোও না আহতও
হতো না। যাতে তারা এ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মনে অনুতাপ সৃষ্টি করতে পারে।
অথচ আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তোমাদের সমস্ত কাজই, তোমরা যা কিছুই কর না কেন, আল্লাহ সবকিছুই দেখেন। -(সূরা আলে-ইমরানঃ ১৫৬)
লোক দেখানো ইবাদাতের মাধ্যমে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ আর সে সমস্ত লোক যারা ব্যয়
করে স্বীয় ধন-সম্পদ লোক-দেখানোর উদ্দেশে এবং যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না, ঈমান আনে না কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং শয়তান যার সাথী হয় সে হল
নিকৃষ্টতর সাথী। আর কিই বা ক্ষতি হত তাদের যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহর উপর কেয়ামত দিবসের
উপর এবং যদি ব্যয় করত আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক থেকে! অথচ আল্লাহ, তাদের ব্যাপারে যথার্থভাবেই অবগত। নিশ্চয়ই আল্লাহ কারো প্রাপ্য
হক বিন্দু-বিসর্গও রাখেন না; আর যদি তা সৎকর্ম
হয়,
তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান
করেন। -[সূরা নিসাঃ আয়াত ৩৮-৪০]
জীবন-বিধান গ্রহণের ক্ষেত্রে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। এবং যাদের
প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষ বশত, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত
যে,
নিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত। -[সুরা আলে
ইমরান: ১৯]
আল্লাহর ইবাদাতের সাথে সাথে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শিরক
করাঃ মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : "মানুষের
মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে গেলে আল্লাহর এবাদত করে। যদি সে কল্যাণ
প্রাপ্ত হয়, তবে এবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন
পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও
পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি। সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে,
যে তার অপকার করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। এটাই চরম
পথভ্রষ্টতা।" -[সূরা হাজ্জঃ ১১-১২]
আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। -[আল কুরআনঃ সূরা আল-ইমরানঃ আয়াত ৮৩]
হযরত উম্মে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য
চলবে না”। -( জামেউল আহাদীস: ১৩৪০৫, মুয়াত্তা: ১০, মু’জামূল কাবীর: ৩৮১, মুসনাদে শিহাব: ৮৭৩ আবি শাইবা: ৩৩৭১৭, কানযুল
উম্মাল: ১৪৮৭৫)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: গুনাহের কাজে কোনো আনুগত্য নাই , আনুগত্য শুধু নেক কাজে ব্যাপারে ॥ -[ বুখারী ও মুসলিম]
দুয়া বা
প্রার্থনার ক্ষেত্রে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও
সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ
উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি
তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে
না। অন্বেষণকারী ও যার কাছে অন্বেষণ করা হয়
উভয়েই দুর্বল। (সূরা হজ : আয়াত ৭৩)
তিনি আরও বলেন :
সত্যের আহ্বান তাঁরই, আর যারা তাকে
ছাড়া অন্যদেরকে ডাকে, তারা তাদের ডাকে
সামান্যও সাড়া দিতে পারে না, বরং (তাদের দৃষ্টান্ত) ঐ ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে তার দু’হাত বাড়িয়ে দেয় যেন তা তার মুখে পৌঁছে অথচ তা তার কাছে
পৌঁছবার নয়। আর কাফেরদের ডাক তো শুধু ভ্রষ্টতায়
পর্যবসিত হয়।(সূরা রাদ : আয়াত
১৪)
আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি ঈমান ও একনিষ্ঠ ইবাদাতের ইহকালীন ফজিলতঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : তোমাদের
মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে
ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খিলাফাত বা
শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে
এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের
জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন।
তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে,
তারাই অবাধ্য। -(সূরা নূরঃ ৫৫)
তিনি আরও বলেন : যদি জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে
আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকতসমূহের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা তো
প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই তারা যে অসৎকাজ করে যাচ্ছিলো তার জন্য আমি তাদেরকে
পাকড়াও করেছি। জনপদের লোকেরা কি এখন এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার শাস্তি কখনো অকস্মাত রাত্রিকালে তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন? -(সূরা আরাফঃ ৯৬)
আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি ঈমান ও একনিষ্ঠ ইবাদাতের পরকালীন ফজিলতঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং স্বীয় পালনকর্তার প্রতি বিনয়াবনত তারাই
বেহেশতবাসী,
সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে”। -[আল কুরআন: সূরা হূদ, আয়াত ২৩]
আল্লাহ তা’য়ালার
ইবাদাতের দিকে মানব জাতির প্রতি মহান প্রভুর নসিহত : আল্লাহ তা’য়ালা স্বয়ং তাঁর
ইবাদাতের দিকে মানব জাতিকে সুন্দর সুন্দর যুক্তি সহকারে নসিহত করেছেন। আল-কুরআনের
বিভিন্ন জায়গায় এরূপ অসংখ্য নসিহত বিদ্যমান। যেমন-
মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “হে
মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন।
তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে। যে
পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে
দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল
উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে
তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না।” বস্তুতঃ এসব তোমরা জান। -[সূরা বাকারাঃ আয়াত ২১-২২]
তিনি আরও বলেন : “নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি
তৈরী করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর
অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পাবে না তবে তাঁর
অনুমতি ছাড়া ইনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা
তাঁরই এবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না ? তাঁর কাছেই
ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, তিনিই সৃষ্টি করেন প্রথমবার আবার পুনর্বার তৈরী করবেন তাদেরকে বদলা দেয়ার
জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে ইনসাফের সাথে। আর যারা কাফের হয়েছে,
তাদের পান করতে হবে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করতে হবে যন্ত্রনাদায়ক আযাব
এ জন্যে যে, তারা কুফরী করছিল।" -[আল-কুরআন; ১০:৩,৪]
তিনি আরও বলেন : "কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে
কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই
তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায়
তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। তিনিই সে সত্ত্বা
যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি
মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ
সর্ববিষয়ে অবহিত।" -[সূরা বাকারা:২৮-২৯]
তিনি আরও বলেন : “আল্লাহ ব্যতীত আর কোনোই উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন
কেয়ামতের দিন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাছাড়া আল্লাহর
চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে”! -[সূরা নিসাঃ আয়াত ৮৭]
তিনি আরও বলেন : “হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে,
যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন
উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব
জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন
তোমাদেরকে প্রতারিত না করে”। -[সূরা লোকমানঃ ৩৩]
তিনি আরও বলেন : “তোমরা
তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সেই (প্রতিশ্রুত) ক্ষমা ও চিরন্তন জান্নাত পাওয়ার
জন্যে ধাবিত হও (এমন জান্নাত) যার আয়তন আসমান-যমীনের সমান প্রশস্ত তা প্রস্তুত
করে রাখা হয়েছে সেসব মানুষদের জন্যে যারা আল্লাহ্ তায়ালা ও তার (পাঠানো) রসূলদের ওপর ঈমান এনেছে, (মূলত)
এ-হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার এক অনুগ্রহ, যাকে তিনি চান তাকেই
তিনি এ অনুগ্রহ প্রদান করেন; আর আল্লাহ্ তায়ালা হচ্ছেন মহা
অনুগ্রহশীল”। -(সূরা-আল
হাদীদ : ২১)
আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদাত পরিত্যাগ করার ভয়াবহ পরিণামঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : “তারা কি দেখেনি তাদের পূর্বে এমনি ধরনের কত মানব গোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যারা নিজ নিজ যুগে ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপশালী? পৃথিবীতে তাদেরকে এমন কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকেও দেইনি। তাদের ওপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ
করেছিলাম এবং তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম। (কিন্তু যখন তারা নিয়ামতের প্রতি
অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করলো তখন) অবশেষে তাদের গোনাহের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং
তাদের জায়গায় পরবর্তী যুগের মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছি”। -(সূরা আনআমঃ ০৬)
তিনি আরও বলেন : “আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের
কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস,
কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি
ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না;
কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে। যারা আল্লাহর
পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপেগ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব
ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত।” -(সূরা আল আনকাবুতঃ ৪০-৪১)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সকল প্রকার তাগুতকে অমান্য করে
শুধুমাত্র তাঁর মহান দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করার মাধ্যমে প্রকৃত বান্দা হওয়ার এবং
খিলাফাতের মর্যাদায় ইবাদাত করার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।

অনেক তথ্যসমৃদ্ধ ও তাগুত শিরক এর পরিচ্ছন্ন ধারনা সংবলিত
ReplyDeleteআল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
ReplyDelete