Saturday, May 31, 2014

পারিবারিক জীবনে মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার


পারিবারিক জীবনে মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীনদুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাইআমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।

পারিবারিক জীবনের অন্যতম দায়িত্ব হল মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। মানব সমাজের কতিপয় কুলাংগারকে দেখা যায় যে, বিবাহ করার পর তারা স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে মহানন্দে জীবন-যাপন করে আর মাতা-পিতাকে ভুলে যায়। অথচ আল্লাহ তায়ালা কেবলমাত্র তাঁর ইবাদাত করার সাথে সাথে মানুষদেরকে মাতা-পিতার সাথে সর্বোত্তম ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসংগে মহান রব্বুল আলামীন বলেন :

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

- আপনার প্রভু নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। মাতা-পিতার মধ্যে একজন অথবা উভয়ই বৃদ্ধ হয়ে গেলে তোমরা তাদেরকে উহপর্যন্ত বলবে না, তাদেরকে ধমক দিবে না বরং তাদের সঙ্গে সম্মানের সাথে কথা বলবে, বিনয় ও নম্রতা সহকারে তাদের সামনে অবনত থাকবে এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করতে থাকবে- হে আমাদের রব! আমার মা-বাবার উপর দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তারা আমার উপর দয়া করেছিলেন। -(সূরা বানী ইসরাঈল : ২৩ -২৪)

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

-আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে আর তাকে একাধারে দুই বছর দুধ পান করিয়েছে। কাজেই তোমরা আমার প্রতি এবং তোমার মাতাপিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। তোমাদের ফিরে আসা তো আমার নিকটেই।” (সূরা লুকমান : ১৪)

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

- আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থের বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।” – (সূরা আল-আহকাফঃ ১৫)

পিতা-মাতার খেদমত কোন কোন সময় জিহাদের চেয়েও অধিক মর্যাদাবানঃ ইসলামে পিতা-মাতার খেদমত ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব এতো বেশি যে, জিহাদ ফরযে কেফায়ার স্তরে থাকা পর্যন্ত পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া সন্তানের জন্য জিহাদে অংশ গ্রহণ করা জায়েয নয়। অবশ্য ফরজে আইন হলে সতন্ত্র কথা। আর সে ক্ষেত্রে মুসলিম মাতা-পিতা তখন শুধু সানন্দে অনুমতি প্রদানই নয়, নির্দেশ প্রদান করবেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী  সল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াছাল্লামের সামনে এসে বলল, আমি আপনার কাছে জিহাদ ও হিজরত করার বাইয়াত করতে চাই এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রতিদানের আশা রাখি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছে? সে বলল- হাঁ, বরং উভয়ই। তিনি বললেন : এরপরও তুমি প্রতিদানের আশা কর? সে বলল- হাঁ। তিনি বললেন : পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। -(বুখারী ও মুসলিম)

মাতা হল সন্তানের উপর সর্বাধিক হকদারঃ পরিবার ও সমাজের মধ্যে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে তারতম্য রয়েছে। যদিও মুমীনগন সবার সাথেই উত্তম আচরণ করবেন, তবুও সর্বাবস্থায় হক বা অধিকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হল :

হযরত বাহয ইবনে হাকিমের দাদা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কার সাথে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন : তোমার মায়ের সাথে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেন : তোমার মায়ের সাথে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেন : তোমার মায়ের সাথে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেন : অতঃপর তোমার পিতার সাথে, অতঃপর নিকট আত্মীয়তার ক্রমানুসারে সদ্ব্যবহার করবে। -(তিরমিযীঃ ১৮৪৬)

হজরত ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন : নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এরপর কোনটি? তিনি বললেন : পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এরপর কোনটি? তিনি বললেন : আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। এরপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু বলা থেকে নিরব থাকেন। আমি যদি তাকে আরও জিজ্ঞেস করতাম, তবে নিশ্চয়ই তিনি আমাকে আরও জানাতেন। -(তিরমিযী-১৮৪৭ : হাসান ও সহীহ্)

পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া বা অসদাচরণ করা কবিরা গুনাহঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী  সল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কবীরাহ গুনাহসমূহ হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কোন মানুষকে হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা। (বুখারী)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতা-মাতাকে গালিগালাজ করা কবীরা গুনাহ। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রসূল! কোন ব্যক্তি কি তার পিতা-মাতাকে গালিগালাজ করতে পারে? তিনি বললেন : হাঁ। কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয়। প্রত্যুত্তরে সেও তার পিতাকে গালি দেয়॥ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, এর উত্তরে ঐ ব্যক্তিও তার মাকে গালি দেয়। -(বুখারী, মুসলিম তিরমিযী-১৮৫১ : সহীহ)

পিতা-মাতা হচ্ছে সন্তানের জন্য জান্নাত অথবা জাহান্নামঃ মাতা-পিতার আনুগত্য ও সেবাযত্ন জান্নাতে নিয়ে যায় এবং তাদের সাথে অসৎ আচরণ ও তাদের অসন্তুষ্টি জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। তাই তাদের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহারের ব্যাপারে সন্তানদের সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এ প্রসংগে হাদীসে এসেছে-

হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতপর বললেন, আমীন, আমীন আমীন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, এটা আপনি কী করলেন? তিনি বললেন, জিবরীল আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যার সামনে রমযান প্রবেশ করলো অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। আমি শুনে বললাম, আমীন (আল্লাহ কবূল করুন) এরপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যার সামনে আপনার কথা আলোচিত হয় তথাপি সে আপনার ওপর দরূদ পড়ে না। তখন আমি বললাম, আমীন (আল্লাহ কবূল করুন) অতপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যে তার পিতামাতা বা তাঁদের একজনকে পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না। তখন আমি বললাম, আমীন (আল্লাহ কবূল করুন) -[বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ : ৬৪৬; সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৮৮৮; বাইহাকী : ৮২৮৭]

হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি-মলিন হোক. ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি-মলিন হোক. ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি-মলিন হোক. যে তার মিতা-মাতার উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও জান্নাতে যেতে পারল না। -(সহীহ মুসলিম)

হযরত আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বললেন, আমার স্ত্রীকে আমার মা তালাক দেয়ার জন্য আদেশ দিচ্ছেন, তখন আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বর্ণনা করতে শুনেছি, পিতা-মাতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমাদের ইচ্ছে, এর হেফাজত করো অথবা একে বিনষ্ট করে দাও। -(তিরমিযী শরীফঃ ২/১২)

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতা-মাতা হচ্ছে, জান্নাতের দরজা সমূহের মধ্যম দরজা। অতএব তুমি ইচ্ছা করলে, সেই দরজা নষ্ট কর বা সংরক্ষণ কর। -[ সুনানে তিরমিযি: ১৯০০]

অন্য এক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত। -(তিরমিযী শরীফ-২/১২)

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার দায়িত্ব কী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তারা উভয়েই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। -(ইবনে মাজাহ, পৃ-২৬০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নেককার সন্তান যখন স্বীয় মাতা-পিতার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায় তখন আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি মকবুল হজ লিপিবদ্ধ করে দেনসাহাবিগণ আরয করলেন, যদি সে দৈনিক একশত বার এভাবে তাকায়? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ” (প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে সে এই সাওয়াব পেতে থাকবে) আল্লাহ অতি মহান, অতি পবিত্র তাঁর ভাণ্ডারে কোন অভাব নেই -[বায়হাকী]

মাতা-পিতার মৃত্যুর পরও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার দায়িত্বঃ মাতা-পিতার মৃত্যুর পরও তাদের সাথে সন্তানদের সদ্ব্যবহার করার দায়িত্ব রয়েছে। তাই তাদের মৃত্যু পরবর্তী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রও সন্তানদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এ প্রসংগে হাদীসে এসেছে-

হযরত আবু উসাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় বানু সালমা নামক গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার দায়িত্ব আমার উপর রয়েছে কি, তা কিভাবে করব? তিনি বললেন : হাঁ, তুমি তাদের জন্য দোয়া করবে, তাদের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে, তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এজন্য যে এরা তাদেরই আত্মীয় এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। -(আবু দাউদ : সহীহ)

হযরত মুহাম্মাদ ইবনে নুমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুক্রবারে তার পিতা-মাতা বা তাদের যে কোন একজনের কবর জিয়ারত করবে তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে পিতা-মাতার বাধ্য সন্তান হিসেবে লিখে দেয়া হবে। -[বায়হাকী]

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতেই বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন লোক নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এসে বললো, আমার মা হঠাৎ মার যান। আমার ধারণা, যদি তিনি কথা বলার সযোগ পেতেন, তাহলে সাদ্কা দিতেন, এখন আমি যদি তার পক্ষ তেকে সাদ্কা দেই, তাহলে আমি প্রতিদান পাবো কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পাবে। -[ সহিহ মুসলিম : হাদিস ৪০০২]

আল্লাহ তায়ালার নাফারমানীমূলক কাজে কোনো আনুগত্য নাইঃ মাতা-পিতা যদি আল্লাহ তায়ালার মনোনীত দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করার জন্য বা আল্লাহর সাথে শরীক করার জন্য বা ইসলামের কোন অলংঘনীয় বিধান লংঘন করার জন্য সন্তানদের উপর চাপ প্রয়োগ করে তাহলে তা মান্য করা যাবে না। কিন্তু তাদের সাথে সুন্দর আচরণ ও সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন :

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

- আমি মানুষকে তার মাতাপিতার সাথে সুন্দর আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছি। তবে মাতা-পিতা যদি আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে তোমার উপর চাপ দেয় যার জ্ঞান তোমার নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মেনো না। তোমাদের ফিরে আসা নিশ্চিতভাবে আমারই নিকট। এরপর আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, তোমরা কী করছিলে। -(সূরা আনকাবুত : ৮)

মাতা-পিতার সন্তুষ্টির জন্য সন্তানগণ তাঁদের আনুগত্য করবে। কিন্তু মাতা-পিতা যদি আল্লাহর নাফারমানীমূলক কোন কাজে সন্তানদের উপর চাপ প্রয়োগ করে তখন তাদের সন্তুষ্টির জন্য আনুগত্য করা যাবে না। কারণ, স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য চলবে না। যেমন-

হযরত উম্মে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য চলবে না -(  জামেউল আহাদীস: ১৩৪০৫, মুয়াত্তা: ১০, মুজামূল কাবীর: ৩৮১, মুসনাদে শিহাব: ৮৭৩ আবি শাইবা: ৩৩৭১৭, কানযুল উম্মাল: ১৪৮৭৫)

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।  নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:  গুনাহের কাজে কোনো আনুগত্য নাই , আনুগত্য শুধু নেক কাজে ব্যাপারে -[ বুখারী ও মুসলিম]

অমুসলিম মাতা-পিতার সাথে সদাচরণঃ হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট আসলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মা আমার নিকট দেখা করতে আসেন, আমি কি তার সাথে সদাচরণ করতে পারবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ! তার সাথে সদ্ব্যবহার করো। -(বুখারী শরীফঃ ২/৮৮৪)

বর্তমান সময়ে সমাজে পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক শরীয়াত ও মানবতার মানদন্ডে খুবই নাজুক। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে পারিবারিক জীবনে তাঁর সন্তোষ মোতাবেক পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।


No comments:

Post a Comment