পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর
পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন
(র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া
কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ
(সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
ইসলামী কল্যাণময় সমাজে কুরআন ও ছুন্নাহ মোতাবেক বিবাহের
মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের যাত্রা শুরু করতে হবে। পারবারিক জীবনকে আল্লাহর সন্তোষ
মোতাবেক সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-গণের
পরিবারের ন্যায় আদর্শ পরিবার হিসাবে গঠন
করতে হলে পারিবরিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে পরিস্কার
ধারণা থাকতে হবে। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী সদ্ভাবে জীবনযাপন প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُواْ النِّسَاء كَرْهًا وَلاَ
تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُواْ بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلاَّ أَن يَأْتِينَ
بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ
فَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا০
- মুমিনগণ! নারীদেরকে জোর করে উত্তরাধিকারী বানানো তোমাদের
জন্য হালাল নয়। তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার জন্য তাদেরকে
আটক করে রেখ না, যদি না তারা স্পষ্টভাবে ব্যভিচার করে।
তাদের সাথে সৎভাবে জীবনযাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের জন্য যার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই
অপছন্দ করলে! -(সূরা নিসা : ১৯)। স্ত্রীর মোহর আদায় প্রসংগে
আল্লাহ বলেন :
وَآتُواْ النَّسَاء
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ
هَنِيئًا مَّرِيئً০
- তোমরা স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফুর্তভাবে স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর
দিয়ে দাও। তবে তারা যদি খুশি হয়ে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তাহলে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে ভোগ কর। -(সূরা নিসা : ৪)
পরিবারের মাঝে কর্তৃত্ব,
ভরন-পোষণ ও পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসার প্রসংগে আল্লাহ
তায়ালা বলেন :
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ
عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ
مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ
اللّهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ
وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللّهَ
كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا০ وَإِنْ
خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُواْ حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ
أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلاَحًا يُوَفِّقِ اللّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللّهَ كَانَ
عَلِيمًا خَبِيرًا০
-পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। কেননা আল্লাহ তাদের
একজনের উপর অন্যজনকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এ জন্য যে, পুরুষেরা তাদের স্ত্রীদের জন্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সৎকর্মশীল নারীরা
অনুগত হয়। আল্লাহ তাদেরকে যা হিফাযত করতে বলেছেন তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে তা হিফাযত
করে। স্ত্রীদের মধ্যে তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সুন্দর উপদেশ দাও, তাদের শয্যা বর্জন কর এবং প্রয়োজনে তাদের প্রহার কর। এরপর যদি তারা অনুগত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে
অন্য কোন পথ অন্বেষণ কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ উচ্চমর্যাদাশীল, মহান। আর তাদের মধ্যে বিরোধ আশংকা করলে স্বামীর পরিবার থেকে
একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে
আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি তৈরি করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, খবর রাখেন। -(নিসা : ৩৪-৩৫)
তিনি আরও বলেন :
"যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা
করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের
উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম।" –[সূরা আন
নিসাঃ ১২৮]
পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার
পারস্পরিক অধিকারঃ হযরত আমর ইবনুল
আহওয়াস আলজুশামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্র্ণিত। তিনি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে
শুনেছেন,
তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন, লোকদেরকে নসীহত করলেন এবং বললেন : তোমরা মেয়েদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। কেননা
তারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা লাভ করা ছাড়া
অন্য কিছুর মালিক নও। কিন্তু হাঁ যদি তারা প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয় তবে
তোমাদের বিছানা থেকে তাদেরকে (ঘরের ভিতরেই) পৃথক করে দাও এবং তাদেরকে মারধর কর, কিন্তু কঠোরভাবে নয়। অতঃপর যদি তারা তোমদের অনুগত হয়ে যায়
তবে তাদের (কষ্ট দেয়ার) জন্য বিকল্প পথ অনুসন্ধান করো না। সাবধান! তোমদের
স্ত্রীদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপরও তাদের তেমন অধিকার রয়েছে। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হল : তারা
তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিদের দ্বারা তোমাদের বিছানা কলুষিত করবে না এবং অনাকাংখিত
কোন ব্যক্তিকে তোমাদের বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেবে না। তোমাদের উপর তাদের অধিকার
হল : তোমরা তাদের খাওয়া-পরার উত্তম ব্যবস্থা করবে। -(তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)
স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার : হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন : তোমরা আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে ব্যবহারের শিক্ষা গ্রহণ কর। কেননা নারী
জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের
হাড়টা সর্বাধিক বাঁকা। অতএব তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তবে ভেংগে ফেলার আশংকা
রয়েছে আর যদি ফেলে রাখ তাহলে বাঁকা হতেই থাকবে। অতএব তোমরা নারীদের সাথে ভাল
ব্যবহার কর। -(বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায়ঃ মেয়েরা
পাঁজরের বাঁকা হাড়ের সমতুল্য। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও ভেংগে ফেলবে। অতএব তুমি
যদি তার থেকে কাজ আদায় করতে চাও তবে তার এ বাঁকা অবস্থায়ই কাজ আদায় কর। -(বুখারী ও
মুসলিম)
নেককার স্ত্রীর বৈশিষ্ট ও মর্যাদাঃ হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুমিনের জন্য
আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই। কারণ স্বামী
তাকে আদেশ করলে সে আনুগত্য করে, তার দিকে
দৃষ্টিপাত করলে সে (স্বামী) মুগ্ধ হয়। তাকে নিয়ে শপথ করলে সে তা (শপথকৃত কর্ম)
পূরণ করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে (অন্যায়-অপকর্ম থেকে) এবং স্বামীর সম্পদ
সংরক্ষণ করে। -{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫৭}
পারিবারিক জীবনে স্ত্রীদের বিশেষ অধিকার
ইসলামের বিধান মোমাবেক স্ত্রীদের সাথে বন্ধু সুলভ উত্তম
ব্যবহারঃ হযরত মুয়াবিয়া
ইবনে দাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্র্ণিত। তিনি বলেন,
আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কোন ব্যক্তির উপর তার স্ত্রীর কি কি
অধিকার রয়েছে?
তিনি বলেন : তুমি যখন আহার কর তাকেও আহার করাও, তুমি যখন পরিধান কর তাকেও পরিধান করাও, কখনও তার মুখমন্ডলে প্রহার করো না, কখনও অশ্লীল ভাষায় গালি দিও না এবং ঘরের মধ্যে ছাড়া তার
থেকে বিচ্ছিন্ন (অভিমানমূলক পৃথক বিছানা)
হয়ো না। -(আবু দাউদ)
হিংসা-বিদ্বেষ-শত্রুতা পরিহারঃ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : কোন মুসলিম পুরুষ যেন কোন মুসলিম নারীর প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা
পোষণ না করে। কেননা তার কোন একটি দিক তার কাছে খারাপ লাগলেও অন্য কোন একটি দিক তার
পছন্দ হবে। অথবা তিনি (নবী) অনুরূপ কথা বলেছেন। -(মুসলিম)
স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহারঃ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তির চরিত্র
ও ব্যবহার সবচেয়ে উত্তম,
ঈমানের দিক থেকে সেই পরিপূর্ণ মুমিন। তোমাদের মধ্যে তারাই
উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। -(তিরমিযী: হাসান ও সহীহ)
স্বাভাবিক খোরপোষঃ হযরত জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা
আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা স্ত্রীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ তারা তোমাদের আশ্রিতা, তাদের তোমরা গ্রহণ করেছ আল্লাহর নিরাপত্তা দ্বারা এবং তাদের
লজ্জাস্থানকে হালাল করেছ আল্লাহর কালিমা দ্বারা। তাদের স্বাভাবিক খোরপোষ তোমাদের
উপর অপরিহার্য। -{সহীহ মুসলিমঃ ২/৮৮৯-৮৯০; জামে তিরমিযীঃ ১১৬৩}
পারিবারিক জীবনে স্বামীদের বিশেষ অধিকার
স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়াঃ হযরত আবু আলী তালক ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : স্বামী যখন কোন প্রয়োজনে
স্ত্রীকে ডাকে,
সে যেন সাথে সাথে তার কাছে চলে আসে, এমনকি চুলার উপর রুটি থাকলেও। (তিরমিযী : হাসান ও সহীহ, নাসাঈ)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন
কোন লোক তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে কিন্তু সে আসে না, ফলে স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, ফিরিশতাগণ তাকে সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে। -(বুখারী ও
মুসলিম)
স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা না রাখা এবং তার ঘরে কাউকে
প্রবেশের অনুমতি না দেয়াঃ হযরত আবু
হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : স্বামী বাড়ীতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া কোন
স্ত্রীলোকের (নফল) রোজা রাখা বৈধ নয়। তার অনুমতি ছাড়া অন্য লোককে তার ঘরে আসার
অনুমতি দেয়াও বৈধ নয়। -(বুখারী ও মুসলিম)
স্ত্রীর জন্য ইসলামের বিধান মোতাবেক স্বীয় স্বামীকে
সন্তুষ্ট রাখাঃ হযরত উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
কোন মহিলা যদি স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মারা যায় সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে। -[সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১১৬১]
সিজদা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি যদি কোন
ব্যক্তিকে (আল্লাহ ব্যতীত) অন্য কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম তাহলে স্ত্রীকে
নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। -(তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)
গুনাহের কাজে স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীর কোনো আনুগত্য
নাইঃ স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রী তাঁর স্বামীর আনুগত্য করবে
এবং মাতা-পিতার সন্তুষ্টির জন্য সন্তানগণ তাঁদের আনুগত্য করবে। কিন্তু স্বামী যদি
কোন আল্লাহর নাফারমানীমূলক কাজে স্ত্রীর উপর চাপ প্রয়োগ করে অথবা মাতা-পিতা যদি
সন্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করে তখন তাদের সন্তুষ্টির জন্য আনুগত্য করা যাবে না। কারণ, স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য চলবে না।
যেমন-
হযরত উম্মে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ স্রষ্টাকে অমান্য করে
সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য চলবে না”। -( জামেউল আহাদীস: ১৩৪০৫, মুয়াত্তা: ১০, মু’জামূল কাবীর: ৩৮১, মুসনাদে শিহাব: ৮৭৩ আবি শাইবা:
৩৩৭১৭, কানযুল উম্মাল: ১৪৮৭৫)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
গুনাহের কাজে কোনো আনুগত্য নাই , আনুগত্য শুধু নেক
কাজে ব্যাপারে ॥ -[ বুখারী ও মুসলিম]
উৎকৃষ্টতম ও নিকৃষ্টতম স্বামী-স্ত্রী
আল্লাহর নিকট মার্যাদার দিক থেকে উৎকৃষ্টতম স্বামী-স্ত্রীঃ হযরত আবু হুরাইরা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা ঐ
ব্যক্তির উপর রহম করবেন,
যে রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করে এবং তার
স্ত্রীকেও নামাযের জন্য জাগায়। তার স্ত্রী যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হতে অস্বীকার করে, তাহলে সে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ্ তাআলা ঐ
মহিলার উপরও রহমত নাযিল করবেন, যে রাতের বেলায়
ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামায কায়েম করে এবং তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায়। সে যদি
জাগ্রত হতে অস্বীকার করে,
তাহলে সে তার স্বামীর চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। -(আবু দাউদ
ও ইবনে মাজাহ )
অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আবু
সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন : যখন কোন লোক রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয় ও তার স্ত্রীকে জাগায় এবং
উভয়ে মিলে দুই রাকআত নামায আদায় করে তখন তাদের উভয়কে আল্লাহর অধিক পরিমাণে
যিকিরকারী এবং যিকিরকারীনীদের তালিকায় লিখে দেয়া হয়। -(নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)
আল্লাহর নিকট আল্লাহর নিকট মার্যাদার দিক থেকে নিকৃষ্টতম
স্বামী-স্ত্রীঃ হযরত আবূ সা’ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মার্যাদার
দিক থেকে নিকৃষ্টতম হবে ঐ ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে শয্যা গ্রহণ করে এবং তার
স্ত্রীও তার সাথে শয্যা গ্রহণ করে, তারপর তাদের পরস্পরের মিলন ও সহবাসের গোপন কথা লোকদের নিকট প্রকাশ করে । - [মুসলিম-১৪৩৭]
দুনিয়ার বুকে মুমীনের জন্য সর্বোত্তম সম্পদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সমগ্র পৃথিবীটাই
সম্পদ। আর পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ হল সৎকর্মপরায়ণা স্ত্রী। -(মুসলিম)
দুনিয়ার বুকে মুমীনের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ফিতনাঃ হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার পরে আমি
পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাইনি। -(ইমাম বুখারী ও
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
জান্নাতী ও
জাহান্নামী মহিলা
যে নারীর মধ্যে হাদিস বর্ণিত পাঁচটি গুণ পাওয়া যাবে সে
জান্নাতী হবেঃ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত
সালাত আদায় করে,
রমযান মাসে রোযা রাখে, স্বীয় লজ্জা-স্থান সংরক্ষণ করে, স্বীয় স্বামীর অনুগত থাকে, কিয়ামতের দিন
তাকে বলা হবে যে,
জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।
-[ইবনে হিব্বান,
সহীহ জামে আসসগীরঃ হাদিস নং-৬৭৩]
অধিক মাত্রায় লানতকারী এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ-অবাধ্য
মহিলা জাহান্নামী হবেঃ হওহযরত
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “হে মহিলাগন! তোমরা দান কর ও বেশি বেশি ইস্তেগফার কর। কেননা
আমি দেখেছি জাহান্নামীদের অধিকাংশই মহিলা। তাদের মধ্য হতে একজন বলল, দোযখবাসীদের অধিকাংশই আমরা মহিলা তার কারণ কি? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা অধিক মাত্রায় লানত/অভিসম্পাত করে থাক এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ ও
অবাধ্য হও। জ্ঞান বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যপারে ক্রুটি থাকা সত্ত্বেও তোমাদের যে কোন
নারী যে কোন বুদ্ধিমান ও চতুর পুরুষকে যেভাবে হতবুদ্ধি করে দেয় তা আমি আর কোথাও
দেখিনি। মহিলাটি পুনরায় জিজ্ঞাস করেন, জ্ঞান বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যপারে আমাদের ত্রুটি অপূর্ণতা কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দুজন স্ত্রী-লোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষ ব্যক্তির সমান আর
ঋতুকালীন সময়ে কয়েকদিন তোমরা সালাত কায়েম করতে পার না”। -(সহীহ মুসলিম)
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর কল্যাণময় বিধান অনুধাবন
করার এবং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবনের সকল
ক্ষেত্রে মেনে চলার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।

No comments:
Post a Comment