বিপদ-আপদ ও মুসিবত
থেকে হেফাজতের পথ
ডাঃ গাজী মোঃ
নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি
রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
প্রতি, তার
পরিবারবর্গ, বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি
কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন এবং সাহাবা
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।
জীবনের
সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাবের বিধান মেনেচলাঃ মহান আল্লাহ
রব্বুল আ’লামীন বলেন : “আর যে আমার জিকির (কুরআন)
থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ করা হবে এবং আমি
কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে- হে আমার রব! আমাকে কেন অন্ধ
করে উঠালেন, আমিতো (দুনিয়ায়) চুক্ষষ্মান ছিলাম। তিনি (আল্লাহ)
বলবেন : যেমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে, তেমনিভাবে আজ তোমাকেও
ভুলে যাওয়া হবে।” -(সূরা ত্ব-হা : আয়াত১২৪-১২৬)
জীবনের
সর্বক্ষেত্রে সুন্নাহ-কে মজবুতভাবে আঁকড়ে থাকাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত
প্রসংগেঃ হযরত মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে
যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে
না: আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ”। -[ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৩৩৩৮]
খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত ইরবায বিন
সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন
আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন
মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু
সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের
আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন।
কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার
সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে
ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন
সৃষ্টিসমূহ হ’তে দূরে থাকবে। কেননা
(দ্বীনের মধ্যে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হ’ল বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আত হ’ল পথভ্রষ্টতা।’ -[আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ]
সাহাবাগণের
সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর
দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে
যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারা? রসূলুলাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের ছুন্নাতের উপর
কায়েম থাকবে।” - (তিরমিযীঃ ২৫৭৮, আবু দাউদ, তারগীবঃ ৪৮)
পরিপূর্ণভাবে
ইসলামে দাখিল হওয়াঃ
তিনি আরও বলেন : “তোমরা
কি ধর্মগ্রন্থের অংশবিশেষে বিশ্বাস কর ও অন্য অংশে অবিশ্বাস পোষণ কর? অতএব
তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কী পুরস্কার আছে?
আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত পাঠানো হবে কঠোরতম শাস্তিতে। আর
তোমরা যা করছো আল্লাহ্ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন।” -(সূরা বাকারাহঃ আয়াত-৮৫)
উম্মাহর মাঝে
বিরামহীন সংশোধনী প্রয়াসঃ
মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বলেন : “তোমাদের
আগে যে সকল জাতি চলে গিয়েছে তাদের মধ্যে এমন লোক কেন থাকল না, যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা দিতে পারত? তবে
কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া, যাদেরকে আমি তাদের মধ্য থেকে রক্ষা
করেছিলাম। আর যালিমদেরকে যে ঐশ্বর্য্য দেয়া হয়েছিল সেগুলো নিয়েই তারা মেতে রইল, তারা ছিল
পাপাচারী। আপনার প্রভু এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে এমন জনপদ ধ্বংস করে দেবেন যার অধিবাসীরা
সংশোধনরত।” -(সূরা হূদঃ আয়াত ১১৬-১১৭)
ধৈর্য্য ও
নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনাঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন
বলেনঃ হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে
সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। আর যারা
আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত,
কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। [সূরা বাক্বারাহঃ ১৫৩-১৫৪]
সর্বাবস্থায়
আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করাঃ মহান আল্লাহ
তায়ালা বলেনঃ “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে
নিস্কৃতির পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দিবেন। যে ব্যক্তি
আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তার কাজ পূর্ণ করবেন।
আল্লাহ্ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” -[সূরা
ত্বালাক, আয়াত ২-৩]
সর্বদা কল্যাণকর কাজে আত্ম নিয়োগ করাঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
ফিতনা ফাসাদও বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই তোমরা কল্যাণকর কাজে আত্ম নিয়োগ করো। এ বিপর্যয় তোমাদেরকে
অন্ধকার রাতের মতো গ্রাস করে নেবে। কোন ব্যক্তির ভোর হবে মুমিন অবস্থায় আর সন্ধ্যা হবে কাফের
অবস্থায়। আর তার সন্ধ্যা হবে মুমিন অবস্থায় আর সকাল হবে কাফের
অবস্থায়। মানুষ দুনিয়ার সামান্যতম স্বার্থের বিনিময়ে নিজের দ্বীনকে
বিকিয়ে দেবে। -(মুসলিমঃ হাদীস নং ২২১)
লোভ-লালসা থেকে আত্মরক্ষা এবং ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক থাকাঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “দুনিয়াটা একটা
শ্যামল সবুজ সুমিষ্ট বস্তু। আল্লাহ এখানে তোমাদের প্রতিনিধি বানিয়ে পাঠিয়েছেন এবং তোমরা কি করছো তা দেখছেন। সুতরাং, এই দুনিয়ায়
নিজেদের-কে লোভ-লালসা থেকে আত্মরক্ষা করো এবং ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক
থাকো।” -[মুসলিম]
সদা-সর্বদা তওবা ও ইস্তেগফার করাঃ হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে সব ধরণের বিপদাপদ হতে মুক্ত করবেন, সব রকমের দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করবেন এবং এমন উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা
করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। -[আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ]
উম্মতের মধ্য সর্বদাই হক্বের পক্ষে সংগ্রাম করাঃ হযরত জাবির
ইবনে আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হক্বের পক্ষে
লড়াই করবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা বিজয়ী থাকবে। -(মুসলিম : হাদীস নং-৫০৬৩)
একই বিষয়েঃ
হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমার
উম্মাতের একদল লোক সর্বদা সত্যের (দীনে হকের) ওপর বিজয়ী হয়ে থাকবে। যারা তাদের
সহায়তা করা ছেড়ে দেবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহর নির্দেশ
(কিয়ামত) আসা পর্যন্ত তারা এভাবেই হকের ওপর অবিচল থাকবে। - (মুসলিমঃ হাদীস
নং-৪৭৯৮)
অনুরূপ বর্ণনাঃ
হযরত সাওবান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি
গুমরাহকারী বাদশাহদেরকে
ভয় করছি
এবং তিনি
আরো বলেন
কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত
আমার উম্মতের
একটা দল
সর্বদা হকের
উপর কায়েম
থাকবে। তাঁরা
সর্বদা দ্বীনের উপর
কায়েম থাকবেন
ও কামিয়াব
হবেন, তাঁদেরকে
কেউ কোন
প্রকার ক্ষতি করতে
পারবে না। তিরমিজী
শরীফঃ ২য় খন্ড,
পৃষ্ঠা- ৪৭
বিপদ- আপদ থেকে মুক্তির জন্য কতিপয় দোয়ার আমল করাঃ দুনিয়ার বুকে বিপদ-আপদ থেকে হেফাজতের জন্য পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক
গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে। সেখান থেকে সহজে আমল যোগ্য কয়েকটি ছোট ছোট দোয়া সবার
বিবেচনা ও আমলের জন্য পেশ করা হল-
সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে হিফাজতের দোয়াঃ হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে কোন বান্দা প্রতিদিন সকালে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় তিনবার
করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।
بِسْمِ اللّهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي
الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ
অর্থাৎ আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমীনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না,
তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। -(তিরমিযী-৩৩২৪ : হাসান ও সহীহ, আবু দাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ্)
কোন সম্প্রদায় থেকে ক্ষতির আশংকা হলে দোয়াঃ হযরত আবু মুসা আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ
হওয়ার আশংকা করতেন তখন বলতেন :
اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ
بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ
(হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা
থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)- আবু দাউদ ও নাসাই।
বিপদগ্রস্থ বা রোগাগ্রস্থ ব্যক্তিকে দেখে দোয়াঃ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে
ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্থ বা ব্যাধিগ্রস্থ লোককে দেখে বলে-
اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِه
وَفَضَّلَنِيْ عَلى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا
(সমস্ত প্রসংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন
তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তার বহু সংখ্যক সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন)-
সে কখনো উক্ত বিপদ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না। -তিরমিযী : হাসান।
মুসিবতের সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত উম্মে সালমা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : কোন
ব্যক্তির উপর কোন বিপদ এলে যদি সে বলে-
إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ - اَللّهُمَّ أَجِرْنِيْ
فِيْ مُصِيْبَتِيْ وَأَخْلُفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا
(আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ!
বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চাইতে ভাল বস্তু দান করুন)-
মহান আল্লাহ তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চাইতে
উত্তম বস্তু দেন। -(সহীহ মুসলিম)
বিপদের সময় পাঠ করার দোয়াঃ হযরত ইবনে আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদের সময় দোয়া করতেন
:
لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ الْحَلِيْمُ الْحَكِيْمُ لَا إِلهَ
إِلَّا اللّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ رَبُّ السَّموَاتِ
وَالْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمُ
- (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি পরম সহিষ্ণু
ও মহা জ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি আকাশমন্ডলী, জমীন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু)- [বুখারী,
মুসলিম, তিরমিযী, নাসাই ও
ইবনে মাজাহ]
বিপদের সময় দোয়া ইউনুস পাঠ এবং এর ফজিলতঃ হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন : আল্লাহর নবী যুন-নুন (ইউনুস আলাইহিসসালাম) মাছের পেটে অবস্থান কালে যে দোয়া
করেছিলেন তা হল :
لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
(তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তুমি পবিত্র,
নিশ্চয়ই আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত)। কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন বিষয়ে এ দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই
তা কবুল করেন। -(তিরমিযী ও নাসাই)
দেনার বিপদ থেকে মুক্তির দোয়াঃ হযরত আলী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। একটি চুক্তিবদ্ধ
দাস তার কাছে এসে বলে, আমি আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধে অপারগ হয়ে
পড়েছি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এমন একটি
বাক্য শিখিয়ে দিব যা আমাকে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন?
যদি তোমার উপর সীর পর্বত পরিমান দেনাও থাকে তবে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে
তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেন, তুমি বল :
اَللّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِيْ
بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
(হে আল্লাহ! তোমার হালাল দ্বারা আমাকে তোমার হারাম থেকে দুরে রাখ
এবং তোমার দয়ায় তুমি ভিন্ন অপরের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে স্বনির্ভর কর)- [তিরমিযী : হাসান,
বায়হাকী ও হাকেম]
ফজরবাদ পাঠ করার বিশেষ দোয়াঃ হযরত আবু যার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর দুই পা ভাজ অবস্থায় কারো সাথে
কথা বলার পূর্বে দশ বার বলে-
لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ
وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
(অর্থাৎ - আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি
এক, তার কোন শরীক নাই, সার্বভৌমত্ব তারই,
সব প্রশংসা তারই জন্য, তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান
করেন আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান), তার আমল নামায় দশটি নেকী
লেখা হয়, দশটি গুনাহ বিলুপ্ত করা হয় এবং দশগুন মর্যাদা বৃদ্ধি
করা হয়। সে ঐ দিন সব রকমের বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে, শয়তানের ধোঁকা
থেকে তাকে পাহারা দেয়া হবে এবং ঐ দিন র্শিক ছাড়া অন্য কোন গুনাহ তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না। - [তিরমিযী : হাসান ও সহীহ]
বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার দোয়াঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে
ব্যক্তি তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় বলে :
بِسْمِ اللّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ
إِلَّا بِاللّهِ
(আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া
অকল্যাণ রোধ বা কল্যাণ হাসিল করার শক্তি কারো নাই)- তাকে বলা হয় তোমাকে হেদায়াত দেয়া
হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে আর
শয়তান তার থেকে দুরে চলে যায়। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাই) আবু
দাউদ পরে আরও বৃদ্ধি করেছেন- শয়তান অন্য শয়তানকে বলে, তুমি এর
উপর কেমন করে নিয়ন্ত্রন লাভ করবে যাকে হেদায়াত দান করা হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিপদ-মুসিবতে আপতিত হলে পাঠ করার দোয়াঃ মুমিনগণের উপর কোন মুসিবত আপতিত হলে আল্লাহ তা’য়ালা পাঠ করার জন্য যে দোয়া
শিক্ষা দিয়েছেন-
اَلَّذِيْنَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوا
] إِنَّا
لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ[
- যখন তাদের উপর কোন মুসিবত আপতিত হয় তখন তারা বলে : (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর
জন্য আর আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে) - সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৫৬।
জালিম শাসকদের জুলুম থেকে মুক্তির জন্য হযরত মুসা (আলাইহিসসালাম) এর দোয়াঃ এই দোয়া নিয়মিত পাঠে জালিম শাসকদের অন্যায় ও জুলুম থেকে মুক্তির দৃঢ় সম্ভাবনা
রয়েছে।
عَلَى اللّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً
لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ ০ وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ
مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ ০
- আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রব! আমাদেরকে যালিমদের নির্যাতনের
শিকার বানাবেন না। আমাদেরকে আপনার রহমতে কাফিরদের কবল থেকে রক্ষা করুন। - (সূরা
ইউনুসঃ আয়াত ৮৫-৮৬)
জালিমদের জুলুম ও নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য মাজলুম ঈমানদার বান্দাগণের দোয়াঃ এই দোয়া নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে সমাজের জালিম সম্প্রদায়ের জুলুম থেকে মুক্তির
আশা করা যায়।
رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا
وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا وَّاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا
- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিমদের এ জনপদ থেকে মুক্ত
করুন। আপনার পক্ষ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক করে দিন, আপনার
নিকট থেকে কাউকে আমাদের সাহায্যকারী করে দিন। - (সূরা নিসাঃ ৭৫)
আল্লাহ
তা’য়ালা আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! সকল
প্রকার বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,
খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহুম)-গনের
আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন!
আ-মী-ন।

No comments:
Post a Comment