Monday, November 10, 2014

দুরূদ-সালাম পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

দুরূদ-সালাম পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীনদুরদ ও সালাম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত

মহান রব্বুলআলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন রহমাতুল্লিল আলামীন হিসাবে সুতরাং তিনি হলেন জগতসমূহের সমগ্র অধিবাসীদের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত লাভের ওয়াসীলা স্বরূপ তাই সমস্ত জগতের অধিবাসীগণ রহমতের আশায় সর্বদা তাঁর উপর দুরূদ সালাম পেশ করে থাকেন আল্লাহ তায়ালা তাদের ন্যায় আমাদেরকেও তাঁর রসূলের উপর দুরূদ সালাম পাঠ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا - [الاحزاب : ٥٦]

- নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি সলাত (রহমত) প্রেরণ করেন আর তার ফিরিশতাগণও নবীর প্রতি সলাত (দোয়া) পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সলাত (দুরূদ) পাঠ কর এবং সালাম পাঠাও। -(সুরা আহযাব : ৫৬)

উক্ত আয়াতের আলোকে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ মুমীনগণের জন্য অপরিহার্য সাব্যস্ত হয়েছে হাদীস শরীফে এই দুরূদ ও সালামের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এর ভিতর থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস সকলের বিবেচনার জন্য পেশ করা হল

অজিফা হিসাবে দুরূদ পাঠ যথেষ্ট হিসাবে গণ্যঃ হযরত তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত  তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দুআর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন : তুমি যতটুকু চাওকাব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ? তিনি বললেন : তুমি যতটুকু চাওতবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবেআমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন : তুমি যতটুকু চাওতবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবেকাব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন : তুমি যতটুকু চাওতবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবেআমি বললাম, আমার দুআর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখবতিনি বললেন : তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে- (তিরমিযী : ২৬৪৫ ও হাকেম : ৭৬৭৭)
 
রসূলুল্লাহ-এর দুআ লাভের ওয়াসীলাঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত  রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বলেনঃ তোমাদের যে কেউ আমার উপর সালাম পড়ে, আল্লাহ তখনই আমার রূহ আমাকে ফেরত দেন এবং আমি তার সালামের জবাব দেই  -[আবু দাঊদ]
 
জুমআর দিনে দুরূদ পাঠ অতীব বরকতময়ঃ হযরত আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমআর দিন বেশি বেশি করে দুরুদ পড়। নিশ্চয়ই ফেরেস্তারা এর উপর সাক্ষি থাকে। আর যখন কেউ আমার উপর দুরুদ পড়ে তখনই তা আমার নিকট পেশ করা হয়। আবু দারদা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ মৃত্যুর পরেও কি তা পেশ করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন-হ্যাঁ!, কেননা আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। -{ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৩৭, ১৬৩৬, সুনানুস সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৪৬৯, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৮০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৫৭২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৪৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৫৯}

একই বিষয়েঃ হযরত আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিনটি হচ্ছে জুমুআর দিন। অতএব তোমরা ঐদিন আমার ওপর বেশি বেশি করে দরূদ পড়। কারণ তোমাদের দরূদগুলো আমার নিকট পেশ করা হয়। সাহাবা কিরাম আরয করেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার নিকট পেশ করা হবে, আপনি তো তখন যমীনের সাথে মিশে যাবেন? তিনি বললেনঃ নিশ্চিত নবীগণের দেহকে আল্লাহ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।-[আবু দাঊদ, রিয়াদুস সালেহীন: ১৪০০]

কবরে নবী-রসূল (আলাইহিস সালাম)-গণ বিশেষ হালে জীবিত, দেহের সাথে রূহের সংযোগ থাকেঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ  “যে ব্যক্তি আমার কবরের পাশে গিয়ে দরূদ পাঠ করে তা আমি নিজেই শুনব। আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার উপর দরূদ পাঠ করে তা আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। -{সুনানে বায়হাকী, হাদিস নং-১৫৮৩, কানযুল উম্মাল হাদিস নং-১৫৮৩}

একই বিষয়েঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার কবরকে আনন্দ-উৎসবের স্থানে পরিণত করো না, বরং আমার উপর দুরূদ পড়ো। কারণ তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দুরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়। -[আবু দাউদ]

ফেরেশতাগণের দুআ লাভের ওয়াসীলাঃ হযরত আমের ইবনে রবীআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি- আমার উপর দরূদ পাঠকারী যতক্ষণ দরূদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরূদ বেশি পড়বে না কম। -{মুসনাদে আহমদ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা৬/৪০; সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস : ৯০৭}
 
রসূলুল্লাহ-এর নৈকট্য লাভের ওয়াসীলাঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত । রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা আমার নিকটবর্তী হবে, যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরূদ পাঠ করেছে" ।  -[সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-৪৮৪]

একই বিষয়েঃ আব্দুল্লাহ মাসউদ হতে একটি মারফু হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন,“কিয়ামতের দিন সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি সে হবে যে আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পড়বে। তিরমিযী হাদিসটি হাসান বলেছেন এবং ইবনে হিব্বান সহীহ বলেছেন -[ ইবনু হিব্বান, হাদিস: ৯১১, তিরমিযি: ৪৮৪]

রহমত লাভের ওয়াসীলাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনযে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -{সুনানে নাসায়ী : ১/১৪৫, মুসনাদে আহমদ : ৩/১০২ ও মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ২/৪৩}

গুনাহ মাফের ওয়াসীলাঃ হযরত আবু তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন (আমাদের কাছে) আগমন করলেন, তখন তাঁর চেহারা মুবারকে প্রফুল্লতা দেখা যাচ্ছিল। তিনি ইরশাদ করলেন, জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আমার নিকট এসে আরজ করল ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনাকে কি এই সংবাদ আনন্দিত করবে না যে, আপনার উম্মতের মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আমি তাঁর জন্য দশবার মাগফিরাত চাইব (দশটি গুনাহ মাফ করব) আর কেউ যদি আপনাকে একবার সালাম পাঠায় আমি তার প্রতি দশবার সালাম (রহমত) প্রেরণ করব । -[সুনানে নাসাঈ-১২৮৩,১২৯৫,১২৯৮, মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক-৫০, নাসাঈ আস সুনানুল কুবরা-১২০৭,১২১৯, সহীহ ইবনে হিব্বান-৯১৫, তাবরানী আল মু'জামুল কবীর-৪৭১৮,৪৭২৪, বায়হাক্বী শো'আবুল ঈমান-১৪৬২। বগভী শরহুস সুন্নাহ-৬৮৫]

একই বিষয়েঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন।(মুসলিম , রিয়াদুস সালেহীন : ১৩৯৭)

ছাওয়াব লাভের ওয়াসীলাঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার জন্য দশটি ছাওয়াব লিখে দেন। -[ ইসমাঈল আলকাযী-হাদিসটি সহীহ]

দুয়া কবুলের ওয়াসীলাঃ হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব রহ. ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দোআ আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমাদের নবীর উপর দোআ পড়া ছাড়া কোনো দোআই আসমান পর্যন্ত আরোহন করে না। -[তিরমিযি : ৪৮৬, সহীহ]

একই বিষয়েঃ হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। তোমার নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যতক্ষন তুমি দুরূদ পাঠ না কর ততক্ষণ তার কিছুই উপরে উঠে না। -(তিরমিযী : হাসান)

একই বিষয়েঃ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সাথে ছিলেন। যখন আমি বসলাম তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করলাম। অতঃপর নিজের জন্য দোআ করলামতখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর,তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে।-[তিরমিযী: হাসান]

একই বিষয়েঃ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া হবে না ততক্ষণ দোআ কবুল করা হয় না। -[ ত্বাবরানী : ২০৩৫ হাসান]

শাফায়াত লাভের ওয়সীলাঃ হযরত উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যাক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় দশবার করে দুরূদ শরীফ পাঠ করে, সে কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভ করবে। -(তারগীব : সহীহ্)

একই বিষয়েঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন তোমরা মুআয্যিনের আযান শুনবে তখন তার মত বল। তারপর আমার উপর দরূদ পড়। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন। তারপর তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য উসীলার দোআ করবে। কারণ উসীলা হল জান্নাতে একটি উচ্চতর মর্যাদাযা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে শুধু একজনই প্রাপ্ত হবে। আমি আশা করি আমিই হব সেই ব্যক্তি। অতএব যে ব্যক্তি আমার জন্য আল্লাহর কাছে উসীলার দোআ করবে সে আমার সুপারিশ প্রাপ্তহবে।-[সহীহ মুসলিম : ৩৮৪]
দুরূদ পাঠে অবহেলাকারী ক্ষতিগ্রস্থঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতপর বললেন, আমীন, আমীন আমীন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, এটা আপনি কী করলেন? তিনি বললেন, জিবরীল আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যার সামনে রমযান প্রবেশ করলো অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। আমি শুনে বললাম, আমীন (আল্লাহ কবূল করুন) এরপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যার সামনে আপনার কথা আলোচিত হয় তথাপি সে আপনার ওপর দরূদ পড়ে নাতখন আমি বললাম, আমীন (আল্লাহ কবূল করুন) অতপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যে তার পিতামাতা বা তাঁদের একজনকে পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না। তখন আমি বললাম, আমীন (আল্লাহ কবূল করুন)। -[বুখারী : ৬৪৬; ইবন খুযাইমাহ : ১৮৮৮; বাইহাকী : ৮২৮৭]

একই বিষয়েঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তির নাসিকা ধূলি ধূসরিত হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে আর সে আমার ওপর দরূদ পড়েনি।” -[তিরমিযী]

দুরূদ পাঠে অবহেলাকারী প্রকৃত কৃপণঃ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সামনে আমার নাম আলোচিত হয়েছে অথচ সে আমার ওপর দরূদ পড়েনি সে হচ্ছে প্রকৃত কৃপণ।” - [তিরমিযী]

একই বিষয়েঃ আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি বড় কৃপণ, যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল, কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। -[ ঈসমাঈল আল- কাযী: ৩৭ সহীহ]

দুরূদ পাঠে অবহেলাকারী মাজলিস অনুতাপের কারণ হবেঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মজলিসে লোকেরা আল্লাহর যিকির করে না এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ে না, সেই মজলিস কিয়ামতের দিন তাদের জন্য অনুতাপের কারণ হবে। যদিও নেক আমলের কারণে জান্নাতে চলে যায়। -[আহমদ, ইবনু হিব্বান, হাকিম, খতীব-৭৬ হাদিসটি সহীহ]

দুরূদ পাঠে ভুলে যাওয়া ব্যাক্তি জান্নাতের রাস্তা ভুলে যাবেঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়া ভুলে যাবে সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে যাবে। -[ ইবনু মাজাহ : ৭৪০হাদিসটি সহীহ]

পুরো দরূদ লেখা বা বলাই সূন্নাতঃ শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, ...আমরা জানি যেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ সালাতের তাশাহুদের পর, খুতবার সময়, দোআ ইস্তেগফারের সময়, আজানের পর, মসজিদে প্রবেশে ও বাহির হওয়ার সময় অনুরূপভাবে কোনো কিতাব, প্রবন্ধ, রিসালা ও লেখনি লেখার সময় ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম লিখার সময় পুরো দরূদ লেখা সূন্নাত। আর দরূদটি পরিপূর্ণ লিখতে হবে, যাতে আল্লাহর আদেশের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয় এবং একজন পাঠক যখন তা পাঠ করে সে বুঝতে পারে যে এখানে দরূদ পড়া হয়েছে। সংক্ষিপ্তাকারে যেমন- (সা.)(صأو (صلعم ইত্যাদি লেখা কোনোক্রমেই উচিত নয়। অনেককে এভাবে লেখতে দেখা যায়, এটি আল্লাহ তাআলার বাণী-{صَلُّوا عَلَيْهِ وسَلِّمُوا تَسْلِيماً} (الأحزاب:56). এর পরিপন্থী। এছাড়াও এ দ্বারা দরূদ পড়ার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না এবং দরূদ পড়ার যে সব লাভের কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত তা হতে বঞ্চিত হয় হয় আবার অনেক সময় দেখা যায় একজন পাঠক সংকেত দ্বারা কি উদ্দেশ্য তা বুঝতে পারে না এবং সজাগ থাকে না। এ কারণেই আহলে ইলম সংকেত দিয়ে দরূদ শরীফ লেখাকে অপছন্দ করেন। -[মাজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে ইবন বায, পৃ: ৩৯৭-৩৯৯/২]


মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহব্বতে বেশী বেশী দুরূদ ও সালাম পাঠের তৌফিক দান করুন! তাঁর মহান দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! এবং তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন

No comments:

Post a Comment