Monday, November 10, 2014

জবানের হেফাজতের গুরুত্ব ও ফজিলত


জবানের হেফাজতের গুরুত্ব ও ফজিলত
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীনদুরদ ও সালাম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত

জবানের হেফাজত করা মুমীন জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জবানের ক্ষতি খুব মারাত্মক আর তা থেকে নাজাতের উপর হল সর্বদা উত্তম কথা বলা অথবা চুপ থাকা। সত্যবাদীতা, উত্তম কথা ও নম্রভাষা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, মগফিরাত ও জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا- يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا

-“হে মুমীনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রমসমুহ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসফলতা লাভ করবে” -(সূরা আহযাব : আয়াত ৭০-৭১)

অপরপক্ষে মিথ্যা, গীবত, অপবাদ, গালি-গালাজ, কর্কশ ভাষা মানুষকে আল্লাহর অসন্তোষ, ক্রোধ ও জাহাহান্নামের দিকে পরিচালিত করে। এজন্য শরীয়তের চুপ থাকার বিষয়টিকে প্রশংসা করেছে এবং চুপ থাকার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। এ প্রসংগে হাদীস গন্থসমূহে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি বাছাইকৃত হাদীস সবার বিবেচনার জন্য পেশ করা হল-

সত্যবাদীতা ও মিথ্যার পরিনামঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা অবশ্যই সত্য অবলম্বন করবেকেননা সততা মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়কোন মানুষ সদা সত্য কথা বলতে থাকলেএবং সত্যের উপর মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়আর তোমরা অবশ্যই মিথ্যা পরিহার করবেকেননা মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে পথ দেখায়, আর পাপ দোযখের দিকে নিয়ে যায়কোন বান্দা সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়- (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-১৯২১)

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই সত্য পূণ্য ও নেক আমলের পথ দেখায়। আর নেক আমল জান্নাতের পথ দেখায়। আর ব্যক্তি সত্য বলতে বলতে আল্লাহর কাছে সিদ্দীক’ (মহাসত্যবাদী) হিসেবে পরিগণিত হয়। আর মিথ্যা পাপের পথ দেখায়। আর পাপ পাপিকে জাহান্নামে নিয়ে ফেলে। ব্যক্তি মিথ্যা বলতে বলতে আল্লাহর খাতায় কাযযাব’ (চরম মিথ্যুক) বলে চিহ্নিত হয়ে যায়।  -{বুখারী : ৬০৯৪ ও মুসলিম : ১০৩}

উত্তম কথা বলা অথবা নিরব থাকা ঈমানের লক্ষণঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের আপ্যায়ন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নিরব থাকে। (বুখারী ও  মুসলিম)

কথা বলায় সাবধানতাঃ হযরত বিলাল বিন হারিস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিতনবী  সল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার কল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তাঁর সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেনআবার মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার অকল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তাঁর অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন - (তিরমিযী, মুয়াত্তা)

মিষ্টভাষী হওয়াঃ হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেনঃ "নিশ্চয় জান্নাতে বালাখানা থাকবে, যার ভেতরের সবকিছু বাইরে থেকে দেখা যাবে।" একজন বেদুঈন দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো, 'ঐ বালাখানা কাদের জন্য হবে?' রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেনঃ "যারা মিষ্টভাষী হবে, অভাবীদের আহার করাবে, রাতের গভীরে যখন মানুষ নিদ্রামগ্ন থাকে তখন যারা নামায পড়ে।" - [তিরমিযী শরীফ ]

বিতর্ক পরিহারঃ হযরত আবূ উমামা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের আশপাশে কোনো গৃহের জামিন হব যে উপযুক্ত ও সঠিক হবার পরও (বিপক্ষের) বিতর্ক ছেড়ে দেয়, আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে কোনো গৃহের জামিন হব যে ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যে পরিহার করে এবং জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে কোনো গৃহের জামিন হব যে তার চরিত্রকে সুন্দর বানায়।-[আবূ দাঊদ : ৪৮০০]

বেশী কথাবার্তা মনকে কঠিন করে দেয়ঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  আল্লাহ-র যিকির ছাড়া বেশী কথা বলো নাকেননা আল্লাহ তাআলার যিকির বা স্মরণ ছাড়া বেশী কথাবার্তা মনকে কঠিন করে দেয় আর কঠোর মনের ব্যক্তিই আল্লাহ থেকে সর্বাধিক দূরে- [তিরমিযীঃ ১৫১৮]

জবানের হেফাজত হল নাজাতের পথঃ হযরত উকবা ইবনে আমের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম : হে আল্লাহর রসূল! নাজাত কিসে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার জবানকে হেফাজত করো, তোমার ঘর যেন তোমার জন্য যথেষ্ট হয়, তুমি তোমার ভুলের জন্য কান্না করো। -(তিরমিযী)

সর্বোত্তম মুসলিমঃ হযরত আবু মুসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতসাহাবারা আরজ করল ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! ইসলামে কোন কাজ সবচাইতে উত্তম? তিঁনি বললেন, যার জিহ্বা এবং হাত হতে অপর মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। [ বুখারী -১০ ]

ঈমানের লক্ষণঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ততক্ষন পযন্ত ঈমান পাক্কা হবে না যতক্ষন পর্যন্ত দিল স্থীর না হবে। আর দিল স্থীর হয় না জবান স্থীর হওয়া ব্যতীত। যে ব্যক্তির থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। -(ইবনে আবী দুনয়া ফী সমত, খরায়েতী ফী মাকারিমীল আখলাক)

জান্নাতের জিম্মাদারীঃ হযরত সুলাইমান ইবনে দাউদ (আ.) বলেন কথা বলা যদি হয় রুপার মতো তাহলে চুপ থাকা হবে স্বর্ণের মতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃযে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুই চলায়ের মাঝে যা আছে অর্থাৎ জিহ্বা এবং তার দুই পায়ের মাঝে যা আছে অর্থাৎ লজ্জাস্থানের জিম্মাদারী দিবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদারী নিবো। -(বুখারী শরীফ)

ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকাঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে।” [বুখারী ও মুসলিম থেকে রিয়াদুস সলিহীন ১৫১১]

হযরত উকবা ইবনে আমের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ রাসূল! নাজাতের উপায় কি? তিনি বললেনঃ তোমার জিহবাকে সংযত রাখ, তোমার ঘরকে প্রশস্ত কর এবং তোমার অপরাধের জন্য কান্নাকাটি কর। [তিরমিযি থেকে রিয়াদুস সলিহীন ১৫২০]

মিথ্যা কসমঃ হযরত আবু উমামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিতরসূলুল্লাহ  সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম দ্বারা কোন মুসলিমের অধিকার হরণ করে আল্লাহ তার জন্য দোযখ ওয়াজিব ও জান্নাত হারাম করেনলোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! যদিও সামান্য কিছু হয়, তাহলেও? তিনি বললেন: যদিও পিল্লুগাছের একটি সামান্য ডালও হয়- (মুসলিম-১৩৭)

মিথ্যা শপথঃ হযরত আবু উমামা ইয়াস ইবনে সালাবা আল-হারিসী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে কোন মুসলমানের সামান্যতম অধিকার বা মালিকানা বা সম্মান আত্মসাৎ করল, আল্লাহ্‌ তাঁর জন্য দোযখ অবশ্যম্ভাবী করে দেন এবং বেহেশত হারাম করে দেন - (মুসলিম)

মিথ্যা কথা বলাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃযখন কোনো বান্দা মিথ্যা বলে তখন এর দুর্গন্ধে ফেরেশতারা তার নিকট থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়-{তিরমিযী হা.নং-১৯৭২}

শোনা কথা বলে বেড়ানোঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়।” [মুসলিম থেকে রিয়াদুস সলিহীন ১৫৪৭}

ভালো-মন্দ বিচার না করেই কোন কথা বলাঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ বান্দা যখন ভালো-মন্দ বিচার না করেই কোন কথা বলে, তখন তার কারণে সে নিজেকে জাহান্নামের এত গভীরে নিয়ে যায় যা পূর্ব ও পশ্চিমের দুরত্বের সমান।” [বুখারী ও মুসলিম থেকে রিয়াদুস সলিহীন ১৫১৪]

চুটকি বলাঃ হযরত মুয়াবিয়া বিন হাইদাহ  (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিততিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ  সল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : দুর্ভোগ তার জন্য, যে লোকদেরকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা (গল্প বানিয়ে) বলেদুর্ভোগ তার জন্য, দুর্ভোগ তার জন্য(আবু দাউদ-৪৯৯০, তিরমিযী)

নিফাকী চরিত্রঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে মুনাফিক অথবা যার মধ্যে এ চারটি স্বভাবের কোন একটা থাকে, তার মধ্যেও মুনাফিকীর একটি স্বভাব থাকে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে(১) সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে (২) যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে (৩) যখন চুক্তি করে তা লঙ্ঘন করে (৪) যখন ঝগড়া করে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে- (সহীহ বুখারী : হাদিস নং ২২৯৭)

গালি-গালাজঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দুই ব্যক্তির পরস্পরকে গালি দেয়ার পরিণাম প্রথম গালি প্রদানকারীর উপর পতিত হয়, যাবত না মাজলুম (দ্বিতীয় ব্যক্তি) সীমা লংঘন করে- (মুসলিম, আবুদাউদ তিরমিযী- ১৯৩১)

মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকীঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী আর হত্যা বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা কুফরী-(বুখারী ও মুসলিম)

চোগলখুরীঃ হযরত হাম্মাম ইবনুল হারিস (র) থেকে বর্ণিততিনি বলেন এক ব্যক্তি হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ানকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অতিক্রম করে যাচ্ছিলতাকে বলা হল, এই ব্যক্তি জনসাধারণের কথা সরকারের কানে দেয়হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্  সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না -(বুখারী ও মুসলিম)

দ্বিমুখীপনাঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্  সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দ্বিমুখী চরিত্রের লোকেরা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে - (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-১৯৭৪ : হাসান ও সহীহ্)

অশ্লীল এবং কটুভাষীঃ হযরত আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)  থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন : কিয়ামতের দিন মুমিনের জন্য মীযানের পাল্লায় সদ্ব্যবহারের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছু হবে না। আল্লাহ তায়া'লা অশ্লীল এবং কটুভাষীকে অবশ্যই ঘৃণা করেন। -{তিরমি্যী-২০০৮}

কথায় কষ্ট দেয়াঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে একজন নারী সম্পর্কে বলা হল, সে খুব নফল নামায পড়ে, রোযা রাখে এবং অনেক দান-সদকা করেকিন্তু তার মুখের ভাষা প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামীঐ ব্যক্তি আরেকজন এক নারী সম্পর্কে বলল, যার নফল নামায, নফল রোযা ও দান-সদকার ক্ষেত্রে তেমন প্রসিদ্ধি নেইকখনো হয়তো সামান্য পনিরের টুকরা সদকা করেতবে সে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় নাকেউ তার মুখের ভাষায় কষ্ট পায় নারাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জান্নাতী -[মুসনাদে আহমদঃ ৯৩৮৩; শুআবুল ঈমানঃ ৯৫৪৬]

অভিশাপ ও বদদোয়াঃ হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্  সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা একে অপরকে আল্লাহর অভিসম্পাত, তাঁর গজব ও জাহান্নামের বদদোয়া করো না- (আহমাদ, হাকেম, তিরমিযী-১৯২৬ : হাসান ও সহীহ্)

একই বিষয়েঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি কখনো ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও অসদচারী হতে পারে না।” [তিরমিযি থেকে রিয়াদুস সলিহীন ১৫৫৫]

একই বিষয়েঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সত্যবাদী মুমিনের জন্য অত্যাধিক অভিসম্পাতকারী হওয়া শোভনীয় নয়।” [মুসলিম থেকে রিয়াদুস সলিহীন ১৫৫২]

যবানের হিফাযত না করার কারণে জাহান্নামঃ হযরত আবু সাউদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত মুয়ায ইবনে যাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একবার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যা বলি তা নিয়ে কি আমাদের পাকড়াও করা হবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মুয়ায ইবনে যাবাল! যবানের হিফাযত না করার কারণে মানুষকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে -(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকেম)

অমুসলিমদের সাথেও আচরণে নম্রতা অবলম্বনঃ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত একবার একদল ইয়াহূদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট এসে বললঃ আস্-সামু 'আলাইকুম! (তোমার মরণ হোক) । 'আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বললেনঃ তোমাদের উপরই এবং তোমাদের উপর আল্লাহর লা'নত ও গযব পড়ুক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বললেনঃ হে 'আয়িশাহ! একটু থামো । নম্রতা অবলম্বন করা তোমাদের কর্তব্য। রূঢ়তা ও অশালীনতা বর্জন করো। 'আয়িশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বললেনঃ তারা যা বলেছে তা কি আপনি শোনেননি ? তিনি বললেনঃ আমি যা বললাম, তুমি কি তা শোননি? কথাটি তাদের উপরই ফিরিয়ে দিয়েছি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে (আল্লাহর কাছে) আমার কথাই কবুল হবে আর আমার সম্পর্কে তাদের কথা কবুল হবে না। -[সহিহ বুখারীঃ হাদীস নং ৬০৩০]

মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে জবানের যথাযথ হেফাজত করার তৌফিক দান করুন! তাঁর মহান দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! এবং তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন



No comments:

Post a Comment