Monday, November 10, 2014

অন্যায়ের সাথে অসহযোগ হল ঈমানের নুন্যতম দাবী


অন্যায়ের সাথে অসহযোগ হল ঈমানের নুন্যতম দাবী
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীনদুরদ ও সালাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, তাঁর বংশধর, তাঁর সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত

আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে খিলাফাতের মর্যাদায় কেবলমাত্র তাঁরই গোলামী করার জন্য দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেন। মানব জাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে তিনি যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসূল (আ) এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন আল্লাহর উপর বিশ্বাসী বান্দাগণ কখনোই আল্লাহর বিধান ও নবী-রসূল (আ)-গণের আদর্শের পরিপন্থী শয়তানী শক্তি এবং তাদের অপতৎপরতার সাথে আপোষ করে চলতে পারে না বা নিরব দর্শকের ভূমিকাও পালন করতে পারে না। মুমীন বান্দাগণকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। আর যদি রুখে দাড়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে এ সব অপতৎপরতার সাথে অসহযোগীতা ও আপোষহীণ মানসিকতা পোষণ করতে হবে। সাবধান! এটাই হল ঈমানের নুন্যতম দাবী।

রক্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ  মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : আপনি মুমিনদের এমন কোন দল পাবেন না, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখিরাতের প্রতিও ঈমান রাখে- অথচ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতাকারীদেরকে ভালবাসে, যদিও তারা তাদের পিতা, তাদের পুত্র, তাদের ভাই বা তাদের আত্মীয়-স্বজনও হয়। আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমানকে সুদৃঢ় করে দিয়েছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাদেরকে রূহ (হিদায়াতের আলো) দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যে জান্নাতের নিচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ বয়ে যায়, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। মনে রেখ! আল্লাহর দল অবশ্যই কল্যাণপ্রাপ্ত হবে। -(সুরা মুজাদালা : আয়াত-২২)

অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ  মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : “হে মুমিনগণ! তোমাদের মাতা-পিতা ও তোমাদের ভাইয়েরা যদি ঈমানের উপর কুফরিকে প্রাধান্য দেয় তাহলে তাদেরকে অভিভাবক বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা হবে সীমালংঘনকারী।” -(সূরা তওবা : আয়াত-২৩)

বৈষয়িক ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : “আপনি বলুন (হে রসূল!), তোমাদের মাতা-পিতা, তোমাদের সন্তান-সন্ততি, তোমাদের ভাইগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের জ্ঞাতিগণ, তোমাদের উপার্জিত অর্থ-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা- তোমরা যার মন্দার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যা তোমাদের নিকট অত্যন্ত পছন্দ; এসব যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে (শাস্তির) হুকুম আসার অপক্ষা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।” -(সূরা তওবা : আয়াত-২৪)

বিবাহের ক্ষেত্রে সম্পর্কহীনতাঃ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : মুমিন না হওয়া পর্যন্ত কোন মুশরিক নারীকে বিয়ে কর না, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে; মুশরিক নারীর চেয়ে মুমিন দাসীরা উত্তম। আর তোমরা মুশরিক পুরুষকে বিয়ে কর না যতণ না তারা ঈমান আনে, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে; মুমিন দাস তাদের চেয়ে উত্তম। মুশরিক নারী ও পুরুষ তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে জান্নাত ও মার প্রতি আহ্বান করেন। তিনি মানুষের জন্য তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যেন তারা তা স্মরণ রাখে ও মেনে চল” - (সূরা বাকারাহঃ আয়াত-২২১)

বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। কেননা অন্যরা তোমাদের ক্ষতি করতে দ্বিধা করে না এবং যা তোমাদেরকে কষ্ট দেয় তারা তাই কামনা করে। তাদের মুখ থেকে কখনো কখনো বিদ্বেষ প্রকাশ পায়, কিন্তু তাদের মনে যা গোপন রয়েছে তা আরো ভয়ঙ্কর। আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (মুমিনগণ!) তোমরা এমন যে, তোমরাই তাদেরকে ভালবাসো, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। আর তোমরা কিতাবের প্রতিটি বিষয়ে ঈমান রাখ। তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে, তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে নিজেদের আঙুলের মাথা কামড়াতে থাকে। বলুন (হে রাসূল!), তোমরা মরো তোমাদের নিজেদের আক্রোশেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে সবকিছুই জানেন। যদি তোমাদের ভাল কোন কিছু হয় তাহলে তা তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে তারা তাতে আনন্দিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্যশীল ও মুত্তাকী হও, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন” -(সূরা আলে-ইমরান : আয়াত ১১৮-১২০)

তিনি আরও বলেন : “হে মুমিনগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রু-কে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তোমরা তাদের নিকট বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠিয়েছো আর তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কারণে রাসূলকে ও তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। যদি তোমরা আমার পথে জিহাদ করার জন্য এবং আমার সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে বের হয়ে থাক, তাহলে তাদের সাথে কেন গোপনে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছ? তোমরা যা গোপন কর এবং তোমরা যা প্রকাশ কর আমিই তা সবচেয়ে বেশি জানি। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এমন করবে সে সঠিক-সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে। যদি তারা তোমাদেরকে বশীভূত করতে পারে, তাহলে তারা তোমাদের শত্রুই হয়ে যাবে। তারা তাদের হাত ও মুখ দিয়ে তোমাদের ক্ষতি করবে এবং কামনা করবে যে, তোমরাও কাফির হয়ে যাও। অথচ তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্ততি কিয়ামাতের দিন তোমাদের কোন কাজেই আসবে না। আল্লাহ তোমদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন -(সুরা মুমতাহিনাঃ আয়াত ১-)

সামাজিক ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। যখন তারা তাদের জাতিকে বলেছিলেন: তোমাদের সাথে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যার উপাসনা কর তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের সম্পর্ক অস্বীকার করি। যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরকালের শত্রতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেল।তবে তার পিতার প্রতি ইব্রাহীমের কথা এ থেকে ভিন্ন ছিল। তিনি বলেছিলেন: আমি অবশ্যই আপনার জন্য ক্ষমা চাইব, তবে আল্লাহর নিকট আপনার ব্যাপারে আমি কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখি না।ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীগণ বলেছিলেন: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার উপরই নির্ভর করেছি, আপনার প্রতি অগ্রসর হয়েছি এবং ফিরে আসব আপনার কাছেই।’‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে কাফিরদের জন্য পরীক্ষা পাত্র বানাবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আপনি তো মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়। তোমরা যারা আল্লাহর সান্নিধ্য ও আখিরাতে সফলতা প্রত্যাশা কর নিশ্চয় তাদের জন্য ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর কেউ তাদের আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ মহাধনী (অমুখাপেক্ষী), মহাপ্রশংসিত।– (সূরা মুমতাহিনাঃ আয়াত ৪-)

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : “আপনি বলুন! তোমরা আল্লাহর পথে স্বেচ্ছায় ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে ব্যয় কর, তোমাদের দান কখনোই কবূল করা হবে না। নিশ্চয়ই তোমরা হলে পাপাচারী জাতি। (আল্লাহর পথে) মুনাফিকদের অর্থসাহায্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, অবহেলার সাথে সালাতে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে অর্থ সাহায্য করে। কাজেই তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে বিস্মিত ও বিমুগ্ধ না করে। নিশ্চয় আল্লাহ অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়েই তাদেরকে পৃথিবীতে শাস্তি দিতে চান এবং কাফির অবস্থাতেই তাদের মৃত্যু হবে” - (সূরা তওবাহ্ : ৫৩-৫৫)

আস্থার ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : “আর তোমরা তোমাদের দ্বীনের অনুসরণকারী ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলুন (হে রাসূল!), আল্লাহর হিদায়াতই একমাত্র হিদায়াত। তোমরা যা পেয়েছিলে অন্য কেউ তেমন কেন পাবে অথবা তারা কেন তোমাদের প্রতিপালকের সামনে বিতর্কে তোমাদেরকে পরাজিত করবে? বলুন! নিশ্চয়ই যাবতীয় অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যবান, মহাজ্ঞানী” -(সূরা আলে ইমরান : ৭৩)

ইবাদাতের ক্ষেত্রে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : যারা মাসজিদ তৈরি করেছে দ্বীন ইসলামের ক্ষতি করার জন্য, কুফরি করার জন্য, মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এবং ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করেছে তার ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে আর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমরা ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই এ মসজিদ নির্মাণ করেছি আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী; (অতএব, হে রাসূল!) আপনি সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তাদের নির্মিত ঐ মসজিদে কখনোই দাঁড়াবেন না, বরং প্রথম থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত সে মসজিদই আপনার সালাত আদায়ের জন্য অধিকতর যোগ্য। সে মসজিদে এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।” - (সূরা তওবাহ্ : আয়াত ১০৭-১০৮)

মৃত্যু পরবর্তী জানাজার নামাজ ও ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে সম্পর্কহীনতাঃ আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা না-ই করুন। আপনি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তা কখনই কবূল করবেন না। কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছিল। আর আল্লাহ পাপাচারী জাতিকে ভালবাসেন না” -(সূরা তওবাহ্ : আয়াত-৮০)

তিনি আরও বলেন : “আর তাদের মধ্য থেকে কেহ মারা গেলে আপনি তার উপর কখনো (জানাজার) সলাত পড়বেন না এবং কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে কুফুরী করেছে এবং কুফুরী অবস্থাতেই তারা মৃত্যুবরণ করেছে” -(সূরা তওবাহ্ : আয়াত-৮৪)

তিনি আরও বলেন : “নবী ও মুমীনদের জন্য বৈধ নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়। এ কথা প্রকাশের পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী” -(সুরা তওবাহ্ : ১১৩)

পারস্পরিক সহায়তার মুলনীতিঃ রব্বুল আলামীন বলেন : আর ভাল কাজ ও তাকওয়া অবলম্বনে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। পাপ ও সীমালংঘনের কাজে কেউ কাউকে সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।” (সূরা মায়েদাঃ আয়াত-২)

দুর্বলমত ঈমানের পরিচয়ঃ হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : “তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন তার হাত (ক্ষমতা) দ্বারা তা প্রতিহত করে। এই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন তার মুখ (ভাষা) দ্বারা তা প্রতিহত করে। এই সামর্থ্যও না থাকলে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে। আর এটা হল দুর্বলতম ঈমান (মুসলিম, তিরমিযীঃ হাদীস নং-২১১৮)

জাতীয় পর্যায়ে অন্যায় কাজের সাথে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ হযরত ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমার পূর্বে কোন জাতির কাছে যে নবীকেই পাঠানো হয়েছে, তাঁর সহযোগীতার জন্য তাঁর উম্মাতের মধ্যে একদল সাহায্যকারী ও সাহাবী থাকত। তারা তাঁর ছুন্নাতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। এদের পরে এমন লোকের উদ্ভব হল যে, তারা যা বলত তা নিজেরা করত না এবং এমন কাজ করত যা করার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়নি। অতএব এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগে) জিহাদ করবে সে মুমিন। যে মুখ দিয়ে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন। যে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সেও মুমিন। এরপর আর সরিষার দানার পরিমানও ঈমানের স্তর নাই” -(সহীহ্ মুসলিম)

শাসক মন্ডলীর অন্যায় ও গর্হিত কাজের সাথে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ হযরত উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অচিরেই তোমাদের উপর এমন কতিপয় শাসক হবে যাদের কিছু কাজ (শারীয়াত অনুযায়ী হওয়ার কারণে) তোমরা পছন্দ করবে আর কিছু কাজ (শারীয়াত বিরোধী হওয়ার কারণে) অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের ভাগী হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো না? তিনি বললেন : না, যতক্ষন তারা তোমাদের মাঝে নামাজ কায়েম করে”- (মুসলিমঃ ৪৬৪৯ তিরমিযীঃ ২২১১)

মুসলিম উম্মাহর মাঝে অন্যায় কাজের সাথে মুমীনগণের সম্পর্কহীনতাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “বনী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথমে পাপ ও অনিষ্টকারীতা এভাবে অনুপ্রবেশ করে- এক ব্যক্তি যখন অপর ব্যক্তির সাথে মিলিত হত তখন তাকে বলত, হে অমুক! আল্লাহকে ভয় কর, যা করছ তা পরিত্যাগ কর কেননা এ কাজ তোমার জন্য বৈধ নয়। পরদিনও সে তার সাথে মিলিত হয়ে তাকে পুর্ববস্থায় দেখতে পেত কিন্তু সে আর তাকে নিষেধ করত না। এভাবে সেও তার পানাহার ও ওঠা-বসায় শরীক হয়ে পড়ে। যখন তারা এমন অবস্থায় পৌঁছে গেল, তখন আল্লাহ তাদের একের অন্তরের (কালিমা) দ্বারা অপরের অন্তরকে অন্ধকার করে দিলেন। অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন: (৭৮) ইসরাঈল জাতির মধ্যে যারা কুফরি করেছিল তারা দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার জবানে অভিশপ্ত হয়েছিল, কারণ তারা অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী ছিল। (৭৯) তারা যে সকল খারাপ কাজ করত, তা করা থেকে তারা একে অন্যকে নিষেধ করত না। তারা যা করত তা কতই না খারাপ কাজ ছিল! (৮০) তাদের অনেককে আপনি কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন। কত খারাপ তাদের কাজ, যা তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য করেছে, যে কারণে আল্লাহ তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা চিরকাল শাস্তির মধ্যেই থাকবে। (৮১) তারা যদি আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি এবং যা নবীর প্রতি নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনত তাহলে তারা কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের অনেকেই পাপাচারী। (সূরা মায়েদা: ৭৮-৮১) অতঃপর তিনি (মহানবী) বলেন : কখনও নয়! আল্লাহর শপথ! তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করতে থাক এবং অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে (লোকদেরকে) বিরত রাখ, জালিমের হাত শক্ত করে ধর এবং তাকে টেনে তুলে সত্য-ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের পরস্পরের অন্তরকে মিলিয়ে দিবেন। অতঃপর বনি ইসরাঈলদের মত তোমাদেরকেও অভিশপ্ত করবে” -(আবু দাউদ : সহীহ্)

সদাচার ও সুবিচার করা কখন দোষণীয় নয়ঃ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে আল্লাহ হয়ত তাদের ও তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম করুণাময়। দীন-এর ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বেরও করে দেয় নি তাদের সাথে সদাচার ও সুবিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেননি। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালবাসেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা দীন-এর ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে এবং তোমাদেরকে বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধু করে তারাই সীমালংঘনকারী” -(সূরা মুমতাহিনাঃ আয়াত -)

উল্লেখিত কুরআনের বানী ও হাদীসসমূহের আলোকে আশা করি ঈমানের নুন্যতম দাবীর বিষয় সবার কাছেই সুস্পষ্ট। ইহকালীন অভিশাপ ও পরকালীন শাস্তি থেকে মুক্তির পেতে হলে মুমীনগণকে অবশ্যই আল্লাহর বিধান ও নবী-রসূল (আ)-গণের আদর্শের বিরোধী শয়তানী শক্তি এবং তাদের অপতৎপরতার সাথে কোন প্রকার সংকোচ ছাড়াই নিরঙ্কুশভাবে সম্পর্কহীন হতে হবে। তাদের সাথে কোন প্রকার আন্তরিক বন্ধুত্ব হতে পারে না, তবে সবার সাথেই ইনসাফ বজায় থাকবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! এবং তাঁদের বরকতময় মহাণ জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন


No comments:

Post a Comment