ইসলামী জীবনাদর্শে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা
ডাঃ গাজী মোঃ
নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম
রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু
আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ
পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
মানব জাতির জন্য আল্লাহ তা'য়ালার মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হল ইসলাম। আর এই জীবন ব্যবস্থার
সর্বশেষ আল্লাহ পদত্ত সংবিধান হল আল-কুরআন।
বিশ্বময় কিয়ামাত পর্যন্ত মানব জাতির মুক্তি ও কল্যাণের একমাত্র পথ হল
জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ পদত্ত সংবিধানের বাস্তবায়ন অর্থাৎ আল-কুরআনের পরিপূর্ণ
অনুসরণ। মানব জাতি কিভাবে এই সংবিধান মেনে চলবে তার জীবন্ত মডেল হচ্ছেন রসূলুল্লাহ্
সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুতরাং আমাদের নবী সল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ হল আল-কুরআনের ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি।
রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৎকালীন যে
জনগোষ্ঠীকে মাঝে আল-কুরআনকে বাস্তবায়ন করেছিলে তাঁরা হলেন সাহাবায়ে কিরাম
রাদিয়াল্লাহু আনহুম। তাদের মহান শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং আল্লাহর রসূল।
তাদের জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন ছিল আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক প্রশংসিত, রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক
সত্যায়নকৃত এবং কিয়ামাত পর্যন্ত মানব সভ্যতার সকল মানুষের জন্য মহাণ আদর্শ হিসাবে
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। সাহাবায়ে জীবনাদর্শ হল রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুন্নাতের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি।
সুতরাং কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা হল রসূলুল্লাহ্
সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত আর রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুন্নাতের বাস্তব ব্যাখ্যা হল সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর সুন্নাত, যার
মাধ্যমে মূলত মানব জাতির জন্য কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেশনই পূর্ণতা লাভ করেছে।
তাই সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর সুন্নাত এর কোন অংশ বাদ দিয়ে রসূলুল্লাহ্
সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের কল্পনা করা যায় না আবার রসূলুল্লাহ্
সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের কোন অংশ বাদ দিয়ে কুরআন মানা ইসলামী
জীবন বিধান পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার দাবী অবান্তর। সবগুলোই একে
অপরের পরিপুরক মাত্র।
ঈমানের মডেল সাহাবায়ে কিরামঃ আল্লাহ তা'য়ালা সাহাবায়ে কিরাম
রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর নমুনায় ঈমান আনায়নের জন্য বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। আর
যারা সাহাবায়ে কিরামের ন্যায় ঈমান আনতে চায় না বরং সমালোচনা করেন সে সব লোকদেরকে
তিনি নির্বোধ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং প্রকৃত মুমীন হতে হলে সাহাবায়ে কিরামের
নমুনায় ঈমান আনতে হবে। এ প্রসংগে মহাণ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ
آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا
إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ
-“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা (রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সাহাবাগণ) যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও তাদের মত ঈমান আন। তখন তারা বলে, আমরা কি বোকা
লোকদের মত ঈমান আনব? সাবধান! প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে
না” –(সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৩)
আমলের মডেল সাহাবায়ে কিরামঃ আল্লাহর সন্তোষ অর্জন
করতে জীবনের
সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছুন্নাত অনুসরণ করতে
হবে সাহাবাগণের বিশেষত মুহাজির ও আনসার রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের কৌশল অনুসরণ করতে হবে।
আল্লাহ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
وَالسَّابِقُونَ
الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ
رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ......
- মুহাজির ও আনসারদের অগ্রগামী দল আর যারা সৎভাবে তাদের অনুসরণ করছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি
সন্তুষ্ট........। -(সুরা তওবাঃ আয়াত ১০০)
সাহাবাগণের প্রশংসায় আল-কুরআনঃ আল্লাহ তা'য়ালা স্বয়ং পবিত্র কুরআনে সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের
জীবনধারার প্রশংসা করে আয়াত নাজিল করেছেন। আল্লাহর সন্তাষ ও মহব্বত প্রত্যাশী
বান্দাগণকে অবশ্যই অনুরূপ জীবনধারা অর্জনের জণ্য আজীবন সাধনা করতে হবে। তিনি বলেন
:
مُحَمَّدٌ
رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ
فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ…..
অর্থাৎ- মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল এবং তার সাহাবাগন কাফেরদের প্রতি খুবই কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আপনি তাদেরকে দেখতে পাবেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তোষ কামনায়
রুকু ও সিজদারত। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন..... । -(সুরা ফাতাহঃ আয়াত ২৯)
ইহ-পরকালীন নাজাত, কল্যাণ ও জান্নাতের পথ
শুধুমাত্র কুরআন
ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে
কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের সুন্নাত পর্যন্ত ব্যপৃত। এ প্রসংগে নমুনা স্বরূপ
কয়েকটি হাদীস তুলে ধরা হল-
খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত ইরবায বিন
সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন
আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন
মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে
পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী
উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির
উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি
একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার
সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে
ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন
সৃষ্টিসমূহ হ’তে দূরে থাকবে। কেননা
(দ্বীনের মধ্যে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হ’ল বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আত হ’ল পথভ্রষ্টতা।’ -[আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ]
সাহাবাগণের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত
বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে,
সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ (রা)
জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারা? রসূলুলাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : যারা
আমার ও আমার সাহাবাগণের ছুন্নাতের উপর কায়েম থাকবে। - (তিরমিযীঃ
২৫৭৮, আবু
দাউদ, তারগীবঃ
৪৮)
সাহাবাগণ সুপথ প্রদর্শনকারী তারকা স্বরূপঃ হযরত
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার সাহাবাগণ এমন তারকাতুল্য, যা পথ প্রদর্শন
করে, সুতরাং
তোমরা যার বক্তব্যকেই গ্রহণ কর তোমরা হেদায়েত পেয়ে যাবে। -(মুসনাদে
আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস
নং-৭৮৩, মুসনাদুশ
শিহাব, হাদীস
নং-১৩৪৬, জামেউল
আহাদীস, হাদীস
নং-২৪৩৫৫)
কতিপয় সাহাবার মর্যাদাঃ হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আবুবকর জান্নাতি,
ওমর
জান্নাতি, ওসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, যুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবন আওফ জান্নাতি, সা‘দ ইবন আবূ ওক্কাস
জান্নাতি, সাঈদ ইবন যায়েদ জান্নাতি, আবু ওবাইদা ইবনুল জাররাহ
জান্নাতি।" -[তিরমিযিঃ
৩৭৪৭ ও ইবনে মাযাহঃ ১৩৩]
সাহাবাগনের সমালোচনা বা মন্দ আলোচনা মুসলিম
উম্মাহর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধঃ হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেন : আমার সাহাবা-ই-কিরাম সম্পর্কে আল্লাহ পাককে ভয় কর, আমার সাহাবা-ই-কিরাম সম্পর্কে আল্লাহ পাককে ভয় কর।
আমার পরে তাঁদেরকে তিরিস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনা। তাঁদেরকে যারা মুহব্বত করলো, তা আমাকে মুহব্বত করার কারণেই। এবং তাঁদের প্রতি যারা
বিদ্বেষ পোষণ করলো, তা
আমাকে বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই। তাঁদেরকে যারা কষ্ট দিলো, তারা আমাকে কষ্ট দিলো, তারা আল্লাহ পাককে কষ্ট দিলো। আর যারা আল্লাহ পাককে
কষ্ট দিলো, তাদেরকে আল্লাহ পাক
শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।- (বুখারী শরীফ)
কুরআনের আয়াতের মর্ম শুধুমাত্র আরবী ভাষার দক্ষতার
উপর নির্ভরশীল নয়, বরং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের
মাধ্যমেই কুরআনের বিধানের মর্ম উপলদ্ধি করতে হবে। তেমনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের মর্ম উপলদ্ধি করতে খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে
কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের সুন্নাত থেকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুন্নাতের মর্ম উপলদ্ধি করতে হবে। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত-কে এড়িয়ে যদি কেউ কুরআনের বিধান অনুসরণ
করতে চায় বা খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে
কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের সুন্নাত-কে এড়িয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত-কে মেনে চলতে চায়, তাহবে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত সুস্পষ্ট
গোমরাহী।
খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু
আনহুম-গণই কুরআনের বিধান ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ
সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতেন, মহব্বত করতেন, মানতেন এবং আজীবন সংরক্ষণ করতেন।
ইসলামের কোন বিধি-বিধান পালনে যদি কোন মতভেদ দেখা য়ায়, তখন সবগুলো পন্থাকেই
সুন্নাহ সম্মত মনে করতে হবে। বিষয়টি উক্ত বিধান পালনের একাধিক বৈধ ও সুন্নাহ সম্মত
পন্থা হওয়ায় যে কোন একটি অনুসরণ করলেই সুন্নাত আদায় হবে, যা উম্মাহর জন্য রহমত
স্বরূপ গণ্য হবে।
খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু
আনহুম-গণের মতভেদের বিষয়ে ইমামগণ যিনি যে মতকে সর্বোত্তম মনে করেছেন তিনি সে মতের
উপর আমল করেছেন এবং তাদের ছাত্রদের শিক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু কখনো অন্যান্য মত নাকচ
বা সমালোচনা করেন নাই। এভাবেই সাহাবাগণের সুন্নাতের ভিত্তিতে বিভিন্ন মাযহাবের
সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং যে কোন মাযহাবের অনুসরণ মূলতঃ খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম
রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের সুন্নাতের অনুসরণ আর খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু
আনহুম-গণের সুন্নাতের অনুসরণ মূলতঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুন্নাতেরই অনুসরণমাত্র।
অনুরূপভাবে বিভিন্ন মাযহাবের সমালোচনা ও বিরোধিতা
মূলতঃ খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম-গণের অনুসৃত সুন্নাতের সমালোচনা ও
বিরোধিতা আর খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম-গণের অনুসৃত সুন্নাতের সমালোচনা ও
বিরোধিতা মূলতঃ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতেরই সমালোচনা
ও বিরোধিতা। সুতরাং এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। যারা
খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম-গণের অনুসৃত সুন্নাতকে পরিহার করে হাদীসের
ভাষায় শুধুমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত খুজে বেড়ায়
তাদের ফিতনা ও বিভ্রান্তির ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
বর্তমান যামানায় কতিপয় লোক খুলাফায়ে রাশিদীন ও
সাহাবা-গণের কিছু কিছু সুন্নাতকে বিদআত বলে আখ্যায়িত করছেন। যেমন তারাবিহ নামাজের
২০ রাকাত ও জুমার দ্বিতীয় আযান ইজমায়ে আসহাব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও তারা
এগুলো সহীহ হাদীসের পরিপন্থি বিদআত মনে করেন। এরা আসলে খুলাফায়ে রাশিদীন ও
সাহাবায়ে কিরাম-গণকে সত্যের মানদন্ড হিসাবে মানেন না আর তাঁদের সুন্নাতকেও আদর্শ
হিসাবে গ্রহণ করেন না। অথচ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং
নাজাতপ্রাপ্ত দলের আদর্শ হিসাবে নিজের সুন্নাতের সাথে সাহাবাগণের সুন্নাতকেও সঠিক
পথের আদর্শ হিসাবে ঘোষণা করেছেন। যদি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সুন্নাতই যথেষ্ট হত তাহলে খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবা-গণের সুন্নাতের কথা তিনি যোগ
করতেন না।
ইলম চর্চার মধ্যে অবশ্যই আমাদের পর্যন্ত সনদের
নির্ভরযোগ্য ধারাবাহিকতা থাকতে হবে, অন্যথায় শুধুমাত্র বাংলা তাফসীর আর বাংলা
হাদীস গ্রন্থ অধ্যয়ন করেই দ্বীনের ব্যাপারে ফতোয়া দেয়ারমত বিশেষজ্ঞ হওয়া যায় না।
বর্তমান যামানায় কতিপয় লোককে নিজে নিজে তাফসীর ও হাদীস অধ্যয়ন করেই দ্বীনের বহু
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফতোয়া প্রদান করতে দেখা যায়। অথচ নির্ভরযোগ্য মুয়াল্লিম ছাড়া
শুধু কিতাব পড়েই দ্বীন শিক্ষা করা যেত, তাহলে মানুষের মাঝে আল্লাহ তা’য়ালার শুধু
কিতাব পাঠালেই হত,নবী-রসূল (আ)-গণকে পাঠানোর দরকার ছিল না। আল্লাহ তা’য়ালা মানব
জাতির মাঝে মুয়াল্লিম হিসাবে নবী-রসূল পাঠানোই জরুরী মনে করেছেন, অথচ প্রত্যেক নবী-রসূল
(আ)-গণকে আলাদাভাবে নতুন নতুন কিতাব দেয়া জরুরী মনে করেননি। নির্ভরযোগ্য সনদের
ধারাবাহিকতাবিহীন এসব কিতাব পড়ুয়া আলিমদের হাদীস শরীফে অনেক সতর্কবানী রয়েছে।
যেমন-
হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে
আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম
দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে
ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” -(বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ''আমি অচিরেই
লোকদের উপর এমন একটি সময় আসার আশংকা করছি, যখন কেবলমাত্র
নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই বাকি
থাকবে
না
এবং
কুরআনের
লিখিত
রূপটি
ছাড়া
তার
বাস্তবায়ন
থাকবে
না। মসজিদগুলো চাকচিক্যে ভরপুর হলেও মানুষ হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। ঐ
সময়কার
আলেমরা
হবে
আসমানের
নিচে
বিচরণকারী
সর্বনিকৃষ্ট
জীব। তাদের থেকেই বিভিন্ন
ফিতনা
ছড়াবে
এবং
তারা
নিজেরাও
সেই
ফিতনায়
আবর্তিত
হবে।'' -(সুনানে বায়হাকী)
মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর মহান
দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! এবং তাঁদের
বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।

আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।
ReplyDelete