Tuesday, March 31, 2015

গোনাহ থেকে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়


গোনাহ থেকে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীনদুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাইআমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স.) তাঁর বান্দাহ ও রসূলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত।

আল্লাহ তা'য়ালার সন্তোষ ও মহব্বত অর্জনের অন্যতম শর্ত হল গোনাহ-কে মারাত্মক ভয়াবহ মনে করা এবং গোনাহ থেকে বেচে থাকার অবিরাম সাধনা করা গোনাহের প্রতি বেপরোয়া মনোভাব বা গোনাহের কাজকে জায়েজ মনে করলে বা তওবার প্রতি উদাসীন মানসিকতায় ঈমান নষ্ট হয় এবং মানুষকে কুফুরীর স্তরে উপনীত করে মানব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল ঈমান সুতরাং ঈমানের হেফাজতের জন্য গোনাহ-এর ব্যাপারে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হবে, গোনাহ থেকে বেচে থাকার জন্য তৎপর থাকতে হবে এবং তওবার হালতে জীবন অতিবাহিত করতে হবে

গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে সার্বিকভাবে প্রয়াস চালাতে হবে। এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের সংশোধনের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদেরই উপরতোমরা যদি সঠিক পথ অবলম্বন কর, তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে নাআল্লাহর কাছেই তোমাদের সকলের ফিরে আসাএরপর তিনি সে সম্পর্কে জানাবেন যা তোমরা করতে(সুরা মায়েদা : আয়াত ১০৫)

মনে রাখবেন! আল্লাহ তা'য়ালার খাস মেহেরবানী ছাড়া শুধুমাত্র সাধনার মাধ্যমে কারো পক্ষে গোনাহ থেকে পবিত্র থাকা সম্ভব নয়। নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণকে তিনি বিশেষ অনুগ্রহে নবুওয়াতী দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে সকল প্রকার গোনাহ থেকে পবিত্র রেখেছেন। অন্যান্য বান্দাগণের ক্ষেত্র তিনি তাঁর মর্জীমাফিক গোনাহ থেকে হেফাজত করেছেন। সুতরাং নবুওয়াতী ছিলছিলা সমাপ্তির কারণে উম্মাহর উপর অর্পিত নবুয়াতী মিশনের জিম্মাদারী দায়িত্ব পূর্ণাংগভাবে পালনকে যারা নিজেদের জীবনের জীবনের মিশন হিসাবে গ্রহণ করবেন, আল্লাহ তা'য়ালা হয়তো এ সব মহান বান্দাগণকেও তাঁর মর্জীমাফিক গোনাহ থেকে হেফাজতের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ দান করবেন বলে আশা করা যায়

তাকওয়া বা আল্লাহভীতি গোনাহের প্রতিবন্ধক। আল্লাহ তা'য়ালার বান্দাগণের মধ্যে তাকওয়ার মান যত বেশী হবে, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা তার জন্য তত বেশী সহজসাধ্য হবেআল্লাহ তা'য়ালার সন্তোষ ও মহব্বত অর্জনের পথে সাধনারত অনেকেই গোনাহ থেকে বাঁচতে চান এবং কুরআন-সুন্নাহ সম্মত পন্থা অনুসন্ধান করেন। এ প্রসংগে কুরআন ও হাদীসে বহু দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এর ভিতর থেকে কতিপয় পন্থা সকলের বিবেচনার জন্য পেশ করা হল।

নামায অশ্লীলতা ও গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখেঃ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ নিশ্চয়ই নামায অশ্লীলতা ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে, আর আল্লাহর যিকির (স্মরণ) হল সবচাইতে বড়, এবং তোমরা যা কর সে সম্পর্কে তিনি জ্ঞান রাখেন।” -(সূরা আনকাবুতঃ আয়াত ৪৫)

জামাতের সাথে সালাতঃ হযরত আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতরাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে এলাকায় বা জনবসতিতে তিনজন লোকও অবস্থান করে, অথচ তাঁরা জামায়াত কায়েম না করে নামায পড়ে, তাদের উপর শয়তান সওয়ার হয়ে যায়কাজেই জামায়াতে নামায পড়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য(কারণ একা নামায পড়লে তার অবস্থা এমন হবে) যেমন দলছুট বকরীকেই বাঘে ধরে খায়- (আবু দাঊদ)

তাকবীরে উলার সঙ্গে জামাতে সালাতঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সঙ্গে জামাতে নামায পড়ে সে দুটি পরোয়ানা লাভ করবে  জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানাও মুনাফেকী থেকে মুক্তির পরোয়ানা - (তিরমিযী শরীফ)

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত অন্তঃকরণের গুনাহজনিত মলিনতা দুর করে দেয়ঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো দরজার সামনে যদি একটা নহর থাকে আর সে যদি তাতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তবে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে বলে কি তোমাদের ধারণা হয়? সাহাবীরা বললেন, কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তিনি (রসূল সাঃ) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতও তদ্রুপ। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তায়া'লা গুনাহসমূহ বিলীন করে দেন। -[তিরমিযী]

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জিত হয়ঃ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সিয়াম অন্যতম বিধান। সিয়াম সাধনার বিধান রাখা হয়েছে আল্লাহভীতি সৃষ্টি তথা তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে। কুরআন কারীমে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য হল তাকওয়া অর্জন করা আল্লাহ তা‌'আলা বলেন :

-‘হে মুমিনগণতোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছেযেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার’ - {সূরা বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩}

সিয়াম পাপ থেকে প্রতিরক্ষার ঢাল স্বরূপঃ হযরত আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:  সিয়াম ঢাল স্বরূপ । সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মত কাজ করবে না । যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রানে, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব । আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন। -(সহীহ বুখারীঃ ১৭৭৩)

সার্বক্ষণিক আল্লাহর জিকির গোনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের মাধ্যমঃ  মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন : “তোমরা আমার স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো আর আমার প্রতি শোকর-গোজারী কর এবং (আমার নিয়ামতের নাশোকরী করে) কুফরী করো না” (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৫২)

তিনি আরও বলেন : “নিঃসন্দেহে আসমান সমূহ ও জমিনের সৃষ্টি ও দিন-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে, যারা দাড়ানো, বসা ও শায়িত সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করে।” (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)

আল্লাহর জিকির দ্বারা কলবের মরিচা বা কালিমা দুর হয়ে যায় এবং কলব পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।  আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : তারা এমন লোক, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর যিকরে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়হুঁশিয়ার! আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়(সুরা রাদঃ আয়াত ২৮)

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেমনটি ধারনা করে আমি তার সাথে ঠিক তেমনটি আচরণ করি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও মনের মধ্যে তাকে স্মরণ করি। আর যদি কোন মাজলিসে আমাকে স্মরণ করে আমিও তার চাইতে উত্তম মাজলিসে তাকে স্মরণ করি ( বুখারী ও মুসলিম)

হযরত ইবনে মাসঊদ ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর বন্ধু কারা? উত্তরে তিনি বললেন : তারা হচ্ছে ওরাই যাদেরকে তুমি দেখতে পাও যে, সর্বদা আল্লাহর স্মরনে নিমগ্ন রয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ)

তওবা ও ইস্তিগফার গোনাহের পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সদা সর্বদা গুনাহ মাফ চাইতে থাকে (অর্থাৎ   أَسْتَغْفِرُ اللّهَ  - আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি- পড়তে থাকে) আল্লাহ তাকে প্রতিটি সংকীর্ণতা ও কষ্টকর অবস্থা থেকে রের হয়ে আসার সুযোগ করে দেন, প্রতিটি দুশ্চিন্তা থেকে তাকে মুক্ত করেন এবং তিনি তাকে এমন সব উৎস থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

তওবার ফজিলতঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেহ তার হারানো মাল পূনঃপ্রাপ্তিতে যতটা আনন্দিত হয়, তোমাদের কারো তওবায় আল্লাহ তার চেয়ে বেশী আনন্দিত হন। (বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী)

তওবা ও ইস্তিগফারঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন কোন মুমিন বান্দা গুনাহ করে তখন তার কলবের মধ্যে একটি দাগ পড়ে যায়অতঃপর যদি সে তওবাহ ও ইস্তিগফার করে তাহলে তার কলব পরিষ্কার হয়ে যায়(তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)

কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পাপসমূহের প্রতিবন্ধকঃ হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ) তোমাদের উপর বিধিবদ্ধ করে নাও। কেননা তা হচ্ছে তোমাদের সলিহীন বান্দাগণের অভ্যাস ও ঐতিহ্য, তোমাদের প্রভুর নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহসমূহের কাফ্ফারা এবং পাপসমূহের প্রতিবন্ধক। (তিরমিযী -৩০৮০ : হাসান)

শেষ রাতের প্রার্থনাঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রাচুর্য্যময় আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি বলেন- কে আমার নিকট দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব, কে আমার নিকট কিছু চাইবে আমি তাকে তা দান করব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। (তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)

নাফসের খাহিসাত থেকে আত্মরক্ষাঃ নাফসানিয়াত ও নাফসে আম্মারার খাহিসাত মানুষকে গোনাহের কাজের দিকে ধাবিত করে ফলে মানুষ কামনা-বাসনার বশবর্তী হয়ে গোনাহের মাঝে লিপ্ত হয় অন্তঃকরণকে গোনাহের কামনা-বাসনা থেকে হেফাজতের জন্য কয়েকটি বিষয় নমুনা স্বরূপ উল্লেখ করা হল

চোখের দৃষ্টির হেফাজতের মাধ্যমে গোনাহ থেকে আত্মরক্ষাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : "মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" - {সূরা নূরঃ আয়াত ৩০-৩১}

অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ পরিহারঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ  হে ঈমানদারগণ! শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে চলো না। যে কেউ তার অনুসরণ করবে তাকে সে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ করার হুকুম দেবে। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না থাকতো তাহলে তোমাদের একজনও পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহই যাকে চান তাকে পবিত্র করে দেন এবং আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞাত। - (সূরা নূরঃ আয়াত-২১)

এ প্রসংগে হাদীস শরীফে এসেছেঃ হযরত আবু রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ইরশাদ করেন, যে মুসলমানের প্রথম দৃষ্টি (অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত) কোন মহিলার সৌন্দর্যের  প্রতি পড়ে আর সে সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় আল্লাহ তাআলা তাকে এমন এক ইবাদতের তাওফীক দান করেন যার স্বাদ সে অন্তরে অনূভব করতে থাকে। -(মুসনাদে আহমাদঃ ৫/ ২৬৪, মেশকাতঃ ২৭০ ও তারগীবঃ ৩/২৩)

জবানের হেফাজতের মাধ্যমে গোনাহ থেকে আত্মরক্ষাঃ জবানের হেফাজত করা মুমীন জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জবানের ক্ষতি খুব মারাত্মক আর তা থেকে নাজাতের উপর হল সর্বদা উত্তম কথা বলা অথবা চুপ থাকা। সত্যবাদীতা, উত্তম কথা ও নম্রভাষা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, মগফিরাত ও জান্নাতের পথে পরিচালিত করে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন : হে মুমীনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রমসমুহ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসফলতা লাভ করবে” -(সূরা আহযাব : আয়াত ৭০-৭১)

সত্যবাদীতা ও সততা অবলম্বনঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা অবশ্যই সত্য অবলম্বন করবেকেননা সততা মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়কোন মানুষ সদা সত্য কথা বলতে থাকলেএবং সত্যের উপর মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়আর তোমরা অবশ্যই মিথ্যা পরিহার করবেকেননা মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে পথ দেখায়, আর পাপ দোযখের দিকে নিয়ে যায়কোন বান্দা সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়- (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-১৯২১)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই সত্য পূণ্য ও নেক আমলের পথ দেখায়। আর নেক আমল জান্নাতের পথ দেখায়। আর ব্যক্তি সত্য বলতে বলতে আল্লাহর কাছে সিদ্দীকহিসেবে পরিগণিত হয়। আর মিথ্যা পাপের পথ দেখায়। আর পাপ পাপিকে জাহান্নামে নিয়ে ফেলে। ব্যক্তি মিথ্যা বলতে বলতে আল্লাহর খাতায় কাযযাববলে চিহ্নিত হয়ে যায়।  -{বুখারী : ৬০৯৪ ও মুসলিম : ১০৩}

হযরত বিলাল বিন হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্র্ণিতনবী  সল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার কল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তাঁর সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেনআবার মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার অকল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তাঁর অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন - (তিরমিযী ও মুয়াত্তা)

জুহুদ অবলম্বনঃ হযরত আবুজার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে বান্দা দুনিয়াতে জুহুদ অবলম্বন করে অবশ্যই আল্লাহ তার কলবের মধ্যে হিকমাত উৎপন্ন করে দেন, তার মুখে তা প্রকাশ করান, তাকে দুনিয়ার দোষত্রুটি, আত্মিক ব্যাধিসমূহ থেকে বাঁচার পথ দেখিয়ে দেন এবং দুনিয়া থেকে নিরাপত্তাসহ বের করে জান্নাতে নিয়ে যান - (বাইহাকী)

দান-সদাকাহঃ দুনিয়া ও দুনিয়ার সম্পদের মহব্বতের রোগ থেকে কলবকে চিকিৎসা করে সেখানে আল্লাহ তা'য়ালার মহব্বত জারী করার জন্য বেশী বেশী দান-সদাকাহ করার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজনআল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ তোমরা কখনোই পুণ্য ও কল্যাণ লাভ করবে না যতণ না তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু (আল্লাহর পথে) ব্যয় করবেআর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, সে ব্যয় সম্পর্কে আল্লাহ নিশ্চয় অবহিত রয়েছেন(সূরা আলে- ইমরানঃ আয়াত ৯২)

নাফসের হিসাব গ্রহণঃ হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার নাফসের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কাজ করেআর দুর্বল (নির্বোধ) সেই ব্যক্তি যে নিজেকে কুপ্রবৃত্তির (নাফসের) গোলাম বানায়, আবার আল্লাহর কাছেও (রহমতের) প্রত্যাশা করে(তিরমিযী : হাসান-২৪০১)

ভাল কাজ দ্বারা খারাপ কাজের অভ্যাস দূরীভূত করাঃ হযরত আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন : তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় করখারাপ কাজ হয়ে গেলে পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে খারাপ (গুণাহের কালিমা) দূরীভূত হয়ে যাবেআর মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার কর(তিরমিযী-১৯৩৭ : হাসান ও সহীহ্)

নিজ আমলের হিসাব গ্রহণঃ নিজ আমলের হিসাব গ্রহণ প্রসংগে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখ, আগামী দিনের জন্য আগাম কী প্রেরণ করছআল্লাহকে ভয় করতোমরা যা করছ, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্পর্কে সবকিছু জানেন(সূরা হাশর : আয়াত-১৮)

সার্বক্ষণিক মৃত্যুর স্মরন ও কুরআন তিলাওয়াতঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নিশ্চয়ই অন্তসমূহে মরিচা ধরে, যেমনভাবে লোহায় মরিচা ধরে, যখন তাতে পানি লাগে। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা দূরীভূত করার উপায় কী? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ এবং কোরআন তিলাওয়াত। -(শুয়াবুল ঈমানঃ ২/৩৫৩)

অন্তঃকরণকে শয়তানের ওয়াস-ওয়াসা থেকে সর্বদা হিফাজাত করাঃ

শয়তান সর্বদা মানব অন্তঃকরণে গোনাহের কাজের জন্য অনুপ্ররণা দেয়, পরামর্শ দেয় এবং উৎসাহ যোগায়। গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হলে শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সারবক্ষণিক প্রতিহত করতে হবে। শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে প্রতিরক্ষার কিছু উপায় বর্ণনা করা হল।

আল্লাহর জিকিরঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শয়তান মানুষের কলবের মধ্যে আসন গেড়ে বসে থাকেযখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান কলব ছেড়ে পিছনে সরে যায়আর যখন জিকির থেকে অমনোযোগী হয়ে যায়, তখন আবার (কলবের মধ্যে) ওয়াস-ওয়াসা দিতে থাকে(ইমাম বুখারী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)

শয়তান থেকে হেফাজতের জন্য ফজরবাদ পাঠ করার দোয়াঃ হযরত আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর দুই পা ভাজ অবস্থায় কারো সাথে কথা বলার পূর্বে দশ বার বলে-

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

(অর্থাৎ - আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই, সার্বভৌমত্ব তারই, সব প্রশংসা তারই জন্য, তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান), তার আমল নামায় দশটি নেকী লেখা হয়, দশটি গুনাহ বিলুপ্ত করা হয় এবং দশগুন মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। সে ঐ দিন সব রকমের বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে, শয়তানের ধোঁকা থেকে তাকে পাহারা দেয়া হবে এবং ঐ দিন র্শিক ছাড়া অন্য কোন গুনাহ তাকে ক্ষতিগ্রস্থ  করতে পারবে না। - তিরমিযী : হাসান ও সহীহ।

শয়তান থেকে হেফাজতের জন্য বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার দোয়াঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় বলে :

بِسْمِ اللّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ

(আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া অকল্যাণ রোধ বা কল্যাণ হাসিল করার শক্তি কারো নাই)- তাকে বলা হয় তোমাকে হেদায়াত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে আর শয়তান তার থেকে দুরে চলে যায়। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাই) আবু দাউদ পরে আরও বৃদ্ধি করেছেন- শয়তান অন্য শয়তানকে বলে, তুমি এর উপর কেমন করে নিয়ন্ত্রন লাভ করবে যাকে হেদায়াত দান করা হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উত্তম দ্বীনি পরিবেশঃ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নেককার লোকের সংসর্গ ও গোনাহগার লোকের সংসর্গের দৃষ্টান্ত হল যথাক্রমে মেশ্ক বিক্রেতা ও কামারের হাঁপরে ফুঁক দানকারীর মতমেশ্ক বিক্রেতার কাছে গেলে সে হয়ত তোমাকে এমনিতেই কিছু লাগিয়ে দিবে, না হয় তুমি তার নিকট থেকে কিছু খরিদ করবে আর না হয় তুমি তার নিকট থেকে অবশ্যই সুগন্ধ পাবেআর কামারের হাঁপরে ফুঁক দানকারীর নিকটে গেলে হয়ত তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে নতুবা অন্তত তার নিকট থেকে দুর্গন্ধ পাবেই-(বুখারী ও মুসলিম)

নেককার বন্ধু ও মুরব্বী বা শায়েখ নির্বাচনঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মানুষ তার বন্ধু বা মুরব্বীর আদর্শে গড়ে উঠেসুতরাং খেয়াল রাখা উচিৎ, সে কেমন লোককে বন্ধু বা মুরব্বী বানিয়ে নিচ্ছে- (তিরমিযী ও আবু দাউদ)

গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি দোয়াঃ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তা’য়ালার কাছে সর্বদা সাহায্য প্রার্থনা করতে হবেকারণ আল্লাহ তা’য়ালার সার্বক্ষণিক সাহায্য ও অসীম অনুগ্রহ ছাড়া কারও পক্ষে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি দোয়া উল্লেখ করা হল।

১) দ্বীনের পথে হিদায়াতের উপর টিকে থাকার জন্য আল্লাহর শেখানো দোয়া :

رَبَّنَا لَا تُزِغ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَب لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

- হে আমাদের প্রতিপালক! হিদায়াত প্রদান করার পর আপনি আমাদের অন্তঃকরণকে বক্র করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন! নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর দাতা(সূরা আলে ইমরান : আয়াত- ৮)

২) রসূলের শেখানো দোয়া : হযরত শাহর ইবনে হাওশাব  (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, আমি উম্মে সালমা (রা) কে জিজ্ঞেস করলাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আপনার কাছে অবস্থান করতেন তখন অধিকাংশ সময়ে তিনি কি দোয়া করতেন? তিনি বলেন, বেশীর ভাগ সময়ে তিনি এই দোয়া করতেন-

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلى دِيْنِك َ

- (হে অন্তর সমুহের ওলট-পালটকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন)- তিরমিযী : হাসান

৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন :

اَللّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلى طَاعَتِكَ

(- হে আল্লাহ! হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়গুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন) ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন

৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন :

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْهُدى وَالتُّقى وَالْعَفَافَ وَالْغِنى

(হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হিদায়াত, তাকওয়া, সচ্চরিত্রতা ও প্রাচুর্য্যতার প্রার্থনা করছি) - ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সকল প্রকার গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন! তাঁর মহান দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আর রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জান্নাত লাভের তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।


3 comments:

  1. Alhamdulillah ...... ilke valuable post...........Jajha kallah

    ReplyDelete
  2. মাশা আল্লাহ, খুব কাজের আর্টিকেল।

    ReplyDelete
  3. মাশাআল্লাহ।

    ReplyDelete