ভালবাসা ও বিশ্ব ভালবাসা দিবসঃ ইসলামের দৃষ্টিভংগি
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
ভালবাসা হল মহান আল্লাহ তা'য়ালার একটি বিশেষ নিয়ামাত, যা তিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের হৃদয়ের মাঝে প্রদান করেছেন। রূহ-এর জগতেও এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। এর মাধ্যমেই সৃষ্টিলগ্ন থেকে সমগ্র মাখলুক বিশ্ব জগতে আজও টিকে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে। কিন্তু মানব জাতির মাঝে আল্লাহ তা'য়ালা ভালবাসার একটি কল্যাণময় সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই সীমারেখা মেনে চলার মাঝেই নিহিত রয়েছে মানব জাতির অস্তিত্ব, মানব সমাজের সৌন্দর্য্য, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ, ইহকালীন কল্যান ও পরকালীন নাজাত।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস কিঃ ১৪ই ফেব্রুয়ারী এক জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। ২৭০ সনের ১৪ই ফেব্রুয়ারী কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন কডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীা দিত। এ অপরাধে সম্রাট কডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করেন। তার নামানুসারে দিনটির নাম করণ করা হয় ভ্যালেন্টাইন ডে। সেই ভ্যালেন্টাইন ডে, বর্তমানে বিশ্ব ভালবাসা দিবস নামে পরিচিত। বিশ্ব জুড়ে অবাধ বেহায়াপনার সয়লাবে দিবসটি পালিত হয়।
বাংলাদেশে বিশ্ব ভালবাসা দিবসঃ বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ সনে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। ফলে বাংলার তরুণ-তরুণী যুবক-যুবতীরা লুফে নেয় এ জঘন্য দিবস। এরপর থেকে মনের মনিকোঠায় পবিত্র ভালবাসার পরিবর্তে অবাধ ও অবৈধ জৈবিক লালসায় দিবসটি অদ্যাবধি যথারীতি চলে আসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। আল্লাহ তাআলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন। অপবিত্রতা, অশ্লীলতা, পাশবিকতা, নোংরামি, শঠতা আর লালসার মাঝে ভালবাসা আজ অনুপস্থিত! তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের বাস্তব নমুনাঃ বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা হল। দিনটি যখন আসে তখন বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরা প্রেমের জোয়ারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধু তাই নয় অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক-প্রেমিকার খোশ গল্প, অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতা, কপোত-কপোতির জড়াজড়ি, সবশেষে কখনো কখনো পশুর মত বাধাহীন অবৈধ যৌন মিলন ও ধর্ষণ। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! তাই দিবসটিকে বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে নামকরণটি সামগ্রিকভাবে সার্থক হয়।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের ফলাফলঃ মানব সমাজে অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতা ও অবৈধ যৌনতার বিষাক্ত ছোবলে মানবিক, নৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়, ফলে সমাজ জীবনে এর তাৎনিক ও দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরণের মারাত্মক পারিবারিক ও সামাজিক বিরূপ প্রতিক্রয়ার বিষাক্ত ফলাফল প্রকাশিত হয় এবং মহামারী আকারে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরন স্বরূপ :
(১) সমাজে দায়-দায়িত্বহীন অবাধ অবৈধ যৌনতার প্রসার ঘটে এবং বিবাহ নামক পবিত্র দায়িত্বপূর্ণ সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত বৈধ যৌন সম্পর্কের প্রতি মানুষ নামক পশুটি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে মানব সমাজ ও সভ্যতা ধীরে ধীরে দায়-দায়িত্বহীন অসভ্য-বর্বর পাশবিক সমাজের দিক দ্রুত ধাবিত হয়।
(২) অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতা, কপোত-কপোতির জড়াজড়ি ও অবৈধ যৌনতা সমাজে প্রকাশ্যভাবে রাস্তার আশে-পাশ, পার্কে, খোলা ময়দানে দ্রুত মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করে। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক পবিত্র বন্ধন শিথীল হয়ে যায় এবং নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
(৩) বাঁধাহীন অবৈধ যৌন মিলনের মারাত্মক সয়লাবে কলুষিত সমাজে ধর্ষন, পরকীয়া, অবৈধ গর্ভধারণ, অবৈধ গর্ভপাত, আত্মহত্যা, সংসার ভাংগণ ও অবৈধ সন্তানের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটে।
(৪) নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। ফলে সমাজে চুরি, ডাকাতি, লুট, ছিনতাই, রাহাজানি, গুম ও খুন এর ব্যাপক সয়লাব ঘটে।
(৫) অবাধ, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনতার ব্যাপক সয়লাবে সমাজে নিরব ঘাতক ব্যাধি এইডস, মানষিক বিকৃতি ও নানা প্রকার দুরারোগ্য যৌন ব্যাধির মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিভংগি : যারা আল্লাহ তা'য়ালা এবং তাঁর রসূলের উপর বিশ্বাসী তারা শুধুমাত্র হৃদয়ের আবেগে বা নাফসের কামনা-বাসনায় বা জৈবিক লালসায় অবৈধ ভালবাসার লাগামহীন পথে পা বাড়ায় না, বরং তারা জীবনের প্রতিটি পদেক্ষেপ সর্বদা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা মেনে চলেন। কেবলমাত্র ইহ-পরকালীন কল্যাণের লক্ষ্যে বিবাহ নামক পবিত্র সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমেই নারী-পুরুষের স্বীকৃত বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মুমিনদের এই পবিত্র ভালবাসার দায়-দায়িত্ব ও কল্যাণ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
- মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের অভিভাবক ও বন্ধু। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয়, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, সালাত কায়িম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। আল্লাহ তাদের প্রতি অচিরেই রহমত নাযিল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়। আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য এমন জান্নাতের অঙ্গীকার করেছেন যে জান্নাতের নিচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ বয়ে যায়। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্র“তি দেন মহাপবিত্র স্থায়ী বাসস্থান আদন নামক জান্নাতের। বস্তুত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা।- (সূরা তওবা : ৭১-৭২)
আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ভালবাসাঃ ভালবাসার মধ্যে যখন দুনিয়াবী কোন চাওয়া-পাওয়া, নাফসের কোন কামনা-বাসনা আর জৈবিক কোন লালসার লেশমাত্র থাকে না বরং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই নিবেদিত হয়- তখন সে ভালবাসার মাধ্যমে মানব জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্যে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করা যায়। যেমন-
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : যারা আমার সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালবাসে, আমার রেজামন্দির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টির কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদেরকে ভালবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। -(মুয়াত্তা)
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা’য়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নয় আর শহীদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের উপর রিশক করবেন। জিজ্ঞেস করা হল- হে আল্লাহর রসূল! তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন: তারা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোন রক্তের সম্পর্ক নেই কোন বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমন্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নুরের মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে তখন তারা ভীত হবে না আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে তখন তাদের কোন দুঃখ থাকবে না। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন- জেনে রাখ! যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোন ভয় নাই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। -(আবু দাউদ : ৩০৬০, সহীহ্)
হযরত ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আলাহর রসূল! এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসে কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না, এ ব্যক্তি স¤পর্কে আপনি কি বলেন ? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে ব্যক্তি যাকে ভালবাসে (হাশরের ময়দানে ও জান্নাতে) সে তার সাথেই থাকবে। - (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ (পরকালে) এত উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন জান্নাত লাভ করবে যে, অন্যান্য জান্নাতবাসীগণ তাদেরকে এভাবে দেখবে যেভাবে পূর্ব বা পশ্চিমে উদিত নত্রসমূহকে দেখা যায়। তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, এরা কারা? উত্তরে বলা হবে, এরা হল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ। - (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬১৮)
মুমিনগণের পারস্পরিক ভালবাসা : পারস্পরিক ভালবাসা মুমীনদের জীবনের অপরিহার্য পরিচ্ছদ। এই মহৎ বৈশিষ্টের অবর্তমানে একজন মুমিন ব্যাক্তি প্রকৃত মুমিন হতে পারে না। যেমন, হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমাদের মধ্যে কেউই মুমিন হতে পারে না, যতন না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। -( বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য প্রাচীর স্বরূপ যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তি যোগায়। তিনি তার এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে দেখান। -(বুখারী ও মুসলিম)
হযরত নুমান ইবনে বশীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পারস্পরিক ভালবাবাসা, দয়া-অনুগ্রহ ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোন থেকে মুমিনগণ একটি দেহের সমতুল্য যার কোন অংশ অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যান্য অংগ-প্রত্যাংগ তা অনুভব করে, সেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হোক কিংবা জ্বরের অবস্থায় (অর্থাৎ সর্বাবস্থায়)। -(বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। যেসব পাপী আল্লাহর সাথে শরীক করেনি তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ত্যাগকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়- এদেরকে ফিরিয়ে দাও যতণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। -(সহীহ মুসলিম)
মুমিন নারী-পুরুষদের বৈধ আচরণ ও সম্পর্ক : আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : (হে রাসূল!) মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বদেশ যেন মাথার কাপড় দিয়ে আবৃত করে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে; তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদপে না করে। (হে মুমিনগণ!) তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহযোগ্য নরÑনারী তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাসÑদাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহতো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। -(সূরা নূর : ৩০-৩২)
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের পরিনতি : ইসলামে মাহরাম নয় এমন নারী-পুরুষের বিবাহ বহির্ভূত দেখা-সাক্ষাৎ,,প্রেম-ভালবাসা, অবৈধ সম্পর্ক, অশ্লীলতা, বেহাপনা, নগ্নতা, কপোত-কপোতির জড়াজড়ি ও অবৈধ যৌনতা সম্পূর্ণ হারাম, যার পরিণতি হল জাহান্নাম। বিশ্ব ভালবাসা দিবস সেই জাহান্নামের দিকেই মানব জাতিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এছাড়া দুনিয়ার জীবনেও রয়েছে এর মারাত্মক বিপর্যয়। এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
- ব্যভিচারী পুরুষ ব্যভিচারী বা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করে না এবং ব্যভিচারী নারীকেও ব্যভিচারী বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কেউ বিয়ে করবে না। মুমিনদের জন্য এটা হারাম করা হয়েছে। -(সূরা নূর : ৩)
তিনি আরও বলেন : খারাপ চরিত্রের নারী খারাপ চরিত্রের পুরুষের জন্য; খারাপ চরিত্রের পুরুষ খারাপ চরিত্রের নারীর জন্য; ভালো চরিত্রের নারী ভালো চরিত্রের পুরুষের জন্য; ভালো চরিত্রের পুরুষ ভালো চরিত্রের নারীর জন্য। লোকে যা বলে তারা তা হতে পবিত্র। তাদের জন্য আছে মা এবং সম্মানজনক জীবিকা। -(সূরা নূর : ২৬)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশিত হয় এবং তার ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়- অনিবার্য পরিনতি স্বরূপ তাদের মাঝে এমন সব মহামারী, সক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট আকারে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তদের মধ্যে কখনোই ছিল না। -( ইবনে মাজাহ : হাদিস নং-৪০০৯)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্যও ব্যাপক হবে। -(মুয়াত্তা : ৮৭০)
হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কিয়ামাতের কিছু নিদর্শন হল- ইলম লোপ পাবে, মদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে। -(বুখারী : ৮০)
পরকালীণ লাঞ্ছনা ও যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রসংগে তিনি বলেন : যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়ঙ্কর শাস্তি রয়েছে আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা কেউই রেহাই পেতে না। আর আল্লাহ অনুগ্রহশীল ও পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তানতো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পবিত্র হতে পারতে না, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করে থাকেন এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।-(সূরা নূর : ১৯-২১)
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : লজ্জা ও সম্ভ্রমবোধ ঈমানের অংগ আর ঈমানের স্থান জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা জুলুমের অংগ আর জুলুমের স্থান দোযখে। -(আহমাদ, তিরমিযী-১৯৫৮ : হাসান ও সহীহ্)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নগ্নতা, অশ্লীলতা ও বেহায়পনার অভিশাপ থেকে হিফাজাত করুণ! রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গণের মহান আদর্শ মোতাবেক জীবন গঠন এবং জীবনের সকল ক্ষেত্র সংশোধন করার তৌফিক দান করুণ। আ-মী-ন।

No comments:
Post a Comment