সমাজ সংশোধনে খতিব ও ইমামগণের ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল
আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে
কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল।
মুসলিম উম্মাহর সম্মানিত ওলামাগণের
মধ্যে যারা বিভিন্ন মাসজিদের খতিব ও ইমাম হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিস এবং উম্মাহর মাঝে তাঁর
সম্মানিত প্রতিনিধি। শুধুমাত্র নামাজ পড়ানোই তাদের কাজ নয়, বরং তারা মহল্লাবাসীর
ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও সামাজিকসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রের দ্বীনি তত্ত্বাবধানের জিম্মাদার। মনে রাখবেন! হাশরের ময়দানে তাদেরকে অবশ্যই
তাদের এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
খতিব ও ইমামগণের প্রথম কাজ হল-
মহল্লার যারা নামাজ পড়ে না, মাসজিদে আসে না, ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলে না বা
দ্বীনে হকের পরিপন্থি জীবনাচারে অভ্যস্ত তাদেরকে দ্বীনপন্থি, মাসজিদমুখী নামাজী ও
তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহল্লার মাঝে সর্বদা দাওয়াত, তাবলিগ ও
নসিহত জারী রাখা। এজন্য দেখা-সাক্ষাৎ, দোয়ার মাহফিল, বিবাহ অনুষ্ঠানসহ তাদের সাথে
একত্রিত হওয়ার সকল সুযোগকেই দাওয়াত, তাবলিগ ও নসিহতের কাজে লাগাতে হবে।
খতিব ও ইমামগণের দ্বিতীয় কাজ হল-
মহল্লায় যারা নামাজ পড়ে, মাসজিদে আসে, ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলার চিন্তা করে এবং
যথাসাধ্য চেষ্টা করে তাদেরকে কুরআন ও ছুন্নাহ মোতাবেক তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে গড়ে
তোলার লক্ষ্যে মাসজিদে দ্বীনি মক্তব কায়েম করে নিয়মিত ও পরিকল্পিত তালিম চালু করা।
ইমামগণ ফজর, আছর বা ঈশাবাদ সংক্ষিপ্ত মক্তব কায়েম করে মহল্লাবাসীকে পবিত্র কুরআন
শিক্ষা দিবেন ও কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়ার কৌশল (ছুন্নাহ) শিক্ষা দিবেন।
খতিব ও ইমামগণের তৃতীয় কাজ হল- সমাজ
সংশোধন। মহল্লাবাসীদের মাঝে প্রচলিত সকল প্রকার শিরকী, কুফরী, তাগুতী, জাহিলী ও
বিদআতী আকিদা-বিশ্বাস, কুসংস্কার ও রসম-রেওয়াজ এর মূলোৎপাটন করে কুরআন ও ছুন্নাহর
সহীহ আলো সর্বত্র বিকশিত করার মাধ্যমে সমাজ সংশোধনের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক মাসজিদে
মাসজিদে দ্বীনি মাজলিস ও মাসিক তাফসির মাহফিলের ব্যবস্থা করা। এসব মাজলিস ও
মাহফিলে যাবতীয় সমালোচনা পরিহার করে সর্বদা পজিটিভ আলোচনা করবেন।
খতিব ও ইমামগণের চতুর্থ কাজ হল-
জুমআর খুতবাহ। মহল্লাবাসীদের মাঝে দ্বীনি ইলম ও আমলের ঘাটতিগুলো খতিব ও ইমামগণের
সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। অতঃপর জুমআর খুতবাহ-কে এমনভাবে বিন্যাস করতে
হবে যাতে আরবী বছরের হিসাবে পঞ্চাশটি খুতবাহ-এর মাধ্যমে মুসল্লীদেরকে সাহাবাগণের
নমুনায় তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে জীবন গড়ার প্রয়োজনীয় মৌলিক নসিহত মহল্লাবাসীদের
সামনে উপস্থাপন এবং পরবর্তী বছর এর পূনরায় আলোচনা করা যায়।
খতিব ও ইমামগণের পঞ্চম কাজ হল- সমাজ
কল্যান। খতিব ও ইমামগণ মহল্লাবাসীদের মাঝে যারা বিত্তবান, তাদের সহায়তায় অভাবীদের জন্য
দারিদ্র বিমোচনে সল্পপুজির স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। এছাড়া মহল্লার
অভাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ার সুব্যবস্থা, অভাবী রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা,
অভাবী বিবাহযোগ্যদের বিবাহের ব্যবস্থা এবং অভাবী মৃতদের সৎকারের ব্যবস্থা করবেন। জাতি,ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল ও মত নির্বিশেষে সবার
জন্যই তাঁরা এসব মহতী কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
সম্মানিত খতিব ও ইমামগণ হবেন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিস এবং তাঁর প্রতিনিধি। তারা
কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকা পন্থী হবেন না, বরং শুধুমাত্র দ্বীনপন্থী হবেন। তারা
সকল ইসলামী ব্যাক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান, দল, সহীহ তরিকা ও ফিরকার সাথে সুসম্পর্ক বজায়
রাখবেন এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সাধ্যানুযায়ী তৎপর থাকবেন। তারা কোন দ্বীনি
খেদমতের বিরোধিতা করবেন না, বরং সকল দ্বীনি কাজকেই নিজের কাজ মনে করবেন এবং
সাধ্যমত সহায়তা করবেন।
সম্মানিত খতিব ও ইমামগণ মহল্লাবাসীদের
মাঝে কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকার দৃষ্টিভংগী বা আদর্শ প্রচার করবেন না,
ফিরকাবাজী বিতর্কে বা বাহাসে লিপ্ত হবেন না বরং শুধুমাত্র কুরআন ও ছুন্নাহর মহাণ
আদর্শ ও মৌলিক শিক্ষা তুলে ধরবেন এবং সাহাবাগণের নমুনায় সে অনুযায়ী জীবন গড়ার কৌশল
শিক্ষা দিবেন। তারা মহল্লাবাসীদেরকে কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকা পন্থী বানাবেন
না, বরং শুধুমাত্র দ্বীনপন্থী তাকওয়াবান মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যথাসাধ্য
চেষ্টা করবেন।
আশা করা যায়, তাদের মহান সাধনার ফলে
মহল্লাবাসীদের মাঝে আভ্যান্তরীন ভুল বুঝাবুঝি দুর হবে। ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হবে। দলীয় চেতনা বিলুপ্ত হয়ে দ্বীনি চেতনা বিকশিত
হবে। দলীয় প্রসারের প্রতিযোগিতার পরিবর্তে ইসলাহী প্রতিযোগীতা প্রাধান্য পাবে। আর
তখনই গড়ে উঠবে উম্মাহর মাঝে কাংখিত ছুন্নাহ ভিত্তিক ইসলাহ ও কুরআন ভিত্তিক
ইত্তিহাদ।
আসুন! আমরা সবাই ইত্তিহাদের লক্ষ্যে
নিজ নিজ দলীয় মানসিকতা পরিহার করে দ্বীনপন্থী মানসিকতা গ্রহণ করি। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর
দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে
আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য উপলব্ধি ও যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন!
ReplyDelete