Wednesday, March 5, 2014

ইসলামী কল্যাণময় সমাজে পারস্পরিক উত্তম আচরণ


ইসলামী কল্যাণময় সমাজে পারস্পরিক উত্তম আচরণ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীনতাঁর পরিবারবর্গসাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যেআল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যেমুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল

ইসলামী কল্যাণময় সমাজে পারস্পরিক উত্তম আচরণের মুলনীতি প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন : সওয়াবের কাজ ও তাকওয়া অবলম্বনে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। পাপ ও সীমালংঘনের কাজে কেউ কাউকে সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করবে। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। -(সূরা আল-মায়েদা : ২)

কুরআন ও ছুন্নাহর আলোকে সংশোধিত ও বিকশিত একটি কল্যাণময় সমাজ দুনিয়ার বুকে যেন জান্নাতের একটি টুকরা। অশান্তি, হানাহানি, জুলুম, পাপ ও পংকিলতা সেখানে অনুপস্থিত। সর্বত্র শুধু প্রশান্তি, কল্যাণ, ইনসাফ ও পবিত্রতার সুবাতাস। এ ধরণের একটি কল্যাণময় সমাজের পারস্পরিক উত্তম আচরণ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে বহু নির্দেশনা রয়েছে। নমুনা স্বরূপ এর কিছু দিক তুলে ধরা হল। যেমন-

পারস্পরিক কল্যাণের পথে আহ্বান :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা প্রয়োজন যারা (মানুষকে) কল্যাণের পথে আহ্বান করবেসৎকাজের আদেশ দেবেঅসৎ কাজে নিষেধ করবে। এরাই সফলকাম। -(সূরা আলে ইমরান : ১০৪)

মানুষের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দয়ালুদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। যারা যমীনে আছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করতাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রহমান থেকে উদ্গত। যে ব্যক্তি দয়ার বন্ধন অক্ষুন্ন রাখে আল্লাহও তার সাথে নিজ বন্ধন অক্ষুন্ন রাখেন। আর যে ব্যক্তি দয়ার বন্ধন ছিন্ন করে আল্লাহও তার সাথে দয়ার বন্ধন ছিন্ন করেন। -(আবু দাউদতিরমিযীঃ ১৮৭৪, হাসান ও সহীহ্)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা দয়াময় রহমানের ইবাদাত কর, (মানুষকে) আহার করাও এবং ছালামের ব্যাপক প্রসার করতবেই শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। -(তিরমিযীঃ ১৮০৩, হাসান ও সহীহ্)

হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যাক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না আল্লাহ তাকে দয়া করেন না। -(বুখারীমুসলিমতিরমিযীঃ ১৮৭৯, হাসান ও সহীহ্)

মুসলিম সর্বসাধারণের কল্যাণ কামনা :
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেনআমি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নামাজ কায়েমযাকাত প্রদান ও প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার শপথ করেছি। -(বুখারীমুসলিমতিরমিযীঃ ১৮৭৬, হাসান ও সহীহ্)

হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দ্বীন হল কল্যাণ কামনার নাম। একথা তিনি তিনবার বলেন। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেনহে আল্লাহর রসূল! কার কল্যাণ কামনা করাতিনি বললেন : আল্লাহতাঁর কিতাবেরমুসলিম নেতৃবর্গের এবং মুসলিম সর্বসাধারণের। -(তিরমিযীঃ ১৮৭৫,  হাসান ও সহীহ)

সহমর্মিতা :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেননবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের পার্থিব কষ্টসমূহের একটি কষ্ট দুর করে দেয়আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার একটি বড় কষ্ট দুর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখেআল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। বান্দা যতণ তার মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে আল্লাহও ততণ তার সাহায্য করতে থাকেন । -(মুসলিমতিরমিযী-১৮৮০ : হাসান )

বিনয় ও নম্রতা :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যাকাত বা দানে কখনো সম্পদের ঘাটতি হয় না। মা ও উদারতার দ্বারা আল্লাহ মান-সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে সমুন্নত করেন। -(মুসলিমতিরমিযীঃ ১৯৭৮, হাসান ও সহীহ্)

উত্তম ব্যবহার :
হযরত আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন : তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর। খারাপ কাজ হয়ে গেলে পরপরই ভাল কাজ করতাতে খারাপ দূরীভূত হয়ে যাবে। আর মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার কর। -(তিরমিযীঃ ১৯৩৭)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে নাবড়দের সম্মান করে নাসৎকাজের নির্দেশ দেয় নাঅসৎ কাজে বাধা দেয় না সে আমাদের (দলভূক্ত) নয়। -(মুসনাদে আহমাদতিরমিযীঃ ১৮৭১)

সত্যবাদীতা :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা অবশ্যই সত্য অবলম্বন করবে। কেননা সততা মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। কোন মানুষ সদা সত্য কথা বলতে থাকলেএবং সত্যের উপর মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়। আর তোমরা অবশ্যই মিথ্যা পরিহার করবে। কেননা মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে পথ দেখায়আর পাপ দোযখের দিকে নিয়ে যায়। কোন বান্দা সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়। -(বুখারীমুসলিমতিরমিযী-১৯২১: হাসান ও সহীহ)

উত্তম চরিত্র :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিই সর্বোত্তম। -(বুখারীমুসলিমতিরমিযীঃ ১৯২৫, হাসান ও সহীহ)

ভাল কাজের সুপারিশ :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ যে ব্যক্তি ভাল কাজের সুপারিশ করবে সে তার থেকে (সওয়াবের) অংশ পাবে আর যে ব্যক্তি খারাপ কাজের সুপারিশ করবে সেও তা থেকে (গুনাহের) অংশ পাবে। -(সূরা আন-নিসা : ৮৫)

মুমিনের বৈশিষ্ট্য :
হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমাদের মধ্যে কেউই মুমিন হতে পারে নাযতন না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। -(ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু মূসা আশআরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য প্রাচীর স্বরূপ যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তি যোগায়। তিনি তার এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে দেখান। -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত নুমান ইবনে বশীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পারস্পরিক ভালবাবাসাদয়া-অনুগ্রহ ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোন থেকে মুমিনগণ একটি দেহের সমতুল্য যার কোন অংশ অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগ তা অনুভব করেসেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হোক কিংবা জ্বরের অবস্থায় (অর্থাৎ সর্বাবস্থায়)। -(বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিমের বৈশিষ্ট্য :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেননবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিম সেই ব্যক্তিযার মুখের ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির সেই ব্যক্তিযে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিষ পরিত্যাগ করে। - (বুখারী ও মুসলিম)

সর্বাবস্থায় সাহায্য ও সহযোগীতা :
হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমার ভাইকে সাহায্য করচাই জালিম হোক অথবা মাজলুম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলহে আল্লাহর রসূল! সে যদি মজলুম হয় আমি তাকে সাহায্য করবকিন্তু যদি সে জালিম হয় তবে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করবতিনি বলেন : তাকে জুলুম করা থেকে বিরত রাখবাধা দাও। এটাই তাকে সাহায্য করা। -(সহীহ বুখারী)

পরস্পরের সম্মানের হিফাযত :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে বান্দা অন্য বান্দার দোষ-ত্রটি এ পার্থিব জগতে গোপন রাখবেআল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রটি গোপন রাখবেন। -(ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

পরস্পরের জীবনের হিফাযত :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ হত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া যদি কেউ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করেতাহলে সে যেন (পৃথিবীর) সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর যদি কেউ কোন ব্যক্তিকে জীবন দান (অন্যায়ভাবে নিহত হওয়া থেকে রা) করলসে যেন (পৃথিবীর) সমস্ত মানুষকে জীবন দান করল। -(সূরা আল-মায়েদা : ৩২)

পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধ :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে নাতাকে মিথ্যা বলবে নাএবং তাকে হেয় প্রতিপন্ন করবে না। প্রত্যেক মুসলিমের মান-ইজ্জতধন-সম্পদ ও রক্ত অন্য সব মুসলিমের উপর হারাম। (তিনি বস্থলের দিকে ইশারা করে বলেন) : তাকওয়া এখানে। কোন ব্যক্তির অধম হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যেসে তার মুসলিম ভাইকে ঘৃণা করেহেয় প্রতিপন্ন করে। -(তিরমিযী : হাসান)

পারস্পরিক সমঝোতা স্থাপন :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। অতএব (কোন প্রকার ভুল বোঝা-বুঝি বা বিরোধ হলে) তোমাদের ভাইদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সংশোধন করে সমঝোতা স্থাপন করে দাও। -(সূরা হুজরাত : ১০)

পারস্পরিক দায়িত্ব :
হযরত বারাআ ইবনে আযিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি বিষয় করতে এবং সাতটি বিষয় না করতে নির্দেশ দিয়েছেন : তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন : রোগীর খোঁজ-খবর নিতেজানাযায় অংশগ্রহণ করতেহাঁচির জবাব দিতেশপথ বা প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতেমাজলুমের সাহায্য করতে এবং সালামের ব্যাপক প্রচলন করতে। তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন : স্বর্ণের আংটি পরিধান ও তৈরী করতেরূপার পাত্রে পান করতেলাল রং এর রেশমের গদিতে বসতেকাচ্ছি (কাপড়)রেশমীবস্ত্র ও দীবাজ পরিধান করতে। -(বুখারী ও মুসলিম)

পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন :
হযরত উম্মু কুলসুম বিনতে উকবা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনআমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি লোকদের মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে এবং এ ব্যাপারে সে উত্তম (মিথ্যা) কথা বলে বা পৌঁছায়সে মিথ্যাবাদী নয়। -(বুখারী ও মুসলিম)

অমুসলিমদের সাথে সদাচার :
হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুয়ায (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেন : মাজলুমের বদ-দোয়াকে ভয় কর, কেননা তার বদ-দোয়া ও আল্লাহর মাঝখানে কোন বাধা নেই। -(তিরমিযী-১৯৬৩ : হাসান ও সহীহ্)

নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা পরিহার :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : লজ্জা ও সম্ভ্রমবোধ ঈমানের অংগ আর ঈমানের স্থান জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা জুলুমের অংগ আর জুলুমের স্থান দোযখে। -(আহমাদতিরমিযী- ১৯৫৮ : হাসান ও সহীহ্)

দ্বিমুখীপনা ও মুনাফেকী পরিহার :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দ্বিমুখী চরিত্রের লোকেরা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে। -(বুখারীমুসলিমতিরমিযী-১৯৭৪ : হাসান ও সহীহ্)

চোগলখুরী পরিহার :
হযরত হাম্মাম ইবনুল হারিস (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যক্তি হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। তাকে বলা হলএই ব্যক্তি জনসাধারণের কথা সরকারের কানে দেয়। হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেনআমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। -(বুখারী ও মুসলিম)

অহংকার পরিহার :
হযরত আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার অন্তরে সরিষার দানার পরিমানও অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর যার অন্তরে সরিষার দানার পরিমানও ঈমান আছে সে দোযখে প্রবেশ করবে না। -(মুসলিম)

পারস্পরিক হিংসা পরিহার :
হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ করো নাএকে অপরকে এড়িয়ে চলো নাপরস্পর হিংসা করো নাবরং আল্লাহর বান্দাগণ! পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থেকো। কোন মুসলিমের পে তার ভাইকে তিনদিনের অধিক ত্যাগ করে থাকা হালাল নয়। -(বুখারী ও মুসলিম)

অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পরিহার :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ যেসব লোক চায়ঈমানদারদের মধ্যে নির্লজ্জতা-বেহায়াপনা বিস্তার লাভ করুকতাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি । -(সূরা আন-নূর : ১৯)

অবৈধ উপার্জন ও ভোগ পরিহার :
হযরত ইবনে উজরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেনআমাকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে কাব ইবনে উজরা! যে মাংস হারাম খাদ্য দ্বারা প্রতিপালিত হবেতার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত। -(সহীহ তিরমিযী : হাদীস নং- ৫০১)

পারস্পরিক উস্কানি পরিহার :
হযরত জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নামাজীরা কখনো শয়তানের পুজা করবে এ ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু সে তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে নিরাশ হয়নি। -(মুসলিমতিরমিযী-১৮৮৭ : হাসান ও সহীহ্)

পারস্পরিক গালিগালাজ পরিহার :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দুই ব্যক্তির পরস্পরকে গালি দেয়ার পরিণাম প্রথম গালি প্রদানকারীর উপর পতিত হয়যাবত না মাজলুম (দ্বিতীয় ব্যক্তি) সীমা লংঘন করে। (মুসলিমআবুদাউদতিরমিযী- ১৯৩১: হাসান ও সহীহ)

পারস্পরিক কুধারণা পোষণ পরিহার :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা কু ধারণা পোষণ করা থেকে দুরে থাক। কেননা কুধারণা হল সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। -(বুখারী ও মুসলিম)

পারস্পরিক শত্রুতা পরিহার :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী আর হত্যা বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা কুফরী। -(বুখারীমুসলিম)

পারস্পরিক অভিশাপ পরিহার :
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা একে অপরকে আল্লাহর অভিসম্পাততাঁর গজব ও জাহান্নামের বদদোয়া করো না। -(আহমাদহাকেমতিরমিযী-১৯২৬ : হাসান ও সহীহ্)

পারস্পরিক সম্পর্ক পরিত্যাগের পরিণাম :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। যেসব পাপী আল্লাহর সাথে শরীক করেনি তাদেরকে মা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ত্যাগকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়- এদেরকে ফিরিয়ে দাও যতণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। -(মুসলিম)

পাঁচটি অপরাধের ভয়াবহ পরিনাম :
হযরত ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে মুহাজির দল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই তোমরা যেন তা প্রত্য না কর। (১) যখনই কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখন সে জাতির মাঝে প্লেগ ও এমন রোগ ব্যাপক হবেযা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। (২) যে জাতি মাপে কম দিবে সে জাতি দুর্ভিখাদ্য সংকট এবং শাসকগোষ্ঠির অত্যাচারের শিকার হবে। (৩) যে জাতি যাকাত দেয়া বন্ধ করবে সে জাতির জন্য বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি অন্যান্য প্রাণীকুল না থাকত তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হত না। (৪) যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতিশ্রতি ভংগ করবে সে জাতির উপরে তাদের বিজাতীয় শত্রদলকে মতাসীন করে দেয়া হবেযারা তাদের বহু ধন-সম্পদ নিজেদের কুগিত করবে। (৫) যে জাতির শাসকগোষ্ঠী আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী দেশ শাসন না করবে ততণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে সন্ত্রাস/গৃহযুদ্ধ স্থায়ী রাখবেন। -(বায়হাকী ও ইবনে মাজাহ)

পরকালে যারা আল্লাহর রোষাণলে থাকবে :
হযরত আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : কিয়ামাতের দিন তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কথা বলবেন নাতাদের প্রতি তাকিয়েও দেখবেন নাতাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তিনি এ কথাটি পুনঃ পুনঃ তিনবার বললেন। আমি বললামহে আল্লাহর রসূল! ব্যর্থ ও তিগ্রস্থ হবেতারা কারাতিনি বললেন : তারা হল- যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরেযে ব্যক্তি দান করার পর দিয়েছি দিয়েছি’ বলে প্রচার করে বেড়ায় এবং যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে তার পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করে। -(মুসলিম)

ঋণ পরিশোধে গড়িমসির পরিণাম :
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি লোকের মাল নিয়ে তা আদায় করার সংকল্প রাখে সে ব্যক্তির তরফ থেকে আল্লাহ তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মাল গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন। (বুখারী-২৩৮৭ইবনে মাজাহ-২৪১১)

মিথ্যা কসমের মারাত্মক পরিণাম :
হযরত আবু উমামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম দ্বারা কোন মুসলিমের অধিকার হরণ করে আল্লাহ তার জন্য দোযখ ওয়াজিব ও জান্নাত হারাম করেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলহে আল্লাহর রসূল! যদিও সামান্য কিছু হয়তাহলেওতিনি বললেন: যদিও পিল্লুগাছের একটি সামান্য ডালও হয়। -(মুসলিম-১৩৭)

সাতটি সর্বনাশী কাজের পরিণাম :
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : সাতটি সর্বনাশী কাজ থেকে দুরে থাক। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞেস করলহে আল্লাহর রসূল! সেগুলো কি কিতিনি বললেন : আল্লাহর সাথে শিরক্ করা,যাদু করান্যায় সংগত অধিকার ছাড়া হত্যা করাসুদ খাওয়াইয়াতীমের সম্পদ ভণ করাজিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা ও সতী মুমিনা নারীর চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। -(বুখারী-২৭৬৬মুসলিম)

বিচারের দিন আল্লাহ যাদের বিরূদ্ধে দাড়াবেন :
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা বলেন- কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরূদ্ধে দাড়াবো আর আমি যার বিরূদ্ধে দাড়াবো তাকে অবশ্যই পরাজিত করব। প্রথম হল সে ব্যক্তিযে আমার নামে কিছু দেয়ার প্রতিশ্রুতি করল অতঃপর তা ভংগ করল। দ্বিতীয় হল সে ব্যক্তিযে কোন স্বাধীন লোককে বিক্রয় করে তার মূল্য ভণ করল। তৃতীয় হল সে ব্যক্তিযে কোন মজুর খাটিয়ে তার নিকট থেকে পুরোপুরি কাজ নিল কিন্তু তার মজুরী পুরোপুরি আদায় করল না। -(বুখারীঃ ২২২৭ ও ২২৭০)

কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব পরিহার :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ মুমিনগণ যেন মুমিনকে বাদ দিয়ে কোন কাফিরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। যে মুমিনকে ছাড়া কাফিরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে তোমরা যদি তাদের থেকে কোন তির আশংকা করতার কথা স্বতন্ত্র। আল্লাহ নিজের থেকে তোমাদেরকে সতর্ক করছেন। আর আল্লাহর নিকটই ফিরে যাওয়া।” -(সূরা আলে ইমরান: ২৮)

ইহুদি-খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব পরিহার :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি- খৃষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে সে তাদেরই বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে হিদায়াত প্রদান করেন না। -(সূরা মায়েদা : ৫১)

তাকওয়াবান বন্ধু নির্বাচন :
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীনের (আদর্শের) অনুসারী হয়ে থাকে। কাজেই খেয়াল রাখা উচিত! সে কেমন বন্ধু নির্বাচন করছে। -(আবু দাউদ ও তিরমিযী)

মদ ও মাদকতা পরিহার :
হযরত ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মদ পানকারীপরিবেশনকারীক্রেতা-বিক্রেতাপ্রস্তুতকারকযার জন্য প্রস্তুত করা হয়তার বাহকযার জন্য বহন করা হয়- সবাইকে আল্লাহ অভিশাপ করেছেন। -(আবু দাউদঃ ৩৬৭৪ইবনে মাজাহঃ ৩৩৮০)

কথা বলায় সাবধানতা :
হযরত বিলাল বিন হারিস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার কল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তাঁর সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন। আবার মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার অকল্যাণের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ তার দরুন কিয়ামত অবধি তাঁর অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে দেন। -(তিরমিযীমুয়াত্তা)

কথায়-কাজে মিল থাকা :
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা তা কেন বল যা তোমরা কর নাএটা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ। -(সফ: ২-৩)

চুটকি বলা পরিহার :
হযরত মুয়াবিয়া বিন হাইদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেনআমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : দুর্ভোগ তার জন্যযে লোকদেরকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা (গল্প বানিয়ে) বলে। দুর্ভোগ তার জন্যদুর্ভোগ তার জন্য। -(আবু দাউদঃ ৪৯৯০তিরমিযী)

সফরসংগীদের সাথে সদাচার :
হযরত সাহ্ল ইবনে সাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সফরকালে দলনেতাই তাদের খাদেম। যে ব্যক্তি খিদমত করে অগ্রগামী হয়ে গেছেশাহদাত ছাড়া অন্য কোন আমলে কেউ তাকে অতিক্রম করতে পারবে না। -(বায়হাকী)

সৃষ্টিকুলের সাথে সদাচার :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : গোটা সৃষ্টিকুল আল্লাহর পরিবার। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবারের সাথে সদয় ব্যবহার করে সে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। -(বায়হাকী)

কুরআন ও ছুন্নাহর আলোকে আদর্শ কল্যাণময় সমাজে পারস্পরিক উত্তম আচরণের কিছু নমুনামাত্র তুলে ধরা হল। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সবাইকে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার ও আমল করার তৌফিক দান করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন!



No comments:

Post a Comment