মুমিন বান্দাগণের বন্ধুত্ব ও ভালবাসা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
বন্ধুত্ব ও ভালবাসা আল্লাহ তা'য়ালার একটি বিশেষ নিয়ামাত, যা তিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের হৃদয়ের মাঝে প্রদান করেছেন। রূহ-এর জগতেও এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। এর মাধ্যমেই সৃষ্টিলগ্ন থেকে সমগ্র মাখলুক বিশ্ব জগতে আজও টিকে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে। কিন্তু মানব জাতির মাঝে আল্লাহ তা'য়ালা বন্ধুত্ব ও ভালবাসার একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই সীমারেখা মেনে চলার মাঝেই নিহিত রয়েছে মানব জাতির অস্তিত্ব, মানব সমাজের সৌন্দর্য্য, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ, ইহকালীন কল্যান ও পরকালীন নাজাত।
মানুষের মাঝে এই নিয়ামাতের স্মরণ করিয়ে দিয়ে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জু (ইসলাম ও কুরআন)-কে আঁকড়ে ধর এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামাতের কথা বিশেষভাবে স্মরণ কর! যখন তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু তখন আল্লাহ তোমাদের মনের মধ্যে ভালবাসা তৈরি করে দিলেন আর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো ছিলে আগুনের গর্তের কিনারে, আর আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন, যেন তোমরা হিদায়াত লাভ কর। -(সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)
যারা আল্লাহ তা'য়ালা এবং তাঁর রসূলের উপর বিশ্বাসী তারা শুধুমাত্র হৃদয়ের আবেগে বা নাফসের কামনা-বাসনায় বা জৈবিক লালসায় বন্ধুত্ব ও ভালবাসার লাগামহীন পথে পা বাড়ায় না, বরং তারা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ সর্বদা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা মেনে চলেন। প্রকৃত মুমিনের বন্ধুত্ব ও ভালবাসা শুধুমাত্র আল্লাহ তা'য়ালা, তাঁর রসূল ও প্রকৃত মুমিনের জন্যই নির্ধারিত। এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
-তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং যারা ঈমান এনেছে তারা, যারা বিনীত ভাবে রুকূর সাথে সালাত কায়িম করে এবং যাকাত আদায় করে। যারা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে নিশ্চয়ই তারাই হবে আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী হবে। -(সূরা মায়েদা : ৫৫-৫৬)
আল্লাহর অভিভাবকত্ব ও বন্ধুত্ব প্রসংগে তিনি বলেন : যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক ও বন্ধু। আল্লাহ তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে পরিচালিত করেন। আর যারা কুফরি করে তাদের অভিভাবক ও বন্ধু হল তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে পরিচালিত করে। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।- (সূরা বাকারাহ : ২৫৭)
রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভালবাসা প্রসংগে তিনি বলেন: তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল এসেছেন। তোমাদেরকে যা বিপদগ্রস্ত করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী। মুমিনদের প্রতি তিনি অত্যন্ত দয়ালু, পরম করুণাময়। - (সূরা তওবা : ১২৮)
মুমিনদের বন্ধুত্ব প্রসংগে তিনি বলেন: মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের অভিভাবক ও বন্ধু। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয়, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, সালাত কায়িম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। আল্লাহ তাদের প্রতি অচিরেই রহমত নাযিল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়। আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য এমন জান্নাতের অঙ্গীকার করেছেন যে জান্নাতের নিচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ বয়ে যায়। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন মহাপবিত্র স্থায়ী বাসস্থান আদন নামক জান্নাতের। বস্তুত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা।- (সূরা তওবা : ৭১-৭২)
যারা আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে, নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামগণের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে- এসব লোকদের সাথে প্রকৃত মুমীনগণ কখনও বন্ধুত্ব স্থাপন করেন না। এসব লোক তাদের পিতা, ভাই, পুত্র, আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কোন ঘনিষ্টজন হলেও তাদের সাথে কোন ভালবাসা পোষণ করেন না। এসব লোক অমুসলিম নামধারীও হতে পারে বা মুসলিম নামধারীও হতে পারে। মুসলিম নামধারী হলেও আল্লাহ তায়ালার দরবারে তারা মুসলিম হিসাগে গণ্য নয়।
এ প্রসংগে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : আপনি মুমিনদের এমন কোন দল পাবেন না, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখিরাতের প্রতিও ঈমান রাখে- অথচ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতাকারীদেরকে ভালবাসে, যদিও তারা তাদের পিতা, তাদের পুত্র, তাদের ভাই বা তাদের আত্মীয়-স্বজনও হয়। আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমানকে সুদৃঢ় করে দিয়েছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাদেরকে রূহ (হিদায়াতের আলো) দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যে জান্নাতের নিচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ বয়ে যায়, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। মনে রেখ! আল্লাহর দল অবশ্যই কল্যাণপ্রাপ্ত হবে। -(সুরা মুজাদালা : ২২)
তিনি আরও বলেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের মাতা-পিতা ও তোমাদের ভাইয়েরা যদি ঈমানের উপর কুফরিকে প্রাধান্য দেয় তাহলে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা হবে সীমালংঘনকারী। আপনি বলুন : তোমাদের মাতা-পিতা, তোমাদের সন্তান-সন্ততি, তোমাদের ভাইগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের জ্ঞাতিগণ, তোমাদের উপার্জিত অর্থ-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা- তোমরা যার মন্দার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যা তোমাদের নিকট অত্যন্ত পছন্দ; এসব যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে (শাস্তির) হুকুম আসার অপো কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। -(সূরা তওবা : ২৩-২৪)
কোন কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, ইহুদী, নাসারা, নামধারী মুসলিম ও জালিমের সাথে প্রকৃত মুমিনের কোন আন্তরিক ভালবাসা হতে পারে না। যদি কোন মুসলিম তাদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করে তাহলে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না, বরং সে আল্লাহর দরবারে তাদেরই দলভূক্ত বলে গন্য হবে। তবে কোনরুপ দুনিয়াবী ক্ষতির আশংকা থাকলে সেক্ষেত্রে বাহ্যিক সতর্কতা অবলম্বন দোষনীয় হবে না। এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
- মুমিনগণ যেন মুমিনগণকে বাদ দিয়ে কোন কাফিরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। যে মুমিনকে বাদ দিয়ে কাফিরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে তোমরা যদি তাদের নিকট থেকে কোনরূপ ক্ষতির আশংকা কর, তার কথা স্বতন্ত্র। আল্লাহ তাঁরই সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছেন। আর আল্লাহর নিকটই ফিরে যেতে হবে। -(সূরা আলে ইমরান : ২৮)
তিনি আরও বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। কেননা অন্যরা তোমাদের ক্ষতি করতে দ্বিধা করে না এবং যা তোমাদেরকে কষ্ট দেয় তারা তাই কামনা করে। তাদের মুখ থেকে কখনো কখনো বিদ্বেষ প্রকাশ পায়, কিন্তু তাদের মনে যা গোপন রয়েছে তা আরো ভয়ঙ্কর। আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (মুমিনগণ!) তোমরা এমন যে, তোমরাই তাদেরকে ভালবাসো, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। আর তোমরা কিতাবের প্রতিটি বিষয়ে ঈমান রাখ। তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে, তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে নিজেদের আঙুলের মাথা কামড়াতে থাকে। বলুন (হে রাসূল!), তোমরা মরো তোমাদের আক্রোশেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে সবকিছুই জানেন। যদি তোমাদের ভাল কোন কিছু হয় তাহলে তা তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে তারা তাতে আনন্দিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্যশীল ও মুত্তাকী হও, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। -(সূরা আলে-ইমরান : ১১৮-১২০)
তিনি আরও বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তোমরা কি তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করতে চাও? নিশ্চয়ই জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে হবে মুনাফিকদের অবস্থান, আর আপনি তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবেন না। তবে যারা তওবা করে, আত্মশুদ্ধি করে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে দ্বীনে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে, তারা মুমিনদের সাথেই থাকবে। আর আল্লাহ মুমিনদেরকে শীঘ্রই মহাপুরস্কার প্রদান করবেন। -(সূরা নিসা : ১৪৪-১৪৬)
তিনি আরও বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা এক অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যারাই তাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ (এসব) জালিম সম্প্রদায়কে সুপথে পরিচালিত করেন না। বস্তুতঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখতে পাবেন যে, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে এবং তারা বলে, আমরা আশংকা করি যে, আমাদেরকে কোন বিপদ এসে আক্রমন করে নাকি। অতএব সেদিন বেশী দুরে নয়, যেদিন আল্লাহ বিজয় প্রকাশ করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ দিবেন, ফলে সেদিন তারা স্বীয় মনোভাবের জন্য অনুতপ্ত হবে। মুমীনগণ বলবে- এরা কি সেই সব লোক, যারা আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করে বলত যে আমরা তোমাদের সাথে আছি! তাদের কর্মফল বিফল হয়ে গেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ। -(সূরা মায়েদা : ৫১-৫৩)
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্ধু নির্বাচনে মুমিনগণকে সতর্ক করেছেন। যেমন- হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : কোন ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকে। কাজেই খেয়াল রাখা উচিত সে কেমন বন্ধু নির্বাচন করছে। -(আবু দাউদ ও তিরমিযী)
মুসলিম নামধারী হয়েও যারা কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে, নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আল্লাহর বিধান ও রসুলের আদর্শ পরিত্যাগ করে মুসলিম জাতির উপর তাদের মনগড়া আদর্শ, মানব রচিত মতবাদ, বিধি-বিধান, আইন-কানুন ও জাহেলী রসম-রেওয়াজ চাপিয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে চায়- তাদের সাথে প্রকৃত মুমীনদের কোন অর্থনৈতিক সম্পর্কও থাকতে পারেনা। তাদের কোন প্রকার হাদিয়া-তোহফা, অনুদান বা সাহায্য গ্রহণ করা সমীচীন নয়। কারন এরা মাসজিদ, মাদ্রাসা, লিল্লাহ বোডিং-এ সাহায্যের অন্তরালে দ্বীনদার মুসলমানদের উপর তাদের মনগড়া আদর্শ, মানব রচিত মতবাদ, বিধি-বিধান, আইন-কানুন ও জাহেলী রসম-রেওয়াজ চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে চায়। এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
-আপনি বলুন! ‘তোমরা আল্লাহর পথে স্বেচ্ছায় ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে ব্যয় কর, তোমাদের দান কখনোই কবূল করা হবে না। নিশ্চয়ই তোমরা হলে পাপাচারী জাতি। (আল্লাহর পথে) মুনাফিকদের অর্থসাহায্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, অবহেলার সাথে সালাতে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে অর্থ সাহায্য করে। কাজেই তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে বিস্মিত ও বিমুগ্ধ না করে। নিশ্চয় আল্লাহ অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়েই তাদেরকে পৃথিবীতে শাস্তি দিতে চান এবং কাফির অবস্থাতেই তাদের মৃত্যু হবে। - (সূরা তওবা : ৫৩-৫৫)
কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, ইহুদী, নাছারা এবং যারা কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে, নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে- ঐ সব নামধারী মুসলিমদের কোনরূপ বিশ্বাস বা আস্থা রাখা প্রকৃত মুমিনদের জন্য সমীচীন নয়। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
-আর তোমরা তোমাদের দ্বীনের অনুসরণকারী ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলুন (হে রাসূল!), আল্লাহর হিদায়াতই একমাত্র হিদায়াত। তোমরা যা পেয়েছিলে অন্য কেউ তেমন কেন পাবে অথবা তারা কেন তোমাদের প্রতিপালকের সামনে বিতর্কে তোমাদেরকে পরাজিত করবে? বলুন! নিশ্চয়ই যাবতীয় অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যবান, মহাজ্ঞানী। -(সূরা আলে ইমরান : ৭৩)
তিনি আরও বলেন : যাদের কলবের মধ্যে ব্যাধি রয়েছে, আপনি দেখবেন, তারা অতি দ্রুত ইহুদি, খৃষ্টান ও মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে। তারা বলবে : আমরা আমাদের উপর যে কোন রকমের বিপদ আপতিত হওয়ার আশংকা করি। অচিরেই আল্লাহ বিজয় দান করবেন কিংবা তাঁর নিজের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেবেন যাতে তারা অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছিল সে জন্য লজ্জিত হবে। - (সূরা মায়িদা : ৫২)
মুসলিম নামধারী হয়েও যারা কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, মাসজিদের ঈমামগণের জুমার খুতবা নিজেদের পছন্দমত নিয়ন্ত্রণ করে, কুরআন ও ছুন্নাহর সঠিক বয়ান করলে ঈমামগণকে হয়রানী, নির্যাতন ও চাকুরীচ্যুত করে- তাদের প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত কোন মাসজিদে সালাত আদায় করা প্রকৃত মুমিনদের জন্য সমীচীন নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
- যারা মাসজিদ তৈরি করেছে দ্বীন ইসলামের ক্ষতি করার জন্য, কুফরি করার জন্য, মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এবং ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করেছে তার ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে আর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমরা ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই এ মসজিদ নির্মাণ করেছি আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী; (সুতরাং হে রাসূল!) আপনি সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তাদের নির্মিত ঐ মসজিদে কখনই দাঁড়াবেন না, বরং প্রথম থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত সে মসজিদই আপনার সালাত আদায়ের জন্য অধিকতর যোগ্য। সে মসজিদে এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন। - (সূরা তওবা : ১০৭-১০৮)
তিনি আরও বলেন : মুশরিকরা আল্লাহর ঘর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে না যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরির সাক্ষ্য দান করে। তারা সেই সব লোক, যাদের সমস্ত আমল নিস্ফল হয়ে গেছে। তারা জাহান্নামে বসবাস করবে চিরস্থায়ীভাবে। যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়িম করে এবং যাকাত আদায় করে তারাই মসজিদের রক্ষণাবেণ করবে। তারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না। কাজেই তাদের ব্যাপারে আশা করা যায় যে, তারা সৎপথে পরিচালিত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।-(সূরা তওবা: ১৭-১৮)
কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, ইহুদী, নাছারা এবং সেই সব নামধারী মুসলিম যারা কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে, নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আল্লাহর বিধান ও রসুলের আদর্শ পরিত্যাগ করে মুসলিম জাতির উপর তাদের মনগড়া আদর্শ, মানব রচিত মতবাদ, বিধি-বিধান, আইন-কানুন ও জাহেলী রসম-রেওয়াজ চাপিয়ে দিয়ে প্রকৃত মুসলমানদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে চায়- তাদের সাথে প্রকৃত ঈমানদারদের বৈবাহিক সম্পর্কও সমীচীন নয়। এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
-মুমিন না হওয়া পর্যন্ত কোন মুশরিক নারীকে বিয়ে কর না, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে; মুশরিক নারীর চেয়ে মুমিন দাসীরা উত্তম। আর তোমরা মুশরিক পুরুষকে বিয়ে কর না যতণ না তারা ঈমান আনে, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে; মুমিন দাস তাদের চেয়ে উত্তম। মুশরিক নারী ও পুরুষ তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে জান্নাত ও মার প্রতি আহ্বান করেন। তিনি মানুষের জন্য তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যেন তারা তা স্মরণ রাখে ও মেনে চলে। - (সূরা বাকারাহ : ২২১)
সমাজে কতিপয় লোককে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখা যায়। অথচ তাদের কুফরী, শিরকী ও আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের বিরোধিতা প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন : ইয়াহুদীরা বলে: ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র।’ খৃষ্টানরা বলে: ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র।’ এটা কেবলই তাদের মুখের অবাস্তব কথা। ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা তাদেরই মত কথা বলে যারা তাদের আগে কুফরি করেছিল। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন, তারা উল্টো কোন দিকে যাচ্ছে? আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিদের ও ধর্মযাজকদেরকে এবং মারইয়াম পুত্র মসীহকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথচ তারা একমাত্র ইলাহ আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিল। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তারা যাকে (আল্লাহর) শরীক সাব্যস্ত করে তা হতে তিনি পবিত্র। তারা তাদের মুখের ফুঁৎকার দিয়ে আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু কাফিরদের অপছন্দ হলেও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নূরকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করা ছাড়া আর কিছু চান না। সকল দীনের উপর সুপ্রকাশিত ও জয়যুক্ত করার জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সঠিক দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। -( সূরা তওবা : ৩০-৩৩)
বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর দ্বীনদারীকেই গুরুত্ব দিতে হবে। হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : চারটি বিষয় বিবেচনা করে কোন মেয়েকে বিবাহ করা হয়- (১) তার ধন-সম্পদ, (২) তার বংশ-মর্যাদা, (৩) তার রূপ-সৌন্দর্য্য ও (৪) তার ধর্ম-পরায়ণতা। এর মধ্যে ধর্মপরায়ণ স্ত্রী লাভে তুমি সফলকাম হও। তোমার হাত কল্যাণে ভরপুর হবে। -(বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিম নামধারী হয়েও যারা কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে, নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আল্লাহর বিধান ও রসুলের আদর্শ পরিত্যাগ করে মুসলিম জাতির উপর তাদের মনগড়া আদর্শ, মানব রচিত মতবাদ, বিধি-বিধান, আইন-কানুন ও জাহেলী রসম-রেওয়াজ চাপিয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে চায়- তাদের সাথে প্রকৃত মুসলমানদের দোয়ার সম্পর্কও সমীচীন নয়।
এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা না-ই করুন। আপনি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তা কখনই কবূল করবেন না। কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছিল। আর আল্লাহ পাপাচারী জাতিকে ভালবাসেন না। -(সূরা তওবা : ৮০)
তিনি আরও বলেন : আর তাদের মধ্য থেকে কেহ মারা গেলে আপনি তার উপর কখনো (জানাজার) সলাত পড়বেন না এবং কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে কুফুরী করেছে এবং কুফুরী অবস্থাতেই তারা মৃত্যুবরণ করেছে। -(সূরা তওবা : ৮৪)
তিনি আরও বলেন : নবী ও মুমীনদের জন্য বৈধ নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়। এ কথা প্রকাশের পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। -(সুরা তওবাহ্ : ১১৩)
বন্ধুত্ব আর ভালবাসার মধ্যে যথন দুনিয়াবী কোন চাওয়া-পাওয়া, নাফসের কোন কামনা-বাসনা আর জৈবিক কোন লালসার লেশমাত্র থাকে না বরং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই নিবেদিত হয়- তখন সে বন্ধুত্ব আর ভালবাসার মাধ্যমে মানব জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা’য়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নয় আর শহীদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের উপর রিশক করবেন। জিজ্ঞেস করা হল- হে আল্লাহর রসূল! তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন: তারা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোন রক্তের সম্পর্ক নেই কোন বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমন্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নুরের মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে তখন তারা ভীত হবে না আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে তখন তাদের কোন দুঃখ থাকবে না। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন- জেনে রাখ! যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোন ভয় নাই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। -(আবু দাউদ : ৩০৬০, সহীহ্)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ এত উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন জান্নাত লাভ করবে যে, অন্যান্য জান্নাতবাসীগণ তাদেরকে এভাবে দেখবে যেভাবে পূর্ব বা পশ্চিমে উদিত নত্রসমূহকে দেখা যায়। তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, এরা কারা? উত্তরে বলা হবে, এরা হল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ। - (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬১৮)
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : যারা আমার সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালবাসে, আমার রেজামন্দির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টির কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদেরকে ভালবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। -(মুয়াত্তা)
পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা মুমীনদের জীবনের অপরিহার্য পরিচ্ছদ। হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমাদের মধ্যে কেউই মুমিন হতে পারে না, যতক্ষন না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। -( বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য প্রাচীর স্বরূপ যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তি যোগায়। তিনি তার এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে দেখান। -(বুখারী ও মুসলিম)
হযরত নুমান ইবনে বশীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পারস্পরিক ভালবাবাসা, দয়া-অনুগ্রহ ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোন থেকে মুমিনগণ একটি দেহের সমতুল্য যার কোন অংশ অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগ তা অনুভব করে, সেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হোক কিংবা জ্বরের অবস্থায় (অর্থাৎ সর্বাবস্থায়)। -(বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। যেসব পাপী আল্লাহর সাথে শরীক করেনি তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ত্যাগকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়- এদেরকে ফিরিয়ে দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। -(সহীহ মুসলিম)
মুমীনগণের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হল আল্লাহর সন্তোষ ও ভালবাসা অর্জন আর পরকালে নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সলেহীনগণের সাথে হাশরে ও জান্নাতে অবস্থান। এজন্য প্রয়োজন হল আল্লাহর হুকুম ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ। এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন : আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রসুলের হুকুম মান্য করবে, সে তাদের সংগী হবে-যাদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন তারা হলেন নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সলেহীনগন আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। -(সূরা নিছা : ৬৯)
হযরত ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আলাহর রসূল! এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসে কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না, এ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন ? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে ব্যক্তি যাকে ভালবাসে (হাশরের ময়দানে ও জান্নাতে) সে তার সাথেই থাকবে। - (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু বাকারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তুমি হয়ত আলেম হও অথবা তালেবে এলেম হও অথবা মনযোগ সহকারে এলেম শ্রবণকারী হও অথবা এলম ও আলেমদের মুহাব্বাতকারী হও। এই চার ব্যতীত পঞ্চম প্রকার হয়ো নানতুবা ধ্বংস হয়ে যাবে। পঞ্চম প্রকার হলো এই যে, তুমি এলম ও আলেমদের সাথে শত্রুতা পোষণ কর। -{শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদিস -১৫৭৯, আল মু'জামুল আওসাত, হাদিস -৫৩১৩..., মুসনাদ বাজ্জার, হাদিস ৩০৮৯, হুলিয়াতুল আউলিয়া, হাদিস ১০৬৩৬কিতাবুল ইলম, হাদিস-৩৬, আল মু'জামুল সাগির, হাদিস-৭৮৮}
সুতরাং যারা আলাহ তা'য়ালাকে, তাঁর কিতাব (কুরআন)-কে, তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে, তাঁর মনোনীত একমাত্র দ্বীন ইসলাম-কে, তাঁর প্রিয় বান্দাগণকে এবং ওয়ারাসুল আম্বিয়া ওলামাগণকে মহব্বত করেন হাশরের ময়দানে এবং জান্নাতে তারা নবী-রসূল এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণের সাথে থাকবেন। আর যারা আলাহ তা'য়ালাকে, তাঁর কিতাব (কুরআন)-কে, তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম)-কে, তাঁর মনোনীত একমাত্র দ্বীন ইসলাম-কে, তাঁর প্রিয় বান্দাগণকে, ওয়ারাসুল আম্বিয়া ওলামাগণকে নিয়ে উপহাস করছে এবং যারা উপহাসকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা, সহযোগীতা, সমর্থন ও মহব্বত করছে হাশরের ময়দানে ও জাহান্নামে তারা নমরূদ, ফিরআউন, হামান, আবু জাহেল, আবু লাহাব এবং আল্লাহর অন্যান্য দুশমনদের সাথে অবস্থান ও শাস্তি ভোগ করবে।
মনে রাখবেন! মুমীনের বন্ধুত্ব ও ভালবাসা শুধুমাত্র মুমিনের জন্য কিন্তু সদাচার কাফির, মুশরিক, মুনাফির, ইয়াহুদী, নাসারা, জালিম, নামধারী মুসলিম, তথা সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য। মুমিনগণ সবার সাথেই কুরআন ও ছুন্নাহর আলোকে এমন উত্তম ও শিক্ষনীয় আচরণ করবেন যাতে ইসলামের শিক্ষা, সৌন্দর্য্য প্রস্ফুটিত ও বিকশিত হয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : গোটা সৃষ্টিকুল আল্লাহর পরিবার। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবারের সাথে সদয় ব্যবহার করে সে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। -(বায়হাকী)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুয়ায (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেন : মাজলুমের বদ-দোয়াকে ভয় কর, কেননা তার বদ-দোয়া ও আল্লাহর মাঝখানে কোন বাধা নেই। -(তিরমিযী-১৯৬৩ : হাসান ও সহীহ্)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিই সর্বোত্তম। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-১৯২৫)
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে তার দ্বীনের জন্য কবুল করুন! তাঁর মাহবুব বান্দা এবং তাঁর হাবীব (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাহবুব উম্মাতগণের অন্তর্ভূক্ত করুন! রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন এবং তাঁদের জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে তার দ্বীনের জন্য কবুল করুন! তাঁর মাহবুব বান্দা এবং তাঁর হাবীব (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাহবুব উম্মাতগণের অন্তর্ভূক্ত করুন! রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন এবং তাঁদের জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।
No comments:
Post a Comment