আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী
পারস্পরিক অধিকার
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য-
যিনি রব্বুল আ'লামীন। দুরদ ও
সালাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর
পরিবারবর্গ, তাঁর বংশধর,
তাঁর সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতি। আমরা
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা
ও তার রসুল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত।
মদীনার বুকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে নববীকে কেন্দ্র
করে তাঁর সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম)-গনকে নিয়ে আল্লাহর বিধান মোতাবেক
একটি কল্যাণময়, আদর্শ, শান্তি ও সুখময় সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। সে সমাজের নমুনায় আত্মীয়-স্বজন,
পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে গঠিত আমাদের ছোট ছোট সমাজগুলো কুরআন ও ছুন্নাহ-এর আলোকে
পূনর্গঠন করতে হবে।
সমাজে তাকওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সমাজগুলো সংশোধন
করে একটি কল্যাণময় ও আদর্শ সমাজে পরিনত করার লক্ষ্যে আত্মীয়-স্বজন,
পাড়া-প্রতিবেশী, মেহমান, দরিদ্র-ইয়াতীম সাথে কুরআন ও ছুন্নাহ মোতাবেক উত্তম
ব্যবহার ও শিষ্টাচারের কতিপয় মুলনীতি পেশ করা হচ্ছে।
ইসলামী কল্যাণময় সমাজে আত্মীয়-স্বজন,
পাড়া-প্রতিবেশী, দরিদ্র-অসহায়, এতীম-অনাথ, মেহমান
ওমুসাফিরদের সাথে উত্তম ব্যবহার ও শিষ্টাচারের
মুলনীতি প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
وَاعْبُدُواْ
اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي
الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ
الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ
أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا০
-তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু
শরীক করবে না, মাতাপিতার সাথে ইহসান করবে। আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন,
নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী ও পথচারীদের সাথে এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত
দাস-দাসীর সাথে ইহসান করবে। নিশ্চয় আল্লাহ অহঙ্কারী
ও দাম্ভিক ব্যক্তিকে ভালবাসেন না। -(সূরা আন-নিসা : ৩৬) তিনি আরও বলেন :
يَا
أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ
وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء
وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ
عَلَيْكُمْ رَقِيبًا০
-“হে
মানুষ! তোমাদের রবকে ভয় কর,
যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন, সে ব্যক্তি থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন আর তাদের দুজন
থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য পুরুষ ও নারী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে
তোমরা একে অন্যের নিকট কিছু চাও। আর তোমরা আত্মীয়দের ব্যাপারে সতর্ক হও। নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” -(সূরা নিসাঃ ১) তিনি আরও বলেন :
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلْ مَا أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍ
فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ
السَّبِيلِ وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللّهَ بِهِ عَلِيمٌ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার
জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের
জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে
কোন সৎকাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর
জানা রয়েছে। -[আল কুরআনঃ সূরা বাকারাঃ আয়াত ২১৫]
হযরত মু'আয (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরলেন,
কিছু দূর চললেন, তারপর বললেন- "হে মু'আয! আমি তোমাকে আল্লাহ'র অবাধ্য হওয়া থেকে বিরত
থাকার, সত্য কথা বলার, অঙ্গীকার পূর্ণ
করার, আমানত যথাযথভাবে অদায় করার, খিয়ানত
না করার, এতীমের প্রতি রহম করার, প্রতীবেশীর
অধিকার রক্ষা করার, ক্রোধ দমন করার, মানুষের
সাথে নরমভাবে কথা বলার এবং মানুষের সাথে সালাম বিনিময় করার অসীয়ত করছি। আর একথাও
অসীয়ত করছি, নেতৃত্বের (খলীফার) সাথে লেগে থেকো"। -(বায়হাকী)
আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম আচরণঃ
আল্লাহ সাথে সম্পর্কের মাধ্যম : হযরত আব্দুর
রহমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। আমি
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : পরিপূর্ণ কল্যাণ ও
প্রাচুর্য্যরে অধিকারী মহান আল্লাহ বলেন- আমিই আল্লাহ এবং আমিই রহমান। আমিই
আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকে নির্গত করে এই নাম রেখেছি। যে
ব্যক্তি এই সম্পর্ক বজায় রাখবে আমিও তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব আর যে ব্যক্তি এই
সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমিও তার সাথে সম্পর্ক
ছিন্ন করব। -(তিরমিযী-১৮৫৭ : হাসান)
আত্মীয়তার সম্পর্ক কর্তনকারী জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না : হযরত মুহাম্মাদ ইবনে জুবাইর (র) থেকে
তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
কর্তনকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ইবনে আবু উমার বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, আত্মীয়তার
সম্পর্ক ছিন্ন কারী। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী-১৮৫৯ : হাসান ও সহীহ)
ঈমানের আলামাত : হযরত
আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান
রাখে, সে যেন
মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন আত্মীয়তার
সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো
কথা বলে অথবা চুপ থাকে। -(বুখারী ও
মুসলিম)
উত্তম আত্মীয়তা রক্ষাকারী : হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সমানুরূপ ব্যবহার পাওয়ার মনোভাব নিয়ে সম্পর্ক রক্ষাকারী
আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী নয়। বরং কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলেও সে যদি
তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে তবে সে-ই যথার্থ সম্পর্ক স্থাপনকারী। (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী-১৮৫৮ :
হাসান ও সহীহ্)
রিযক প্রশস্ত ও নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি : হযরত
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি নিজের রিযক প্রশস্ত হওয়া ও
নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারী ও
মুসলিম)
পিতার বন্ধুদের সাথেও সদাচার করা : হযরত
ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : সর্বোত্তম
নেকীর কাজ হচ্ছে পিতার বন্ধুদের সাথেও সদাচার করা। (মুসলিম, তিরমিযী-১৮৫২ :
সহীহ)
খালা হল মাতৃস্থানীয় : হযরত
বারাআ ইবনে আযেব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : খালা হল
মাতৃস্থানীয়। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-১৮৫৩)
প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহারঃ
প্রতিবেশীর হকের গুরুত্ব : হযরত
আইশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে অবিরত
প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে উপদেশ দিতে থাকেন। এতে আমার ধারণা হল যে, অচিরেই হয়ত
তাকে ওয়ারিস বানানো হবে। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-১৮৯৩)
আল্লাহর দৃষ্টিতে উত্তম : হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর কাছে সংগীদের মধ্যে উত্তম সংগী হল সেই ব্যক্তি যে তার
নিজ সংগীর কাছে উত্তম। আল্লাহর দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তম হল সেই
প্রতিবেশী যে তার নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম। -(হাকেম, তিরমিযী-১৮৯৪ :
হাসান ও গরীব)
প্রতিবেশীকে হাদিয়া পৌঁছানো : হযরত
আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে আবু যার! যখন তুমি তরকারী পাকাও, তাতে একটু বেশী
পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশীকে পৌঁছাও। -(মুসলিম)
প্রকৃত মুমীনের পরিচয় : হযরত
আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ!
সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রসূল কে সেই ব্যক্তি?
তিনি বলেন : যার অনিষ্ট থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়। -(বুখারী
ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে
ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ
ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের আপ্যায়ন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও
আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে,
সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নিরব থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
যার ঘর নিকটে সে অধিক হকদার : হযরত
আইশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি
বললাম, হে
আল্লাহর রসূল! আমার দুই ঘর প্রতিবেশী রয়েছে, এদের মধ্যে কাকে আমি হাদিয়া দেব? তিনি বললেন :
তাদের মধ্যে যার ঘর তোমার বেশী নিকটে। (বুখারী)
প্রতিবেশিনীকে তুচ্ছ জ্ঞান না করা : হযরত
আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন
তার অপর প্রতিবেশিনীকে তুচ্ছ জ্ঞান না করে, এমনকি (সে তাকে) বকরীর একটি পায়ের ক্ষুরা উপটৌকন
পাঠালেও। (বুখারী ও মুসলিম)
প্রতিবেশীকে নিজের দেয়ালের সাথে খুঁটি
গাড়তে নিষেধ করা : হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
এক প্রতিবেশী যেন নিজের দেয়ালের সাথে অপর প্রতিবেশীকে খুঁটি গাড়তে নিষেধ না করে।
অতঃপর আবু হুরাইরা বলতেন,
আমি তোমাদেরকে এ হাদীস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের
সামনে এ হাদীস অবশ্যই প্রকাশ করব। (বুখারী ও মুসলিম)
উত্তম বন্ধু ও উত্তম প্রতিবেশী : হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বন্ধুদের মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম বন্ধু ঐ ব্যক্তি যে তার
বন্ধুর কল্যাণকামী। প্রতিবেশীদের মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিবেশী ঐ ব্যক্তি যে তার প্রতিবেশীর কল্যাণকামী।
(তিরমিযী : হাসান)
ইয়াতীম, মিসকীন ও দরিদ্রদের সাথে উত্তম ব্যবহারঃ
ইয়াতীম ও মিসকীনের সাথে সর্বদা উত্তম ব্যবহার ও
সম্মান করা উচিৎ। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার
করা ঈমানের পরিপন্থি। আল্লাহ তায়ালা বলেন :
০ وَأَمَّا
السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ ০ فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ
-“অত্রএব
আপনি ইয়াতীমদের প্রতি কঠোর হবেন না। কোন প্রার্থীকে ধমক দেবেন না।” -(সূরা আদ-দুহাঃ
৯ -১০) তিনি আরও বলেন :
০وَلَا يَحُضُّ
عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ ০ فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ ০ أَرَأَيْتَ الَّذِي
يُكَذِّبُ بِالدِّينِ
-“আপনি
কি তাকে দেখেছেন যে কর্মফল অস্বীকার করে? সেতো সেই লোক, যে ইয়াতীমকে
গলা ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয় আর যে অভাবগ্রস্ত লোককে খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না”। -(সূরা
মাঊনঃ ১-৩) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ প্রসংগে তিনি বলেন:
وَآتُواْ
الْيَتَامَى أَمْوَالَهُمْ وَلاَ تَتَبَدَّلُواْ الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ وَلاَ
تَأْكُلُواْ أَمْوَالَهُمْ إِلَى أَمْوَالِكُمْ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرً০
-“ইয়াতীমদেরকে তাদের সম্পদ দিয়ে দাও আর ভাল সম্পদের সাথে খারাপ সম্পদ বদল কর
না। তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদ মিলিয়ে তাদের সম্পদ আত্মসাৎ কর না। নিশ্চয়ই
এমন করা মারাত্মক অপরাধ”। -(সূরা নিসাঃ ৪) তিনি আরও বলেন :
إِنَّ
الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ০
آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُحْسِنِينَ ০كَانُوا
قَلِيلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ০
وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ ০ وَفِي
أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ০
-“নিশ্চয়ই সেদিন মুত্তাকীনগণ ঝর্ণাধারা বিশিষ্ট
জান্নাতে থাকবে। তাদের প্রভু তাদেরকে যা দেবেন, তারা তাই উপভোগ করতে থাকবে। কেননা পৃথিবীর জীবনে
তারা সৎকর্মশীল ছিল। তারা রাতের খুব কম অংশই ঘুমিয়ে কাটাত। রাতের শেষ অংশে তারা
ক্ষমা প্রার্থনা করত। আর তাদের অর্থ-সম্পদে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের অধিকার ছিল।” - (সূরা জারিয়াত:
১৫-১৯)
মিসকীনের পরিচয় : হযরত
আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এমন ব্যক্তি মিসকীন নয় যাকে একটি বা দুটি
খেজুর দেয়া হয়, এক
লুকমা বা দুই লোকমা খাদ্য দেয়া হয়। বস্তুত যে ব্যক্তি দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত
হয়েও অন্যের কাছে হাত পাতে না সেই হচ্ছে মিসকীন। -(বুখারী ও মুসলিম)
ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারীর মর্যাদা : হযরত
সাহ্ল ইবনে সাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি ও ইয়াতীমের
তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে এই দুই আংগুলের মত একত্রে থাকব। -(বুখারী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী-১৮৬৮ :
হাসান ও সহীহ্)
বিধবা ও মিসকিনের ভরণ-পোষণের মর্যাদা : হযরত
সাফওয়ান ইবনে সুলাইম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : স্বামীহীনা ও
মিসকীনের ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টাকারী আল্লাহর পথে জিহাদকারী অথবা সারাদিন রোজা
পালনকারী ও সারারাত নামাজ আদায়কারীর সমান সওয়াবের অধিকারী। - (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-১৯১৯ :
হাসান ও সহীহ্)
গরীবদেরকেও দাওয়াত দেয়া : আবু
হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওলীমা হচ্ছে সেটি যাতে
ধনীদের দাওয়াত দেয়া হয় আর গরীবদের পরিত্যাগ করা হয়। - (বুখারী ও মুসলিম)
দুনিয়ার বুকে আল্লাহর সাহায্য ও রিযক
আসে নিঃস্বদের উসীলায় : হযরত আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি : তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি নিঃস্ব ও দুর্বলদের মধ্যে অন্বেষন কর, কেননা তোমরা
তাদের উসীলায় সাহায্য ও রিযক পেয়ে থাক। (আবু দাউদ)
নিঃস্বদের সম্মান : হযরত
আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এমন
অনেক লোক আছে যাদের (মাথার চুল) উস্কো- খুস্কো এবং (পা দুটি) ধুলি ধুসরিত, তাদেরকে
মানুষের দরজাসমূহ থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যদি তারা আল্লাহর নামে শপথ করে
তবে আল্লাহ তা পূরণের তাওফীক দেন। -(মুসলিম)
গোনাহের কাফফারা : হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “মানুষের পরিবার,
ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফিৎনা ও গোনাহের
কাফফারা হলো নামায, রোযা ও সদকাহ্।” -[বুখারী: ১৮৯৫ ও মুসলিম: ১৪৪]
পরকালীন কল্যান : হযরত আবু সাঈদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে কোনো মুসলমান কোনো বিবস্ত্র মুসলমানকে কাপড় পরিধান করাবে কিয়ামতের দিন
আল্লাহ তাকে বেহেশতের সবুজ কাপড় জোড়া পরাবেন। আর যে কোনো মুসলমান কোনো ক্ষুধার্ত
মুসলমানকে অন্ন দান করবে আল্লাহ্ তাকে বেহেশতের ফল খাদ্যরূপে দান করবেন। আর যে
মুসলমান কোনো মুসলমানকে পিপাসায় পানি পান করাবে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে কিয়ামতে মুখ বন্ধ করা বোতলের স্বচ্ছ পানি পান করাবেন। -
[আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত]
সদাচার হল সহজ মৃত্যু ও জান্নাত লাভের
ওয়াসীলা : হযরত জাবির (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: যার মধ্যে তিনটি গুন রয়েছে আল্লাহ তার মৃত্যু সহজ করে দেন এবং জান্নাতে
দখিল করেন। দুর্বলদের সাথে কোমল ব্যবহার, মাতা-পিতার সাথে সদাচার এবং দাস-দাসীর সাথে সদয়
ব্যবহার। -(তিরমিযী)

No comments:
Post a Comment