মহিলাদের জন্য তালীমুল কুরআন মক্তবের সিলেবাস
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীন (র.)-গণের প্রতি। আমরা
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিনাম শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের
জন্যই নির্ধারিত।
কুরআনের মক্তবের
ফজিলত : হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে
ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য
জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। কোন একদল লোক যখন আল্লাহ তা'য়ালার ঘর
সমূহের মধ্যে কোথাও একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ এবং পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখন
তাদের উপর সাকিনা অবতীর্ণ হতে থাকে,
আল্লাহর রহমত
ও অনুগ্রহ তাদেরকে ঢেকে দেয়,
ফিরিশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ তাঁর
নিকটবর্তী ফিরিশতাদের সামনে তাদের উল্লে¬খ
করে থাকেন। - (সহীহ্ মুসলিম)
নাবালেগ ছোট ছোট মেয়েরা শিশুদের
জন্য মহল্লার মাসজিদে প্রতিষ্ঠত তালীমুল কুরআন মক্তবে নাবালেগ ছোট ছোট ছেলেদের
সাথে একত্রে সহীহ কুরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা করতে পারে। দেশের
যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ সকাল ১০টার দিকে শুরু হয়, সেখানে
শিশুদের জন্য ফজরবাদ মক্তব কায়েম করা যায়। যেখানে কেজি স্কুল বা প্রাথমিক বিদ্যালয়
সকাল ৭/৮ টার দিকে শুরু হয় সেখানে জোহরবাদ মক্তব কায়েম করা যায়। আছর ও
মাগরিব-ইশাবাদ শিশুদের মক্তব সমীচীন নয়,
কারণ আছরবাদ তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা
ও মাগরিববাদ তাদের ক্লাসের লেখাপড়ার করার সময়।
বয়স্কা মহিলা, বালেগা মেয়ে ও এবং
বালেগা হওয়ার কাছাকাছি বয়সের মেয়েদের জন্য সহীহ কুরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষার সবচেয় উপযোগী
হল পারিবারিক মক্তব। পরিবার প্রধান বা পরিবারেরর অন্য কোন সদস্য তাঁর মাহরামদেরকে
নিয়ে পারিবারিক মক্তব কায়েম করবেন। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে সহীহ কুরআন
তিলাওয়াতসহ দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা দিবেন।
আজকাল পরিবারের মধ্যে সহীহ
তিলাওয়াতসহ দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা দেয়ার মত কোন সদস্য সাধারণত অনেক
পরিবারেই পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের মধ্যে তালীম করার মত উপযুক্ত মহিলা
মুয়াল্লিম পাওয়া গেলে মহিলা মুয়াল্লিম দ্বারা আলাদা মহিলা মক্তব কায়েম করতে হবে। বালেগ
হওয়ার পর থেকে তাদেরক পর্দার বিধান সর্বদা মেনে চলতে হবে এবং পর্দার বিধান মেনেই
দ্বীন শিখতে হবে।
মহিলা মুয়াল্লিম বাড়ির
মুরব্বীদের অনুমতি নিয়ে তাঁর বাড়ীতে মহিলা মক্তব কায়েম করবেন। বাড়ির মুরব্বীদের
দায়িত্ব হল মহিলা মক্তব কায়েমে সর্বাত্মক সহযোগীতা করা। প্রতিবেশী মহিলাগণ নিয়মিত সেখানে
গিয়ে সহীহ তিলাওয়াতসহ দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা করবেন। তারা যাতে সহীহ
তিলাওয়াতসহ দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা করতে পারেন সে জন্য তাদের মুরব্বীদেরও
সর্বাত্মক সহযোগীতা করা কর্তব্য।
আছরবাদ মহিলা মক্তবের উপযুক্ত
সময়, কারণ
এ সময়ে তাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকে না। মহিলা মুয়াল্লিমকে সহীহ কুরআন
তিলাওয়াত শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে পাক-পবিত্রতার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
এছাড়া মহিলা মক্তব কায়েমের ক্ষেত্রে পর্দার বিধান পালনে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
পুরুষ ও মহিলাদের দ্বীনি
খেদমতের কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যারা দ্বীনের খেদমতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে
আগ্রহী তাদেরকে এসব ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। একটি পার্থক্য হলঃ রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুরুষ সাহাবাগণের ন্যায় পুরুষ মুয়াল্লিমগণ দাওয়াত,
তালীম ও তাজকিয়ার কাজে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাবেন, মানব সমাজের সর্বত্র
সাধ্যনুযায়ী বিচরন করবেন। আর মহিলা মুয়াল্লমগণের আদর্শ হলেন হযরত খাদিজা, হযরত
ফাতিমা ও হজরত আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহুম
প্রমুখ- যারা দাওয়াত, তালীম ও তাজকিয়ার কাজে মহিলাদের দুয়ারে দুয়ারে যান নাই বরং
নিজ নিজ ঘরে দারস/মক্তব করেছেন। দুর-দুরান্ত থেকে মহিলাগণ তাদের কাছে দ্বীন শেখার
জন্য আসতেন।
সাবধান! এটাই মহিলাদের দ্বীনি
খেদমতের অন্যতম ছুন্নাত।
তালীমুল
কুরআনের মক্তবের ফজিলত : হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সেই
ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর নিকট) সর্বোত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে
তা শিখায়- (বুখারী ও তিরমিজী)। মহিলা
মুয়াল্লিমকেও মনে রাখতে হবে যে, তালীমুল কুরআন মক্তব শুধু তিলাওয়াত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান
নয়, বরং
পরিপূর্ণ দ্বীনি তালীম,
তারবিয়াত ও তাজকিয়া প্রতিষ্ঠান। যেখানে মহল্লাবাসী মহিলাগণ তাকওয়াবান মুসলিমাহ হিসাবে জীবন গড়ার
মৌলিক নসিহতের সুযোগ লাভ করতে পারেন।
বয়স্ক মহিলা
মক্তবের তালীমের বিষয়বস্তু : কতিপয় বন্ধু মহিলা মক্তবের সিলেবাস সম্পর্কে জানতে
চেয়েছেন। তালীমুল কুরআন মক্তব একটি বুনিয়াদি দ্বীনি মক্তব। মহলাদের দ্বীনি
প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে এর সিলেবাস নির্ধারণ ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতে
হবে। মক্তবের তালীমের লক্ষ্য হল- মহল্লাবাসী সকল মহিলা যেন সহীহ ঈমান, আকিদা ও
আমলসহ তাকওয়াবান মুসলিমা হিসাবে নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য
পরামর্শ হল-
সহীহ্
তিলাওয়াত প্রশিক্ষণ : তালীমুল কুরআন মক্তবের অন্যতম কাজ হল সহীহ্ তিলাওয়াত
প্রশিক্ষণ। দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা করা সকল মুসলিম নর-নারীর ফরজ। ঈমান
আনায়নের পর ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল নামাজ। নামাজ সহীহ হওয়ার অন্যতম
শর্ত হল সহীহ তিলাওয়াত । সুতরাং সহীহ্ তিলাওয়াত শিক্ষা করা সবার জন্যই সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ ফরজে আইন। এছাড়া মক্তবে নামাজে পঠিত সুরা-তাসবীহ- দোয়া- দুরূদ এবং দৈনন্দিন জীবনের মাছনূন
দোয়াসমূহ অর্থ, ব্যাখ্যা ও ফজিলতসহ যথাসাধ্য শিক্ষা প্রদান।
সহীহ
ঈমান-আকিদা প্রশিক্ষণ : সহীহ ঈমান ও আকিদার মৌলিক বিষয়সমূহ শিক্ষা প্রদান। সহীহ
ঈমান-আকিদার পরিপন্থি যাবতীয় শিরক,
কুফুর,
নিফাক,
তাগুত, ফিসক এবং যাবতীয় কুসংস্কার এর বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা
প্রদান করা। এ গুলো থেকে আত্মরক্ষার ব্যাপারে সবাইকে সজাগ, সতর্ক ও
সচেতন করা।
সহীহ আমল-আখলাক
প্রশিক্ষণ : কুরআন ও ছুন্নাহ এর বিধান মোতাবেক জীবনের সকল দিক ও
ক্ষেত্রের সংশোধন ও খাটি ইসলামী জীবন গড়ার জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান। যাবতীয়
কুসংস্কার ও বিদআত এর বিষয়ে সচ্ছ ধারণা প্রদান। এ গুলো থেকে আত্মরক্ষার ব্যাপারে সবাইকে
সজাগ, সতর্ক
ও সচেতন করা।
সহীহ আত্মশুদ্ধি
প্রশিক্ষণ : আত্মার উৎকর্ষ সাধনের জন্য কুরআন ও ছুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি ও
মুনজিয়াত গুনাবলী সমূহ অর্জনের উপায় সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান। আত্মা কলুষিত হওয়ার
কারণ ও মুহলিকাত ত্রুটি-এ বিষয়ে সচ্ছ ধারণা প্রদান। এ গুলো থেকে আত্মরক্ষার
ব্যাপারে সবাইকে সজাগ,
সতর্ক ও সচেতন করা।
মৌলিক
মাসায়েল প্রশিক্ষণ : পবিত্রতা,
নামাজ,
রোজা,
যাকাত,
হজ্ব,
ফিতরা,
কুরবানী ও অন্যান্য ইবাদাতের মৌলিক মাসায়েল শিক্ষা প্রদান
করা। হানাফী, মালিকী, হাম্বলী, শাফিঈ ও আহলে হাদীস- সবই সহীহ হাদিসের উপর
প্রতিষ্ঠিত ছুন্নাহ সম্মত সহীহ মাযহাব। তাই ইখতিলাফ নিয়ে কোন বিতর্ক না করা ।
হক্কুল
ইবাদ প্রশিক্ষণ : মা-বাবা,
স্বামী-স্ত্রী,
সন্তান-সন্ততি,
কাজের লোক,
আত্মীয়-স্বজন,
পাড়া-প্রতিবেশী,
আত্মীয়-অনাত্মীয় মেহমান, সাধারণ
মুসলিম ও অমুসলিমদের হকসমূহ শিক্ষা দান। হকসমূহ আদায়ের ব্যাপারে তাকীদ করা। হকসমূহ
নষ্ট করার ভয়াবহ পরিনাম সম্পর্কে সবাইকে সজাগ, সতর্ক ও সচেতন করা।
মুয়ামিলাত
প্রশিক্ষণ : সামাজিক আচার,
দেখা-সাক্ষাৎ,
বিবাহ-শাদী,
লেন-দেন
ও সুবিচারসহ জীবনের সমস্ত দিক ও ক্ষেত্রের কুরআন ও সুন্নাহ
সম্মত পদ্ধতি শিক্ষা প্রদান। এসব ব্যাপারে প্রচলিত কুসংস্কার ও বিদআত এর বিষয়ে স্বচ্ছ
ধারণা প্রদান। এ গুলো থেকে আত্মরক্ষার ব্যাপারে সজাগ, সতর্ক ও সচেতন করা।
সহীহ
হিজাব প্রশিক্ষণ : মহিলাদেরকে সহীহ হিজাবের ব্যাপারে মক্তবে বাস্তব প্রশিক্ষণ
দিতে হবে। পরিবারের মধ্যে ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কার সাথে কতটুকু পর্দা করবে, এ ব্যাপারে
সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। জরুরী প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে কিভাবে পর্দা সহকারে
বের হবে, তার বাস্তব প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কন্ঠের পর্দা রক্ষা করে ঘরে-বাইরে কার
সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, তারও সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে হবে।
যোগাযোগ
মাধ্যম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ : ফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি
যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পর্দার বিধান মেনে চলা পুরুষ ও মহিলা সবার
জন্যই ফরজ। জরুরী প্রয়োজনে পর্দার বিধান মেনে এগুলো কিভাবে ব্যবহার করা যায়,
মক্তবে তার সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। এসব যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহারের
ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে।
পারিবারিক
বৈধ ডেকোরেশন : পরিবারের আভ্যান্তরীন বিষয়ের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আল্লাহ
তায়ালা স্ত্রীর উপর ন্যাস্ত করেছেন এবং এ ব্যাপারে পরকালে আল্লাহ তায়ালার আদালতে
তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। পারিবারিক ডেকোরেশন তার একটি অন্যতম দিক। সুতরাং
মানুষ বা অন্য কোন প্রানীর ছবি টাংগানো, শোকেসে বা অন্যত্র মুর্তি রাখা, টিভিতে
দেশী-বিদেশী-হিন্দি অনৈতিক সিরিয়াল, সিনেমা ও ভিসিডি দেখা- ইত্যাদি কুরআন ও
ছুন্নাহ পরিপন্থি কালচারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে।
পারিবারিক
পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণ : পরিবারে সন্তান-সন্ততি ও অধিনস্তদের প্রশিক্ষণ ও
তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীর উপর ন্যাস্ত করেছেন এবং এ ব্যাপারে
পরকালে আল্লাহ তায়ালার আদালতে তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। নিজ নিজ পরিবার
সাহাবাগণের পরিবারের ন্যায় আদর্শ পরিবার হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবারের
সদস্যদের নিয়ে দৈনিক কিছু সময় দ্বীনি তা-লীমের কৌশল ও বিষয় সম্পর্কে মক্তবে
প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কুরআন-ছুন্নাহর পরিপন্থি যে কোন আমলের ভয়াবহতা সম্পর্কে
সবাইকে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে।
বৈধ
পেশাগত প্রশিক্ষণ : আল্লাহ তায়ালা পরিবারের কর্তৃত্ব ও ব্যয়-ভার বহণের দায়িত্ব
স্বামীর উপর ন্যাস্ত করেছেন। সুতরাং পেশাগত দক্ষতা অর্জন, বৈধ পেশা
ও বৈধ উপার্জনের জন্য কুরআন ও ছুন্নাহ সম্মত কৌশল সম্পর্কে জানা পুরুষদের জন্য
বেশী জরুরী। অবশ্য মহিলাদেরও জানা থাকলে তারা পুরুষদের বৈধ আয়-রোজগারের
তত্ত্বাবধান করতে পারে। অনেক সময় বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের আয়-রোজগারের
প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে তারা সেলাইয়ের কাজ করে বা মেয়েদের প্রাইভেট ব্যাচ পড়িয়ে
পর্দার সাথে ঘরে বসে আয়-রোজগারের করতে পারে। পর্দার ফরজ বিধান লংঘন করে কোন চাকুরী
বা পেশা গ্রহণ করা মহিলাদের জন্য হারাম।
সামাজিক
পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণ : মক্তবের কিছু সংখ্যক আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থীকে দ্বীনের
মুয়াল্লিমা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। যখন তারা
মুয়াল্লিমা হিসাবে দায়িত্ব পালনের উপযোগী হবেন তখন তাদের নিজ নিজ বাড়িতে মক্তব
কায়েমে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে । নতুন মক্তবে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব
ও পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে দ্বীনি তা-লীমের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাকওয়াবান
মুসলমান হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া বিবাহ-শাদী ও অন্যান্য সামাজিক
অনুষ্ঠানাদি ইসলামের আলোকে সংশোধন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান। এভাবে দ্বীনি তালীম,
তারবিয়াত ও তাজকিয়ার কাজ সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।
মুয়াল্লিমাগনের বৈশিষ্ট, দায়িত্ব ও কর্তব্য : মুয়াল্লিমাগন হবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
ওয়ারিস এবং তাঁর প্রতিনিধি। তারা কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকা পন্থী হবেন না, বরং
দ্বীনপন্থী হবেন। তারা কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকার দৃষ্টিভংগী বা আদর্শ প্রচার
করবেন না, ফিরকাবাজী বা বিতর্কে লিপ্ত হবেন না বরং শুধুমাত্র কুরআন ও ছুন্নাহর
মহাণ আদর্শ ও মৌলিক শিক্ষা তুলে ধরবেন এবং সে অনুযায়ী জীবন গড়ার কৌশল শিক্ষা দিবেন।
তারা মহিলদেরকে কোন বিশেষ দল, তরিকা বা ফিরকা পন্থী বানাবেন না, বরং সবাইকে শুধুমাত্র
দ্বীনপন্থী তাকওয়াবান মুসলিমা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
আমাদের
দায়িত্ব : আমরা সবাই আল-কুরআনের ছাত্র হব। আজীবনের জন্য আল-কুরআনের
ছাত্র হব। মাসজিদে-মাসজিদে মহল্লায়-মহল্লায় আল-কুরআনের মক্তব গড়ব। মক্তবে সহীহ
তিলাওয়াতসহ পরিপূর্ণ দ্বীন শিখব। সাহাবাদের ন্যায় জীবন গড়ার কৌশল শিখব। কুরআনের
আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের খেদমতের জন্য
কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন এবং
তাঁদের জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন। আ-মী-ন!
No comments:
Post a Comment