মুমীনের জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্যঃ মাগফিরাত ও জান্নাত
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও
সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং
সালেহীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ
(সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র
মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত।
মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিসসালাম এর আদি
নিবাস হল জান্নাত। তাই মুমীনগণের জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য হল আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ
করা। আল্লাহ তা'য়ালা স্বয়ং
মানব জাতিকে তাঁর পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার
নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ “আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রভুর
পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত রাখা
হয়েছে।” -[সূরা
আলে-ইমরানঃ ১৩৩]
তিনি আরও বলেনঃ তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সেই (প্রতিশ্রুত)
ক্ষমা ও চিরন্তন জান্নাত পাওয়ার জন্যে ধাবিত হও (এমন জান্নাত) যার আয়তন
আসমান-যমীনের সমান প্রশস্ত তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সেসব মানুষদের জন্যে যারা
আল্লাহ্ তায়ালা ও তার (পাঠানো) রসূলদের ওপর ঈমান এনেছে, (মূলত) এ-হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার এক
অনুগ্রহ, যাকে তিনি চান তাকেই তিনি এ অনুগ্রহ প্রদান করেন;
আর আল্লাহ্ তায়ালা হচ্ছেন মহা অনুগ্রহশীল। -(সূরা-আল হাদীদ : ২১)
হযরত আদম আলাইহিসসালাম-কে দুনিয়ায় প্রেরণের পূর্বে
আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ
থেকে তাকে জান্নাতে বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। তাই জান্নাতের উপর রয়েছ তাঁর
বংশধর মানব জাতির মিরাসী অধিকার। জান্নাতে যাওয়ার মৌলিক ভিত্তি হল বিশুদ্ধ ঈমান।
সুতরাং সেই অধিকার লাভের জন্য মানব জাতিকে অবশ্যই বিশুদ্ধ ঈমানসহ কতিপয় গুনাবলী
অর্জন করতে হবে। বিশুদ্ধ ঈমান হবে র্শিকমুক্ত, তাগুতমুক্ত, নিফাকমুক্ত, জাহিলিয়াতমুক্ত ও কুফরমুক্ত। বিশুদ্ধ
ঈমানের উপর অবিচল থাকার পরে মুমীনের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার কয়েকটি সহজ উপায়
নিম্নে বর্ণনা করা হল-
শাহাদাতের উপর অবিচল থাকা ও শিরক হতে মুক্ত থাকাঃ
আল্লাহ তা'য়ালার কোন
বান্দা যখন অটল বিশ্বাসের সংগে ঘোষণা করেন : ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর
রসূলুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রসূল তখন
তিনি মুমিনীনের স্তরে দাখিল হবেন। মুমিনীনের স্তরে বহাল থাকতে হলে উক্ত ঘোষণার
পরিপন্থী কোন আকিদা ও আমলের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না, তাহলে তিনি মুমিনীনের স্তর থেকে খারিজ হয়ে
যাবেন। তিনি যত ভাল আমলই করুন না কেন, তার ঈমান ও আমল কোন কিছুই আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে কবুল হবে না।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : নিশ্চয়ই যারা বলে (ঘোষণা করে), আমাদের প্রভু হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, অতঃপর তারা (ঘোষণার উপর) অটল রয়েছে, তাদের প্রতি (সুসংবাদ নিয়ে) ফিরিশতা অবতীর্ণ
হয়, (এবং বলে যে)
তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তা করো
না আর সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে।
পার্থিব জীবনেও আমরা তোমাদের বন্ধু ছিলাম এবং পরকালেও থাকব, তোমাদের জন্য সেথায় রয়েছে, যা কিছু তোমাদের বাসনা হবে আর তাও মজুদ
রয়েছে, যা কিছু
তোমরা চাইবে। আর এগুলো ক্ষমাশীল ও করুণাময়ের পক্ষ থেকে মেহমানদারী। -(সূরা হা-মীম
সিজদা : ৩০-৩২)
তিনি আরও বলেন : ‘‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এ কথার উপর সুদৃঢ় থাকে। তাদের কোন
ভয় ভীতি নেই, তাদের কোন
চিন্তা নেই। তারাই জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ জান্নাত তারা তাদের কৃত
কর্মের ফল স্বরূপ লাভ করবে”। -[সূরা
আল-আহক্বাফ: ১৩-১৪]
তিনি আরও বলেন : “অতঃপর যে সীমালংঘন করে, পৃথিবীর জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়,
জাহান্নামই হবে তার আবাস। আর যে নিজ প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত
হওয়ার ভয়ে প্রকম্পিত হয় এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে
তার বাসস্থান”। -(সূরা নাযিয়াত : ৩৭-৪১)
হযরত উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি এ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি
এক এবং তার কোন শরীক নেই এবং (আরো সাক্ষ্য প্রদান করে যে,) হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসুল। আর নিশ্চয়ই ঈসা (আলাইহিসসালাম) আল্লার বান্দা, তাঁর রাসুল, তাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়াম
(আলাইহাস্সালাম) এর মধ্যে পৌছিয়েছেন এবং তারই তরফ থেকে রুহু বিশেষ। আর (এ বিশ্বাস
রাখে যে,) জান্নাত
সত্য ও জাহান্নাম সত্য- তার আমল যা-ই হোক না কেন, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আলীদ
বলেছেনঃ আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন জাবর উমাইর থেকে যে জুনাদা থেকে এবং এতটুক বৃদ্ধি
করে বলেছেন যে, জান্নাতের
আটটি দরজার মধ্যে যেটি দিয়ে সে চায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। -(সহীহ বুখারীঃ ৩৪৩৫)
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! যদি তুমি দুনিয়া ভরা পাপ
নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ করো, আর আমার সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করো, তাহলে দুনিয়া ভরা ক্ষমা নিয়ে আমি তোমার
নিকট এগিয়ে আসবো। - [তিরমিযী]
জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসরণ করাঃ আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ করতে হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় আইন-বিধি, নীতি-আদর্শ, পথ-মত, বিদআত, জাহিলিয়াত ও নাফসানিয়াত পরিহার করতে হবে।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : (হে রাসূল! আপনি) বলুন! যদি
তোমরা আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে
ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমুহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও
দয়াময়। -(সূরা আলে ইমরান : ৩১)
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ
ঐভাবে অনুসরণ করেন যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম (রা)-গণ অনুসরণ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : “মুহাজীর ও আনসারদের অগ্রগামী দল আর যারা
যথাযথভাবে তাদের অনুসারী, আল্লাহ
তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে
এমন জান্নাত যার পাদদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এটা
হল মহান সফলতা।” -(সূরা তওবাহ
: ১০০)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর
আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে কিন্তু একটি মাত্র
দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারা? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেন : যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের আদর্শের উপর কায়েম থাকবে।
-(তিরমিজি-২৫৭৮ : হাসান, আবু দাউদ ও
সহীহ তারগীব-৪৮)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘জান্নাত পেতে আগ্রহী নয় এমন ব্যক্তি
ছাড়া আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে এমন ব্যক্তি আছে যে
জান্নাতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে
যাবে, আর যে আমার
নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে’’। -[বুখারী ]
মু’মিন জীবনের কল্যাণময় গুনাবলী অর্জণ করাঃ মুমীন জীবনে আল্লাহ তা’য়ালার একান্ত পছন্দনীয় কতিপয় গুনাবলী
অর্জন করতে পারলে এবং রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ
মোতাবেক সমস্ত জীবন অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে মাগফিরাত ও জান্নাত অর্জন করা যায়।
যথা-
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী
নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। -[সূরা আল-আহযাবঃ
৩৫ ]
তিনি আরও বলেন : নিশ্চয়ই মু’মিন তারা, আল্লাহর নাম উচ্চারিত হলে যাদের হৃদয় বিগলিত
হয়ে চমকে ওঠে, যখন তাদের
নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমানকে সুদৃঢ় করে আর তারা কেবলমাত্র
তাদের প্রভুর উপরেই ভরসা রাখে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যে জীবিকা তাদেরকে
দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে- তারাই সত্যিকারের মুমিন। তাদের প্রভুর নিকট তাদের জন্য
রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং
সম্মানজনক জীবিকা।-(সূরা আনফাল: ২-৪)
তিনি আরও বলেন : “অবশ্যই (ঐ সব) মু’মিনগণ সফল হয়েছে। যারা তাদের সালাতে
সমর্পিত প্রাণ, বিনয়ী ও
নিষ্ঠাবান হয়। যারা বাজে কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকে। যারা তাদের যাবতীয় কার্যক্রম
পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে। যারা নিজেদের গুপ্তাঙ্গ হিফাযত করে তবে তাদের স্ত্রীদের
এবং অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে কোন দোষ নেই। যারা এ সীমা লংঘন করবে, তারাই হল সীমালংঘনকারী। যারা নিজেদের
আমানত রক্ষা করে এবং ওয়াদা পূরণ করে। যারা নিজেদের সালাতের হিফাযত করে। তারাই হল
সে সকল লোক, যারা উত্তরাধিকারী
হবে। উত্তরাধিকারী হবে জান্নাতুল ফিরদাউসের। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” -(সূরা মুমিনুন : ১-১১)
আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ জানা ও তার যথার্থ
বাস্তবায়ন করাঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি সে গুলো জেনে তা বাস্তবায়ন
করবে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে। -[বুখারী, হাদিস:
২৭৩৬]
আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল এবং দ্বীনের প্রতি সন্তুষ্টি
জ্ঞাপনঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি বলে যে আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। তার জন্য
জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। -[আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫২৯]
আল কুর’আন হিফজ্, তিলাওয়াত ও খিদমাতের জন্য যথাসাধ্য সাধনা
করাঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আলকুরআনের সঙ্গীকে বলা হবে: কুরআন পাঠ কর, আর মর্যাদার উচ্চশিখরে আরোহণ কর। আর
তেলাওয়াত করতে থাক। যেমন দুনিয়াতে তেলাওয়াত করছিলে; কেননা তোমার মর্যাদা হলো কুরআনের শেষ
আয়াত পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করবে’’। -[তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাযাহ]
প্রতি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করাঃ হযরত আবু উমামা থেকে বর্ণিত।রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাতের পর আয়াতুল
কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যুর
সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে’’। [নাসায়ী, তাবারানী, ইবনে হিববান এটি বর্ণনা করেছেন]
নিয়মিত সূরা মূলক তিলাওয়াত করাঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কুরআনে ত্রিশ
আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা কোন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ
করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সুরাটি হল তাবা-রকাল্লাজী বিয়াদিহিল মুলক। -[তিরমিযী : হাসান, নাসাই,
ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ]
অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘৩০ আয়াত বিশিষ্ট কুরআনের একটি সূরা, এর পাঠকের জন্য জান্নাতে না নেয়া পর্যন্ত
সুপারিশ করতেই থাকবে। সূরাটি হল তাবারাকাল্লাজী..’’ (অর্থাৎ সূরা মূলক)। -[তাবারানী]
সূরা ইখলাস এর মহব্বত ও তিলাওয়াত করাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। এক ব্যক্তি মাসজিদে কোবায় আনসার সাহাবীদের ইমামতি করতেন। তিনি প্রতি
রাকাতেই সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে
জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কোন কারণে প্রতি রাকাতে এ সূরাটি পাঠ কর? উত্তরে সে সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ সূরাটি খুব পছন্দ
করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, এ সূরাটি পছন্দ করার কারণেই তুমি জান্নাতে
প্রবেশ করবে। -[বুখারী ও তিরমিযী]
হযরত উবাইদ ইবন হুনাইন বলেন, আমি হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে সূরা ইখলাস পাঠরত অবস্থায়
দেখে বললেন, ওয়াজাবাত
(ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে) অতঃপর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ওয়াজিব হয়েছে ইয়া রাসূলুল্লাহ? উত্তরে বললেন, জান্নাত। -[সূনানে তিরমিযি, হাদিস: ২৮৯৭]
সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার সাথে সাথে সিজদায় অবনত
হওয়াঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যখন (সেজদার আয়াত তিলাওয়াত করার
সাথে সাথে) সিজদা আদায় করে তখন শয়তান কেঁদে কেঁদে দূরে চলে যায় এবং বলে, হায় আফসোস! আদম সন্তানকে সেজদার আদেশ করা
হল, সে সিজদা
করে জান্নাত পাবে, আর আমি
সিজদা অস্বীকার করায় আমার জন্য জাহান্নাম। -[সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৪]
দ্বীনি ইলম অর্জনের পথে সাধনা করাঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম
অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন।
কোন একদল লোক যখন আল্লাহ তা'য়ালার ঘর সমূহের মধ্যে কোথাও একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ এবং
পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখন তাদের উপর সাকিনা অবতীর্ণ হতে থাকে, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ তাদেরকে ঢেকে দেয়, ফিরিশতাগণ
তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফিরিশতাদের সামনে তাদের উল্লে¬খ করে থাকেন। - (সহীহ্ মুসলিম)
হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসি করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তায় চলে
আল্লাহ তাআলা এ কারণে তাকে জান্নাতের রাস্তাসমূহ থেকে এক রাস্তায় চালিয়ে দেন।
[অর্থাৎ ইলম হাসিল করা তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়ে যায়] ফেরেশতাগণ তালেবে
ইলমের সন্তুষ্টির জন্য আপন পাখা বিছিয়ে দেন। আরেমের জন্য আসমান জমিনের সমস্ত
মাখলুক এবং মাছ যা পানিতে রয়েছে সকলেই মাগফিরাতের দুআ করে। নিঃসন্দেহে আবেদের উপর
আলেমের ফযীলত এরূপ যেরূপ পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। নিঃসন্দেহে
উলামায়ে কেরাম আম্বিয়া আলাইহিস সালামের উত্তরাধিকারী। আর আম্বিয়াগণ দিনার ও দিরহাম
এর উত্তারাধিকারী বানন না। তারাতো ইলমের উত্তরাধিকারী বানান। অতএব যে ব্যক্তি ইলমে
দ্বীন হাসিল করল,
সে পরিপূর্ণ অংশ লাভ করল। -[সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং-৩৬৪১, মুসনাদুশ শামীনঃ হাদীস নং-১২৩১, কানযুল উম্মালঃ হাদীস নং-২৮৭৪৬]
হযরত আবু উমামহ বাহেলী রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে
দুই ব্যক্তির আলোচনা করা হল। তন্মধ্যে একজন আবেদ আরেকজন আলেম ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করলেন,
আলেমের ফযীলত আবেদের উপর এমন যেমন আমার ফযীলত তোমাদের মধ্য
হতে একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর। তারপর রাসূলূল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, যারা লোকদের ভাল কথা শিক্ষা দেয়, তাদের উপর আল্লাহ তাআলা তাঁর ফেরেশতাগণ আসমান জমিনের সমস্ত
মাখলুক,
এমন কি পিঁপড়া আপন গর্তে এবং মাছ [পানির ভিতর আপন আপন
পদ্ধতিতে] রহমতের দুআ করে।
-[সুনানে তিরমিজীঃ হাদীস নং-২৬৮৫, জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনানঃ হাদীস নং-১১০৬২, আলমুসনাদুল জামেঃ হাদীস নং-৫৩২২]
সময় মত নামাজ পড়া, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ও আল্লাহর
পথে জিহাদ করাঃ হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর নবী, কোন কাজটি জান্নাতের অতি নিকটবর্তী করে
দেয়? তিনি বললেন, সময় মত নামাজ পড়া। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর নবী, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার
জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর
নবী, তারপর
কোনটি। তিনি বললেন, আল্লাহর পথে
জিহাদ করা। -[মুসলিম শরিফ-১ম খণ্ড, হাদিস নং-১৬১]
আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি ভালবাসাঃ মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : "আপনি মুমিনদের এমন কোন
দল পাবেন না, যারা
আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখিরাতের প্রতিও ঈমান রাখে- অথচ তারা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের বিরোধিতাকারীদেরকে ভালবাসে, যদিও তারা তাদের পিতা, তাদের পুত্র, তাদের ভাই বা তাদের
আত্মীয়-স্বজনও হয়। আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমানকে সুদৃঢ় করে দিয়েছেন এবং নিজের পক্ষ
থেকে তাদেরকে রূহ (হিদায়াতের আলো) দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদেরকে এমন
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যে জান্নাতের নিচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ বয়ে যায়, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদের
প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও
আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। মনে রেখ! আল্লাহর দল অবশ্যই
কল্যাণপ্রাপ্ত হবে।" -(সুরা মুজাদালা
: ২২)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। এক
সাহাবী আবেদন করলেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ্! ক্বিয়ামত কখন হবে? উত্তরে আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, ক্বিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি নিয়েছ? সাহাবীটি আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তজ্জন্য আমি তেমন কোন
প্রস্তুতি নিতে পারিনি; তবে আমি
আমার আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলকে ভালবাসি । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "তুমি যাকে ভালবাস ক্বিয়ামত দিবসে তুমি তার সাথে
থাকবে"। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনঃ "ইসলামের আবির্ভার
পরে আমি মুসলমানদেরকে এরূপ খুশি হতে দেখিনি, যেরূপ একথা গুলো শুনে খুশি
হয়েছেন"। -(বুখারী শরীফঃ ২য় খন্ডের
৯১১ পৃষ্ঠা, মুসলিম
শরীফঃ ২য় খন্ডের ৩৩১ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তা’লার মহান যিক্রঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: ‘‘মেরাজের
রাতে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মাতকে আমার সালাম
বলো এবং তাদেরকে এ সংবাদ দাও যে, জান্নাতের মাটি সুন্দর, পানি মিষ্টি, আর জান্নাত সমতল এবং এর বৃক্ষরাজি
সুবহানাল্লাহ,আলহামদুল্লিাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’’। -[তিরমিযী]
প্রতি সালাতের পর আল্লাহর যিক্রঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গরীব
মুহাজিরগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন. ধনী ও বিত্তবান
লোকেরা তো আল্লাহর নিকট সুউচ্চ মর্যাদা এবং নানাবিধ নেয়ামত লাভে ধন্য হয়ে গেল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কীভাবে? তারা জবাব দিলেন যে, আমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও সালাত
আদায় করে। আমরা যেমন রোযা পালন করি তারাও রোযা পালন করে। কিন্তু তারা দান সদকা
করে আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম আযাদ করে আমরা তা করি না। তখন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেব, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের
সমকক্ষ হবে, আর তোমাদের
পরবর্তীদের চেয়ে অগ্রগামী হবে? আর তোমাদের চেয়ে উত্তম কেউ হবে না, সে ব্যক্তি ছাড়া যে তোমাদের মতই এ
কাজগুলো করবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! আমাদেরকে সে কাজ শিক্ষা দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার, আর ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবে।
-[মুসলিম]
জান্নাত লাভের জন্য দো’আ করাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যাক্তি ৩ বার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে: হে আল্লাহ্! ঐ
ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন
থেকে মুক্তি চেয়ে দো‘আ করে, জাহান্নাম বলে: হে আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তিকে
দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দাও। -[তিরমিযি, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ এটি বর্ণনা করেছেন]
গুনাহ মাফের প্রধান দো’আ সকাল-সন্ধ্যায় পাঠঃ হযরত শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেন তিনি বলেন, ইস্তেগফারের প্রধান দো‘আ হলো: “আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি- লা- ইলা-হা
ইল্লা আনতা, খালাকতানি- ওয়া আনা ’আবদিকা, ওয়া আনা ’আলা- ’আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতা’তু, আ’উ-যুবিকা মিন শাররী মা সানা’তু, আবু-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবু-উ লাকা বিযাম্বি-, ফাগফিরলী- ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযুনু-বা
ইল্লা- আনতা।”
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া আর
কোন সত্য মা’বুদ নাই।
তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার
বান্দা। আমি তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকারের উপর সাধ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। আমি
অনিষ্টকর যা কিছু করেছি তা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর তোমার
যে নেয়ামত আছে তার স্বীকৃতি দিচ্ছি। তোমার নিকট আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি।
সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও; কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না’’। -যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে দিনে এ দো‘আ পাঠ করে, সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি
বিশ্বাসের সাথে রাতে পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, সেও জান্নাতবাসী হয়’’। -[বুখারী]
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়াঃ হযরত ওবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “আল্লাহ বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাতসমূহের হকে কোন প্রকার কমতি ও তাচ্ছিল্য না
করে সঠিকভাবে সেগুলো আদায় করে, তার জন্য আল্লাহর এ অঙ্গিকার যে, তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে
এগুলোর ব্যাপারে কমতি ও তাচ্ছিল্য করে তা আদায় করবে, তার প্রতি আল্লাহর কোন অঙ্গিকার নেই। তিনি
চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন, আবার ক্ষমাও করতে পারেন’’। -[হাদীসটি মোয়াত্তায়ে মালিক, মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে]
ফজর ও আসরের বিশেষ গুরুত্ব প্রদানঃ হযরত আবু মূসা আশআ’রী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: অর্থাৎ ‘‘যে ব্যক্তি শীতল ওয়াক্তের দুই সালাত (ফজর
-আসর) আদায় করবে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে’’। - [বুখারী
ও মুসলিম]
সালাতের কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণঃ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন : ‘‘যে ব্যক্তি
সালাতের কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করলো, এর দরূন আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে
দেবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’। -[তাবারানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]
ফরজ ছাড়াও প্রতিদিন ১২ রাকাত সুন্নাত সালাত আদায়ঃ হযরত উম্মে হাবীবা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : ‘‘যে মুসলিম ব্যক্তিই ফরযের অতিরিক্ত
প্রতিদিন ১২ রাকাত সুন্নাত সালাত আল্লাহর জন্য আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের
মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’। -[মুসলিম]
এ সুন্নাত সালাতগুলোর বর্ণনা এভাবে এসেছে: ‘‘যোহরের পূর্বে ৪ রাকাআত, পরে ২ রাকাআত, মাগরিবের পরে ২ রাকাআত, ইশার পর ২ রাকাআত এবং ফজরের পূর্বে ২
রাকাআত’’।
ঠাণ্ডার সময়ের দুই ওয়াক্ত আসর ও ফজরের সালাত
নিয়মিত জামা‘আতের সাথে আদায়কারী ব্যক্তি জান্নাতি হবেঃ হযরত আবু বকর ইবন আবূ মূসা আল-আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: যে ব্যক্তি দুইটি ঠাণ্ডার সালাত (আসর ও ফজর) আদায় করে সে জান্নাতি হবে।
-[মুসলিম, পরিচ্ছেদ:
ফাদলু সলাতিস সুবহি ওয়াল আসর]
যোহরের ফরজ সালাতের পূর্বে চার রাকা’আত সালাত আদায় করাঃ হযরত উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাআত
সালাত ও তার পরে চার রাকাআত (নিয়মিত) আদায় করে তার ওপর আল্লাহ জাহান্নাম হারাম
করেছেন। -[তিরমিযি, সালাত
অধ্যায়, পরিচ্ছেদ:
১/৩১৫]
একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রথম তাকবীর সহ জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ঃ হযরত আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তাকবীরে
উলার সাথে জামা‘আতের সাথে
আদায় করে তার জন্য দুইটি মুক্তি লেখা হয়। একটি জাহান্নাম থেকে আর অপরটি মুনাফেকি
থেকে। -[তিরমিযি, হাদিস নং
১/২০০]
সকাল-সন্ধ্যা মাসজিদে গমনঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : ‘‘যে ব্যক্তি
সকাল সন্ধ্যা মাসজিদে যায়, তার জন্য
আল্লাহ সকাল বিকাল যখনই সে গমন করে জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন’’। -[বুখারী ও মুসলিম]
ওযুর পর দুই রাকাআত নফল সালাত (তাহিয়্যাতুল ওযু)
রীতিমত আদায়ঃ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একদিন ফজরের নামাযের পর বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের পর তোমার এমন কি
আমল আছে যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে
তোমার চলার শব্দ পেয়েছি। বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমি এর চেয়ে অধিক কোন আমল তো
দেখছি না যে, দিনে বা
রাতে যখনই আমি ওযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আমি আদায়
করি। -[বুখারি ও মুসলিম]
অপর একটি হাদিসে বর্ণিতঃ হযরত উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। আমাদের উপর দায়িত্ব ছিল
উট চরাবার। যখন আমার পালা আসল তখন আমি এক বিকালে সেগুলো ছেড়ে আসলাম। তখন আমি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম যে তিনি মানুষদের নিয়ে কথা বলছেন, তখন তার যে কথা আমি ধারণ করতে পেরেছি তার
মধ্যে ছিল, “তোমাদের যে
কেউ ওযু করল, আর সে তার
ওযু সুন্দর করে সম্পন্ন করে, তারপর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজুর দুই রাকাত সালাত
ভালোভাবে আদায় করল, তার জন্য
জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। -[মুসলিম, হাদিস: ১৪৪]
ওজুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠঃ হযরত ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি
ভালো করে ওযু করে এবং ওযুর পর কালিমায়ে শাহাদাত (‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা-হু ওয়াহদাহু-
লা- শারী-কালাহু- ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু-ওয়া রসূ-লুহূ) পড়ে- [অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন কোন ইলাহ নাই, তিন এক,
তার কোন শরীক নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।]- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে তখন
যেটি দিয়ে খুশি সেটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। -[বুখারী ও মুসলিম]
আযানের সময় আযানের জবাব দেওয়াঃ
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলে তখন তোমাদের কেউ
আল্লাহু আকবার , আল্লাহু
আকবার বলল। তারপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু বলে, তখন সেও আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু
বলল। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে, তখন সেও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার
রাসুলুল্লাহ বলল। পরে মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ বলে, তখন সে লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ বলল। এরপর মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ বলে, তখন সেও লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ বলল। তারপর মুয়াজ্জিন যখন আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলে, তখন সেও আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার বলল, তারপর মুয়াজ্জিন যখন লা ইলাহা ইল্লালাহু
বলে, তখন সেও লা
ইলাহা ইল্লালাহু বলল। -এসবই যদি সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে। -(মুসলিমঃ ২/৭৪৯)
আজান শুনে দোয়া পাঠ করাঃ জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে- ‘আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-জিহিদ্দা’ওয়াতিত্তা-ম্মা-তি ওয়াসসলা-তিলক্ব-য়িমাতি
আতি মুহাম্মাদানিলওয়াসি-লাতা ওয়ালফাদিলাতা ওয়াবআসহু মাক্বামাম্মাহমু-দানিল্লাজী-
ওয়াআত্তাহু’ [অর্থাৎ- হে
আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অসীলা বা বিশেষ মর্যাদা দান কর এবং তাকে
তোমার ওয়াদাকৃত প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও]- তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত
ওয়াজিব হয়ে যাবে। -(তিরমিযী : হাসান ও সহীহ, বুখারী, আবুদাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)
একই বিষয়ে : হযরত সায়াদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনে বলবে- ‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা-হু ওয়াহদাহু-
লা- শারী-কালাহু- ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু-ওয়া রসূ-লুহূ, রদিতু বিল্লা-হি রব্বাওঁ
ওয়াবিমুহাম্মাদিররসূ-লাওঁ ওয়াবিলইসলামি দ্বী-না-’[অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার
বান্দা ও রসুল। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে রসূল হিসাবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি]- তার পাপ
সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। -(তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)
আল্লাহর জন্য মাসজিদ নির্মানঃ হযরত উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরী করলো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী
করবেন’’। -[বুখারী
ও মুসলিম]
সিয়াম সাধনায় যত্নবান হওয়াঃ হযরত সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘‘জান্নাতের ভেতর ‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এখান
দিয়ে রোযাদারগণ ঢুকবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশাধিকার পাবে না। বলা
হবে: কোথায় রোযাদারগণ? তখন তারা
সেখান দিয়ে ঢুকবে। তারা ছাড়া সেখান দিয়ে আর কেউ ঢুকবে না। তারা প্রবেশ করার পর
তা বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর আর কেউ ঢুকতে পারবে না’’। -[বুখারী ও মুসলিম]
পূণ্যময় হজ্জের প্রতিদান জান্নাতঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী সকল
গুনাহের জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ। আর পূণ্যময় হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু
নয়’’। - [বুখারী
ও মুসলিম]
পরস্পর বেশি বেশি সালাম বিনিময়ঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষন না ঈমান আন আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না
যতক্ষন না একে অন্যকে ভালবাসবে । আমি কি তোমাদের তা বাতলে দেব না যা করলে তোমাদের
পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি বেশি সালাম বিনিময় করবে
। -[মুসলিম : হাদিস ৯৬]
বিপদগ্রস্ত দরিদ্রদেরকে ঋণ পরিশোধের সময় দেয়াঃ হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘‘এক ব্যক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার পর
জান্নাতে প্রবেশ করলো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো: তুমি কি আমল করেছ?উত্তরে লোকটি বললো: আমি মানুষের সাথে কেনাবেচা
করতাম। বিপদগ্রস্ত দরিদ্রদেরকে ঋণ পরিশোধের সময় দিতাম এবং কিছু টাকা পয়সা মাফ
করে দিতাম। ফলে আল্লাহ তাকেও মাফ করে দিয়েছেন’’। -[মুসলিম]
শক্তি থাকা সত্বেও ঝগড়া করা থেকে বিরত থাকাঃ হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ঝগড়া করা থেকে বিরত থাকে যদিও
সে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আমি তার জন্য জান্নাতের কিনারের একটি গৃহের
জিম্মাদারী নিচ্ছি। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকে যদিও তা ঠাট্টার ছলে
হয়, ঐ ব্যক্তির
জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তি স্থানে একটি গৃহের জিম্মাদারী নিচ্ছি। আর যে ব্যক্তির
চরিত্র উন্নত তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি গৃহের জিম্মাদারী নিচ্ছি ।
-(আবু দাউদ : ৪৮০০ ও বাইহাক্বি : ২১৭৮০)
কতিপয় কল্যাণময় অভ্যাসঃ আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘‘ হে মানব সকল! সালামের প্রসার কর। খাদ্য দান কর।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। লোকেরা ঘুমিয়ে গেলে রাতে নফল সালাত আদায় কর।
তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। -[তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ]
সত্যপ্রীতি বা সত্যনিষ্ঠা অবলম্বনঃ হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “সত্যপ্রীতি বা
সত্যনিষ্ঠা সততার পথ দেখায় আর সততা (মানুষকে) জান্নাতের দিকে চালিত করে। মানুষ
সত্যের অনুশীলন করতে করতে এক পর্যায়ে আল্লাহর নিকট সিদ্দিক (সত্যবাদী) নামে
পরিচিত হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা অশ্লীলতার দিকে চালিত করে আর অশ্লীলতা মানুষকে
জাহান্নামের (আগুনের) দিকে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যার অনুশীলন করতে করতে শেষ
পর্যন্ত আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী নামে পরিচিত হয়।" -[বুখারী ও মুসলিম]
লজ্জাস্থান ও জবানের হেফাযত করাঃ হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
যে ব্যক্তি আমার কাছে ওয়াদা করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ
(জিহ্বা) এবং দুই উরুর মধ্যস্থিত অঙ্গের (লজ্জাস্থান) হেফাযত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন
হব।-(বুখারী)
ছয়টি আমলের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে জান্নাতের
প্রতিশ্রুতিঃ হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তোমরা
আমাকে ছয়টি আমলের প্রতিশ্রুতি দাও, আমি তোমাদের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি
দিচ্ছি- ১) কথা বললে সত্য বলবে। ২) ওয়াদা করলে পূর্ণ করবে।৩) আমানতের মাল
যথাযথভাবে পৌঁছে দিবে। ৪) লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। ৫) দৃষ্টি অবনত রাখবে। ৬)
হারাম উপার্জন থেকে হাতকে বিরত রাখবে। -[মুসনাদে আহমাদ]
অন্তঃকরণ নরম হওয়াঃ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “জান্নাতে
প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি যাদের অন্তরসমূহ হবে পাখির অন্তরের ন্যায়। -[মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪০]
বাহ্যিকভাবে দুর্বল ও লোক চোখে হেয় প্রকৃতির স্বভাবঃ হযরত হারেসা ইবন ওহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন
: “আমি কি
তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের গুণাবলীর কথা বলব না?” সাহাবাগণ বললেন : হ্যাঁ বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক দুর্বল, লোক চোখে হেয়, কিন্তু সে যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে
কসম করে তাহলে আল্লাহ তার কসম পূর্ণ করবেন।” অতঃপর তিনি বললেন : “আমি কি তোমাদেরকে
জাহান্নামী লোকদের কথা বলব না?” তারা বললেন: বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক ঝগড়াকারী, দুশ্চরিত্র ও অহংকারী ব্যক্তি।” -[মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫৩]
নম্র-ভদ্র ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ
করবেঃ হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক
নরম দিল ভদ্র এবং মানুষের সাথে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম”। -[আহমদ, ১/৪১৫, হাদীস নং ৩৯৩৮]
ঈমান ও কিছু মৌলিক আমলের উপর মজবুত ব্যক্তি জান্নাতে
যাবেঃ হযরত আবূ আইউব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: এক ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর
রাসূল! আমাকে এমন কোনো আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম
থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেন: আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার
সাব্যস্ত করবে না। সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর, আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। যখন ঐ
লোক ফিরে যেতে লাগল, তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাকে যা করতে বলা হল, যদি সে এর ওপর আমল করে তাহলে সে অবশ্যই
জান্নাতে প্রবেশ করবে। -[মুসলিম, কিতাবুল ঈমান]
নম্রভাষী, তাহাজ্জুদ আদায়কারী, রোজা পালনকারী ও অন্যকে খাদ্য দানকারীঃ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতে এমন কিছু ঘর আছে যার ভিতর থেকে বাহিরের সব কিছু দেখা
যাবে। আবার বাহির থেকে ভিতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বললেন: ঐ ব্যক্তির জন্য যে ভাল ও নরম
কথা বলে, অন্যকে আহার
করায়, অধিক
পরিমাণে নফল রোযা রাখে, আর যখন
লোকেরা আরামে নিদ্রারত থাকে তখন উঠে সে সালাত আদায় করে। -[তিরমিযি, হাদীস নং ১৯৮৪]
বিশেষ তিন প্রকারের লোক জান্নাতে যাবেঃ হযরত ইয়াদ্ব ইবন হিমার মাজাশে‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তিন প্রকারের লোক জান্নাতে যাবে। এক- ন্যায়পরায়ণ
বাদশাহ, সত্যবাদী, নেক আমলকারী। দুই- ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক
আত্মীয়ের সাথে এবং প্রত্যেক মুসলমানের সাথে দয়া করে। তিন-ঐ ব্যক্তি যে লজ্জা
স্থানকে সংরক্ষণ করে এবং বিনা প্রয়োজনে কারো নিকট কোন কিছু চায় না। -[মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৫]
দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন-পালন করাঃ হযরত আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দুইজন কন্যাকে তাদের প্রাপ্তবয়স্কা হওয়া
পর্যন্ত লালন-পালন করল, কিয়ামতের
দিন আমি ও ঐ ব্যক্তি এক সাথে উপস্থিত হব। একথা বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে একত্রিত
করে দেখালেন। -[মুসলিম, হাদীস নং
২৬৩১]
শহীদ, নবজাত শিশু ও জীবন্ত প্রোথিত সন্তান
জান্নাতী হবেঃ হযরত হাসনা বিনতে মুয়াবিয়া
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে আমার
চাচা এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কোন ধরনের লোকেরা জান্নাতি হবে? তিনি বললেন: শহীদরা জান্নাতি।
মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু জান্নাতি। (জাহিলিয়াতের যুগে) জীবন্ত প্রোথিত শিশু
জান্নাতি। -[আবু দাউদঃ হাদিস নং- ২/২২০০]
উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়াঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন জিনিসটি মানুষকে সব চেয়ে বেশি
জান্নাতে প্রবেশ করাবে? উত্তরে তিনি
বললেন, আল্লাহর ভয়
ও উত্তম চরিত্র। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন জিনিসটি মানুষকে সব চেয়ে বেশি
জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? উত্তরে তিনি
বললেন, মানুষের
জিহ্বা ও লজ্জা-স্থান। -[সূনানে তিরমিযীঃ হাদিস: ২০৭১]
ইয়াতীমের লালন-পালনকারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে জান্নাতী হবেঃ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ইয়াতীমের লালন পালনকারী-ইয়াতীম তার আত্মীয় হোক আর
অনাত্মীয়- ও আমি জান্নাতে এ দুই আঙ্গুলের ন্যায় এ বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে
একত্রিত করে দেখালেন যে এভাবে এক সাথে থাকব। (হাদিসের বর্ণনাকারী) ইমাম মালেক
(রহঃ) শাহাদাত ও মধ্যমাঙ্গুলির প্রতি ইশারা করে দেখিয়েছেন। -[মুসলিম, জুহুদ অধ্যায়]
হযরত সাহাল রাদিয়াল্লাহ তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি এবং ইয়াতিমকে লালন-পালনকারী
ব্যক্তি জান্নাতে কাছাকাছি থাকব। এবং তার শাহাদাত অঙ্গুলি এবং মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয়
একত্রিত করে ইঙ্গিত করলেন এবং দুইয়ের মাঝে একটু ফাঁক করলেন- [বুখারি, হাদিস: ৪৯৯৮]
যে নারীর মধ্যে হাদিস বর্ণিত পাঁচটি গুণ পাওয়া যাবে
সে জান্নাতী হবেঃ হযরত আবু
হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, স্বীয় লজ্জা-স্থান সংরক্ষণ করে, স্বীয় স্বামীর অনুগত থাকে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি
জান্নাতে প্রবেশ কর। -[ইবনে হিব্বান, সহীহ জামে আসসগীরঃ হাদিস নং-৬৭৩]
স্ত্রীর জন্য স্বীয় স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখাঃ হযরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মহিলা যদি স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে
মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -[সুনানে তিরমিযীঃ হাদিস নং- ১১৬১]
প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহারকারী জান্নাতি হবেঃ
হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক মহিলা দিনে রোযা রাখে, রাতে তাহাজ্জুদ সালাত পড়ে, কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে জাহান্নামী। অতঃপর
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল যে, অন্য এক
মহিলা শুধু ফরয সালাত আদায় করে, আর পনিরের এক টুকরা করে তা দান করে। কিন্তু সে তার
প্রতিবেশীকে কোন কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন: সে জান্নাতি। -[আহমদঃ হাদিস
নং-১৩৬]
কোনো রুগীকে দেখতে গমনকারী জান্নাতি হবেঃ
হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রুগীর দেখাশোনাকারী যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে ফিরে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতের বাগানে থাকে।
-[মুসলিম, কিতাবুল
বির]
অন্ধ ব্যক্তি তার অন্ধত্বের উপর ধৈর্যধারণ করলে
জান্নাতি হবেঃ
হযরত আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন
: আল্লাহ বলেন, আমি যখন
আমার কোনো প্রিয় বান্দাকে তার দুটি প্রিয় অঙ্গ (চোখ দ্বারা) পরীক্ষা করি, আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করে তখন এর বিনিময়ে
আমি তাকে জান্নাত দান করি। -[বুখারি, কিতাবুল মারাদ্ব]
রুগী ব্যক্তি স্বীয় রোগের উপর ধৈর্যধারণকারী
জান্নাতি হবেঃ
হযরত আতা ইবন রাবাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বলেছেন : আমি কি তোমাকে একজন
জান্নাতি নারী দেখাব না? আমি বললাম
কেন নয়। তিনি এক মহিলার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন : গতকাল যে মহিলাটি, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল : যে আমি মৃগী রুগী, আর এ রোগে আক্রান্ত হলে আমার সতর খুলে
যায়। তাই আপনি কি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন যেন আল্লাহ আমাকে সুস্থ করেন? তিনি বললেন : যদি তুমি চাও তাহলে ধৈর্য ধর
আর এর বিনিময়ে তুমি জান্নাত লাভ করবে। আর যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার জন্য দো‘আ করি। তিনি তোমাকে সুস্থ করে দিবেন তখন ঐ
মহিলা বলল : আমি ধৈর্য ধারণ করব। কিন্তু সাথে এ আবেদনও করছি যে এ রোগে আক্রান্ত
হলে আমার সতর খুলে যায়। আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন যাতে আমার সতর না খুলে। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য এ দো‘আ করলেন। -[বুখারী, কিতাবুল মারদ্বা]
পিতা-মাতার খেদমতকারী জান্নাতি হবেঃ
হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ঐ ব্যক্তির নাক
ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, ঐ ব্যক্তির
নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, ঐ ব্যক্তির
নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, যে তার
পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে পেল তাদের কোন একজনকে বা উভয়কে অথচ তাদের সন্তুষ্টি
অর্জন করে জান্নাত লাভ করতে পারল না। -[মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসিলা]
অপর হাদিসে বর্ণিত- হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
পিতা-মাতা হচ্ছে, জান্নাতের
দরজা সমূহের মধ্যম দরজা। অতএব, তুমি ইচ্ছা করলে সেই দরজা নষ্ট কর বা সংরক্ষণ কর।
-[সুনানে তিরমিযি, হাদিস :
১৯০০]
কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে দূরকারী জান্নাতি হবেঃ
হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একটি গাছ মুসলমানদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল। তখন একব্যক্তি এসে তা
কেটে দিল। এর বিনিময়ে সে জান্নাত লাভ করল। -[মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসসিলা]
নবী, শহীদ, সিদ্দীক, মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে
মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতকারী পুরুষ এবং স্বামীর ভক্ত, অধিক সন্তান জন্মদানে কষ্ট সহ্যকারী এবং
স্বামীর নির্যাতনে ধৈর্য-ধারণকারিণী জান্নাতি হবেঃ হযরত কা‘ব ইবন ওজরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি কি জান্নাতি পুরুষদের কথা তোমাদেরকে
বলব না? নবী, শহীদ, সিদ্দীক, মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু, দূর থেকে স্বীয় মুসলিম ভাইকে আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দেখতে আসে এমন ব্যক্তি জান্নাতি। (তিনি আরও বলেন) আমি
কি তোমাদেরকে জান্নাতি মহিলাদের ব্যাপারে অবগত করাব না? স্বীয় স্বামী ভক্ত, অধিক সন্তান প্রসবে ধৈর্য-ধারণকারী, ঐ পবিত্রা নারী যে তার স্বামীর অত্যাচারে
ধৈর্যধারণ করে বলে যে, আমার হাত
তোমার হাতে, আমি ততক্ষণ
পর্যন্ত ক্ষান্ত হবো না যতক্ষণ না তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হও। -[তাবরানী, জামে আসসগীরঃ হাদিস নং-২৬০১]
হারাম-হালালের উপর বিশ্বাসকারী জান্নাতি হবেঃ
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি আমি ফরয সালাত আদায় করি।
রমযানে সিয়াম পালন করি শরীয়তে হালাল-কৃত বিষয়সমূহকে হালাল বলে জানি এবং শরীয়তে
হারাম-কৃত বিষয়সমূহকে হারাম বলে জানি। আর এর চেয়ে অধিক আর কোন কিছু না করি।
তাহলে আমি জান্নাত পাব? তিনি বললেন:
হ্যাঁ। -[মুসলিম, কিতাবুল
ঈমান]
বাচ্চাদের মৃত্যুর উপর ধৈর্য ধারণকারিণী জান্নাতি
হবেঃ
হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল আনসারী মহিলাকে লক্ষ্য করে
বললেন: তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করে আর সে তাতে সাওয়াবের আশা
নিয়ে ধৈর্যধারণ করে সে জান্নাতি হবে। তাদের মধ্যে এক মহিলা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি দুইজন মৃত্যুবরণ
করে? তিনি বললেন :
দুইজন মৃত্যুবরণ করলেও। -[মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসিলা]
আপনজনের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করাঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো প্রিয়তম
কিছু দুনিয়া থেকে তুলে নেই আর সে ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ব্যতীত অন্য
কোনো প্রতিদান নেই। -[বুখারী, হাদিস : ৬৪২৪ ও মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৯৩৯৩]
লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ” বেশি বেশি করে পাঠ করাঃ হযরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের খনি
সম্পর্কে অবগত করাব না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অবশ্যই অবগত করাবেন। তিনি বললেন :
লা-হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ (বলা)। -[ইবনে মাজাহ ও সুনান ইবনে মাজাহ]
যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহী” বেশি বেশি করে পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো
হবেঃ হযরত
জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি” (বড়ত্বের অধিকারী আল্লাহ তাঁর প্রশংসার
সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করছি) এ দো‘আ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো
হয়। -[সহীহ আল জামে আত-তিরমিযীঃ হাদিস নং-২৭৫৭]
অন্যায়ভাবে বা নির্যাতিত হয়ে যদি কোন ব্যক্তি নিহত
হয়, তাকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত দান করবেঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে
অন্যায়ভাবে নিহত হল সে জান্নাতি। -[নাসায়ী, হাদিস নং ৩/৩৮০৮]
যে নারী অনিচ্ছাকৃত ও অকালে গর্ভপাত হওয়াতে ধৈর্য
ধারণ করে, সে মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিয়ামতের দিন বাচ্চাটি তার মাকে টেনে
জান্নাতে নিয়ে যাবেঃ হযরত মু‘আয ইবন
জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ঐ সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ।
অনিচ্ছাকৃত গর্ভপাতের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চা, তার মায়ের নাভী ধরে টেনে টেনে জান্নাতে
নিয়ে যাবে। তবে এ শর্তে যে ঐ মহিলা সওয়াবের আশায় তাতে ধৈর্যধারণ করেছিল। -[ইবনে
মাজাহঃ হাদিস নং ১/১৩০৫]
ন্যায় বিচারকগণ জান্নাতে যাবে, পক্ষান্তরে যারা অন্যায় বিচার করে তারা
জাহান্নামে প্রবেশ করবেঃ হযরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দুইপ্রকারের বিচারক জাহান্নামী হবে। আর এক প্রকার জান্নাতি
হবে। ঐ বিচারক যে সত্যকে বুঝেছে এবং ঐ অনুযায়ী বিচার করেছে সে জান্নাতি হবে। আর
যে বিচারক সত্যকে বুঝেছে এবং জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে বিচার করেছে এবং ঐ বিচারক যে, কোন যাচাই বাচাই ব্যতীত বিচার করেছে সেও
জাহান্নামী হবে। -[ হাকেম, জামে আসসগীরঃ
হাদিস নং ৪১৭৮]
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাইয়ের অনপুস্থিতিতে তার
ইজ্জত রক্ষার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করল, সে জান্নাতি হবেঃ হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের অনুপস্থিতিতে তার অপমান থেকে তাকে
রক্ষা করল তার ব্যাপারে আল্লাহর দায়িত্ব হল যে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা।
-[আহমদ ও জামে
আসসগীরঃ হাদিস নং ৬১১৬]
যে ব্যক্তি কারো নিকট কখনও হাত পাতে না, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়ে জিম্মাদারি
দিবে যে, সে কারো
নিকট কখনো হাত পাতবে না আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব -[আবু দাউদঃ হাদিস
১/১৪৪৬]
রাগ দমনকারী ব্যক্তি জান্নাতি হবেঃ হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তুমি রাগ কর না তোমার জন্য জান্নাত।
-[তাবরানী, সহীহ আল জামে আসসগীরঃ
হাদিস নং-৭২৫১]
নিম্নোক্ত সাত ব্যক্তি জান্নাতি হবেঃ হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তাঁর আরশের
ছায়ার নীচে ছায়া দিবেন। ন্যায় বিচারক বাদশা, আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন যুবক, ঐ ব্যক্তি যার অন্তর একবার মসজিদ থেকে বের
হয়ে আসার পর আবার মসজিদে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে, যে দুইজন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্যেই একে অপরকে ভালবাসে এবং এ উদ্দেশ্যে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। ঐ
ব্যক্তি যে একা একা আল্লাহর স্মরণে অশ্রু প্রবাহিত করে, ঐ ব্যক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশের মহিলা
ব্যভিচারের জন্য আহ্বান করল আর সে তার উত্তরে বলল : আমি আল্লাহকে ভয় করি। ঐ
ব্যক্তি যে এমনভাবে দান করে যে তার বাম হাত জানে না যে তার ডান হাত কি দান করছে।
-[তিরমিযিঃ হাদিস নং
২/১৯৪৯]
যারা নিজের ক্রোধকে হজম করে, ক্ষমতা থাকা স্বত্বেও মানুষের কাছ থেকে
প্রতিশোধ না নিয়ে তাদের ক্ষমা করে দেয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ হযরত মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নিতে পরিপূর্ণভাবে সক্ষম ছিল, কিন্তু সে প্রতিশোধ না নিয়ে রাগকে দমন
করল, কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তাকে সমস্ত সৃষ্টি জীবের সামনে উপস্থিত করে, তাকে হুরে ‘ঈন (ডাগর নয়না জান্নাতী স্ত্রী) বাছাই
করার স্বাধীনতা দিবেন, তাদের মধ্যে
যাকে খুশি তাকে সে বিয়ে করবে। -[আহমদ ও সহীহ আল জামে আসসগীরঃ হাদিস নং
৬৩৯]
অহংকার, খিয়ানত, ঋণ থেকে মুক্ত হওয়াঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি অহংকার, খিয়ানত, ঋণ থেকে মুক্ত থাকে সে জান্নাতি হবে। -[তিরমিযীঃ হাদিস নং
২/১২৭৮]
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাঃ ইসলামের চুড়ান্ত আমল হল আল্লাহর পথে
জিহাদ। আল্লাহর মহব্বতে জান-মাল ওয়াকফ করাকে তিনি তার কাছে বিক্রয় বলে আখ্যায়িত
করেছেন এবং বিনিময় হিসাবে জান্নাত নির্ধারণ করেছেন। জান ও মাল কুরবানীর মাত্রা
অনুযায়ী পাঁচটি ধাপের পুরস্কার রয়েছে। যথা- আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি, গুনাহ মাফ, জান্নাতে আদন, পবিত্র বাসস্থান এবং দুনিয়ায় আল্লাহর
সাহায্য ও নিকট বিজয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
-নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জীবন ও
সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, হত্যা করে ও নিহত হয়। তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা
রয়েছে। নিজের ওয়াদা পালনের ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কে আছে? অতএব তোমরা তোমাদের সে কেনা-বেচার জন্য
আনন্দিত হও, যে
কেনা-বেচা তোমরা আল্লাহর সাথে করেছো। আর এটাই হল মহাসাফল্য। -(সূরা তওবা : ১১১)
তিনি আরও বলেনঃ হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন
একটি ব্যবসায়ের কথা বলে দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? (তা হল) ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান
আনবে এবং তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই
তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে! আল্লাহ
তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন, তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার
নিচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত, তোমাদেরকে প্রদান করবেন ‘জান্নাতে আদন’ এবং এর মাঝে পবিত্রতম বাসস্থান- বস্তুত এটাই
হল মহাসাফল্য। আর আল্লাহ তোমাদেরকে এমন একটি অনুগ্রহও দান করবেন, যা তোমরা পছন্দ করবে। তা হল আল্লাহর পক্ষ
থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। মুমিনদেরকে এ সুসংবাদ প্রদান করুন। -(সূরা সফ :
১০-১৩)
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিম মিল্লাতের কোন ব্যক্তি ক্ষণকালের জন্যও আল্লাহর
পথে জিহাদ করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। -(আবুদাউদ. তিরমিযী ও মুসনাদে
আহমাদ)
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর পথে বান্দার দুটি পা ধুলিধূসরিত হবে আবার তাকে
জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে- এমনটি কখনও হতে পারে না। -(বুখারী)
হযরত মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ করেছে
যতক্ষণ কোনো উটের দুধ দোহন করতে সময় লাগে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। -[তিরমিযি, হাদিস নং-২/১৩৫৩]
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব বর্ণনা করেন, হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ-কারীর উপমা হচ্ছে, দিবসে রোযা পালনকারী এবং রাত্রি জেগে
ইবাদত-কারী ব্যক্তির ন্যায়। আর কে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তা তিনি সম্যক অবগত আছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার পথে জিহাদকারী ব্যক্তির এ
দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার পথে জিহাদকারী ব্যক্তির এই দায়িত্ব নিয়েছেন
যে, হয় তাকে
শাহাদাৎ দান করবেন বা তাকে নিরাপদে তাকে গাজীর বেশে ফিরিয়ে আনবেন। -[সহীহ
আল-বুখারীঃ ২৬৩৫]
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ
করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর
কথাকে সত্য বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। অথবা তাকে জিহাদের
সাওয়াব ও গণীমত লাভে ধন্য করে গাজী হিসাবে ঘরে ফিরিয়ে আনেন’’। - [বুখারী ও মুসলিম]
আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে বিনিময়ে জান্নাত প্রদান
করা হবেঃ হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
: ‘‘যে ব্যক্তি
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করে, এর দরূন তাকে জান্নাতে দেয়া হবে’’। -[মুসনাদে আহমাদ]
একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, সালাত কায়েম, যাকাত আদায়, রমজানের সিয়াম পালন ও কবীরা গুনাহ বর্জন
করাঃ হযরত আবু রহম আস-সাময়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু আইয়ুব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যে ব্যক্তি
আল্লাহর নিকট এমনভাবে গমন করবে, সে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করেছে, তার সাথে কাউকে শরীক করে নি, তারই ইবাদত করছে, সালাত আদায় করছে, যাকাত আদায় করছে, রমজানের রোজা রাখছে এবং কবীরা গুণাহ হতে
বিরত থাকছে, তার জন্য
রয়েছে জান্নাত। সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস
করলেন, কবীরা গুনাহ
কি? তিনি উত্তর
দিলেন, আল্লাহর
সাথে কোন কিছুকে শরীক করা, অন্যায়ভাবে
কোন মুসলিমকে হত্যা করা এবং যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা। -[মুস্তাদরাকে হাকিমঃ হাদিস নং
২৯৪৩]
দরিদ্র মুসলমানদেরকে সাহায্য করাঃ হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে কোনো মুসলমান কোনো বিবস্ত্র
মুসলমানকে কাপড় পরিধান করাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বেহেশতের সবুজ কাপড় জোড়া
পরাবেন। আর যে কোনো মুসলমান কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে অন্ন দান করবে আল্লাহ্ তাকে
বেহেশতের ফল খাদ্যরূপে দান করবেন। আর যে মুসলমান কোনো মুসলমানকে পিপাসায় পানি পান
করাবে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে
কিয়ামতে মুখ বন্ধ করা বোতলের স্বচ্ছ পানি পান করাবেন। - [আবু দাউদ ও তিরমিযী]
খালেস অন্তরে আল্লাহকে স্মরণ ও খালেস অন্তরে আল্লাহকে
ভয় করাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত
। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কিয়ামতের পরে আল্লাহ্ বলবেন, ঐ সকল ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে
আনো, যারা খালেস
অন্তরে একবার হলেও আমাকে স্মরণ করেছে অথবা কোনো এক জায়গায় খালেস অন্তরে আমাকে
একবার হলেও ভয় করেছে। -[তিরমিযী ও বায়হাকী]
তওবা ও ইস্তিগফারের দোয়া পাঠ করাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
যে ব্যক্তি বলে-‘আসতাগফিরুল্লা-হাল্লাজী- লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়ালহাইয়ুলকাইয়ূ-মু
ওয়া আতূ-বু ইলাইহি’ (অর্থাৎ -
আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি আল্লাহর কাছে যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং আমি তার
কাছে তওবা করছি)-তার গোনাহ
সমূহ মাফ করে দেয়া হয়, এমনকি তা
জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করার মত গোনাহ হলেও। -(তিরমিযী : হাসান ও সহীহ)
সিয়াম পালন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করাঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সিয়াম পালন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -[সহীহ আল জামে, হাদিস: ৬২২৪]
মৃত্যুর সময় জীবনের সর্বশেষ কথা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলাঃ মৃত্যু পথযাত্রীকে তালকীন করা- হযরত আবু সাইদ খুদরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ এর তালকীন কর। -(মুসলিম)
অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার সর্বশেষ কালিমা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -[সহীহ আবু দাউদঃ হাদিস:
৩১১৬]
আল্লাহ তা'য়ালা বিশ্বের সমগ্র মানব জাতিকে এ মহাসত্য
উপলব্ধির মাধ্যমে ইহ-জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণ লাভ করার তৌফিক দান করুন! এ বিষয়ে
আরও বিস্তারিত জানার ও আমল করার তৌফিক দান করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময়
জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন!
No comments:
Post a Comment