Monday, November 10, 2014

দ্বীনি জ্ঞান অর্জন এবং এ পথে সাধনার ফজিলত


দ্বীনি জ্ঞান অর্জন এবং এ পথে সাধনার ফজিলত
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি, তার পরিবারবর্গ, বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।

আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে খিলাফাতের মর্যাদায় কেবলমাত্র তাঁরই গোলামী করার জন্য দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেন। মানব জাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে তিনি যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসূল (আ) এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেনতাঁরা সবাই পথভোলা মানুষদেরকে আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতের দিকে আহ্বান করেছেন, ইবাদাতের নিয়ম ও পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। তাই সঠিক পন্থায় আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত করার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর একান্ত অপরিহার্য্য ফরজ।

দ্বীনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মানব জাতির প্রতি মহান আল্লাহ তা’য়ালার অপার অনুগ্রহ। ইলমের মর্যাদার অন্যতম নিদর্শন হলো- তাঁর সর্বাধিক প্রিয় বান্দা নবী-রসূল (আ)-গণের প্রতি ইলম দানকে তিনি মহান অনুগ্রহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন- আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহান অনুগ্রহের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ  আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান{সূরা আন-নিসাঃ আয়াত : ১১৩}

অনুরূপভাবে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রতি আল্লাহ তায়ালার মহান অনুগ্রহ (হিকমত ও জ্ঞান) প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃআর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, আমি তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম এবং এভাবেই আমি ইহসানকারীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি - {সূরা ইউসুফঃ আয়াত নং ২২}

হযরত মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি তাঁর মহান অনুগ্রহ (হিকমত ও জ্ঞান) প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃআর মূসা যখন যৌবনে পদার্পণ করল এবং পরিণত বয়স্ক হলো, তখন আমি তাকে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম। আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। {সূরা আল-কাসাসঃ আয়াত : ১৪}

হযরত ঈসা ইবন মারইয়াম মাসীহ আলাইহিস সালামের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ প্রদান প্রসঙ্গে বলেনঃ হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার ওপর ও তোমার মাতার ওপর আমার নিআমত স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল -{সূরা আল-মায়িদাঃ আয়াত : ১১০}

আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে ইলমের মর্যাদা,  ইলমের বাহক ও ইলম সন্ধানীদের ফজিলত সম্পর্কে বহু আয়াত নাযিল হয়েছে। এর কয়েকটি নির্বাচিত আয়াত সকলের বিবেচনার জন্য নিম্নে পেশ করা হল।

ইলমুল ওয়াহি জ্ঞানীদেরকে বিনয়াবনত করেঃ মহান আল্লাহ তাআলা বলেন :নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব ! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’ {সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত : ১০৭-১০৯}

ইলম ও প্রজ্ঞা হল অন্তর দৃষ্টির আলোঃ মহান আল্লাহ তাআলা বলেন : তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে নি? তাহলে তাদের হত এমন হৃদয় যা দ্বারা তারা উপলব্ধি করতে পারত এবং এমন কান যা দ্বারা তারা শুনতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়। {সূরা আল-হজ্বঃ আয়াত : ৪৬}

জ্ঞানীগণই শুধু মহাগন্থ আল-কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করেঃ মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তি জানে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তা সত্য, সে কি তার মত, যে অন্ধ? বুদ্ধিমানরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে’{সূরা আর-রাদঃ আয়াত : ১৯}

ইলম মানুষের অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করেঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল’{সূরা ফাতিরঃ আয়াত : ২৮}

জ্ঞান হল সুস্পষ্ট নিদর্শনঃ আল্লাহ  বলেন : বরং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে তা সুস্পষ্ট নিদর্শন। আর যালিমরা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না-{সূরা আনকাবূতঃ আয়াত ৪৯}

ইলম বাহকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেঃ আল্লাহ তাআলা বলেন : তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন {সূরা মুজাদালাহঃ আয়াত : ১১}

ইলমের মাধ্যমে সংগ্রাম হল কঠোরতম জিহাদঃ আল্লাহ তাআলা বলেন :আর আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ককারী পাঠাতাম। সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি কুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম (জিহাদ) কর।’ {সূরা আল-ফুরকানঃ আয়াত : ৫১-৫২}

রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে হাদীস শরীফে ইলমের বাহক, ইলম সন্ধানী, ইলমের মাজলিস, ইলমের প্রচার, ইলম চর্চার সাহায্যকারী ও মহব্বতকারীদের ফজিলত প্রসংগে বহু হাদীস বর্নিত হয়েছে। এর কয়েকটি নির্বাচিত হাদীস সকলের বিবেচনার জন্য নিম্নে পেশ করা হল।

ইলম সন্ধানী ও ইলমের মাজলিসের ফজিলতঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। কোন একদল লোক যখন আল্লাহ তা'য়ালার ঘর সমূহের মধ্যে কোথাও একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ এবং পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখন তাদের উপর সাকিনা অবতীর্ণ হতে থাকে, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ তাদেরকে ঢেকে দেয়, ফিরিশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফিরিশতাদের সামনে তাদের উল্লেখ করে থাকেন। - (মুসলিম)

একই বিষয়েঃ আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। (মুসলিম) 

ইলমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কুরআন শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা প্রদানঃ হযরত উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে তা শিখায় -(বুখারী, তিরমিজী-২৮৪৩)

একই বিষয়েঃ হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয় আবদুর রহমান বলেন এ হাদীসই আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে তিনি উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর আমল থেকে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের আমল পর্যন্ত কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন -(বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজা, তিরমিজী- ২৮৪২ : হাসান ও সহীহ্)

উলামাগণ নবী-(আ)-গণের ওয়ারিসঃ হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসি করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তায় চলে আল্লাহ তাআলা এ কারণে তাকে জান্নাতের রাস্তাসমূহ থেকে এক রাস্তায় চালিয়ে দেন। [অর্থাৎ ইলম হাসিল করা তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়ে যায়] ফেরেশতাগণ তালেবে ইলমের সন্তুষ্টির জন্য আপন পাখা বিছিয়ে দেন। আরেমের জন্য আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুক এবং মাছ যা পানিতে রয়েছে সকলেই মাগফিরাতের দুআ করে। নিঃসন্দেহে আবেদের উপর আলেমের ফযীলত এরূপ যেরূপ পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। নিঃসন্দেহে উলামাগণ আম্বিয়া (আ)-গণের উত্তরাধিকারী। আর আম্বিয়াগণ দিনার ও দিরহাম এর উত্তারাধিকারী বানন না। তারাতো ইলমের উত্তরাধিকারী বানান। অতএব যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসিল করল, সে পরিপূর্ণ অংশ লাভ করল। -[সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং-৩৬৪১, মুসনাদুশ শামীনঃ হাদীস নং-১২৩১, কানযুল উম্মালঃ হাদীস নং-২৮৭৪৬]

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত কায়স ইবন কাছীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনা থেকে এক ব্যক্তি দামেশকে আবূ দারদা রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে এলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে ভাই, কোন জিনিস এখানে তোমার আগমন ঘটিয়েছে? তিনি বললেন : একটি হাদীস এখানে আমাকে এনেছে, যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন বলে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে। তিনি জানতে চাইলেন : তুমি কি অন্য কোনো প্রয়োজনে আসো নি ?! তিনি বললেন, না। জানতে চাইলেন : তুমি কি বাণিজ্যের জন্যে আসো নি?! উত্তর দিলেন, জী না। তিনি জানালেন, আমি কেবল এ হাদীস শিখতেই আপনার কাছে এসেছি। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর তালিবুল ইলমকে খুশি করতে ফেরেশতারা তাঁদের ডানা বিছিয়ে দেন। আলেমের জন্য আসমান ও যমীনের সবাই মাগফিরাত কামনা করতে থাকে। এমনকি পানির মাছগুলো পর্যন্ত। আর আবেদের ওপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব সকল তারকার ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো নিশ্চয় আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী। তবে নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তাঁরা কেবল ইলমের ওয়ারিশ বানান। অতএব যে তা গ্রহণ করে সে পূর্ণ অংশই পায়’ -[তিরমিযী : ২৬৮২]

আবেদের উপর আলেমের ফযীলতঃ হযরত আবু উমামাহ বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে দুই ব্যক্তির আলোচনা করা হল। তন্মধ্যে একজন আবেদ আরেকজন আলেম ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন : আলেমের ফযীলত আবেদের উপর এমন যেমন আমার ফযীলত তোমাদের মধ্য হতে একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর। তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, যারা লোকদের ভাল কথা শিক্ষা দেয়, তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর ফেরেশতাগণ আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুক, এমন কি পিঁপড়া আপন গর্তে এবং মাছ রহমতের দুআ করে। -[সুনানে তিরমিজীঃ হাদীস নং-২৬৮৫, জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনানঃ হাদীস নং-১১০৬২, আলমুসনাদুল জামেঃ হাদীস নং-৫৩২২]

ইলম সন্ধানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বীনের কথা শ্রবন করে তৃপ্তি লাভ করেঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : মুমিন ব্যক্তি কখনোই দ্বীনের কথা শ্রবন করে তৃপ্তি লাভ করতে পারে না। তার কেবল শুনতেই ইচ্ছে করবে যে পর্যন্ত না তার পরিণতি জান্নাত হয়ে যাবে। অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দ্বীনের কথা শুনতে ইচ্ছে করবে। -[তিরমিযী, মিশকাত-২১০]

আলেমের জন্য সমস্ত মাখলুক ক্ষমা প্রার্থনা করেঃ হযরত আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইলমের অধিকারী ব্যক্তির জন্য সব কিছুই মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত’ [সহীহ মুসনাদ আবী ইআলা : ২/২৬০; সহীহ জামেসগীর : ৩৭৫৩ কানযুল উম্মাল : ২৮৭৩৭]

ইলম সন্ধানীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াসিয়াতঃ হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :অচিরে তোমাদের সমীপে ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে নানা দল আসবে। তোমরা যখন তাদের দেখবে, বলবে, স্বাগতম স্বাগতম হে ওই সম্প্রদায়,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। অতপর তোমরা তাদের ইলম শেখাবে। [ইবন মাজা : ২৪৭, হাসান সূত্রে বর্ণিত]

ইলমের চর্চায় সম্পৃক্ত হবার মর্যাদাঃ হযরত আলী ইবন আবী তালিব রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘ইলমের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম দিক হলো যে-ই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় সে এ কারণে আনন্দিত হয়। এমনকি সে যদি ইলমের অধিকারীও না হয়। পক্ষান্তরে যে ইলম থেকে সরে যায় এবং অজ্ঞতায় জড়িয়ে পড়ে তা তার জন্য কষ্টকর মনে হয় এবং এ কারণে সে মর্মপীড়া অনুভব করে। এমনকি সে যদি অজ্ঞও হয়। - [জামেউ বায়ানিল ইলম : ১/৫৯]

ইলম চর্চার অনুপম দৃষ্টান্তঃ হযরত আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা জমিনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সবজি উৎপন্ন করে। এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তাআলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করেএই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়েত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়েতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি (বুখারী ও মুসলিম)

কল্যাণপ্রাপ্তগণই দ্বীনি ইলম লাভ করেঃ হযরত মুআবিয়া ইবন সুফিয়ান রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ যার কল্যাণ চান তিনি তাকে দীন বিষয়ে গভীর ইলম দান করেন।’ - [বুখারী : ৭৩১২; মুসলিম : ২৪৩৯]

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ্ যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীন ইসলামের জ্ঞান দান করেন। আমি বিতরণ করি আর আল্লা্‌হ দান করেনযদি এ উম্মত সর্বদা আল্লাহর আদেশের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাহলে তাদের বিরোধিতাকারীরা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না -[সহীহ বুখারী]

জ্ঞান সাধক আল্লাহর পথে মুজাহিদের মর্যাদাসম্পন্নঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে কেবল কোনো কল্যাণ (ইলম) শেখার বা শেখাবার অভিপ্রায়ে আসবে, সে আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মর্যাদার অধিকারী। আর যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আসবে, সে ওই ব্যক্তির অনুরূপ যে অন্যের সম্পদ পরিদর্শনে আসে -[ইবন মাজা : ২২৭]

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয়। (ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)

ইলম হেফাজত ও শিক্ষাদানের ফজিলতঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছন :কেবল দুই ব্যক্তিকে হিংসা করার অনুমতি রয়েছে : ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন। অতপর তাকে সে সম্পদ হকের পথে ব্যয় করতে ন্যস্ত করেছেন। আর ওই ব্যক্তি যাকে তিনি হিকমাহ বা ইলম দান করেছেন। ফলে সে তা দিয়ে বিচার করে এবং তার শিক্ষা দেয়। -[বুখারী : ৭৩]

অন্য বর্ণনাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি : আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন হাদীস শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে, সেভাবেই তা অপরের নিকট পৌঁছিয়েছে কেননা, অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয়, সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষণাবেক্ষনকারী বা জ্ঞানী হয়ে থাকে - (সূনানে তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)

ইবাদাতের চেয়ে ইলমের মর্যাদা বেশিঃ হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ আমার প্রতি ওহী করেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনে কোনো রাস্তা অবলম্বন করে, আমি তার জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেই। আর আমি যার দুই প্রিয়তমকে (চক্ষুদ্বয়) কেড়ে নেই, এর বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি কল্যাণের ইলম আহরণে আধিক্য ইবাদতেও আধিক্যের হেতু। দীনের সেরা বিষয় হলো আল্লাহর ভয়।’ [বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৫৩৬৭, সহীহ সনদে বর্ণিত]

আলেম  তালেবে এলেম-এর ফজিলতঃ  হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :মনে রেখ, নিশ্চয়ই  দুনিয়া  অভিশপ্ত। অভিশপ্ত এতে যা আছে তা-ও। শুধু আল্লাহ তাআলার জিকির ও জিকিরের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এবং আলেম  তালেবে এলেম ছাড়া।’ -[তিরমিযী : ২৩২২; ইবন মাজা : ৪১০২]

মৃত্যুর পরও আলেমের আমলনামা জারী থাকেঃ আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি উৎস থেকে তা অব্যাহত থাকে - সাদাকায়ে জারিয়া অথবা ইলম (জ্ঞান সম্পদ) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা সুসন্তান যে তার জন্য নেক দোআ করতে থাকে।” -[মুসলিম : ৪৩১০]

ইলম ও নিয়্যাতের কারনে প্রতিদান বাড়েঃ  হযরত কাবশা আনমারী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকদের ব্যাপারে আমি কসম করছি এবং তোমাদের কাছে একটি হাদীস বলছি, তোমরা তা সংরক্ষণ করো।তিনি বলেন, দান-সদকায় কারো সম্পদ কমে না, কোনো ব্যক্তির প্রতি অত্যাচার করা হলে সে যদি তাতে ধৈর্য ধরে তবে আল্লাহ তার সম্মান বৃদ্ধি করে দেন এবং কোনো বান্দা (মানুষের কাছে) প্রার্থনা বা চাওয়ার দরজা খুললে আল্লাহ তার জন্য অভাবের দরজা উন্মুক্ত করে দেন।’ (বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা কিংবা) অনুরূপ বাক্য বলেছেন। আর আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস বলব তোমরা তা স্মরণ রেখ। তিনি বলেন, ‘দুনিয়া চার প্রকার লোকের জন্য; (১) সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ মাল ও জ্ঞান দান করেছেন ফলে সে এতে তার প্রভুকে ভয় করছে এবং তার আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে আর তার ব্যাপারে আল্লাহর হক জানছে, এ হলো সর্বোত্তম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত (২) সেই বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু মাল দেন নি। সে হলো সঠিক নিয়তের লোক। সে বলে, যদি আমার টাকা-পয়সা থাকতো তাহলে অমুক ব্যাক্তির মত কাজ করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। এদের দুজনের নেকী হবে সমান। (৩) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ টাকা-পয়সা দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেন নি। সে না জেনেই তার টাকা-পয়সা খরচ করছে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হকও সে জানে না। সে হলো সবচে নিকৃষ্ট অবস্থানে। (৪) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ মালও দেন নি জ্ঞানও দেন নি, সে বলে আমার টাকা পয়সা থাকলে অমুকের মতই (খারাপ কাজ) করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। এরা দুজনই গুনাহর দিক থেকে সমান।’ [তিরমিযী : ২৪৯৫]


বিপর্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর দ্বীন পূণর্র্জীবিতকারী উলামাগণের ফজিলতঃ  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দ্বীন ইসলাম তো অপরিচিত অবস্থায় যাত্রা শুরু করেছিল এবং অচিরেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সুসংবাদ সেই অপরিচিতদের জন্য (তিরমিযী-২৫৬৬ : হাসান ও সহীহ) তাদের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছে- যারা আমার ছুন্নাহ মানুষের দ্বারা বিপর্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ইসলাহ বা পূণর্র্জীবিত করে। (তিরমিজী-২৫৬৭)

বিপর্যয়ের সময় ছুন্নাতের ইলমী চর্চা ও লালনকারী উলামগণের ফজিলতঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় যে আমার ছুন্নাতকে আঁকড়ে থাকবে তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব- (বায়হাকী)

রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে দুনিয়া কিভাবে আলেম শুন্য হবে, আলিম নামধারীরা কিভাবে ফিতনা ছড়াবে, দ্বীনি ইলম গোপন করা, খেয়াল-খুশিমত দ্বীনের ব্যাখ্যা দান, পার্থিব স্বার্থে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন ও আমলবিহীন উপদেশ দানের ভয়াবহ পরিনাম সম্পর্কে উলামাগণকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।  এ প্রসংগে বহু হাদীস বর্নিত হয়েছে। এর কয়েকটি নির্বাচিত হাদীস সকলের বিবেচনার জন্য নিম্নে পেশ করা হল।

ইলম চর্চার অভাবে দুনিয়া আলেম শুন্য হবেঃ হযরতআব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারী ও মুসলিম)

ফিতনা সৃষ্টিকারী আলেমগণ আসমানের নিচে বিচরণকারী সর্বনিকৃষ্ট জীবঃ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ''আমি অচিরেই লোকদের উপর এমন একটি সময় আসার আশংকা করছি, যখন কেবলমাত্র নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই বাকি থাকবে না এবং কুরআনের লিখিত রূপটি ছাড়া তার বাস্তবায়ন থাকবে নামসজিদগুলো চাকচিক্যে ভরপুর হলেও মানুষ হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে সময়কার আলেমরা হবে আসমানের নিচে বিচরণকারী সর্বনিকৃষ্ট জীব তাদের থেকেই বিভিন্ন ফিতনা ছড়াবে এবং তারা নিজেরাও সেই ফিতনায় আবর্তিত হবে'' -(সুনানে বায়হাকী)

দ্বীনি ইলম গোপন করার ভয়াবহ পরিনামঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হবে। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান) 

মনের খেয়ালমত দ্বীনি ইলম ব্যাখ্যার ভয়াবহ পরিনামঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নিশ্চিতভাবে যা তোমাদের জানা আছে তা ছাড়া আমার পক্ষ থেকে হাদীস বর্ণনা থেকে তোমরা বিরত থাকবেকারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামকে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিলআর যে ব্যক্তি খেয়াল খুশীমত কুরআন সম্পর্কে কোন কথা বলে, সেও যেন জাহান্নামকে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিল। -(তিরমিযী-২৮৮৬: হাসান, মুসনাদে আহমাদ)

পার্থিব স্বার্থে দ্বীনি জ্ঞান অর্জণের ভয়াবহ পরিনামঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না। -(আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)

উপদেশদাতা আলিম ইলম অনুযায়ী নিজে আমল না করলে তার ভয়াবহ পরিনামঃ হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, তার পেটের নাড়িভুরিগুলো ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে সে গাধার মত ঘুরতে থাকবে। গাধা যেমন চরকার পাশে ঘুরে থাকে। জাহান্নামের অধিবাসীরা তাকে দেখার জন্য জড়ো হবে। তারা তাকে বলবে, এই! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ কাজের আদেশ করতে না আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে না? সে বলবে: হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু তা নিজে করতাম না। আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজে তাতে লিপ্ত হতাম। -(বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিম হিসাবে আমাদের দায়িত্বঃ হযরত আবু বাকারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “তুমি হয়ত আলেম হও অথবা তালেবে এলেম হও অথবা মনযোগ সহকারে এলেম শ্রবণকারী হও অথবা এলম আলেমদের মুহাব্বাতকারী হও(এই চার ব্যতীত) পঞ্চম প্রকার হয়ো না, নতুবা ধ্বংস হয়ে যাবেপঞ্চম প্রকার হলো এই যে, তুমি এলম আলেমদের সাথে শত্রুতা পোষণ কর-{বাইহাকীঃ ১৫৭৯, আল মু'জামুল আওসাতঃ ৫৩১৩,  মুসনাদ বাজ্জারঃ ৩০৮৯, হুলিয়াতুল আউলিয়াঃ ১০৬৩৬ আল মু'জামুল সাগীরঃ ৭৮৮}

অতএব আমরা সবাই দ্বীনি মক্তবের ছাত্র হব। আজীবনের জন্য দ্বীনি মক্তবের ছাত্র হব। মাসজিদে-মাসজিদে মহল্লায়-মহল্লায় দ্বীনি তালীমের মক্তব গড়ব। মক্তবে আমরা সহীহ তিলাওয়াতসহ পরিপূর্ণ দ্বীন শিখব। সাহাবা (রা)-গণের ন্যায় জীবন গড়ার কৌশল শিখব। দ্বীন ইসলামের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর মহান দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! এবং তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন


No comments:

Post a Comment