Saturday, August 2, 2014

ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের বুনিয়াদ তালীমুল কুরআন মক্তব


ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের বুনিয়াদ তালীমুল কুরআন মক্তব

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীন। দুরদ ও সালাম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) তাঁর বান্দা ও রসুল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি মুত্তাকীনদের জন্য।

যুগে যুগে মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও ইসলামের হিফাজতের লক্ষ্যে উম্মাহর সম্মানিত উলামাগণ দারস বা মক্তব ভিত্তিক কঠোর মেহনত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় হযরত মাওলানা হাফেজ্জী হুজুর (র) দ্বীনের মহান খেদমতের জন্য শরিয়াত ও তরিকাত উভয় লাইনে আজীবন সাধনা করার পরও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও ইসলামের হেফাজতসহ ব্যাপক ইসলাহের লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে তাওবাহ-এর আহবান জানালেন। এই মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের কর্মসূচি হিসাবে তিনি ঘোষণা করলেন : বাংলাদেশের ৬৮০০০ গ্রামে ৬৮০০০ মক্তব কায়েম করতে হবে।

মুসলিম উম্মাহর ঈমান ও ইসলামের হেফাজতসহ ব্যাপক ইসলাহের লক্ষ্যে যারা মনে-প্রাণে আগ্রহী এবং ময়দানে কর্মরত তাদেরকে অবশ্যই হাফেজ্জী হুজুরের এই মহান কর্মসুচিকে উপলব্ধি করতে হবে, যার যার নিজস্ব পরিমন্ডলে এর মূল্যায়ন করতে হবে এবং বাংলাদেশের ৬৮০০০ গ্রামে ৬৮০০০ মক্তব কায়েম করার জন্য বাস্তবে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে হয়ত এ দেশের মুসলিমদের ঈমান ও ইসলামের হেফাজত সম্ভব হবে। এটাই ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের স্থায়ী বুনিয়াদি কর্মসূচি।

বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের জন্য যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদেরকে অবশ্যই মাসজিদে-মাসজিদে,মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-গ্রামে দ্বীনি মক্তব কায়েম করতে হবে। মক্তব শিশুদের জন্যই নয়, বরং বয়স্ক মক্তব ও মহিলা মক্তবও কায়েম করতে হবে। ঈমান ও ইসলামের হেফাজতের সব কর্মীদের জন প্রতি একটি করে দ্বীনি মক্তব গড়ে তুলতে হবে। বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে মুসলমানদের দুর্দিনে এধরণের দ্বীনি মক্তব ঈমান ও ইসলামের হেফাজতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। 

দেশের ইমাম, আলিম, মুদাররিস, মুয়াল্লিম, মুবাল্লিগ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় প্রশিক্ষক, বিভিন্ন দ্বীনি আন্দোলনের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ সকল দ্বীন দরদী ভাইদেরকে দল-মত নির্বিশেষ দ্বীনি মক্তব কায়েমের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। সকল প্রকার ফতোয়াবাজী, ফিতনাবাজী, দলবাজী, ফিরকাবাজী, বিতর্ক-বহাস পরিহার করে কুরআনের মক্তব ভিত্তিক ইখতিলাফসহ দ্বীনি ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখবেন! বিতর্ক-বহাস ঐক্যের বদলে বিভক্তি ও দুরত্বই সৃষ্টি করে।

বর্তমানে বিভিন্ন মাদ্রাসায় খতমে বুখারীর দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যারা দাওরায়ে হাদীসের সনদ গ্রহণ করছেন তারা সম্মানিত শায়খুল হাদীসগণের নিকট থেকে জীবনের পথ-পরিক্রমার চুড়ান্ত নসিহত পেয়ে থাকেন। এর সাথে একটি ক্ষুদ্র পরামর্শ যুক্ত করার লক্ষ্যে সবার বিবেচনার জন্য পেশ করা হল-আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় অন্তত একটি করে দ্বীনি মক্তব কায়েম করব।

সারা দেশের গ্রামে-গঞ্জে যে সব ওয়াজ মাহফিল ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সে সব মাহফিলে উপস্থিত লোকদেরকে সহীহ তিলাওয়াত শিক্ষা করা, নিয়মিত সালাত আদায় করা, খাস পর্দা বজায় রাখা, পারস্পরিক হকসমূহ হেফাজত করা, হালাল পথে আয়-রোজগার করা, সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গঠন ও গোনাহ থেকে বেচে থাকার ব্যপারে মৌলিক নসিহত পেশ করতে হবে।

 
আল্লাহর মহাণ দরবারে আমাদের অংগীকার হবেঃ আমরা সবাই আল-কুরআনের ছাত্র হব। আজীবনের জন্য আল-কুরআনের ছাত্র হব। মাসজিদে-মাসজিদে মহল্লায়-মহল্লায় আল-কুরআনের মক্তব গড়ব। মক্তবে সহীহ তিলাওয়াতসহ পরিপূর্ণ দ্বীন শিখব। সাহাবাদের ন্যায় জীবন গড়ার কৌশল শিখব। কুরআনের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব। 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রা)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন এবং তাঁদের জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন। আ-মী-ন!

No comments:

Post a Comment