তালীমুল
কুরআন মক্তবের মুয়াল্লিমগণের বৈশিষ্ট্য ও দৈনন্দিন কাজ
সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ
ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল
আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা
আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ
পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
যারা মহান
দ্বীনের খেদমতের লক্ষ্যে মুয়াল্লিম হিসাবে স্বীয় জীবন, সম্পদ, যোগ্যতা, দক্ষতা ও
অভজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান তাদেরকে অবশ্য আল্লাহর দ্বীনের কাজকে জীবনের সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে গ্রহন করতে হবে। অতঃপর তাদের কতিপয় বৈশিষ্ট ও গুণাবলী
অর্জন করতে হবে।
১) মুয়াল্লিমগণের
বৈশিষ্ট্য : মুয়াল্লিমগণ হবেন- আল্লাহর খাঁটি বন্ধু, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রকৃত ওয়ারিস, সাহাবা (রা)-গণের মডেল, মহল্লাবাসীর শিক্ষক ও পরস্পরের
বন্ধু- যাকে দেখে সবাই দ্বীন সম্পর্কে শিখতে, আমল করতে ও তাকওয়া
ভিত্তিক জীবনধারা গড়ে তুলতে পারেন।
২) মুয়াল্লিম
এর বাইয়াত : রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ারিস হিসাবে
দায়িত্ব পালনের জন্য মুয়াল্লিমগণ ইসলামের জামাতী জিন্দেগীর ছুন্নাহ মোতাবেক শায়েখের
হাতে বাইয়াত নিবেন এবং নবুওয়াতের নমুনায় মক্তব ভিত্তিক দ্বীনের বুনিয়াদী কেন্দ্র গড়ে
তোলার জন্য ইযাযত নিবেন।
৩) নবুওয়াতী
মিশনের কাজ : প্রত্যেক মুয়াল্লিম কমপক্ষে ১টি মক্তব ভিত্তিক দ্বীনি কেন্দ্র
কায়েম করে নবুওয়াতী মিশনের জিম্মাদারী কাজ- দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তারবিয়াত, তাযকিয়া বা
পরিশুদ্ধি, সামাজিক কল্যাণ ও মানবতার কল্যাণ ইত্যাদি নবুওয়াতের
নমুনায় সম্পাদনের চেষ্টা করবেন।
৪) দ্বীনের
বুনিয়াদী কেন্দ্র : মুয়াল্লিমগণ কর্মস্থল, বর্তমান বাসস্থান, স্থায়ী ঠিকানা, নিকটাত্মীয় ও বন্ধুমহলসহ সম্ভাব্য সকল ক্ষেেত্র এধরণের মক্তব ভিত্তিক দ্বীনি
কেন্দ্র কায়েম করে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ারিস হিসাবে নবুওয়াতী
মিশনের কার্যক্রম সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
৫) মুয়াল্লিম
এর মুল কাজ : মুয়াল্লিমগনের মুল কাজ হল- (১) কুরআন ও ছুন্নাহ মোতাবেক জীবন
গঠন করা (২) তাফসীর, হাদীস ও দ্বীনি বইপত্র অধ্যয়ন, (৩) মক্তব কায়েম ও তা’লীম পরিচালনা করা, (৪ ) মক্তবে পাঠাগার গড়ে তোলা (৫) নিয়মিত দাওয়াতী কাজ করা, (৬) মাহফিলসমূহে হাজির থাকা, (৭) নিয়মিত আর্থিক কুরবানী
করা, (৮) পারিবারিক তা’লীমের ব্যবস্থা করা,
(৯) সকাল- সন্ধ্যার সবক আদায় করা ও (১০) নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করা।
৬) মুয়াল্লিমগণের
মুল দায়িত্ব : আল্লাহর দ্বীনের কাজকে মুয়াল্লিমগণ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
জিম্মাদারী দায়িত্ব হিসাবে হিসাবে গ্রহন করবেন। মুল দায়িত্ব হল : তাকওয়া ভিত্তিক (১)
আত্মশুদ্ধি, (২) পরিবারিক পরিশুদ্ধি, (৩) সামাজিক পরিশুদ্ধি,
(৪) জাতীয় জীবনের পরিশুদ্ধি ও (৫) উম্মাহর পরিশুদ্ধি।
৭) আত্ম-সংশোধন
: আল্লাহ তা’য়ালার সাথে গভীর মহব্বত সৃষ্টি
করার জন্য মুয়াল্লিমগণ সর্বদা ফরজ, ওয়াজিব ও ছুন্নাতের উপর নিয়মিত
আমল করবেন। শায়েখের পরামর্শ মোতাবেক কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া-জিকির-ইস্তিগফার,
দুরূদ পাঠ, দোয়ায়ে মাসনূনের আমল, নফল নামাজ, নফল রোজা, খিদমাতে খালক,
ইতিকাফ ও অজিফা আদায় করবেন। শায়েখের সোহবাত, বাইয়াত,
ইতা’য়াত, মুরাকাবা ও মুজাহাদা
ভিত্তিক আজীবন সাধনা করবেন।
৮) পরিবার
সংশোধন : মুয়াল্লিমগণ স্বীয় পরিবারকে সাহাবাগণের পরিবারের ন্যায় পরিশুদ্ধ
করার জন্য দৈনিক পারিবারিক তা’লীম, নিয়মিত নসিহত,
ছুন্নাহ ভিত্তিক আমলের অভ্যাস, পারিবারিক পাঠাগার,
তিলাওয়াত ও মাসনূন দোয়ার চর্চা, নৈশ ইবাদাত ও পারিবারিক
মাহফিল এর মাধ্যমে সাধনা করবেন।
৯) সমাজ
সংশোধন : মহল্লাবাসীদেরকে খাঁটি মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে সমাজ
সংশোধিত হবে। এ জন্য মুয়াল্লিমগন মক্তব কায়েম করে মহল্লাবাসীদেরকে নিয়মিত দ্বীনি তা’লীমের আওতায় আনার চেষ্টা করবেন এবং মহল্লাবাসীদেরকে তাকওয়ান মুসলিম হিসাবে
গড়ার চেষ্টা করবেন।
১০) জাতীয়
সংশোধন : মুয়াল্লিমগণ সোহবাত, নসিহত, তা’লীম, তারবিয়াত ও তাযকিয়ার মাধ্যমে
শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নতুন নতুন মুয়াল্লিম তৈরী করবেন এবং নতুন নতুন মক্তব গঠনের
উদ্যোগ নিবেন। নও-মুসলিম ভাইদেরকেও নিজ নিজ সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে দাওয়াতে
দ্বীনের কাজে লাগাবেন। এভাবে মক্তব ভিত্তিক সংশোধনী কার্যক্রমকে জাতীয় জীবনের সর্বত্র
ছড়িয়ে দিবেন।
১১) উম্মাহর
সংশোধন : উম্মাহর সংশোধনের জন্য মুয়াল্লিমগণ আল্লাহওয়ালা -গণের সাথে
ভক্তিপূর্ন মহব্বত রাখবেন। সমস্ত ইসলামী ব্যাক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান ও দলের দ্বীনি কাজসমূহ নিজের কাজ মনে করবেন। কখনও কারও ত্রুটির
নগ্ন সমালোচনা, বহাস, ফতোয়াবাজী করবেন না।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও দল-মত নির্বিশেষে সমগ্র মহল্লাবাসীদের সাথে ইনসাফপূর্ণ, উত্তম ও শিক্ষনীয় আচরণ করবেন।
১২) নিয়মিত
অর্থদান : মুয়াল্লিমগণ মক্তবের দৈনন্দিন কাজের খরচ মিটানোর জন্য নিয়মিত
সাধ্যানুযায়ী অর্থ প্রদান করবেন। মুয়াল্লিমগণ যখনই মাহফিলে আসবেন, তখনই খরচে শরীক হওয়ার জন্য সাধ্যানুযায়ী দানের জন্য আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে
আসবেন।
১৩) সমাজ
কল্যাণ : দারিদ্র বিমোচনের জন্য মুয়াল্লিমগণ অনুদান ও জাকাত সংগ্রহ করে
সল্পপুঁজির কর্মসংস্থান, শিক্ষাবৃত্তি, চিকিৎসা
সাহায্য, মৃতের দাফন-কাফন ইত্যাদি বিবিধ সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে
নিয়মিত অংশ গ্রহন করবেন।
১৪) তা’লীম ও তারবিয়াত : মুয়াল্লিমগনকে কতিপয় সুনির্দিষ্ট তা’লীমের উপর কায়েম থাকতে হবে। যথা : মক্তবে ও নিজ পরিবারে- দৈনিক তা’লীম, মহল্লায়/ বুনিয়াদী মারকাজে-সাপ্তাহিক তা’লীম, মডেল মারকাজে- মাসিক ইজতিমা বা মাহফিল, অঞ্চলে- ষান্মাসিক
মাহফিল এবং কেন্দ্রে- বার্ষিক মাহফিল।
১৫) সোহবাত
ও ইতায়াত : আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য শায়েখের সোহবাত ও ইতায়াত অতীব জরুরী।
দায়িত্বশীল মুয়াল্লিম- সপ্তাহে ১ বার, সাধারণ মুয়াল্লিম- মাসে
১বার, দুরবর্তী মুয়াল্লিম- বছরে ২বার শায়েখের সাথে সাক্ষাৎ করে
সবক নবায়ন করবেন এবং সুযোগমত শায়েখের সাথে ইতিকাফে যোগ দিবেন।
আল্লাহ আমাদেরকে
তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন এবং উম্মাহর উপর অর্পিত দায়িত্ব নবুওয়াতের নমুনায় পালন
করার তৌফিক দান করুন! আমীন!
No comments:
Post a Comment