Tuesday, March 31, 2015

মুসলিম উম্মাহর ধারাবাহিক পরিণাম


মুসলিম উম্মাহর ধারাবাহিক পরিণাম
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, তার পরিবারবর্গ, বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।

বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মুসলিম উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়ের মুল কারণ হল আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ ছেড়ে দিয়ে নিজেদের মনগড়া পন্থার অনুসরণ ও বিজাতীয় অনুকরণ আর আনুসাংগিক কারণ হল খিলাফাতের বিলুপ্তি, পরকালের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়া, দুনিয়ার লোভ-লালসা, আখিরাতের প্রতি উদাসীনতা, সম্পদের মোহ, মৃত্যুভীতি, পারস্পরিক বিরোধ ইত্যাদি। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানা থেকে কিয়ামত পর্যন্ত উম্মাহর ধারাবাহিক পরিণতির বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদীস গন্থসমূহে বহু মূল্যবান বানী লিপিবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্য থেকে বাছাইকৃত কতিপয় আয়াত ও হাদীস সবার বিবেচনা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পেশ করা হল।

হযরত হুজায়ফা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে (নবুওয়াতের যুগ), যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে (খুলাফায়ে রাশিদিনের যুগ) এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব (রাজতন্ত্র) প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব ( স্বৈরতন্ত্র) কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে। তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর পুনরায় নবুওয়াতের নমুনায় খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন" -(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)

হযরত আবু উবাইদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং হযরত মু'আজ বিন জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাহের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাহের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম, ব্যভিচার এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে"। -(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি : ৫/১৬)

খেলাফাতের সময়সীমা হল ত্রিশ বছরঃ হযরত সাফীনা (রা.)  থেকে বর্ণিত  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের খেলাফাতের সময়সীমা হল ত্রিশ বছর, তার পর খেলাফাত শেষ হয়ে বাদশাদের যমানা আসবেহযরত সাফীনা (রা.) বলেন, হযরত আবু বকর, ওমর, উসমান ও আলি (রা.) এর খেলাফাতের যমানা হিসাব করে দেখুনতা হিসাব করলে ত্রিশ বছর পাওয়া যায়হযরত সাইদ (রা.) হযরত সাফীনা (রা.) কে বলেন, বনী-উমাইয়ারা মনে করে তারাই খলীফা তখন তিনি বললেন তারা মিত্থ্যুক, তারা খলীফা নয়, তারা বাদশাহ বরং নিকৃষ্টতম বাদশাহ। -(তিরমিজী শরীফ ২খ. পৃ. ৪৭)
 
সততার যামানা হল রাসূলুল্লাহ-এর যামানা থেকে তাবে-তাবেয়ীনগণের যামানা পর্যন্তঃ হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "আমার সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, আমার যুগের উম্মত। (সাহাবাগণ) অতঃপর শ্রেষ্ঠ তাঁরা, যারা সাহাবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে। (তাবেয়ীগণ) অতঃপর শ্রেষ্ঠ উম্মত তাঁরা, যারা তাবেয়ীগণের সাঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবে (তাবে-তাবেয়ীনগণ)। অতঃপর এমন জনগোষ্ঠির আগমন ঘটবে যারা সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহণ করার উপযুক্ত হবে না, আমাদের জন্য বিশ্বস্ত হবে না, অঙ্গীকার রক্ষা করবে না। এক কথায় তাদের মধ্যে কেবল অসৎ ও অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণই বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকবে। -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। তারপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, এরপর নিকটবর্তী যুগের লোকেরা। হযরত ইমরান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি বলতে পারছি না, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যুগের) পরে দুই যুগের কথা বলছিলেন, না তিন যুগের কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের পর এমন লোকদের আগমন ঘটবে, যারা খিয়ানত করবে, আমানতদারী রক্ষা করবে না। সাক্ষ্য দিতে না ডাকলেও তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা মান্নত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে, না। তাদের মধ্যে মেদ বৃদ্ধি পাবে। - (সহিহ বুখারী : হাদিস ৮১৯)
 
রাজতন্ত্র বা বাদশাহী যামানাঃ হাদীসে বর্ণিত ফিলাফাতের সময়সীমা পার হওয়ার পরই রাজতন্ত্র বা বাদশাহী যামানা শুরু হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে বাদশাহ যামানার মধ্যে বিভিন্ন সময় কতিপয় ন্যায়পরায়ন বাদশাহ-এর শাসন পরিলক্ষিত হয়। তবে এ যামানার অধিকাংশ বাদশাহই ছিল জালিম শাসক। এই বাদশাহী যামানা তুর্কি ফিলাফাত বা অটোমান সম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘোষণা পর্যন্ত ছিল কায়েম ছিল। পরবর্তীকালে ও বর্তমান যামানায় কিছু কিছু দেশে রাজতন্ত্র কায়েম থাকলেও তারা মুসলিম উম্মাহর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ধারণ করে না, বিধায় তারা হাদীসে বর্ণিত বাদশাহী যামানার অন্তর্ভূক্ত নয়। ইতিহাসে দেখা যায় যে, বাদশাহী যামানায়ই উম্মাতের রাজত্ব সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে।
 
মুসলিম রাজত্বের সর্বোচ্চ বিস্তৃতিঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ  আল্লাহ সমন্ত পৃথিবীকে ভাঁজ করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে। আমাকে লাল ও সাদা দুটি ধনাগার দেয়া হয়েছে। আমি আমার উম্মাতের জন্য আমার প্রতিপালকের নিকট এ দুআ করেছি, যেন তিনি তাদেরকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন এবং যেন তিনি তাদের উপর নিজেদের ব্যতীত এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে না দেন যারা তাদের দলকে ভেঙ্গে টুক্বরা টুকরা করে দিবে। এ কথা শুনে আমার প্রতিপালক বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো প্রতিহত হয় না। আমি তোমার দুআ কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মাতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করবো না এবং তাদের উপর তাদের নিজেদের ব্যতীত অন্য এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে দেবো না যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও তিনি বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোক সমবেত হয়ে চেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলমানগণ পরস্পর একে অপরকে ধ্বংস করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে। -{সহীহ মুসলিম- ৬৯৯৪}

হযরত ইবনু রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ  শিঘ্রই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, যখন জিহাদের জন্য তিনটি সেনাবাহিনী গঠিত হবে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী ইয়ামানের সেনাবাহিনী এবং ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনু হাওয়ালা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: হে আল্লাহ'র রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙী হওয়া মংগলজনক মনে করেন? তিনি বললেন: তুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে। কেননা, তখন এ এলাকাই আল্লাহ'র নিকট সবচেয়ে উত্তম গন্য হবে। আল্লাহ তার সতকর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর যদি তোমরা সিরিয়ায় যেতে রাজী না হও তবে অবশ্যই ইয়ামানী সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দিবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কুপগুলো হতে পানি উত্তোলন কর। কেননা মহান আল্লাহ আমার জন্য সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরন-পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন। (আবু দাউদ, সহিহ, অধ্যায় -৯: জিহাদ, হাদিস ২৪৮৩)

বাদশাহী শাসনামলে শাসক-উম্মাহর সম্পর্কঃ হযরত উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অচিরেই তোমাদের উপর এমন কতিপয় শাসক হবে যাদের কিছু কাজ (শারীয়াত অনুযায়ী হওয়ার কারণে) তোমরা পছন্দ করবে আর কিছু কাজ (শারীয়াত বিরোধী হওয়ার কারণে) অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের ভাগী হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো না? তিনি বললেন : না, যতক্ষন তারা তোমাদের মাঝে নামাজ কায়েম করে”- (মুসলিমঃ ৪৬৪৯ ও তিরমিযীঃ ২২১১)

ইসলামের নামে বিদআতের আবির্ভাব প্রসংগেঃ হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টিসমূহ হতে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের মধ্যে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হল বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআত হল পথভ্রষ্টতা। -[আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ]

ঈমান এবং আমানত দুর্বল হয়ে যাবেঃ হযরত হোজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আমাদের কাছে দুইটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তারমধ্যে একটি আমি দেখেছি এবং অন্যটির জন্য অপেক্ষা করছি (অর্থাৎ একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে এবং অন্যটি এখনো ঘটেনি)। ঈমান এবং আমানত মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। তিনি আরো বলেন যে মানুষ পবিত্র কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা ভুলে যাবে। তিনি আরো বললেন যে, কোন লোক নিদ্রায় যাবে তারপর তার অন্তর থেকে আমানত নিয়ে নেয়া হবে। শুধু একটি বিন্দুর মত দাগ থাকবে। এরপর সে আবার নিদ্রামগ্ন হবে এবং অবশিষ্ট আমানত তুলে নেয়া হবে। তখন মানুষ ব্যবসা করবার জন্য সকালে বাসা থেকে বের হবে কিন্তু কেউই আমানত ফেরত দিবে না। বলা হবে অমুক অমুক ব্যক্তি বিশ্বাসী এবং কোনও কোনও ব্যক্তিকে বলা হবে যে সে অনেক জ্ঞানী! সে কি চতুর! সে কি মার্জিত! কিন্তু সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও তার মধ্যে থাকবে না। -(বুখারী ও মুসলিম)

সন্ধিনামা ও আমানত নষ্ট হয়ে যাবেঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তখন তোমার কি অবস্থা হবে যখন তুমি দুষ্টু লোকদের ভিতরে পতিত হবে? তাদের সন্ধিনামা ও আমানত নষ্ট হয়ে যাবে এবং তারা মতবিরোধে লিপ্ত হতে থাকবে। তারা হবে এরকম (এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় অজ্ঞুলি সমূহকে আলাদা করে দেখালেন) তখন সে বললো, তখন আপনি আমাকে কি করতে নির্দেশ দেন? এর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা জান তা সম্পাদন করবে এবং যা জান না তা পরিত্যাগ করবে। তুমি নিজের কাজে ব্যস্ত থাকবে এবং জনসাধারনের কাজ পরিত্যাগ করবে এবং তোমার রসনাকে সংযত করবে। তুমি যা জান তা গ্রহন করবে এবং যা জান না তা গ্রহন করবে না। তুমি তোমার নিজের ব্যাপারে নিবিষ্ট থাকবে এবং জন সাধারনের কাজ পরিত্যাগ করবে। (তিরমিজী শরীফ)

স্বৈরতন্ত্রের যামানাঃ তুর্কী সালতানাতের বিলুপ্তির পর থেকে মুসলিম উম্মাহর মাঝে জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব বা স্বৈরতন্ত্রের যামানা শুরু হয়েছে হাদীসের বর্ণনা মোতাবেক বিশ্ব জুড়ে পুনরায় নবুওয়াতের নমুনায় খিলাফাত কায়েমের আগ পর্যন্ত এ যামানা চলবে স্বৈরতন্ত্রের যামানায় বিশ্ব জুড়ে মুসলিম শাসকগণ খন্ড-বিখন্ড হয়ে আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার দ্বন্ধে লিপ্ত রয়েছে উম্মাহর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাবে তারা আজ কান্ডারী বিহীন, নির্যাতিত, হতাশাগস্থ ও বিপর্যস্থ প্রতিনিয়ত তার মুশরিক-ক্রুসেডারদের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে এ যামানায় বিভিন্ন দেশের মুসলিম শাসকবর্গকে তাদের ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মুশরিক-ক্রুসেডারদের দালালী করতে হচ্ছে বাদশাহী যামানায় বাদশাহদের অন্তরে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দরদ ছিল এ যামানার শাসকদের অন্তরে তা প্রায় অনুপস্থিত তারা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই শুধু ইসলামকে ব্যবহার করে মাত্র

স্বৈরতন্ত্রের যামানায় বিশ্বময় মুসলিম নিধনঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেনঃ এমন এক সময় আসবে, যখন তোমাদের নিধনের জন্য বিভিন্ন (কাফের) গোষ্ঠি একে অপরকে আহবান করবে। ঠিক যেমন অভুক্ত খাদকদের আহবান করা হয়, (মুখরোচক খাবারের) পাত্রের প্রতি। তখন একজন বলে উঠলেন, আমাদের সংখ্যাসল্পতার কারণে কি সেদিন এমন দুরাবস্থা হবে? ইরশাদ হলো-বরং সেদিন সংখ্যায় তোমরা অনেক বেশি, অনেকটা প্রবাহমান পানির ফেনার মতো (পরিমাণে অধিক অথচ অন্ত:সারশূন্য) থাকবেআল্লাহ তা'আলা তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রতি ভয়-ভীতি তুলে দিবেন (তারা তোমাদের খুবই নগণ্য ভাববে)। আর তোমাদের অন্তরে 'ওয়াহান-বা দুর্বলতা' সৃষ্টি করে দিবেন। জনৈক প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন-'ওয়াহান' কি? ইরশাদ হলো-দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুভীতি। -(আবু দাঊদঃ হাদীস নং ৪২৯৭)

জালিম শাসকদের প্রাদুর্ভাবঃ হযরত কাব বিন উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ " জেনে রাখো অচিরেই অনেক জালিম শাসক আসবে। যারা সেই সকল শাসকদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের অন্যায়গুলোকে সমর্থন দিবে এবং তাদের জুলুমে সহযোগিতা করবে সে আমার উম্মত নয় এবং আমিও তাঁদের দায়িত্ব নিবো না এবং (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের সামনে আসতে দেয়া হবে না। আর যাঁরা সেই সকল জালিম শাসকদের সাথে আঁতাত করবে না, তাদের জুলুমে সহায়তা করবে না তাঁরা আমার উম্মত এবং আমি তাঁদের দায়িত্ব নিবো এবং তাঁদেরকেই (কিয়ামতের দিন) হাউজে কাউসারের পানি পান করানো হবে। " -[ তিরমিযি, হাদিস নং ৬১৪, হাদীস সহিহ]

তিন শ্রেনীর বিচারক হবেঃ হযরত বুরায়দা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "বিচারক তিন শ্রেণীর, তার মধ্যে দু'শ্রেণীর বিচারক জাহান্নামী এবং এক শ্রেণীর বিচারক হবে জান্নাতী। প্রথম প্রকার বিচারক তাঁরা, যারা সত্যকে জানে এবং সত্যের সাথেই বিচার ফায়সালা করে, তাঁরা জান্নাতী। দ্বিতীয় প্রকার সেসব বিচারক, যারা সত্যকে জানে কিন্তু তদানুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না বরং জুলুম করে, তারা জাহান্নামী তৃতীয় প্রকার বিচারক তারা, যারা সত্যকে জানেও না এবং সে অজ্ঞতা নিয়েই মানুষের বিচার-ফায়সালা করে, তারা জাহান্নামী।" -(সুনানে আবু দাউদ; বুলুগুল মারাম, হাদীস নং-১৪০১)

অত্যাচারী পুরুষ ও উলংগ নারীদের সয়লাবঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দুই ধরণের মানুষ জাহান্নামে যাবে যাদেরকে এখনো কেউ দেখেনি। (১) ঐসমস্ত পুরুষ যাদের কাছে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে ও তা দ্বারা তারা মানুষদেরকে মারবে। (২) ঐসমস্ত নারী যারা পোশাক পরার পরও উলংঙ্গ থাকবে। তারা পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে এবং পুরুষের দিকে আকৃষ্ট থাকবে। তাদের মাথার চুল উটের কোহানের মত উঁচু বানিয়ে রাখবে। তারা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খোশবুও পাবে না। অথচ জান্নাতের খোশবু এমন এমন দূর থেকে পাওয়া যাবে। -(মুসলিম শরীফ ২ খ. ২০৫ পৃ.)

ইসলামের আর কিছুই বাকি থাকবে নাঃ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ''আমি অচিরেই লোকদের উপর এমন একটি সময় আসার আশংকা করছি, যখন কেবলমাত্র নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই বাকি থাকবে না এবং কুরআনের লিখিত রূপটি ছাড়া তার বাস্তবায়ন থাকবে না। মসজিদগুলো চাকচিক্যে ভরপুর হলেও মানুষ হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। ঐ সময়কার আলেমরা হবে আসমানের নিচে বিচরণকারী সর্বনিকৃষ্ট জীব। তাদের থেকেই বিভিন্ন ফিতনা ছড়াবে এবং তারা নিজেরাও সেই ফিতনায় আবর্তিত হবে।'' -(সুনানে বায়হাকী, হাদীসটি সহীহ)

একের পর এক বিপদ আসাঃ হযরত হোজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : একটি খাটের যেমন একটি তক্তার পর আরেকটি তক্তা হয়, সেরকম বিপদাপদও হৃদয়ের উপর পতিত হবে। যে হৃদয় তা পান করবে তার উপর একটি সাদা চিহ্ন অংকিত হবে। এইভাবে দুটি হৃদয় হবে। একটি শেত পাথরের মত শুভ্র হবে। যে পর্যন্ত জমীন ও আসমান বিদ্যমান থাকবে সে পর্যন্ত কোনও বিপদাপদ তার বিনষ্ট করতে পারবেনা। অন্য হৃদয়টি উলটানো পানির পেয়ালার মত কালো ও অপরিষ্কার হবে। এটা কোন প্রকার ন্যায় ও মঙ্গল জানবে না এবং অমঙ্গলকেও পরিত্যাগ করবে না। কিন্তু সেচ্ছাকৃত ইচ্ছা দিয়ে পরিচালিত হবে। -(মুসলিম শরীফ)

জনসাধারনের কাজ পরিত্যাগঃ হযরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অতি শীঘ্রই বিপদাপদ আপতিত হবে। সাবধান! ক্রমাগত বিপদাপদ ঘটবে। সাবধান! পুনরায় বিপদাপদ নেমে আসবে। তখন বসে থাকা ব্যক্তি পথ চলা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে এবং পথ চলা ব্যক্তি দৌড়ে লিপ্ত থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। সাবধান! যখন এটা ঘটতে থাকবে তখন ছাগল ও মেষের অধিকারী যেন তার নিজের ছাগল এবং মেষের নিকটেই থাকে। আর যার জমি আছে সে যেন তার জমির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যার উট, মেষ, ছাগল বা জমি নাই তার কি অবস্থা হবে ? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, সে যেন তার তরবারি পাথরের সাহায্যে শান দিতে থাকে এবং সম্ভব হলে জয়ী হয়। হে আল্লাহ! আমি কি আমার সংবাদ পৌঁছে দিয়েছি ? (তিনি তিনবার এই কথা বললেন) অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাকে পছন্দ না করা হয় এবং আমাকে কোন পাহাড়ে নিয়ে কেউ যদি তরবারি দিয়ে আমাকে আঘাত করে কিংবা তীর এসে যদি আমাকে হত্যা করে তখন আমার অবস্থা কি হবে? এর উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, সে তোমার এবং তার গোনাহর বোঝা করবে এবং জাহান্নামে নীত হবে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

ঘরে ঘরে বিপদ আপদঃ হযরত ওমাছাহ বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মদীনা শরীফের উচ্চ স্থানের মধ্যে একটি সুউচ্চ পর্বতে উঠে বললেন : আমি যা দেখছি তোমরা কি তা দেখছো? সাহাবাগণ উত্তরে বললো, না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি বৃষ্টিপাতের ন্যায় তোমাদের ঘরে বিপদ-আপদ নিপতিত হতে দেখছি। (বুখারী ও মুসলীম)

নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহনঃ হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘‘সত্বর এমন এক সময় আসবে যে, ছাগল-ভেড়াই মুসলিমের সর্বোত্তম মাল হবে; যা নিয়ে সে ফিতনা থেকে তার দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য পাহাড়-চূড়ায় এবং বৃষ্টিবহুল (অর্থাৎ তৃণবহুল) স্থানে পলায়ন করবে।’’ [সহীহুল বুখারী ১৯, ৩৩০০, ৩৬০০, ৬৪৯৫, ৭০৮৮, নাসায়ী ৫০৩৬, আবূ দাউদ ৪২৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৮০, আহমাদ ১০৬৪৯, ১০৮৬১, ১০৯৯৮, ১১১৪৮, ১১৪২৮]

সর্বত্র শুধু ফেতনা-ফ্যাসাদের সয়লাব হবেঃ হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পর এমন একটি কাল আসবে যখন মানুষের মাঝে দীনী ইলম থাকবে নাসর্বত্র সয়লাব হবে শুধু ফেতনা-ফ্যাসাদেরসাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) আরয করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! ফেতনা-ফ্যাসাদ মানে কি? তিনি ইরশাদ করলেন- হত্যা ও খুন! - (সুনান ইবনে মাজাহ,হাদিস-৪০৪৯,জামে তিরমিযি, হাদিস- ২১৩১, মুসনাদ আহমাদ,হাদিস-১৯১৯৪ বায়হাকী)
 
দুনিয়ার স্বার্থের বিনিময়ে নিজের দ্বীনকে বিকিয়ে দেবেঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ফিতনা ফাসাদও বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই তোমরা কল্যাণকর কাজেআত্মনিয়োগ করোএ বিপর্যয় তোমাদেরকে অন্ধকার রাতের মতোগ্রাস করে নেবেকোন ব্যক্তির ভোর হবে মুমিন অবস্থায় আর সন্ধ্যা হবে কাফের অবস্থায়আর তার সন্ধ্যা হবে মুমিন অবস্থায় আর সকাল হবে কাফের অবস্থায়মানুষ দুনিয়ার সামান্যতম স্বার্থের বিনিময়ে নিজের দ্বীনকে বিকিয়ে দেবে -(মুসলিমঃ হাদীস নং ২২১)
 
আখিরাতের উপর দুনিয়ার প্রাধান্য দিবেঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : "তোমরা ক্ষণকাল বিলম্ব না করে নেক কাজের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যাও। কারণ শীঘ্রই অন্ধকার রাতের অংশের মত বিপদ-বিশৃংখলার বিস্তার ঘটবে। তখন মানুষ সকালবেলা মুমিন থাকবে। সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে, আবার সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। সে তার দ্বীনকে পার্থিব স্বার্থের বদলে বিক্রয় করবে।" -[মুসলিমঃ ৮৭]

সময় নিকটবর্তী হবেঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : "সময় নিকটবর্তী হবে (অর্থাৎ যাতায়াত এবং সংবাদ আদান প্রদানে বেশী সময় লাগবে না) এবং ধর্ম বিদ্যার মৃত্যু হবে। বিপদাপদ দেখা দিবে, কৃপণতা দেখা দিবে এবং হারাজ বেড়ে যাবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন হারাজকি? উত্তরে আল্লাহর হাবীব আমাদের প্রিয় নবী হযরত (সাঃ) বললেন, হত্যা।" - (বুখারী ও মুসলীম)

কেয়ামতের আলামতের অপেক্ষা করবেঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : যখন মানুষ গনীমতের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করতে থাকবে আমানতের সম্পদকে গনীমতের সম্পদ মনে করতে থাকবে যাকাতকে বোঝা মনে করতে থাকবে দ্বীনী ইলম অর্জন করবে দুনিয়ার উদ্দেশ্যে স্ত্রীর আনুগত্য করবে, মাকে কষ্ট দিবে বন্ধুকে আপন মনে করবে, পিতাকে পর মনে করবে মসজিদে হৈচৈ করবে ধর্মহীন লোকেরা গোত্রপতি হবে নীচ শ্রেণীর লোকেরা জাতির নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হবে অনিষ্টতার ভয়ে মানুষের সম্মান করা হবে গায়িকা নারী ও বাদ্যযন্ত্রের প্রাবাল্য হবে মানুষ ব্যাপকভাবে মদ পান করবে পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের অভিসম্পাত করবে তখন রক্তিম ধোঁয়া এবং কঠিক প্রকম্পনের অপেক্ষা করবে অপেক্ষা করবে মাটি ধ্বসে যাওয়ার আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়ারআর আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষণেরএসব আযাবের সাথে সাথে কেয়ামতের অন্যান্য আলামতেরও অপেক্ষা করবেযখন সুতাছেঁড়া তাসবীর গোটার মত একটার পর একটা আপতিত হতে থাকবে -(তিরমিযীঃ হাদীস নং-২২১১, কানুযুল উম্মালঃ হাদীস নং-৩৮৭১৪, আল মুজামুল আওসাতঃ হাদীস নং-৪৬৯, আল মুজামুল কাবীরঃ হাদীস নং-৯১)

কিয়ামাতের প্রতীক্ষা করবেঃ হযরত মুহাম্মদ ইবন সিনান (রহঃ) ও হযরত ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) কর্তৃক হযরত আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত।  তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে লোকদের সামনে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর কাছে একজন বেদু্ঈন এসে প্রশ্ন করলেন, কিয়ামত কবে হবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনায় রত রইলেন। এতে কেউ কেউ বললেন, লোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেন নি। আর কেউ কেউ বললেন বরং তিনি শুনতেই পান নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষ করে বললেনঃ কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়?’ সে বলল, এই যে আমি, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ যখন আমানত নষ্ট করা হয় তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে। সে বলল, কিভাবে আমানত নষ্ট করা হয়?’ তিনি বললেনঃ যখন কোন কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত লোকের প্রতি ন্যাস্ত হয়, তখন তুমি কিয়ামাতের প্রতীক্ষা করবে। -[সহীহ বুখারিঃ ৫৭]

নবুওয়াতের নমুনায় পুনরায় খিলাফাত কায়েমের সাধনা সব যামানায় বহাল থাকবেঃ মুসলিম উম্মাহর উপর আপতিত বিপদ-আপদ, ফিতনা-ফাসাদ ও জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে উম্মতের একটা দল সর্বদা হকের উপর কায়েম থাকবেনতারা সুন্নাহসমূহ মানুষের দ্বারা বিপর্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ইসলাহ বা পূণর্র্জীবিত করবেন। সর্বদাই তারা হক্বের পক্ষে লড়াই করবেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা বিজয়ী থাকবেন। তাদের বরকতময় পদচারনায় ফলশ্রুতিতে ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে দুনিয়ার বুকে পুনরায় নবুওয়াতের কল্যাণময় খিলাফাত ব্যবস্থা কায়েম হবে।
 
উম্মতের একটা দল সর্বদা হকের উপর কায়েম থাকবেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দ্বীন ইসলাম তো অপরিচিত অবস্থায় যাত্রা শুরু করেছিল এবং অচিরেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সুসংবাদ সেই অপরিচিতদের জন্য(তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৫৬৬) তাদের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছে- যারা আমার ছুন্নাহ মানুষের দ্বারা বিপর্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ইসলাহ বা পূণর্র্জীবিত করে। -[তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৫৬৭] 

উম্মতের একটা দল সর্বদাই হক্বের পক্ষে লড়াই করবেঃ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হক্বের পক্ষে লড়াই করবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা বিজয়ী থাকবে। -(মুসলিম : ৫০৬৩)

উম্মতের একটা দল সর্বদা হকের উপর বিজয়ী থাকবেঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক সর্বদা সত্যের (দীনে হকের) ওপর বিজয়ী হয়ে থাকবে। যারা তাদের সহায়তা করা ছেড়ে দেবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত তারা এভাবেই হকের ওপর অবিচল থাকবে। - (মুসলিমঃ হাদীস নং-৪৭৯৮)

অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত সাওবান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি গুমরাহকারী বাদশাহদেরকে ভয় করছি এবং তিনি আরো বলেন কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটা দল সর্বদা হকের উপর কায়েম থাকবেতাঁরা সর্বদা দ্বীনের উপর কায়েম থাকবেন কামিয়াব হবেন, তাঁদেরকে কেউ কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না-(তিরমিজী শরীফ ২খ. পৃ. ৪৭)

নবুওয়াতের নমুনায় ইমাম মাহদীর খিলাফাতঃ ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চৌদ্দশ বছরের স্থির বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি হল, পৃথিবীর শেষ যুগে আগমন করে তিনি মুসলিম উম্মাহকে নেতৃত্ব দান করবেন এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহএর মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়িত করবেন, যার ফলে সমগ্র পৃথিবীতে শান্তি, নিরাপত্তা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ প্রসংগে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মাহদী আমাদের আহলে বাইত থেকে হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে এক রাতেই খিলাফতের যোগ্য করবেন। -(সুনানু ইবনে মাজাহ্ঃ হাদিস ৪০৮৫)

হযরত যুহায়র ইবন হারব ও হযরত আলী ইবন হুজর (রহ.) সুত্রে হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই ইরাকবাসীরা না খাদ্যশস্য পাবে, না দিরহাম পাবে । আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার কারণে এ বিপদ আসবে”? তিনি বললেন- অনারবদের কারণে । তারা খাদ্য শস্য ও দিরহাম আসতে দিবে না। তিনি আবার বললেন অচিরেই সিরিয়াবাসীর নিকট কোন দীনার আসবে না এবং কোন খাদ্যশস্যও আসবে না। আমরা প্রশ্ন করলাম, এ বিপদ কোন দিক থেকে আগমন করবে ? তিনি বললেন, রোমের দিক থেকে। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আমার উম্মাতের শেষভাগে একজন খলীফা হবে । সে হাত ভরে ভরে অর্থ সম্পদ দান করবে, গণনা করবে না । বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবু নাদরা ও আবুল আলাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের ধারণায় ইনি কি উমার ইবন আবদুল আযীয ? তারা জবাবে বললেন, না । -(সহিহ মুসলিম : হাদিস নং ৬৯৬১)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনে জায়ই আয-যাবীদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ প্রাচ্য দেশ (খোরাসান) থেকে কতক লোকের উত্থান হবে এবং তারা মাহদীর খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত করবে। -(ইবনে মাজাহ্ : ৪০৮৮)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম সময়ে বনু হাশিমের কয়েকজন যুবক এসে হাজির হলতাদের দেখার পর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখদুটো লাল হয়ে গেল এবং চেহারার রং বদলে গেলবর্ণনাকারী বলেন, এই অবস্থা দেখে আমি বললাম, ‘আমরা আপনার চেহারায় অপ্রীতিকর কিছু দেখতে পাচ্ছি যে! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমরা আহলে বাইতের জন্য আল্লাহ দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতকে নির্বাচন করেছেনআমার পরিবারের সদস্যরা আমার অবর্তমানে বিপদ, দেশান্তর অসহায়ত্বের শিকার হবেএমনকি পূর্ব দিক থেকে এমন কিছু লোক আগমন করবে, যাদের পতাকা হবে কালোতারা কল্যাণ (নেতৃত্ব) দাবী করবে; কিন্তু এরা (বনু হাশিম) দেবে নাঅগত্যা তারা যুদ্ধ করবে জয়লাভ করবেএবার তারা যা (নেতৃত্ব) দাবী করেছিল, (বনু হাশিম) তা প্রদান করবেকিন্তু এবার তারা তা (নেতৃত্ব) গ্রহণ না করে আমার বংশের এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) কে তা (নেতৃত্ব) ফিরিয়ে দিবেসেই ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) পৃথিবীকে ন্যায়নীতি দ্বারা এমনভাবে ভরে দিবে, যেমনটি পূর্বে তা অবিচারে পরিপূর্ণ ছিলতোমাদের যে লোক সেই সময়টি পাবে, সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায়, বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও -[সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড , পৃষ্ঠা ১৩৬৬]

ইমাম মাহদীর যামানায় সম্পদের প্রাচুর্য্যঃ হযরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মাহদী আমার উম্মাত থেকেই আবির্ভূত হবে। তিনি কমপক্ষে সাত বছর অন্যথা নয় বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। তার যুগে আমার উম্মাত অযাচিত প্রাচুর্যের অধিকারী হবে, ইতোপূর্বে কখনো তদ্রূপ হয়নি। পৃথিবী তার সর্বপ্রকার খাদ্যসম্ভার পর্যাপ্ত উৎপন্ন করবে এবং কিছুই প্রতিরোধ করে রাখবে না। সম্পদের স্তূপ গড়ে উঠবে। লোকে দাঁড়িয়ে বলবে, হে মাহ্দী! আমাকে দান করুন। তিনি বলবেন, তোমার যতো প্রয়োজন নিয়ে যাও। -(তিরমিযীঃ ২২৩২, আবূ দাউদঃ ৪২৮৫ ও ইবনে মাজাহ্ঃ ৪০৮৩)

অনুরূপ বিবরণঃ  হযরত আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে উপচে না পড়বে, এমনকি সম্পদের মালিকগণ তার সাদকা কে গ্রহণ করবে তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যাকেই দান করতে চাইবে সে-ই বলবে, প্রয়োজন নেই। -(সহীহ বুখারীঃ ১৩২৯)

ইমাম মাহদীর সাথে দাজ্জাল বাহিনীর চুড়ান্ত যুদ্ধঃ ইমাম মাহদীর খিলাফাত সমগ্র উম্মাহর মধ্যে কায়েম হওয়ার যখন তিনি দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত থাকবেন, তখন দাজ্জালের পতাকাতলে ইয়াহুদীরা সম্মীলিতভাবে মুসলিম উম্মাহর উপর ঝাপিয়ে পড়বে। দাজ্জাল বাহিনীর বিরুদ্ধে এ চুড়ান্ত যুদ্ধ পরিচালনার জন্য আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈসা আলাইহিসসালাম-কে পুনরায় দুনিয়ায় মুসলিম বাহিনীর মাঝে প্রেরণ করবেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করবে আর ইহুদী শক্তি দুনিয়া থেকে চিরতরে বিলীন হবে।

এ প্রসংগে হাদীস শরীফের বর্ণনাঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ঈয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না অবশেষে পরাজিত হয়ে ইয়াহীরা মুসলিমদের ভয়ে পাথর ও গাছের আড়ালে আত্মগোপন করবে। কিন্তু গাছ ও পাথর বলে উঠবে হে মুসলিম! এই (দেখ) আমার আড়ালে ইয়াহুদী লুকিয়ে আছে, এসো! একে হত্যা কর কিন্তু গারকাদ নামক গাছ তা বলবে না। কেননা ঐটা ইহুদীদের গাছ। -(বুখারী ও মুসলিম)

ঈয়াহুদীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত যুদ্ধঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ঈয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং পাথরের আড়ালে লুকানো ইয়াহুদি সম্পর্কে উক্ত পাথর এ কথা না বলা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না হে মুসলিম! এই (দেখ) আমার আড়ালে ইয়াহুদী লুকিয়ে আছে, একে হত্যা কর । -(বুখারীঃ হাদীস নং - ২৯২৬)

মুশরিক ও দজ্জালের বাহিনীর সাথে যুদ্ধঃ হযরত নাহীক ইবনে সারীম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "নি:সন্দেহে তোমরা (হিন্দুস্তানে) মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্বদিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে।" -(আল ইসাবাঃ খণ্ড-৬,পৃষ্ঠা-৪৭৬)

মক্কা-মদীনা ব্যতীত সমস্ত জনপদই দাজ্জাল পদদলিত করবেঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মক্কা-মদীনা ব্যতীত এমন কোন জনপদ অবশিষ্ট থাকবে না যা দাজ্জাল পদদলিত করবে না। এ দুই নগরীর প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতারা কাতারবন্দী হয়ে পাহারা দেবে। দাজ্জাল ‘সাবখাহ’ নামক স্থানে এসে পৌঁছলে মদীনায় তিনবার ভূমিকম্প হবে। এভাবে আল্লাহ সমস্ত কাফির ও মুনাফিকদেরকে মদীনা থেকে বের করে দেবেন। -[সহীহ বুখারী]

হযরত সাম'আন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "যখন আল্লাহ মাসিহ ইবনে মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন, তখন তিনি দামেশকের পূর্ব দিকে মসজিদে মিনারার নিকট নিজের দু'হাত দু'ফেরেশতার কাঁধে রেখে আসবেন, যখন ঈসা (আলাইহিসসালাম) তাঁর মাথা নাড়বেন, তখন তাঁর মাথা থেকে পানি পড়বে, যখন তিনি তাঁর মাথা উঠাবেন তখন চাঁদর মুতির ন্যায় সাদা সাদা বিন্দু তাঁর মাথায় চমকাবে, তাঁর নিঃশ্বাস যে কাফেরের দেহে পড়বে তারা মৃত্যু বরণ করবেঈসা (.) এর নিঃশ্বাসের প্রতিক্রিয়া ততদূর পর্যন্ত থাকবে যতদূর পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি পড়বেআকাশ থেকে আগমনের পর ঈসা . দাজ্জালকে খুঁজবেন এবং লুদ নামক স্থানে তাকে তিনি হত্যা করবেন" -(মুসলিম, কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতিস্সায়া, বাব জিকর দাজ্জাল)

হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মাহদি আমার বংশ থেকে আবির্ভুত হবে। তার কপাল হবে উজ্জ্বল ও চওড়া আর নাক হবে উঁচু। সে পৃথিবীকে ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার দ্বারা ভরে দেবে, যেমনটি পূর্বে অবিচার দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবে। সে সাত বছর পৃথিবীর শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে” -(আবু দাউদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৮৮)

হযরত ঈসা আলাইহিসসালাম-এর খিলাফাত থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত বিবরণঃ ইমাম মাহদী সাত বছর যাবত পৃথিবীর শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। এ  দাজ্জালের বিরূদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে হযরত ঈসা আলাইহিসসালাম থাকবেন প্রধান সেনাপতি অতঃপর ইমাম মাহদীর ইন্তিকালের পর তিনি সমগ্র পৃথিবীর খলিফা হবেন  এ সময় বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় মুসিবাত হবে ইয়াজুজ মাজুজের ফিতনা আল্লাহ তায়ালা যতদিন চাইবেন ততদিন তিনি নবুওয়াতের নমুনায় বরকতময় খিলাফাত কায়েম রাখবেন অতঃপর পাপাচারে পুনরায় দুনিয়া ভরে যাবে এক সময় আল্লাহ দুনিয়ার বুক থেকে মুমিন বান্দাগণকে তুলে নিবেন অতঃপর দুনিয়ায় শুধু পাপী বান্দাগণই অবশিষ্ট থাকবে আর আল্লাহ তায়ালা তাঁর এ সব পাপী বান্দাদের উপর কিয়ামাত কায়েম করবেন এ প্রসংগে হাদীসে এসেছে-

নাওয়াস ইবনে সাম’আন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বিষয়টিকে কখনও নিচুস্বরে আবার কখনও উচ্চ কন্ঠে প্রকাশ করলেন। এমনকি আমাদের ধারণা হল যে, দাজ্জাল ঐ খেজুর বাগানের কোথাও লুকিয়ে আছে। যখন আমরা তাঁর কাছ থেকে ফিরে যাচ্ছিলাম তখন তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কি হয়েছে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এই সকাল বেলা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আপনি কখনও নিচুস্বরে আবার কখনও উচ্চ কন্ঠে প্রকাশ করেছেন। এতে আমাদের ধারণা হয়েছে যে, সে ঐ খেজুর বাগানের কোথাও লুকিয়ে আছে। তিনি বললেনঃ তোমাদের ব্যাপারে আমি দাজ্জালের ফিতনার খুব একটা আশংকা করি না। যদি আমি বর্তমান থাকতে সে আমপ্রকাশ করে তবে আমি তোমাদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হবো। আর যদি আমার অবর্তমানে সে আত্মপ্রকাশ করে তবে প্রত্যেক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। আল্লাহ আমার অবর্তমানে প্রত্যেক মুসলিমের রক্ষক।

দাজ্জাল ছোট কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট যুবক। তার চোখ হবে ফোলা। আমি তাকে আবদুল উযযা ইবনে কাতান সদৃশ মনে করি। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার সাক্ষাত পাবে সে যেন তার বিরুদ্ধে সূরা কাহাফের প্রথমিক আয়াতগুলো (প্রথম দশ আয়াত) পাঠ করে। দাজ্জাল সিরিয়া ও ইরাকের সংযোগ রক্ষাকারী এক রাস্তায় আত্ম প্রকাশ করবে। সে তার ডানে ও বায়ে হত্যাকান্ড, ধ্বংস ও ফিতনা-ফাসাদ ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! অটল ও স্থির হয়ে থাক।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! সে কত সময় পৃথিবীতে বর্তমান থাকবে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ দিন। এর একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান, একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান এবং অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের এই দিনের মতই দীর্ঘ হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এক বছরের সমান দীর্ঘ দিনটিতে কি এক দিনের নামাজই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, বরং অনুমান করে নামাজের সময় ঠিক করে নিতে হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! পৃথিবীতে দাজ্জাল কত দ্রুত গতিসম্পন্ন হবে? তিনি বললেনঃ বাতাস তাড়িত মেঘের মত দ্রুত গতিসম্পন্ন হবে। সে এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদেরকে নিজর দিকে আহ্বান করবে। তারা তা প্রতি ঈমান আনবে এবং তার হুকুমের অনুগত হবে। সে আসমানকে নির্দেশ দিলে তা তাদের উপর বৃষ্টি বর্যণ করবে আর সে জমীনকে হুকুম দিলে তা উদ্ভিদ উৎপন্ন করবে। তাদের গৃহপালিত জন্তুগুলো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে পূর্বের তুলনায় সুউচ্চ কুঁজ, দুধের লম্বা বাঁট ও স্ফীত দেহ নিয়ে। অতঃপর সে আর এক সম্প্রদায়ের কাসে আসবে এবং তাদেরকে নিজের দিকে আহ্বান করবে। তার তা আহ্বান প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের কাছ থেকে চলে যাবে। তারা অচিরেই অজন্মা ও দুর্ভিক্ষে পতিত হবে এবং তাদের হাতে ধন-সম্পদ কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। দাজ্জাল এক বিধ্বস্ত এলাকা দিয়ে অতিক্রম করার সময় (ঐ এলাকাকে লক্ষ্য করে) বলবে, তোমার খনিজ সম্পদরাজি বের করে দাও। সাথে সাথে এলাকার ধন-সম্পদ মধু মক্ষিকার ন্যায় তার অনুসরণ করবে। অতঃপর সে পূর্ণ বয়স্ক এক যুবককে আহ্বান করবে (এবং সে তাকে অস্বীকার করবে)। দাজ্জাল তাকে তরবারী দিয়ে দ্বিখন্ডিত করবে। অতঃপর টুকরা দুটোকে পৃথকভাবে একটি তীরের পাল্লা পরিমান দুরত্বে রাখবে। অতঃপর সে তাকে ডাকবে এবং টুকরা দুটো চলে আসবে (একত্রিত হয়ে জীবিত হবে)। তখন তার চেহারা হবে প্রফুল্ল ও হাস্যময়।   

ইত্যবসরে আল্লাহ তা’য়ালা মাসীহ ইবনে মারইয়াম আলাইহিসসালাম -কে পাঠাবেন। তিনি দামিশকের পূর্ব অংশে সাদা মিনারের উপর হালকা জাফরানী রং-এর কাপড় পরিহিত অবস্হায় দুই ফিরিশতার পাখায় ভর দিয়ে নেমে আসবেন। যখন তিনি মাথা নত করবেন তখন মনে হবে যেন তাঁর মাথা থেকে মুক্তার মত পানির বিন্দু টপকাচ্ছে। আর যখন তিনি মাথা উঠাবেন তখনও মনে হবে যেন তাঁর মাথা থেকে মতির দানার মত ঝরছে। যে কাফিরের গায়ে তার নিঃশ্বাস লাগবে সে মারা যাবে। তাঁর দৃষ্টি যতদুরে যাবে তাঁর নিঃশ্বাসও ততদুরে পৌঁছবে। তিনি দাজ্জালের পিছু ধাওয়া করবেন এবং লুদ্দ নামক স্থানে তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা আলাইহিসসালাম ঐ সব লোকের কাছে আসবেন যাদেরকে আল্লাহ দাজ্জালের অনাসৃষ্টি থেকে নিরাপদ রেখেছেন। তিনি তাদের চেহারা থেকে মলিনতা দুর করবেন এবং জান্নাতে তাদের যে মর্যাদা হবে তা বর্ণনা করবেন।

ইত্যবসরে আল্লাহ ঈসা আলাইহিসসালাম -এর কাছে এই মর্মে নির্দেশ পাঠাবেন : আমি এমন একদল মানুষ আবির্ভূত করেছি যাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার শক্তি কারো থাকবে না। তুমি আমার বান্দাদেরকে তুর পাহাড়ে চলে যাও। অতঃপর আল্লাহ ইয়াজুজ-মাজুজেরসম্প্রদায়কে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুতবেগে বেরিয়ে আসবে। তাদের অগ্রবর্তী দলগুলো তাবারিয়া হ্রদ অতিক্রমকালে হ্রদের সব পানি পান করে ফেলবে। তাদের পরবর্তী দলও এ এলাকা দিয়ে অতিক্রম করবে। তারা বলবে, এখানে কোন সময় পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিসসালাম ও তাঁর সাথীগণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। এ সময় তাদের কাছে গরুর একটি মাথা এত মূল্যবান হবে যেমন বর্তমানে তোমরা এক শত দীনারকে মূল্যবান মনে কর। তখন ঈসা আলাইহিসসালাম ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহর কাছে কাতরভাবে প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তা’য়ালা তাদের (ইয়াজুজ-মাজুজদের) প্রত্যেকের ঘাড়ে এক ধরণের কীট সৃষ্টি করবেন। ফলে তারা সবাই এক সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে।

অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিসসালাম ও তাঁর সাথীগণ পাহাড় থেকে জনপদে নেমে আসবেন। কিন্তু তারা পৃথিবীতে এক ইঞ্চি জায়গাও ইয়াজুজ-মাজুজদের লাশ ও দুর্গন্ধ ছাড়া খালি পাবেন না। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিসসালাম ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহর কাছে কাতরভাবে প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তা’য়ালা বুখতী উটের কুঁজ সদৃশ পাখি পাঠাবেন। এসব পাখি লাশগুলোকে তুলে নিয়ে আল্লাহ যেখানে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেবেন সেখানে ফেলে দেবে। অতঃপর মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ এমন বৃষ্টি পাঠাবেন যা জমীনের প্রতিটি স্থান, তা মাটির হোক অথবা বালুর, ধুয়ে আয়নার মত পরিস্কার করে দেবে।

অতঃপর ভুমিকে বলা হবে : তোমার ফল উৎপাদন কর এবং বরকত ফিরিয়ে দাও (এতে বরকত, কল্যাণ ও প্রাচুর্য দেখা দেবে)। একটি ডালিম খেয়ে পূর্ণ একটি দল পরিতৃপ্ত হবে এবং ডালিমের খোসাটি এত বড় হবে যে, এর ছায়ায় তারা আশ্রয় নিতে পারবে। গবাদী পশুতে এত বরকত হবে যে, একটি মাত্র উষ্ট্রীর দুধ একটি বড় দলের জন্য যথেষ্ট হবে, একটি গাভীর দুধ একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি দুধেল বকরী একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে।

অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা এক পবিত্র হাওয়া প্রবাহিত করবেন। এই বাতাস তাদের বগলের নিচে পর্যন্ত লাগবে। ফলে সমস্ত মুমিন ও মুসলিমের মৃত্যু হবে। শুধু খারাপ লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তারা গাধার মতই প্রকাশ্য যৌনাচার করবে। এদের উপর কিয়ামাত সংঘটিত হবে। -ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।                       


আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! ইমাম মাহদীর খিলাফাত নসীব করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।

No comments:

Post a Comment