Friday, June 27, 2014

ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সুরক্ষা হল আল্লাহর পথে জিহাদ


ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সুরক্ষা হল আল্লাহর পথে জিহাদ


সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীন। দুরদ ও সালাম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত

আল্লাহর বান্দাগণের একমাত্র দায়িত্ব হল জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত বা গোলামী করা। মানব জীবনে ইহ-পরকালীন কল্যাণের লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান আরোপ করেছেন। যুগে নবী-রসূল (আঃ)-গণের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রয়োগ পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে অবহিত করেছন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতী ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী ও রসূল, যার মাধ্যমে তিনি দ্বীন ইসলাম তথা তাঁর আরোপিত বিধি-বিধানের পূর্ণাংগতা দান করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত মানব সভ্যতার সবার জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতির জন্য তাঁর আরোপিত এ জীবন ব্যবস্থার সুরক্ষার লক্ষ্যে কিয়ামাত পর্যন্ত বিশ্বাসী বান্দাগণের উপর ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর পথে জিহাদ’ ফরজ করে দিয়েছেন।

‘আল্লাহর পথে জিহাদ’- ফরজ হওয়ার দলিল

মহান রাব্বুল আলামীন বলেন : " তোমাদের উপর জিহাদ বিধিবদ্ধ বা ফরয করে দেয়া হয়েছে। অথচ তা তোমাদের কাছে কষ্টকর মনে হয়। হতে পারে তোমরা কোন জিনিসকে অপছন্দ কর, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণময়আর হতে পারে তোমরা কোন জিনিসকে ভালোবাস অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকরআর আল্লাহই ভাল জানেন এবং তোমরা যা জান না।"-(সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২১৬)

তিনি আরও বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর সান্নিধ্য লাভ করার উপায় অন্বেষণ কর ও তাঁর পথে জিহাদ কর; যাতে তোমরা সফল হতে পার। -(সূরা আল-মায়েদাহঃ আয়াত ৩৫)

তিনি আরও বলেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের কী হল যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা দৃঢ়ভাবে যমীন আঁকড়ে ধর? তাহলে কি তোমরা আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে পড়েছো? অথচ দুনিয়ার জীবনের উপকরণ আখিরাতের তুলনায় অতীব নগন্য। যদি তোমরা আল্লাহর পথে অভিযানে বের না হও, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ভয়ঙ্কর শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য কোন জাতিকে অধিষ্ঠিত করবেন আর এ জন্য তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। যদি তোমরা তাঁকে (রাসূল (স) কে) সাহায্য না কর তাহলেও (তিনি অসহায় নন। কেননা) আল্লাহ তাঁকে তখন সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাঁকে মক্কা থেকে বের করে দিয়েছিল, তখন তিনি ছিলেন দুইজনের দ্বিতীয় জন। যখন তারা দুজনেই গুহার মধ্যে ছিলেন, তখন রাসূল (স) তাঁর সঙ্গীকে বলেছিলেন: চিন্তা কর না। আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।এরপর আল্লাহ রাসূলকে এমন এক বাহিনী দিয়ে শক্তিশালী করেন যাদেরকে তোমরা দেখ না। এভাবে তিনি কাফিরদের কথাকে অর্থহীন ও মিথ্যা করে দেন। আল্লাহর বাণী সবসময় সমুন্নত। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়।তোমরা হালকা যুদ্ধাস্ত্র  ও ভারি যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে অভিযানে বের হয়ে পড় এবং আল্লাহর পথে তোমাদের অর্থÑসম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ কর। যদি তোমরা জানতে (তাহলে বুঝতে পারতে যে) এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। -(সূরা তওবাহঃ আয়াত ৩৮-৪১)

তিনি আরও বলেন :তোমরা আল্লাহর পথে সর্বাত্মক সাধনা কর যেভাবে সর্বাত্মক সাধনা করা উচিততিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননিতোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাকতিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যেসুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী-(সুরা হাজ্জঃ আয়াত-৭৮)

তিনি আরও বলেন : ওহে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার শিষ্যবর্গকে বলেছিল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? শিষ্যবর্গ বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী-ইসরাঈলের একদল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তি যোগালাম, ফলে তারা বিজয়ী হল”- [সূরা আছ-ছফঃ আয়াত-১৪]

তিনি আরও বলেন : “আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা”-(সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৮৪)

তিনি আরও বলেন : "আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ নির্যাতিত পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকেযার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।" -(সূরা নিসাঃ ৭৫)

তিনি আরও বলেন : “তোমাদের কোন ভয় নেই, তোমাদের কোন চিন্তা নেই, তোমরাই হবে বিজয়ী, তোমরাই থাকবে উচ্চাসনে, যদি তোমরা মুমিন হও”-(সূরা আলে-ইমরানঃ ১৩৯)

অপারগ হলে দোষণীয় হবে নাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি গভীর ভালবাসা থাকে তাহলে যারা দুর্বল, যারা অসুস্থ এবং যারা আর্থিকভাবে সাহায্য করতে অসমর্থ (তারা জিহাদে অংশ না নিলে বা অর্থ সাহায্য না করলেও) তাদের কোন অপরাধ হবে না। যারা সৎকর্মশীল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন কারণ নেই। আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। জিহাদের অংশ না নেয়ার কারণে তাদেরও কোন অপরাধ হবে না, যারা বাহনের জন্য আপনার নিকট এসেছিল, আপনি তাদেরকে বলেছিলেন: তোমাদের জন্য আমি কোন বাহনের ব্যবস্থা করতে পারি নি।নিজেরা অর্থব্যয় করে বাহন কিনে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে অসমর্থ হওয়ায় তারা কান্নাভেজা চোখে ফিরে গিয়েছিল। যারা অভাবমুক্ত হয়েও জিহাদ থেকে অব্যাহতি চায় অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুযোগ রয়েছে। তারা ঘরে নারীদের সাথে থাকাকেই বেশি পছন্দ করেছিল। তাই আল্লাহ তাদের অন্তরের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন, কাজেই তারা আর বুঝতে পারে না। -(সূরা তওবাহঃ আয়াত ৯১-৯৩)

জিহাদের বিধানের ব্যাপারে উম্মাহর মাঝে বিভ্রান্তিসমূহ

মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক খিলাফাত ব্যবস্থার অবর্তমানে দীর্ঘকাল যাবত উম্মাহর মাঝে ‘আল্লাহর পথে জিহাদ’- বিধানটির সঠিক চর্চা ও যথোপযুক্ত প্রয়োগ তথা বাস্তব আমল না থাকায় জিহাদের বিধান ও বিধানের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া শাহাদাতের তামান্না থেকে দুরে সরে গিয়ে উম্মাহর মাঝে মৃত্যুভীতি ও দুনিয়ামুখী মানসিকতার জন্ম, দুনিয়ার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন-সাধ এবং যার যার অবস্থানকে কুরআন ও সুন্নাহ-এর আলোকে সঠিক প্রমান করার প্রতিযোগীতার ফলে বিভ্রান্তিসমূহ আলাদা আলাদা দর্শনে রূপ লাভ করেছে। সংক্ষেপে এর কিছু দিক তুলে ধরা হল-

() ‘আল্লাহর পথে জিহাদ বনাম সন্ত্রাস- আল্লাহর পথে জিহাদবা পবিত্র যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে অনেকে ইসলামের কল্যাণময় পবিত্র যুদ্ধকে সন্ত্রাস বলে আখ্যায়িত করে প্রকৃত মুজাহিদগণকে সন্ত্রাসী বা জংগি হিসাবে চিহ্নত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ইসলামের নামে জংগী মিছিল, হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, অগ্নিসংগোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, বোমাবাজি, মারামারি ও গুপ্ত হত্যা ইত্যাদি জিহাদ নামে আখ্যায়িত করে আল্লাহর পথে জিহাদ নামক আল্লাহ তায়ালার সুনির্দিষ্ট ফরজ বিধানের অবমাননা করছেন।

() ‘আল্লাহর পথে জিহাদ বনাম নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ- আল্লাহর পথে জিহাদএবং নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ এর মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে কতিপয় ব্যক্তি নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ বা তাজকিয়ায়ে নাফস-কে আল্লাহর পথে জিহাদ বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর যারা নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ বা তাজকিয়ায়ে নাফস এর সাধনারত তাদেরকে মুজাহিদ নামে আখ্যায়িত করে প্রকৃত জিহাদ ও আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদদের অবমাননা করছেন।

() ‘আল্লাহর পথে জিহাদ বনাম দাওয়াত ও তাবলীগ- আল্লাহর পথে জিহাদএবং দাওয়াত ও তাবলীগ এর মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে কতিপয় ব্যক্তি দাওয়াত ও তাবলীগ -কে আল্লাহর পথে জিহাদ বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা জিহাদ প্রসংগে কুরআনে বর্ণিত আয়াত ও হাদীস শরীফে উল্লেখিত হাদীসসমূহ দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে একদিকে আল্লাহর পথে জিহাদ’- নামক একটি ফরজ বিধানের অবমাননা করছেন, অপরদিকে তারা কুরআন ও সুন্নাহর অপব্যাখ্যার দায়ে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন-এর দরবারে দোষী সাব্যস্ত হবেন।

() ‘আল্লাহর পথে জিহাদ বনাম গণতান্ত্রিক কার্যক্রম- আল্লাহর পথে জিহাদএবং গণতান্ত্রিক কার্যক্রম-এর মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে কতিপয় ইসলামী দল গণতান্ত্রিক কার্যক্রম-কে আল্লাহর পথে জিহাদ বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা দলীয় কার্যক্রম, নির্বাচন ও ভোট, মিছিল-মিটিং, হরতাল-অবরোধ বিশ্ব-বিদ্যালয়ের হলসমূহে দখলদারিত্বের জন্য মারা-মারি ইত্যাদি সব কিছুকেই তারা জিহাদের অংশ মনে করেন। তারা জিহাদ প্রসংগে কুরআনে বর্ণিত আয়াত ও হাদীস শরীফে উল্লেখিত হাদীসসমূহ তাদের উক্ত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে একদিকে আল্লাহর পথে জিহাদ’- নামক একটি ফরজ বিধানের অবমাননা করছেন, অপরদিকে তারাও কুরআন ও সুন্নাহর অপব্যাখ্যার দায়ে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন-এর দরবারে দোষী সাব্যস্ত হবেন।

() ‘আল্লাহর পথে জিহাদ বনাম মহিলাদের দ্বীনি কার্যক্রম- আল্লাহর পথে জিহাদএবং মহিলাদের দ্বীনি কার্যক্রম-এর মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে কতিপয় ইসলামী দল মহিলাদেরকে নিয়ে তাদের দলীয় কার্যক্রমের আলাদাভাবে শাখা বা পার্শ্ব সংগঠন গড়ে তুলছেন, তাদের বাইয়াত নিচ্ছেন এবং মহিলাদের দ্বীনি কার্যক্রম তথা তাদের দলীয় কার্যক্রম-কে আল্লাহর পথে জিহাদ বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ সশস্ত্র যুদ্ধ শধু মুমীন পুরুষদের উপর ফরজ করা হয়েছ, মহিলাদের জন্য নয়। ইসলামের প্রাথমিক যামানায় কিছু মহিলা সাহাবী তাদের স্বামী বা মাহরামদের সাথে মুজাহিদ কাফেলায় শরীক হয়েছন, তাদের মূল কাজ ছিল- (ক) আহতদের সেবা, (খ) সংগীয় স্বামী ও মাহরামদের সেবা এবং (গ) মহিলা যুদ্ধবন্ধীদের তত্ত্বাবধান। মহিলাদের জিহাদ প্রসংগে হাদীসে এসেছে-

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা তো দেখেছি জিহাদই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, তাহলে আমরা (মেয়েরা) জিহাদ করবো না কেনো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেনঃ মাবরূর হজ্জই হচ্ছে (মেয়েদের জন্য) শ্রেষ্ঠ জিহাদ। -[সহীহ বুখারী]

এছাড়া ইসলামের ইতিহাসে মহিলাদের জন্য ইসলাম গ্রহণ ছাড়া অন্য কোন বাইয়াত নেই। আর এই বাইয়াতের বিষয়ও আল্লাহ তা’য়ালা জানিয়ে দিয়েছেন। খুলাফায়ে রাশিদীনের যামানায় সম্মানিত খলিফাগণ শুধুমাত্র পুরুষদের নিকট থেকে বাইয়াত গ্রহন করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :

-হে নবী! মুমিন নারীগণ যখন আপনার নিকট এসে এ কথার উপর বায়আত গ্রহণ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জেনেশুনে কোন অপবাদ রটাবে না এবং ভালকাজে আপনাকে অমান্য করবে না - তখন আপনি তাদের বায়আত গ্রহণ করবেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম করুণাময়। -(সূরা মুমতাহিনাঃ আয়াত-১২)

জিহাদ এবং ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস এর মৌলিক পার্থক্য

ইসলামের চুড়ান্ত বিধান বা ছাদ হল আল্লাহর পথে জিহাদ, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ফরজ। আর ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস-দস্যুতা সর্বদা পরিত্যাজ্য ও হারাম। যেমন- বিবাহ নারী-পুরুষের মধ্য একটি বৈধ, দায়িত্বপূর্ণ ও সর্বজন স্বীকৃত সম্পর্ক আর ব্যাভিচার নারী-পুরুষের মধ্য একটি অবৈধ, দায়িত্বহীন ও সর্বজন অস্বীকৃত সম্পর্ক, যা সর্ব-ধর্মের সমগ্র মানুষের কাছেই অগ্রহণযোগ্য, সর্বদা পরিত্যাজ্য ও হারাম। তাই সবাইকে জিহাদ ও ফাসাদের পার্থক্য পরিস্কার ভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি এরশাদ করেন :আর যখন সে ফিরে যায়, তখন জমিনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফ্যাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্লাহ ফ্যাসাদ ভালোবাসেন না।’ -(সূরা আল বাকারাঃ ২০৫)

তিনি আরও এরশাদ করেন :তোমরা আল্লাহর রিজিক থেকে আহার কর এবং পান কর আর তোমরা ফ্যাসাদকারী হয়ে জমিনে ঘুরে বেড়িও না।’ -(সূরা আল-বাকারাঃ ৬০) পার্থক্যসমূহ হল-

() জিহাদ আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে মুমীনদের জন্য নির্ধারিত ও বিধিবদ্ধ একটি ফরজ ইবাদাত। আর ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে ঘোষিত সুস্পষ্ট হারাম।

(২) জিহাদের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তা’য়ালার চুড়ান্ত সন্তোষ অর্জন করা। আর ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস এর উদ্দেশ্য হল অবৈবভাবে দুনিয়াবী ধন-সম্পদ-প্রভাব-পতিপত্তি অর্জন করা। 

(৩) জিহাদের লক্ষ্য হল সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস দুর করে দুনিয়ার বুকে আল্লাহ তা’য়ালার দ্বীনকে বিজয়ী বেশে কায়েম করা, আল্লাহর কলেমাকে বুলন্দ করা এবং জুলুম-নির্যাতনের মূলোৎপাটন করে মানবতার কল্যাণ সাধন করাআর ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস এর উদ্দেশ্য হল অপরের অধিকারকে কেড়ে নিয়ে অবৈবভাবে নিজস্ব, দলীয়, গোত্রীয় বা জাতীয় ক্ষমতায়ন।

() সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মৌলিক রীতি-নীতির ব্যপারে দায়িত্বশীলতার সাথে অংগীকারাবদ্ধ সার্বভৌম সরকার, প্রবাসী সরকার, ছায়া সরকার, বা কোন স্বীকৃত সংস্থা দ্বারা জিহাদ পরিচালিত হয়। আর দস্যুদল, লুটেরা বাহিনী, সন্ত্রাসী বাহিনী, মৌলিক রীতি-নীতির ব্যপারে দায়িত্বহীন মিলিশিয়া বাহিনী বা আধিপত্যবাদী সরকার কর্তৃক ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস পরিচালিত।

() কোন গোত্র, জাতি বা দেশের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত ও সুস্পষ্ট কারণ থাকতে হবে। জিহাদ শুরু করার আগে আলোচনার মাধ্যমে কারণটি সমাধান করার যথেষ্ট উদ্যোগ থাকতে হবে। কোন পূর্বালোচনা ছাড়া হঠাৎ আক্রমন ফিতনা-সন্ত্রাস-দস্যুতা গণ্য হবে।

() যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট ঘোষণার মাধ্যমে জিহাদ শুরু করতে হবে। কোন চুক্তিব্ধ জাতির সাথে জিহাদ করতে হলে আগেই সুস্পষ্ট ঘোষণার মাধ্যমে চুক্তি বাতিল করতে হবে। ষড়যন্ত্রমূলক বা বিনা ঘোষণায় অতর্কিত আক্রমন ফিতনা-ফাসাদ-সন্ত্রাস গণ্য হবে।

() জিহাদের জন্য সমস্ত পস্তুতিসহ শত্রুদেরকে অবরোধ করার পর জিহাদ শুরুর আগে সন্ধির জন্য চেষ্টা করতে হবে। ১ম শর্তঃ  তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। যদি তারা দাওয়াতে সাড়া দেয় এবং দ্বীনকে পরিপূর্ণ ভাবে কবুল করে নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন জিহাদ নাই, কারণ তারা দ্বীনি ভাই। ২য় শর্তঃ ১ম শর্ত মেনে নিতে অপারগ হলে তাদেরকে বশ্যতা স্বীকারসহ নিরাপত্তা (জিজিয়া) কর প্রদানের আহবান জানাতে হবে। যদি তারা মেনে নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন জিহাদ নাই, কারণ তারা তখন আশ্রিত। ৩য় শর্তঃ ২য় শর্তও মেনে নিতে অপারগ হলে তাদের সাথে যুদ্ধ হবে। তবে তারা যদি তাদের ভুখণ্ড মুসলিম কর্তৃপক্ষের মালিকানায় বিনা যুদ্ধে সেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে চায় বা অমুসলিম প্রজা হিসাবে শান্তিতে বসবাস করতে চায় তাহলেও তাদের বিরুদ্ধে মুজাহিদ পরিচালনা করা যাবে না। এ সব শর্তের কোন ব্যত্যায় ঘটিয়ে হঠাৎ আক্রমন ফিতনা-সন্ত্রাস-দস্যুতা গণ্য হবে।

() জিহাদ চলাকালীন মুজাহীদ বাহিনীকে আল্লাহর বিধানের উপর অবিচল থাকতে হবে। অস্ত্র পরিচালনা করতে হবে শুধুমাত্র সশস্ত্র শত্রুদের বিরুদ্ধে। যারা যুদ্ধের জন্য ঘাটিতে সমবেত কিন্তু কিন্তু এখনও ময়দানে আসে নাই, তাদেরকেও আক্রমন করে ঘাটি ধ্বংস করা যাবে। যুদ্ধ কালীন যদি কোন শত্রু সেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে বা আহত হয়ে অস্ত্র ত্যাগ করে তাহলে গণিমতের লোভে তার উপর আক্রমন করা যাবে না। তবে তাকে বন্দী করতে হবে আর আহত হলে আহত মুজাহিদদের অনুরূপ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এর কোন ব্যত্যায় ঘটিয়ে হঠাৎ আক্রমন ফিতনা-সন্ত্রাস-দস্যুতা গণ্য হবে।

() জিহাদের ময়দানে শত্রু কওমের নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধি, রোগগ্রস্থ ও যারা যুদ্ধে অক্ষম তাদের পূর্ণ মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। গণিমতের লোভে তাদেরকে হত্যা করা যাবে না বা তাদের উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা যাবে না। যুদ্ধ শেষে বশ্যতা স্বীকার সাপেক্ষে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ মালিকানাহীন করদাতা প্রজা হিসাবে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের সুযোগ থাকবে।

(১০) যুদ্ধ শেষে নিহত শত্রুদের মৃতদেহের উপর কোন অত্যাচার বা বিকৃত করা যাবে না। আহত বন্দীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল বন্দীদের বিচারের আওতায় আনা যাবে, মুসলিম বন্দী বিনিময়ে ব্যবহার করা যাবে, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ মুক্তিপন আদায় করা যাবে বা বিনা পারিশ্রমিকে সশ্রম দাস হিসাবেও কাজে লাগানো যাবে। মুসলিমদের ইমাম বিষয়টি শুরায় পরামর্শ করে নিস্পত্তি করবেন। এর কোন ব্যত্যায় ঘটিয়ে ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত ফিতনা-সন্ত্রাস-দস্যুতা গণ্য হবে।

আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর মৌলিক লক্ষ্যমাত্রা

আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালার চুড়ান্ত সন্তোষ অর্জন করা এর মূল লক্ষ্য হল দুনিয়া থেকে সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন, ফিতনা-ফাসাদ, সন্ত্রাস ও আল্লাহদ্রোহি তাগুতী ও শয়তানী শক্তির মূলোৎপাটন করে সর্বত্র আল্লাহর দ্বীন-কে বিজয়ী বেশে কায়েম করা তথা আল্লাহর কলেমাকে সমোন্নত করা। সুতরাং শত্রুভেদে জিহাদের লক্ষ্য হল-

(১) কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক বিরুদ্ধে জিহাদের লক্ষ্য-কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ ও লক্ষ্য থাকতে হবে। উপযুক্ত কারণ ছাড়া শক্তি প্রয়োগ বা জিহাদ করা ইসলাম অনুমোদন করে না। কতিপয় কারণ ও লক্ষ্য হল-

ক) আক্রমনকারীকে ইসলামের দুশমনদেরকে প্রতিহত করা- মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন: আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তবে সীমালংঘন কর নানিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালবাসেন না- (সূরা বাকারাহঃ ১৯০)

খ) ফিতনা-ফাসাদ পুরোপুরি নির্মূল করে দুনিয়ার বুকে সর্বত্র আল্লাহর দ্বীন সুপ্রতিষ্ঠিত করা- আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “আর তাদেরকে (ফিতনা সৃষ্টিকারী লোকদেরকে) হত্যা কর যেখানে তাদেরকে পাবে এবং যে স্থান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করেছে তোমরাও সেখান থেকে তাদেরকে বের করে দাওকেননা ফিতনা হত্যাকাণ্ডের চেয়েও ভয়ঙ্করযতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে মসজিদে হারামের নিকট যুদ্ধে লিপ্ত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মসজিদে হারামের নিকট তাদের সাথে যুদ্ধ কর নাযদি তারা তোমাদেরকে হত্যা করে তাহলে তোমরাও তাদেরকে হত্যা করবেএটাই কাফিরদের পরিণামযদি তারা ফিৎনা-ফাসাদ থেকে বিরত থাকে, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহপরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালুতোমরা ফিৎনা-ফাসাদসৃষ্টিকারীদের সাথে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না ফিতনার পুরোপুরি অবসান হয় এবং দ্বীন কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই হয়এরপর যদি তারা (ফিতনা থেকে) বিরত হয় তাহলে যালিমদের ছাড়া কারো উপর আক্রমণ করা যাবে না" (সূরা বাকারাহঃ ১৯১-১৯৩)

গ) বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের অবসান করে মানবতার কল্যান নিশ্চিত করা- মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “অতঃপর ঈমানদার গণ আল্লাহর হুকুমে-জালুত বাহিনীকে পরাজিত করলো,এবং দাউদ জালুতকে হত্যা করলো। আল্লাহ দাউদকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন। তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ যদি মানব জাতির একদলকে-অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন,তাহলে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহশীল” -(সুরা বাকারাহঃ আয়াত নং ২৫৩)

(২) আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে জিহাদের লক্ষ্যঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “তোমরা যুদ্ধ করতে থাক আহলে কিতাবের লোকদের বিরুদ্ধে, যারা ঈমান আনে না আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, এবং অনুসরণ করে না প্রকৃত সত্য দ্বীন, যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা স্বীকার করে, স্বহস্তে জিযিয়া প্রদান করে”- [সূরা তাওবাঃ ২৯]

(৩) মুমিনদের কোন দলের বিরুদ্ধে জিহাদের লক্ষ্যঃ মহান আল্লাহ্‌ তা’য়ালা বলেন : “যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন”–(সূরা হুজরাতঃ ৯)

(৪)বিশ্বব্যাপী মানব সভ্যতার মাঝে জিহাদের চুড়ান্ত লক্ষ্যঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : " আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা-ফাসাদ পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায় এবং সর্বত্র আল্লাহর দ্বীন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপসমূহ লক্ষ্য করেন- [সুরা আনফালঃ আয়াত-৩৯]

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে , আমি যেন মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে থাকি যতক্ষন তারা লা-ইলাহাহ এর ইকরা করবে । অত;পর তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে নিবে তখন জান-মাল ও সর্বস্ব শরীয়তের হদছাড়া সংরক্ষিত তাঁর সমস্ত হিসাব-কিতাব আল্লাহ তা'আলার নির্ধারিত তিনি তাঁর বেপারে ফয়সালা করবেন” -(বুখারী, মুসলিম ও নাসায়ী)

আল্লাহর পথে জিহাদ’-যাদের বিরুদ্ধে করতে হবে

দ্বীনের ব্যাপারে বিদ্রূপকারী কুফর-প্রধান বা তাগুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “আর যদি ভঙ্গ করে তারা তাদের শপথ প্রতিশ্রুতির পর এবং বিদ্রুপ করে তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে, তবে কুফর প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর” -(সূরা তাওবাঃ আয়াত-১২)

আল্লাহর রসূলের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “তোমরা কি সেই দলের সাথে যুদ্ধ করবে না; যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রসূলকে বহিস্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় কর?অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও” -(সূরা তওবাঃ আয়াত-১৩)

মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : "তোমরা মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করবে, তোমাদের হাতে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন, তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের উপর তোমাদেরকে জয়ী করবেন, মুমিনদের মনকে প্রশান্ত করবেন, তিনি মুমিনদের অন্তরের ক্ষোভ দূর করে দেবেন। আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা ক্ষমাশীল হন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাপ্রজ্ঞাময়।" -(সূরা তাওবাঃ আয়াত ১৪-১৫)

মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : "আর মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর যেমন তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে সর্বাত্মকভাব। আর জেনে রাখ! আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের সঙ্মে আছেন।" -(সূরা তাওবাঃ আয়াত-৩৬)

তিনি আরও বলেন : “আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন” -(সূরা তাওবাঃ ৩৬)

কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “হে নবী! কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। তাদের ঠিকানা হল দোযখ এবং তাহল নিকৃষ্ট ঠিকানা” -(সূরা তাওবাঃ আয়াত-৭৩)

নিকটবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “হে মুমিনগন! ঐ কাফেরদের সাথে যুদ্ধকর যারা তোমাদের নিকটবর্তী, যেন তারা তোমাদের মাঝে কঠোরতা খুঁজে পায়, আর জেনে রাখ আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন” -(সূরা তাওবাঃ আয়াত-১২৩)

আহলি কিতাব (ইহুদী-খৃষ্টান)-দের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “তোমরা যুদ্ধ করতে থাক ঐ সব আহলে কিতাবের ঐ লোকদের বিরুদ্ধে, যারা ঈমান আনে না আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, এবং অনুসরণ করে না প্রকৃত সত্য দ্বীন, যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা স্বীকার করে, স্বহস্তে জিযিয়া প্রদান করে” -[সূরা তাওবাঃ ২৯]

আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য অমান্যকারী তথাকথিত মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন”–(সূরা আল-হুজরাতঃ আয়াত-)

মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে যু্দ্ধঃ হযরত উম্মু সালামা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অচিরেই তোমাদের উপর এমন কতিপয় শাসক হবে যাদের কিছু কাজ (শারীয়াত অনুযায়ী হওয়ার কারণে) তোমরা পছন্দ করবে আর কিছু কাজ (শারীয়াত বিরোধী হওয়ার কারণে) অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের ভাগী হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো না? তিনি বললেন : না, যতক্ষন তারা তোমাদের মাঝে নামাজ কায়েম করে।- (মুসলিমঃ হাদীস নং ৪৬৪৯, তিরমিযীঃ হাদীস নং ২২১১)

আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর কৌশল ও নীতিমালা
 
সাধ্যমত অস্ত্র-শস্ত্র ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুতীসহ সর্বদা শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : (হে মুমিনগণ!) কাফিরদের মোকাবেলা করার জন্য তোমরা সাধ্যমত অস্ত্র-শস্ত্র ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, এর মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর শত্রুদেরকে ও তোমাদের শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখবে এবং তাদেরকে ছাড়া অন্যান্য গোপন শত্রুদেরকেও, যাদের সম্পর্কে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যা ব্যয় করবে তার পরিপূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের উপর যুলম করা হবে না। -(সূরা আনফালঃ আয়াত ৬০)
 
জিহাদের ময়দানে পলায়ন বা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা যাবে নাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা একটি সেনাবাহিনীর আকারে কাফেরদের মুখোমুখি হও তখন তাদের মোকাবিলায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না৷ যে ব্যক্তি এ অব্স্থায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে সে আল্লাহর গযবে ঘেরাও হয়ে যাবে৷ তার আবাস হবে জাহান্নাম এবং ফিরে যাবার জন্যে তা বড়ই খারাপ জায়গা৷ তবে হাঁ যুদ্ধের কৌশল হিসেবে এমনটি করে থাকলে অথবা অন্য কোন সেনাদলের সাথে যোগ দেবার জন্য করে থাকলে তা ভিন্ন কথা ৷”  -(সূরা আনফাল : আয়াত ১৫-১৬)

সংখ্যায় দশগুণ শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবেঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন :হে নবী! আপনি মুমীনগণকে জিহাদের জন্য উৎসাহিত করুন। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন ধৈর্য্যশীল ব্যক্তি থাকে, তবে দুইশত জনের মোকবেলায় বিজয়ী হবেআর তোমাদের মধ্যে যদি এমন একশত জন লোক থাকে, তবে হাজার কাফেরের উপর বিজয়ী হবে, কারণ ওরা জ্ঞানহীন” -(সূরা আনফালঃ আয়াত-৬৫)

সংখ্যায় কমপক্ষে দ্বিগুণ শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ়পদ থাকতে হবেঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন :
“আল্লাহ এখন তোমাদের বোঝা হালকা করে দিয়েছেন (দায়িত্ব পালন সহজ করে দিয়েছেন) এবং তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে একশত জন ধৈর্য্যশীল মুমিন থাকলে তারা দুইশত জন কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। আর তোমাদের মধ্যে এক হাজার ধৈর্য্যশীল মুমিন থাকলে আল্লাহর হুকুমে তারা দুই হাজার কাফিরের উপর বিজয়ী হবে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই আছেন”  -(সূরা আনফালঃ আয়াত-৬৬)

সম্মীলিত শত্রুর মোকাবেলায় সম্মীলিতভাবে জিহাদ করতে হবেঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন” -(সূরা তাওবাঃ আয়াত-৩৬)

শত্রুর মনে ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করতে হবেঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “তাদের মনে আল্লাহর চেয়ে তোমাদের ভয়ই বেশী। কারণ, তারা এমন লোক যাদের কোন বিবেক-বুদ্ধি নেই। এরা একত্রিত হয়ে (খোলা ময়দানে) কখনো তোমাদের মোকাবিলা করবে না। লড়াই করলেও দুর্গাভ্যন্তরে অবস্থিত জনপদে বা প্রাচীরের আড়ালে লুকিয়ে থেকে করবে। তাদের আভ্যন্তরীণ পারস্পরিক কোন্দল অত্যন্ত কঠিন। তুমি তাদের ঐক্যবদ্ধ মনে কর। কিন্তু তাদের মন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের এ অবস্থার কারণ হলো তারা জ্ঞান ও বুদ্ধিহীন” -(সুরা হাশরঃ আয়াত ১৩-১৪)

শত্রুরা সন্ধি করতে চাইলে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া এবং সম্মানজনক সন্ধি করার নীতিমালাঃ  মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “কাফিররা যদি সন্ধি করতে আগ্রহী হয়, তাহলে আপনিও সন্ধি করতে আগ্রহী হবেন এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভর করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন। যদি তারা (সন্ধির প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে) আপনাকে প্রতারণা করতে চায় তাহলে আপনার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি আপনাকে নিজের সাহায্য এবং মুমিনদের মাধ্যমে শক্তিশালী করেছেন, তিনি মুমিনদের হৃদয়ে পরস্পরের জন্য ভালবাসা তৈরি করে দিয়েছেন। পৃথিবীর সমস্ত অর্থ-সম্পদ ব্যয় করলেও আপনি তাদের মনে এমন ভালবাসা তৈরি করতে পারতেন না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে ভালবাসা তৈরি করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞানী। হে নবী! আপনার জন্য এবং আপনার অনুসারী মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট”। -(সূরা আনফালঃ আয়াত ৬১-৬৪)

শত্রুর মোকাবেলায় অবিচল থেকে বেশী বেশী আল্লাহর জিকির করতে হবেঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “ওহে মুমিনগণ! তোমরা যখন (শত্রুদের) কোন দলের মুখোমুখি হবে তখন অবিচল থাকবে এবং আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করবে, এতে তোমরা বিজয়ী হবে।-(সূরা আনফালঃ আয়াত-৪৫)

নিজেদের মধ্যে পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে নাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে” -[সূরা আল-আনফাল:৪৬]

শত্রুর সাথে কোন গোপন আতাত বা বন্ধুত্ব করা যাবে নাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “হে মুমিনগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রু-কে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তোমরা তাদের নিকট বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠিয়েছো আর তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কারণে রাসূলকে ও তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। যদি তোমরা আমার পথে জিহাদ করার জন্য এবং আমার সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে বের হয়ে থাক, তাহলে তাদের সাথে কেন গোপনে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছ? তোমরা যা গোপন কর এবং তোমরা যা প্রকাশ কর আমিই তা সবচেয়ে বেশি জানি। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এমন করবে সে সঠিকÑসরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে”– (সুরা মুমতাহিনাঃ আয়াত-১)

আল্লাহর সাহায্যের উপরই সর্বদা নির্ভর করতে হবেঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর জয়ী হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? মু'মিনগণ আল্লাহর উপরই নির্ভর করুক– (সূরা আল ইমরানঃ আয়াত-১৬০)

সংখ্যাধিক্যের গর্ব পরিহার করতে হবেঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন অসংখ্য ক্ষেত্রে এবং তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন হুনায়ন যুদ্ধের দিন, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে গর্বিত করেছিল। পরে এ সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোন কাজে আসে নি বরং পৃথিবী অনেক বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য তা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছিল। এরপর তোমরা পেছন ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে। এরপর আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের উপর প্রশান্তি নাযিল করেন এবং তাদের সাহায্যের জন্য এমন এক সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন যাদেরকে তোমরা দেখতে পাও না। এভাবে তিনি কাফিরদের শাস্তি প্রদান করেন। আর এটাই হল কাফিরদের কর্মফল।” -(সূরা তাওবাঃ আয়াত-২৫-২৬)

যুদ্ধবন্ধীদের ব্যাপারে নীতিমালাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : পৃথিবীতে শত্রুদেরকে চুড়ান্তভাবে পরাজিত করার আগে নবীর জন্য তাদেরকে (হত্যা না করে) বন্দী করে নিজের কাছে রাখা উচিত নয়। তোমরা দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ কামনা কর অথচ আল্লাহ তোমাদের জন্য আখিরাতের কল্যাণ চান। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞানী। -(সূরা আনফালঃ আয়াত ৬৭)

যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ব্যাপারে নীতিমালাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : মুমিনগণ আপনাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের বণ্টন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। (হে রাসূল স) আপনি তাদেরকে বলুন, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ ও রাসূলের জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের বণ্টন সম্পর্কিত মতানৈক্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত)  নিজেদের সম্পর্ক সংশোধন করে নাও। তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।-(সূরা আনফালঃ আয়াত ১)

তিনি আরও বলেন : “যুদ্ধে (কাফিরদের নিকট থেকে) তোমরা (গনীমত হিসেবে) যা পেয়েছো তা হালাল ও পবিত্র হিসেবে তোমরা ভোগ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর (তাঁর নির্দেশ মেনে চল)। নিশ্চয় আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়”।-(সূরা আনফালঃ আয়াত ৬৯)

ইসলামী রাষ্ট্র বহির্ভূত অন্যান্য অমুসলিম দেশে বসবাসরত মুসলিমদের ব্যাপারে নীতিমালাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “যারা ঈমান এনেছে, হিজরাত করেছে, জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে তারা একজন আরেকজনের বন্ধু। যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরাত করে নি, হিজরাত না করা পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে তোমাদের কোন দায়িত্ব নেই। তবে দীন সম্পর্কে যদি তারা তোমাদের সাহায্য চায় তাহলে তাদেরকে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। তবে যে জাতির সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করা কর্তব্য নয়। তোমরা যা কর আল্লাহ তাআলা তা সবই দেখেন”।-(সূরা আনফালঃ আয়াত ৬৯)

জিহাদের সময় প্রতিপক্ষের সাধারণ জনগন, ঘর-বাড়ি ও গাছপালা সম্পর্কে নীতিমালাঃ মুতার যুদ্ধে রওনা হওয়ার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বাহিনীকে নির্দেশ দেন, ‘তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।’ - (মুসলিমঃ ১৭৩১)
ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও একই পথে হাঁটেন। তার খিলাফতকালের প্রথম যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণকালে তিনি এর সেনাপতি উসামা ইবন জায়েদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর উদ্দেশে বলেন, ‘হে লোক সব, দাঁড়াও আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের লাশ) বিকৃত করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না এবং নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতি গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের মতো করে এবং তারা যা ছেড়ে দিয়েছে নিজেদের জন্য, তার ওপর ছেড়ে দেবে। - (মুখতাসারু তারিখি দিমাশক : ১/৫২; তারিখুত তাবারি)

আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর ফজিলত

যারা আল্লাহর পথে জিহাদ’- এ বিধানটি পালনে সর্বদা নিয়োজিত তারা আল্লাহ তা’য়ালার বন্ধুগণের শামীল। দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য সুবিশাল মর্যাদা। তারা আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত, জাহান্নাম থেকে মুক্ত এবং জান্নাতের সুংবাদপ্রাপ্ত মহান জামাতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন-

আল্লাহ মুজাহীদদেরকে ভালবাসেনঃ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সীসাঢালা প্রাচীরের মত সংঘবদ্ধ হয়ে” -(সূরা সফ : আয়াত-৪)

আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর বিনিময় হল জান্নাতঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : "অবশ্যই আল্লাহ মু'মিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল কিনে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তারা জান্নাত লাভ করবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, যাতে তাতে হত্যা করে ও তাদেরকে হত্যা করা হয়। তার উপর সাচ্চা ওয়াদা করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জিলে ও কুরআনে আর আল্লাহর চেয়ে বিশি কে ওয়াদা পূরণ করে? কেজেই যে কেনা-বেচার সাথে তোমরা সংযুক্ত হয়েছ তার জন্য তোমরা আনন্দ প্রকাশ কর। আর এটিই হচ্ছে বিরাট সাফল্য।" -(সূরা তাওবাঃ আয়াত-১১১)

মদীনাবাসী এবং এর আশেপাশের বেদুঈনদের জন্য আল্লাহর রাসূলের সহযাত্রী না হয়ে পেছনে থেকে যাওয়া এবং রাসূলের জীবনের চেয়ে তাদের নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করা উচিত নয়। কেননা আল্লাহর পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় কষ্ট পাওয়া, কাফিরদের ক্রোধ তৈরি হয় তাদের এমন কাজ করা এবং শত্রুদের নিকট থেকে কিছু (আঘাত বা অন্য কোন ক্ষতি) লাভ করা (আল্লাহর নিকট) তাদের সৎকর্ম হিসেবে গণ্য হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের কাজের ফল নষ্ট করেন না।(আল্লাহর পথে) তারা কম বা বেশি যে পরিমাণের অর্থই ব্যয় করে এবং যত মাঠ-ময়দানই তারা অতিক্রম করে তা তাদের অনুকূলে লেখা হয়, যাতে তারা যা করে সেগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তাদেরকে তারচেয়ে সুন্দরতম পুরস্কর প্রদান করতে পারেন।" -(সূরা তাওবাঃ আয়াত ১২০-১২১)

মাগফিরাত, জান্নাত, পবিত্র বাসস্থান, আল্লাহর সাহায্য ও আশু বিজয়ঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : "হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ তোমাদের পাপরাশিকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদিশে নদীমালা প্রবাহিত এবং (প্রবেশ করাবেন) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য। আর অপর আরেকটি বিষয় যা তোমরা ভালোবাস আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং দ্রুত বিজয়। কাজেই বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও” -(সূরা সাফঃ আয়াত ১০-১৩)

আল্লাহর পক্ষ থেকে সুমহান প্রতিদান, মাগফিরাত ও রহমতঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : "যে সব মুসলমান বিনা ওযরে ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে তারা উভয়ে সমান হতে পারে না। যারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, ঘরে বসে থাকা লোকদের উপর আল্লাহ তাদেরকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। আল্লাহ সবাইকে কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর মুজাহিদেরকে আল্লাহ ঘরে বসে থাকা লোকদের উপর বিরাট প্রতিদান দিয়েছেন। অর্থাৎ অনেক মর্যাদা যা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে এবং মাগফিরাত ও রহমত। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও কুরুণাময়” -(সূরা নিসাঃ আয়াত ৯৫-৯৬)

জিহাদে অংশগ্রহণ হল ঈমানের সত্যায়নঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন :  “তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ” -(সূরা হুজরাতঃ আয়াত-১৫)

আল্লাহর কাছে সুবিশাল মর্যাদাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন :  "যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে স্বীয় জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে, আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রয়েছে সুবিশাল মর্যাদা আর তারাই হবে সফলকাম - (সূরা তওবাঃ আয়াত-২০)

রসূল-এর সঙ্গ ও প্রতিটি পদক্ষেপেই উত্তম বিনিয়ঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “মদিনাবাসী ও পার্শ্ববর্তী পল্লীবাসীদের উচিৎ নয় রসূল-এর সঙ্গ ত্যাগ করে পিছনে থেকে যাওয়া এবং রসূল-এর প্রাণের থেকে নিজেদের প্রাণকে অধিক প্রিয় মনে করা । এটি এজন্য যে ,আল্লাহর পথে যে তৃষ্ণা , ক্লান্তি , ও ক্ষুধাতাদের স্পর্শ করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের কারণ হয় আর শত্রুদের পক্ষ থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয় তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয় নেক আমল । নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের হক্ব নষ্ট করেন নাআর তারা অল্প বিস্তর যা কিছু ব্যায় করে, যত প্রান্তর তারা অতিক্রম করে , তা সবই তাদের নামে লিখা হয় যেন আল্লাহ তাদের কৃতকর্ম সমূহের উত্তম বিনিময় প্রদান করতে পারেন” -(সুরা তওবাঃ আয়াত ১২০-১২১)

জান্নাত ওয়াজিব হবেঃ হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিম মিল্লাতের কোন ব্যক্তি ক্ষণকালের জন্যও আল্লাহর পথে জিহাদ করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (আবুদাউদ. তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদ)

জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্বঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর কথাকে সত্য বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। অথবা তাকে জিহাদের সাওয়াব ও গণীমত লাভে ধন্য করে গাজী হিসাবে ঘরে ফিরিয়ে আনেন’’-[বুখারী ও মুসলিম]

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তার দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেন, যে তার রাস্তায় বের হয়, -যাকে আমার প্রতি ঈমান ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত কোন জিনিস বের করেনি-, আমি তাকে অতিসত্বর তার পাওনা সওয়াব অথবা গনিমত দেব অথবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হত, তাহলে আমি কোন যুদ্ধ থেকে পিছপা হতাম না। আমি চাই আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর আমি শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর আমি শহীদ হব-[বুখারি, মুসলিম, নাসায়ি ও ইবনে মাজাহ] 

জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবেঃ হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর পথে বান্দার দুটি পা ধুলিধূসরিত হবে আবার তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে- এমনটি কখনও হতে পারে না। (বুখারী)

বিরতিহীন ইবাদাতের সওয়াব পাবেঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদের নিয়তে রওয়ানা হয় সে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকেই ঐ ব্যক্তির ন্যায়ই হয়ে যায় যে বিরতিহীনভাবে রোযা রাখে এবং নামাযে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকে। যে পর্যন্ত সে বাড়িতে ফিরে না আসবে সে পর্যন্ত তাঁর আমল- নামায় এ ধরনের সওয়াব লিপিবদ্ধ হতে থাকবে। -(মেশকাত শরীফ)

জাহান্নাম থেকে মুক্তিঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :  যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে সে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) অগ্নি স্পর্শ করা সম্ভব নয় যদিও দোহনকৃত দুধ উলানে ফিরানো সম্ভব হয়। আর জাহান্নামের ধোঁয়া এবং আল্লাহর পথে (চলার কারণে) উড়ন্ত ধুলি কখনো একসাথে হতে পারেনা। -{নাসায়ী শরীফঃ হাদিস নং-৩১০৮, সুনানে তিরমিযীঃ হাদিস নং-১৬৩৩, ২৩১১, সুনানে আবু দাউদঃ হাদিস নং-৪২৭}

এক দিনের জিহাদ দুনিয়া ও এর যাবতীয় সম্পদের চেয়ে উত্তমঃ হযরত সাহাল ইবনে সাআদ  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ্ রাস্তায় একদিন জিহাদের জন্য ব্যয় করা দুনিয়া ও এর যাবতীয় সম্পদের চেয়ে উত্তম। -(বুখারী ও মুসলিম)

সমুদ্রে যুদ্ধের বিশেষ ফজিলতঃ হযরত উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খালা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেন। তিনি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, 'আমার উম্মতের সর্ব প্রথম যে সৈন্য দলটি সমুদ্রে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, তারা তাদের জন্য জান্নাতকে অবধারিত করে নেবে। এ কথা শোনে উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি তাদের মধ্যে থাকতে চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের তাদের মধ্য হতে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মধ্য যে সৈন্য দলটি রোম সম্রাট সীজারের শহরে যুদ্ধ করবে, তারা সবাই ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না।' -[ বুখারীঃ হাদিস নং ২৯২৪]

জিহাদের ময়দানে পাহারাদারির ফজিলতঃ হযরত আনাস বিন মালেক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, জিহাদের ময়দানে একটিরাত পাহারাদারি করা ঘরে বসে ১০০০ বছর নামাজ-রোজা করার চেয়ে উত্তম। উল্লেখিত বছর হবে ৩৬০ দিনে। তবে একদিন হবে ১০০০ বছরের ন্যায়।  -[সুনানে ইবনে মাজাহ]

দুনিয়া ও দুনিয়ার ধনসম্পদ অপেক্ষা অধিক উত্তমঃ হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দিনের প্রথমার্দ্ধের কোন অংশে বা শেষার্দ্ধের কোন অংশে আল্লাহর রাস্তায় বাহির হওয়া সমস্ত দুনিয়া ও দুনিয়ার ধন সম্পদ অপেক্ষা অধিক উত্তম । জান্নাতের এক ধনু বা এক চাবুক পরিমাণ তথা সামান্যতম অংশ সমগ্র দুনিয়ার ও দুনিয়ার সমস্ত সামগ্রী অপেক্ষা উত্তম । জান্নাতের কোন হুর যদি দুনিয়ার প্রতি শুধু উঁকি দেয় তবে আসমান জমীন সুবাসে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে । এবং তাদেরওড়না সমগ্র জগত ও জগতের ধন সম্পদ অপেক্ষা অধিক উত্তম । (বুখারী ও মুসলিম )

হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের ১ ধনু পরিমাণ (তথা সামান্য) অংশ সমগ্র বিশ্বের ধন-সম্পদ অপেক্ষা উত্তম । আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন , দিনের প্রথমার্দ্ধের কোন সময় বা শেষার্দ্ধের কোন সময়ে আল্লাহর রাস্তায় বাহির হওয়া সমগ্র বিশ্বের ধন সম্পদ অপেক্ষা উত্তম। -(বুখারী ও মুসলিম )

আল্লাহ তা’আলার যিম্মায় জান্নাতে যাবেঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা সে ব্যাক্তির দায়িত্ব স্বহস্তে তুলে নিয়েছেন , যে ব্যাক্তি তারই রাস্তাই বের হয় । আমারই রাস্তায় জিহাদ , আমার প্রতি ঈমান এবং আমার রাসুলের (সাঃ) এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই তাকে ঘর থেকে বের করে । তখন আমারই যিম্মাই সে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিব নতুবা সে তার যে বাসস্থান থেকে বেরিয়েছিল , তার পাপ্য সওয়াব গণিমত সহ তাকে সেখানে ফিরিয়ে আনব । -(সহীহ মুসলিম)
 
সর্বাধিক ভাল লোকঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে ভাল লোক আর কে মন্দ লোক তা জানিয়ে দেব না? সে ব্যক্তি ভাল লোকদের মধ্যে অন্যতম, যে ব্যক্তি ঘোড়া বা উটে সওয়াব হয়ে বা পায়ে হেটে সকল অবস্থাতেই মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর রাহে কর্মতৎপর থাকে। অপরদিকে সে ব্যক্তি মন্দ লোকদের অন্যতম, যে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে অথচ তা থেকে কোনো নসিহত কবুল করে না -(নাসায়ী)

আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর সহযোগীতার ফজিলতঃ হযরত যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর পথে জিহাদকারীকে যে ব্যক্তি সরঞ্জাম দেয় সেও মুজাহীদ দলের অন্তর্ভূক্ত আর মুজাহীদের অবর্তমানে যে ব্যক্তি তার পরিবার পরিজনের দেখাশুনা করে সেও মুজাহীদ দলের অন্তর্ভূক্ত। -(বুখারী ও মুসলিম)

আল্লাহর পথে জিহাদ’-এর সংকল্পের ফজিলতঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেল যে, সে জিহাদ করেনি বা জিহাদের কোন চিন্তাও তার মনে আসেনি, তার মৃত্যু হল নিফাকের একটি স্বভাবের উপর। -(ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)

জিহাদের আকাংখী অপারগ ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণের সওয়াব লাভ করবেঃ হযরত যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে কোন এক যুদ্ধে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ "মদীনাতে কিছু লোক রয়ে গেছে, তোমরা যে পথ অতিক্রম করছ বা যত উপত্যকা পাড়ি দিয়েছ,সব সময় তারা তোমাদের সাথেই ছিল।অসুস্থতার কারনে তারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।অন্য বর্ননায় এসেছেঃ তারাও তোমাদের মত প্রতিদান যোগ্য হবে।" -(মুসলিম)
 
বুখারীর বর্ননায় আছেঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে থেকে ফিরে আসছিলাম,তখন তিনি বললেনঃ "আমাদের পিছনে মদীনার কিছু লোক রয়েছে। আমরা যত গিরিপথ কিংবা উপত্যকা অতিক্রম করছি,তারাও সব সময় আমাদের সাথে ছিল।ওযরের কারনে তারা বাঁধা প্রাপ্ত হয়েছে।" -(বুখারী মুসলিম)

আল্লাহর পথে জিহাদপরিত্যাগ করার ভয়াবহ পরিণতিঃ

আল্লাহর পথে জিহাদ’- এই বিধানটি আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে ফরজ হওয়ার পরও যাদের মধ্যে এ বিধান পালনের ব্যাপারে সুদৃঢ় সংকল্প ও যথেষ্ট তৎপরতার অভাব রয়েছে আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে ধমকের সাথে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং পরিনতি হিসাবে দুনিয়ার জীবনে চরম লাঞ্ছনা ও পরকালে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন যেমন-

মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথেবের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর,তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচআখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতিকরতে পারবে না,আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান” - (সূরা তওবাঃ আয়াত ৩৮- ৩৯)
 
তিনি আরও বলেন : “(হে নবী)! আপনি বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা-মাতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই-বোন, তোমাদের বংশ, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের এমন ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর; আল্লাহ তা’য়ালা ও তার রাসুল এবং তার রাস্তায় জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় না হয়, তাহলে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না-(সুরা তওবাঃ আয়াত ২৪)
 
তিনি আরও বলেন : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় জীবনব্যবস্থা ত্যাগ করে (তার জেনে রাখা উচিত), অতি সত্তর আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদের তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাকে ভালবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি থাকবে অত্যন্ত সদয় এবং কাফেরদের প্রতি থাকবে অত্যন্ত কঠোর, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে আর কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আল্লাহ ব্যাপকতার অধিকারী ও মহাজ্ঞানী”- (সূরা মায়েদা : আয়াত-৫৪)

হযরত ইবন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ  “তোমরা যদি নিজেদের মধ্যে ব্যবসা করতে থাক,আর ষাঁড়ের লেজের পেছনে চলতে থাক, এবং কৃষক হিসাবেই সন্তুষ্ট হয়ে যাও আর জিহাদ ছেড়ে দাও, আল্লাহ তখন তোমাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন যতক্ষন তোমরা তোমাদের দীনে ফিরে না যাও-আবুদাউদ : সহীহ)

আল্লাহর পথে শাহাদাত’-এর ফজিলত

জিহাদের ময়দানে বা অন্যত্র আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে নাঃ মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন : “আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো - [সূরা আল-ইমরানঃ আয়াত-১৪৫]

শহীদগণ আল্লাহর কাছে জীবিতঃ মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে কখনই তোমরা মৃত মনে করোনা, বরং তারা তাদের আল্লাহর দৃষ্টিতে জীবিত ও তারা (আমি আল্লাহর) কাছ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। আল্লাহ নিজ দয়ায় তাদের যা দিয়েছেন তাতে তারা মহা আনন্দিত। এবং তাদের পিছনে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে এ জন্য যে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দু:খিতও হবেনা। তারা আল্লাহর আনন্দ প্রকাশ করে তাঁর উপকার ও অনুগ্রহের জন্য, এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীদের কর্মফল বিনষ্ট করেন না” -(সূরা-আল্ ইমরানঃ ১৬৯-১৭১)

তিনি আরও বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের জন্য।” -[আল কুরআনঃ সূরা আল বাক্বারাহঃ আয়াত ১৫৩-১৫৫]

শহীদদের মৃত্যু কষ্ট হবে নাঃ  হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মওতের ছোঁয়া একজন শহীদের কাছে তেমন, যেমনটি তোমাদেরকে কেউ চিমটি কাটলে অনুভব করে -(তিরমিযী, নাসায়ী দারেমী)

কবরের প্রশ্ন করা হবে নাঃ হযরত রাশেদ বিন সাদ জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন- কোনো এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কবরে সকল মুমিনের পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের হবে না, এর কারণ কি? হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জবাবে বলেন: তার মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই তার পরীক্ষার জন্যে যথেষ্ট-(নাসায়ী)

দুনিয়ায় ফিরে এসে বার বার শহীদ হতে চাইবেঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর সে দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও দুনিয়ার সবকিছু তার হয়ে যায়। কিনতু শহীদ ব্যতীত, শহীদ চাইবে দুনিয়াতে আবার ফিরে আসতে, অতঃপর সে দশবার শাহদাত বরণ করতে (একাধিকবার)। যেহেতু সে উহার ফজিলত ও মর্যাদা দেখতে পেয়েছে। -(বুখারি ও মুসলিম)

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জিহাদ সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে প্রিয় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সেই আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন, আমর মন তো চায় আল্লাহর পথে আমি শহীদ হই, আবর জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই এবং আবার শহীদ হই-(বুখারী ও মুসলিম)

হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই যখন জান্নাতীঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ঐ দু'টি লোককে দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপর জনকে হত্যা করে এবং দুজনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিহত ব্যক্তিকে আল্লাহ পথে যুদ্ধ করা অবস্থায় ( কোন কাফের কর্তৃক ) হত্যা করে দেওয়া হল। পরে আল্লাহ্ তা'আলা হত্যাকারী কাফেরকে তাওবাহ করার তৌফিক প্রদান করেন। ফলে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে আল্লাহ রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়। - [ সহীহ বুখারী ২৮২৬ ; মুসলিম ১৮৯০ ; নাসাঈ ৩১৬৫, ৩১৬৬৬ ; ইবনে মাজাহ ১৯১ ; মুসনাদে আহমদ ৭২৮২,২৭৪৪৬ , ৯৬৫৭, ১০২৫৮ ; মুয়াত্তা মালিক ১০০০]

আল্লাহর পক্ষ হতে শহীদদের জন্য সাতটি পুরষ্কারঃ হযরত উবাদ ইবনে সামেত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন শহীদ আল্লাহর পক্ষ হতে সাতটি পুরষ্কার লাভ করেন-
১) তার রক্তের প্রথম ফোঁটা পতনের সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
২) তিনি জান্নাতে তাঁর মর্যাদা দেখতে পারেন
৩) ঈমানের পোশাকে তাকে আচ্ছাদিত করা হয়ে থাকে।
৪) তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
৫) হাশরের ময়দানের ভয়াবহ চিন্তা-উতকন্ঠা থেকে নিরাপদে থাকবেন।
৬) তার মাথায় একটি সম্মানের মুকুট স্থাপন করা হবে।
৭) তিনি তাঁর পরিবারের সত্তর জন সদস্যের জন্য শাফায়াত করা সুযোগ পাবেন।
-{মুসনাদ আহমাদ, তাবারানী, আত তারগীব ওয়া তারহীব-২/৪৪৩}

শ্রেষ্ঠতম শহীদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "সমুদ্রের শহীদান, আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান ও দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান হল মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম শহীদ |" -(আল ফিতান,খণ্ড ২,পৃষ্ঠা ৪৯৩)

শাহাদাতের আকাংখীগণও শহীদদের মর্যাদা পাবেঃ হযরত সাহল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি কোন ব্যক্তি খাঁটি দিলে শাহাদাতের জন্য দোয়া করে স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও আল্লাহ তাকে শহীদদের স্তরে পৌঁছিয়ে দেন। -(সহীহ মুসলিম)

অন্যান্য ধরণের শহীদদের বিবরণঃ হযরত আবুল আওআর সাঈদ ইবনে জায়েদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি : “যে ব্যক্তি তার মাল-ধন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ । যে ব্যক্তি নিজ রক্ত (প্রান) রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ । যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ এবং যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সেও শহীদ ।” -[আবু দাউদঃ ৪৭৭২, তিরমিযীঃ ১৪১৮] 

আল্লাহর পথে জিহাদ’-কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে

জিহাদ সমাপ্তি ঘটেনিঃ হযরত সালমা ইবনে নাফীল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। ইত্যবসরে এক ব্যাক্তি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়াসমুহ ছেড়ে দিয়েছি, আস্ত্রসমুহ স্বযত্নে রেখে দিয়েছি এবং কিছু সংখ্যক লোক ধারণা করছে যে যুদ্ধ-জিহাদ সমাপ্তি ঘটেছে। একথা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন যারা ধারণা করছে জিহাদ সমাপ্ত হয়েছে তারা মিথ্যার উপর রয়েছে। কেননা জিহাদ তো কেবল মাত্র শুরু হয়েছে। আমার উম্মতের একটি জামা'আত সর্বদা আল্লাহ তা'আলার রাহে জিহাদ করতে থাকবেআর তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্য সর্বদা কিছু লোকের অন্তর্কে বক্র করে রাখবেন যাতে তাদের মাধ্যমে মুজাহিদগণের রিযিকের ব্যবস্থা হয় অর্থাৎ উম্মতের একদল মুজাহিদ সর্বদা কাফেরদের সাথে লড়াই করবে এবং তাতে কাফেরদের মাল গণিমত হিসাবে মুজাহিদীনে কেরামের হাতে আসবে, এর দ্বারা তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ চালিয়ে যাবে এবং ঘোড়ার কপালে কিয়ামত পর্যন্ত সর্বদার জন্য মঙ্গল রেখে দেয়া হয়েছে, আর ইয়াজুজ-মাজুজ এর আবির্ভাব পর্যন্ত চলতে থাকবে। -(নাসায়ী শরীফ-কিতাবুল জিহাদ)

হিন্দুস্তানে ও দজ্জালের বাহিনীর সাথে যুদ্ধঃ হযরত নাহীক ইবনে সারীম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ নি:সন্দেহে তোমরা (হিন্দুস্তানে) মুশরিকদের সংগে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্বদিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে।" -(আল ইসাবা,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪৭৬)

শেষ মহাযুদ্ধ হবে দাজ্জালের সাথেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : "সমুদ্রের শহীদান, আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান হল মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম শহীদ |" -(আল ফিতান,খণ্ড ,পৃষ্ঠা ৪৯৩)

ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত যুদ্ধঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ঈয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং পাথরের আড়ালে লুকানো ইয়াহুদি সম্পর্কে উক্ত পাথর কথা না বলা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না হে মুসলিম! এই (দেখ) আমার আড়ালে ইয়াহুদী লুকিয়ে আছে, একে হত্যা কর -(বুখারীঃ হাদীস নং ২৯২৬)

কিয়ামত পর্যন্ত হকপন্থীগণ বিজয়ী হবেঃ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :  আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হক্বের পক্ষে লড়াই করবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা বিজয়ী থাকবে। - (সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং-৫০৬৩)

অন্য বর্ণনায়ঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মাতের একদল লোক সর্বদা দ্বীনে হকের ওপর বিজয়ী হয়ে থাকবে। যারা তাদের সহায়তা করা ছেড়ে দেবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত তারা এভাবেই হকের ওপর অবিচল থাকবে। -  (সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং-৪৭৯৮)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য তাঁর এ কল্যাণময় বিধান ‘আল্লাহর পথে জিহাদ’ সঠিকভাবে অনুধাবন করার এবং শাহাদাতের তামান্নায় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবনের পথে পথে মেনে চলার তৌফিক দিন! আ-মী-ন।



No comments:

Post a Comment