Thursday, June 5, 2014

তাকওয়া ভিত্তিক পারিবারিক পরিশুদ্ধি


তাকওয়া ভিত্তিক পারিবারিক পরিশুদ্ধি

আল্লাহর সন্তোষ, মহব্বত ও নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে মুমীনগণকে আত্মশুদ্ধির অর্জনের সাথে সাথে পারিবারিক জীবনে তাকওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও সবাইকে আপ্রাণ সাধনা করতে হবে। সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহূম)-গণের পরিবারের নমুনায় স্বীয় পরিবারকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আজীবন মেহনত করতে হবে। এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

- হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিজনদেরকে সে আগুন থেকে রক্ষা কর, যে আগুনের জ্বালানী হবে মানুষ এবং পাথর, যে আগুনের পাহারাদার হবে নির্মম হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের অধিকারী ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহর কোন আদেশের অবাধ্য হন না। বরং তিনি তাদেরকে যে কাজ করার আদেশ করেন, তারা তাই করেন। -(সূরা তাহরীম : ৬)

পারিবারিক পরিশুদ্ধির জন্য সুন্নাহ সম্মত সম্ভাব্য কর্মপন্থাঃ

১) আদর্শ পরিবার গঠন : সাধকগণ স্বীয় পরিবারসমূহকে সাহাবাগণের (রাঃ) পরিবারের ন্যায় তাকওয়ার পরিবেশসহ আদর্শ পরিবার হিসাবে গড়ে তোলার জন্য অবিরাম সাধনা ও আল্লাহর দরবারে কাতর প্রার্থনা করবেন।

২) দৈনিক পারিবারিক তালীম : সাধকগণ দৈনিক কিছু সময় (ফজরবাদ/ ইশাবাদ) নিজ নিজ পরিবারের সদস্যগণকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত দ্বীনি তালীমের ব্যবস্থা করবেন। পরবর্তী তালিমে বিগত দিনের তালীমের খবর নিবেন।

৩) পারিবারিক মাহফিল : বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে একত্রিত হয়ে পারিবারিক মাহফিলের ব্যবস্থা করবেন। ফলে সংশোধোনের কাজ আত্মীয়-স্বজনদেরও ব্যক্তি জীবনে ও পরিবারসমূহে ছড়িয়ে যাবে।

৪) পারিবারিক পাঠাগার : সাধকগণ নিজ নিজ পরিবারে কুরআন, হাদীস ও দ্বীনি কিতাবের সমন্বয়ে পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তুলবেন এবং পরিবারের সবাইকে নিয়মিত অধ্যয়নের জন্য সর্বদা উৎসাহিত ও তত্ত্বাবধান করবেন।

৫) পারিবারিক প্রাকটিস : সাধকগণ স্বীয় পরিবারে সর্বদা দ্বীনি তালীম, নসিহত ও প্রাকটিস জারী রাখবেন এবং পরিবারের সদস্যদের ঈমান-আকিদা, আমল, আখলাক ও মুয়ামিলাতসহ সার্বিক পরিশুদ্ধির তত্ত্বাবধান করবেন।

৬) পারিবারিক কালচার : সাধকগণ স্বীয় পরিবারে সর্বদা তাকওয়া ভিত্তিক দ্বীনি কালচার গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা-সাধনা করবেন। বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনদের কাছে প্রথমে সেকেলে মনে হলেও ধীরে ধীরে তারাও প্রভাবিত হবে।

৭) পারিবারিক নৈশ ইবাদাত : সাধকগণ স্বীয় পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়মিত তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। এ লক্ষ্যে সপ্তাহে অন্ততঃ একটি রাতে সবাই মিলে নৈশ ইবাদাত, তালীম ও দোয়ার ব্যবস্থা করবেন।

৮) মাসনুন দোয়ার আমল : সাধকগণ স্বীয় পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত মাসনুন দোয়াসমূহের আমলে অভ্যস্ত করবেন। এ জন্য সম্ভব হলে দোয়াসমূহ নির্দিষ্ট আমলের স্থানে বড় করে অর্থসহ লিখে লটকিয়ে রাখবেন।

৯) তিলাওয়াত, দুরুদ ও জিকির : সাধকগণ পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত তিলাওয়াত, জিকির, দুরূদ, দোয়া, দান-সদাকাহ ও ছুন্নাহ মোতাবেক আমলের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য অবিরাম সাধনা ও তত্ত্বাবধান করবেন।

১০) সদস্যদের জন্য দোয়া : সাধকগণ স্বীয় পরিবারের সদস্যদের হিদায়াত ও কল্যাণের জন্য নবী-রসূলগণের ন্যায় আল্লাহর কাছে সর্বদা দোয়া করবেন। এ ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত দোয়া সমুহ নিয়মিত আমল করা যায়। যেমন-

সন্তানের জন্য মাতা পিতার দোয়া : সন্তানদের কল্যাণের জন্য মাতা-পিতাকে আল্লাহ তা'য়ালা যে দোয়া করতে শিক্ষা দিয়েছেন-

رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُّعَاءِ

অর্থাৎ- হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়িমকারী করুন এবং আমার বংশধরকেও সালাত কায়িমকারী করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন। (সূরা ইব্রাহীম : ৪০)


মনে রাখবেন! তাকওয়া ভিত্তিক গঠিত পরিবার এবং পারিবারিক পরিবেশ আল্লাহ তা'য়ালার বিরাট নিয়ামত এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর কল্যাণময় বিধান অনুধাবন করার এবং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবনের সকল ক্ষেত্রে মেনে চলার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।

No comments:

Post a Comment