Friday, June 27, 2014

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আ’নিল মুনকার

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীনদুরদ ও সালাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, তাঁর বংশধর, তাঁর সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে তাঁর সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম)-গনকে নিয়ে মদীনার বুকে আল্লাহর বিধান মোতাবেক একটি কল্যাণময়, আদর্শ, শান্তি ও সুখময় সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। সে সমাজ সুরক্ষার অন্যতম কার্যক্রম ছিল আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার আমাদের সমাজকে কুরআন ও ছুন্নাহ-এর আলোকে সে সমাজের নমুনায় পূনর্গঠন করে একটি কল্যাণময়, আদর্শ, শান্তি ও সুখময় সমাজ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।

আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের দিকে নবুওয়াতের নমুনায় মানুষদেরকে ডাকার সাথে সাথে ভাল কাজের উপদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বতাই মুসলিম উম্মাহর মাঝে কুরআন ও ছুন্নাহ তথা দ্বীন ইসলামের সুরক্ষার জন্য রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাগণের নমুনায় ‘আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’–এই কার্যক্রমটি সর্বদা জারী থাকতে হবে।

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’- মিশনের গুরুত্বঃ

আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর উপর নবুয়তী মিশনের অর্পিত দায়িত্বঃআমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’–এই মহান কার্যক্রমের বাস্তাবায়ন মুসলিম উম্মাহর সবার প্রতি সার্বজনীনভাবে সব সময়ের জন্যই অপরিহার্য ফরজ অবশ্য পাত্রভেদে নসিহতসমূহ অনুরোধ, আহবান, উপদেশ ও আদেশ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। নবুওয়াতী মিশনের এই সুমহান দায়িত্ব পালনের জন্যই আল্লাহ তা’য়ালা নবুওয়াতী ছিলছিলা সমাপ্ত করে সমগ্র মানব জাতির মধ্য থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে বাছাই করেছেন। এ প্রসংগে মহান রব্বুল আলামীন বলেন :

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ

- “তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান, তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাসী থাকবে” -(সূরা আলে ইমরান : ১১০) তিনি আরও বলেন :

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

- তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা প্রয়োজন যারা (মানুষকে) কল্যাণের পথে আহ্বান করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এরাই সফলকাম। -(আলে ইমরান : ১০৪)

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’- এ গুরুত্বপূর্ণ মিশনের জন্য জাতির একটি অংশকে সর্বদা তৎপর থাকতে হবেঃ  দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করে আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার- এই কাজে কওমের একটি অংশকে সর্বদা তৎপর থাকার জন্য আল্লাহ তা’য়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি জিহাদের মত গুরুত্বপূর্ণ মিশনেও সবাই একসাথে বের না হয়ে কওমের একটি অংশকে দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ ও সমাজ সংশোধনের কাজে নিয়োজিত থাকতে বলা হয়েছে।  এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :

فَلَوْلاَ نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُواْ إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ

-তাদের প্রত্যেক বড় দল থেকে একটি অংশ কেন বের হয় না, যারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করবে এবং নিজ নিজ কওমের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করবে, যাতে তারা বাঁচতে পারে-(সূরা তওবাঃ ১২২)

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’- মুসলিম জাতির একটি সামাজিক আন্দোলনঃ ভাল কাজের উপদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে বহু বর্ণনা রয়েছে। এর কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হল। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

...... وَتَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوَى وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ 

..আর ভাল কাজ ও তাকওয়া অবলম্বনে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। পাপ ও সীমালংঘনের কাজে কেউ কাউকে সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করবে। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। (সূরা মায়েদা : ২)

মহাক্ষতি থেকে মানবজাতির আত্মরক্ষার পথ : আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার-মহাক্ষতি থেকে মানবজাতির সুরক্ষার একমাত্র উপায় প্রসংগে  আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ  إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

- (১) মহাকালের শপথ! (২) নিশ্চয়ই মানবজাতি মহাক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। (৩) শুধুমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়। -(সূরা আসর) তিনি আরও বলেন :

فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِنْ قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِمَّنْ أَنْجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَى بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ

- “তোমাদের আগে যে সকল জাতি চলে গিয়েছে তাদের মধ্যে এমন লোক কেন থাকল না, যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা দিতে পারত? তবে কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া, যাদেরকে আমি তাদের মধ্য থেকে রক্ষা করেছিলাম। আর যালিমদেরকে যে ঐশ্বর্য্য দেয়া হয়েছিল সেগুলো নিয়েই তারা মেতে রইল, তারা ছিল পাপাচারী। আপনার প্রভু এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে এমন জনপদ ধ্বংস করে দেবেন যার অধিবাসীরা সংশোধনরত” -(সূরা হূদঃ আয়াত ১১৬-১১৭)

সুদৃঢ় সংকল্পের কাজঃ আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার- প্রসংগে হযরত লুকমান (আ) কর্তৃক তাঁর পুত্রকে নসিহতের বিষয় উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা সূরা লুকমানে  বর্ণনা করেন :

يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

-“হে আমার সন্তান! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং বিপদে-আপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই এসবই হল সুদৃঢ় সংকল্পের কাজ”-(সূরা লুকমানঃ ১৭)

মুমিন পুরুষ-নারীদের বৈশিষ্ট্যঃ ভাল কাজের আদেশ দেয়া, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর বৈশিষ্ট্য। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

-মুমিন পুরুষ ও নারী একে অপরের বন্ধু। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয়, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। আল্লাহ তাদের প্রতি অচিরেই রহমত নাযিল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়। (তওবা:৭১)

মুসলিম উম্মাহ মানব জাতির জন্য সত্যের সাক্ষ্যদাতাঃ মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তা’য়ালা সত্যের সাক্ষ্যদাতা হিসাবে মনোনীত করেছেন। সুতরাং তাদেরকে অবশ্যই মানব জাতির মাঝে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধের জন্য সর্বাত্মক সাধনা করতে হবে। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :

وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ  مِلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِنْ قَبْلُ وَفِي هَذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلَى وَنِعْمَ النَّصِيرُ

- “তোমরা আল্লাহ পথে সর্বাত্মক সাধনা কর, যেভাবে তাঁর পথে সর্বাত্মক সাধনা করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে (দ্বীনের জন্য) মনোনীত করেছেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের জাতির পিতা ইব্রাহীমের আাদর্শ। ইতিপূর্বে এবং এই কুরআনেও তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম, যেন রাসূল তোমাদের সাক্ষী হন আর তোমরা সাক্ষী হও মানবজাতির জন্য। অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং সুদৃঢ়ভাবে আল্লাহকে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। কতই না উত্তম অভিভাবক আল্লাহকতই না উত্তম সাহায্যকারী” -(সূরা হজ্জ : ৭৮)

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’- মুসলিম উম্মাহর জন্য নবুওয়াতী দায়িত্ব পালনের পরীক্ষাঃ মুসলিম উম্মাহর উপর অর্পিত নবুওয়াতী মিশনের দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ। আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’-মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অন্যতম ফরজ ইবাদাত। এই ইবাদাতের মাধ্যমে সে দায়িত্বের অন্যতম একটি অংশ পালিত হয়। এ প্রসংগে আল্লাহ বলেন :

وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ وَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا كَذَلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِينَ ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَائِفَ فِي الْأَرْضِ مِنْ بَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

- “আমি তোমাদের আগে অনেক মানব জাতিকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা সীমালংঘন করেছিল। তাদের নিকট সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নিয়ে তাদের রাসূলগণ এসেছিলেন। কিন্তু তারা ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবেই আমি সীমালংঘনকরীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি। অতঃপর তোমরা কীভাবে এবং কেমন কাজ কর তা দেখার জন্য আমি তাদের পরে তোমাদেরকে দুনিয়ায় খলীফা বানিয়েছি”-(সূরা ইউনুসঃ ১৩-১৪)

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’- মিশনের লক্ষ্য হল মুমিনদের জীবনে দ্বীনের পূর্ণ অনুসরণঃ মুমিনের জিম্মাদারী দায়িত্ব হল পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সকল মুমিনদেরকে দ্বীন ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়ার জন্য তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহ পূর্ণাংগভাবে মেনে চলার জন্য  সর্বদা নসিহত করা এবং জাহান্নামের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা। মনে রাখবেন! মুসলিমদের জন্য ইসলামের বিধি-বিধান আংশিকভাবে মেনে চলার কোন সুযোগ নাই। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ  فَإِن زَلَلْتُمْ مِّن بَعْدِ مَا جَاءتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

মুমিনগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পুরোপুরি দাখিল হও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আদেশ আসার পরও যদি তোমরা পথভ্রষ্ট হও, তাহলে জেনে রেখ! নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞানী”-(সূরা বাকারাহঃ ২০৮-২০৯)

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’- মিশনের ফজিলতঃ

সমপরিমান বিনিময়ঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি হিদায়াতের পথে ডাকে সে তার অনুসারীর সমপরিমান সওয়াব পাবে, তবে অনুসারীর সওয়াব থেকে মোটেও কমানো হবেনা। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর দিকে ডাকে সে তার অনুসারীদের সমপরিমান পাপের ভাগী হবে, তবে অনুসারীদের পাপ থেকে মোটেও কমানো হবে না। (মুসলিম, তিরমিজি-২৬১১ : হাসান ও সহীহ্)

সুসংবাদপ্রাপ্ত আমলঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দ্বীন ইসলাম তো অপরিচিত অবস্থায় যাত্রা শুরু করেছিল এবং অচিরেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সুসংবাদ সেই অপরিচিতদের জন্য (তিরমিযী-২৫৬৬ : হাসান ও সহীহ) তাদের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছে- যারা আমার ছুন্নাহ মানুষের দ্বারা বিপর্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ইসলাহ বা পূণর্র্জীবিত করে। (তিরমিজী-২৫৬৭)

ছুন্নাতকে আঁকড়ে ধরায় একশত শহীদের সওয়াবঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় যে আমার ছুন্নাতকে আঁকড়ে থাকবে তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব- (বায়হাকী)

মুক্তিপ্রাপ্ত দলঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারা? রসূলুল্লাহ (স) বললেন : যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের আদর্শের উপর কায়েম থাকবে -(তিরমিজি-২৫৭৮ : হাসান, আবু দাউদ, সহীহ তারগীব-৪৮) 

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার- এর বিভিন্ন স্তরঃ হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন তার হাত (ক্ষমতা) দ্বারা তা প্রতিহত করে। এই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন তার মুখ (ভাষা) দ্বারা তা প্রতিহত করে। এই সামর্থ্যও না থাকলে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে। আর এটা হল দুর্বলতম ঈমান। (মুসলিম, তিরমিযী-২১১৮)

সর্বাবস্থায় পাস্পরিক সাহায্য ও সহযোগীতাঃ হযরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্  সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমার ভাইকে সাহায্য কর, চাই জালিম হোক অথবা মাজলুম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! সে যদি মজলুম হয় আমি তাকে সাহায্য করব, কিন্তু যদি সে জালিম হয় তবে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করবতিনি বলেন : তাকে জুলুম করা থেকে বিরত রাখ, বাধা দাও। এটাই তাকে সাহায্য করা। -(বুখারী)

শাসকদের এই গর্হিত কাজের প্রতিবাদ করতে হবে, অন্ততঃ ঘৃণা করতে হবে- সমর্থন করা যাবে নাঃ হযরত উম্মু সালামা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অচিরেই তোমাদের উপর এমন কতিপয় শাসক হবে যাদের কিছু কাজ (শারীয়াত অনুযায়ী হওয়ার কারণে) তোমরা পছন্দ করবে আর কিছু কাজ (শারীয়াত বিরোধী হওয়ার কারণে) অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের ভাগী হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো না? তিনি বললেন : না, যতক্ষন তারা তোমাদের মাঝে নামাজ কায়েম করে।- (মুসলিম হাদীস নং ৪৬৪৯, তিরমিযীঃ ২২১১)

অন্যায় কাজে বাধা দান ঈমানের লক্ষণঃ হযরত ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতরসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার পূর্বে কোন জাতির কাছে যে নবীকেই পাঠানো হয়েছে, তাঁর সহযোগীতার জন্য তাঁর উম্মাতের মধ্যে একদল সাহায্যকারী ও সাহাবী থাকত। তারা তাঁর ছুন্নাতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। এদের পরে এমন লোকের উদ্ভব হল যে, তারা যা বলত তা নিজেরা করত না এবং এমন কাজ করত যা করার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়নি। অতএব এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগে) জিহাদ করবে সে মুমিন। যে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সেও মুমিন। যে মুখ দিয়ে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন। এরপর আর সরিষার দানার পরিমানও ঈমানের স্তর নাই। -(সহীহ মুসলিম)

চলার পথের অন্যতম হক হল আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারঃ হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা রাস্তার উপর বসা থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! রাস্তায় বসা ছাড়া তো কোন উপায় নেই। আমরা সেখানে বসে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করে থাকি। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা যখন রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকতে অপারগ, তাহলে রাস্তার হক আদায় কর। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক আবার কিতিনি বলেন : রাস্তার হক হল- দৃষ্টি সংযত রাখা, (রাস্তা থেকে) কষ্টদায়ক বস্তু দুর করা, সালামের জবাব দেয়া, সৎ কাজের নির্দেশ দেয়া এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা। -(বুখারী ও মুসলিম)

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দলভূক্ত হওয়ার একটি অন্যতম শর্তঃ  হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না, বড়দের সম্মান করে না, সৎকাজের নির্দেশ দেয় না, অসৎ কাজে বাধা দেয় না সে আমাদের (দলভূক্ত) নয়। (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী-১৮৭১ : হাসান)

ভবিষ্যতের জন্য নসিহতঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : তোমরা নিশ্চয়ই সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, বিপদগ্রস্তও হবে এবং তোমাদের দ্বারা বহু স্থান বিজিতও হবে। কেহ সেই যুগ পেলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে, সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে বাধা দেয়। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার উপর মিথ্যা আরোপ করে সে যেন দোযখকেই তার বাসস্থান বানিয়ে নেয়। -(তিরমিযী-২২০৩: হাসান ও সহীহ্)

আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার- পরিত্যাগের ভয়াবহ পরিণামঃ

সবাই শাস্তি প্রাপ্ত হবেঃ হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,  আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “নিশ্চয়ই মানুষ যখন কোন অপছন্দ কথা বা কর্ম লক্ষ্য করে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে না, অচিরেই আল্লাহ তাদের সকলকে শাস্তি দিবেনঅন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন কোন সম্প্রদায়ের মাঝে পাপ হতে থাকে এবং প্রতিরোধ করতে সক্ষম ব্যক্তিরা প্রতিরোধ না করে, তখন আল্লাহ সকলকেই শাস্তি দেন -(তিরমিজি   আবু দাউদ)

সবাই আযাবপ্রাপ্ত হবে আর দুয়া কবুল হবে নাঃ হযরত হুজাইফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন : ঐ সত্তার কসম যারা কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, তোমরা সৎকর্মের আদেশ করতে থাক এবং অন্যায় কর্মের বাধা দিতে থাক। অন্যথায় খুব শীঘ্রই হয়তো আল্লাহ্‌ তা'আলা তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন। তখন তোমরা আল্লাহ্‌ তা'আলার দরবারে আযাব হটিয়ে দেওয়ার জন্য দু'আ করবে। কিন্তু তিনি কবুল করবেন না। -(জামে তিরমিযিঃ ২/৩৯)
 
হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমরা অবশ্যই মারূফ এর আদেশ করবে, মুনকার থেকে নিষেধ করবে, কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহ প্রদান করবে, অন্যথায় আল্লাহ যে কোন আযাবে তোমাদের সকলকেই ধ্বংস করবেন কিংবা তোমাদের মধ্য হতে সর্বাধিক পাপাচারী, অন্যায়কারী ও যালিম লোকদেরকে তোমাদের ওপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দিবেন। এ সময় তোমাদের মধ্যকার নেককার লোকেরা মুক্তিলাভের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া ও কান্নাকাটি করবে; কিন্তু তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। –(মুসনাদে আহমদ)

হযরত হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন। তখন তোমরা দোয়া করলেও তিনি সেই দোয়া কবুল করবেন না। -(তিরমিযী- ২১১৫ : হাসান)

পাপী ও নীরব দর্শকের পরিণামঃ হযরত নুমান ইবনে বশীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর বিধানকে যারা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে আর যারা অবহেলা করে তাদের দৃষ্টান্ত হল সমুদ্রগামী একটি জাহাজের আরোহীদের মত, যারা লটারীর মাধ্যমে এর দুই তলায় আসন নির্ধারণ করল। একদল উপরে আর একদল নীচের তলায়। নীচের তলার লোকেরা উপরের তলায় উঠত পানি সংগ্রহ করতে। ফলে উপরের লোকদের ওখানে পানি পড়ত। উপর তলার লোকেরা বলল, তোমরা আমাদের এখানে পানি ফেলে আমাদের কষ্ট দিচ্ছ। সুতরাং আমরা তোমাদেরকে উপরে উঠতে দিব না। নীচের তলার লোকেরা বলল, তাহলে আমরা জাহাজের তলা ফুটো করে পানি সংগ্রহ করব। এই অবস্থায় যদি উপরের তলার লোকেরা নীচের তলার লোকদের হাত ঝাপটে ধরে ছিদ্র করা থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে পারে তবে সকলেই বেঁচে যাবে। কিন্তু তারা যদি এদেরকে এ কাজ করতে ছেড়ে দেয় তবে সকলেই ডুবে মরবে। (বুখারী, তিরমিযী-২১১৯ : হাসান ও সহীহ্)

বনি ইসরাঈলীদের ন্যায় মুসলিম উম্মাহ-কেও বিপর্যস্ত হতে হবেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বনী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথমে পাপ ও অনিষ্টকারীতা এভাবে অনুপ্রবেশ করে- এক ব্যক্তি যখন অপর ব্যক্তির সাথে মিলিত হত তখন তাকে বলত, হে অমুক! আল্লাহকে ভয় কর, যা করছ তা পরিত্যাগ কর কেননা এ কাজ তোমার জন্য বৈধ নয়। পরদিনও সে তার সাথে মিলিত হয়ে তাকে পুর্ববস্থায় দেখতে পেত কিন্তু সে আর তাকে নিষেধ করত না। এভাবে সেও তার পানাহার ও ওঠা-বসায় শরীক হয়ে পড়ে। যখন তারা এমন অবস্থায় পৌঁছে গেল, তখন আল্লাহ তাদের একের অন্তরের (কালিমা) দ্বারা অপরের অন্তরকে অন্ধকার করে দিলেন। অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন: (৭৮) ইসরাঈল জাতির মধ্যে যারা কুফরি করেছিল তারা দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার জবানে অভিশপ্ত হয়েছিল, কারণ তারা অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী ছিল। (৭৯) তারা যে সকল খারাপ কাজ করত, তা করা থেকে তারা একে অন্যকে নিষেধ করত না। তারা যা করত তা কতই না খারাপ কাজ ছিল! (৮০) তাদের অনেককে আপনি কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন। কত খারাপ তাদের কাজ, যা তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য করেছে, যে কারণে আল্লাহ তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা চিরকাল শাস্তির মধ্যেই থাকবে। (৮১) তারা যদি আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি এবং যা নবীর প্রতি নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনত তাহলে তারা কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের অনেকেই পাপাচারী। (সূরা মায়েদা: ৭৮-৮১) অতঃপর তিনি (মহানবী) বলেন : কখনও নয়! আল্লাহর শপথ! তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করতে থাক এবং অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে (লোকদেরকে) বিরত রাখ, জালিমের হাত শক্ত করে ধর এবং তাকে টেনে তুলে সত্য-ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের পরস্পরের অন্তরকে মিলিয়ে দিবেন। অতঃপর বনি ইসরাঈলদের মত তোমাদেরকেও অভিশপ্ত করবে। -(আবু দাউদ : সহীহ)

আমল বিহীন ‘আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’-এর ভয়াবহ পরিনামঃ

সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা অন্যকে ভাল কাজের আদেশ দেয় কিন্তু নিজে করে না। আবার অন্যকে অন্যায় ও পাপাচার থেকে ফিরে থাকতে বলে অথচ সে নিজে তাতে লিপ্ত হয়। এমন ব্যক্তি জাহান্নামে এক বিশেষ ধরনের শাস্তি ভোগ করবে।এ প্রসংগে সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহে এসেছে-

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন : কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, তার পেটের নাড়িভুরিগুলো ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে সে গাধার মত ঘুরতে থাকবে। গাধা যেমন চরকার পাশে ঘুরে থাকে। জাহান্নামের অধিবাসীরা তাকে দেখার জন্য জড়ো হবে। তারা তাকে বলবে, এই! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ কাজের আদেশ করতে না আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে না? সে বলবে: হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু তা নিজে করতাম না। আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজে তাতে লিপ্ত হতাম। -(বুখারী ও মুসলিম)

ইমাম, মুয়াল্লিম, মুবাল্লিগ ও সচেতন মুসলিমগণ সর্বদা মুসলিম সমাজের অবক্ষয় ও ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে সজাগ থাকবেন। তারা সতর্কতা, দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতার সাথে উত্তম নসিহতের মাধ্যমে সমাজের সে সব অবক্ষয়ের প্রতিরোধকল্পে আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার’ –কে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সাধনা করবেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।





No comments:

Post a Comment