Saturday, August 2, 2014

তাবলীগ জামাত বিশ্বময় দ্বীনি মেহনতের এক অনুপম নিদর্শন


তাবলীগ জামাত বিশ্বময় দ্বীনি মেহনতের এক অনুপম নিদর্শন


তাবলীগ জামাত বিশ্বময় দ্বীনি মেহনতের এক অনুপম নিদর্শন। কিন্তু বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বময় দ্বীনি চাহিদা পূরণে সুন্নাহ মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের ব্যর্থতার কারণে এই মহান দ্বীনি খেদমত আজ বিভিন্ন মহলে বিতর্কিত। এ ব্যাপারে নিছক দ্বীনি দায়িত্ব হিসাবে একান্ত দরদী হৃদয়ে কতিপয় পরামর্শ সদয় বিবেচনার জন্য এ জামাতের মুরব্বীদের সামনে পেশ করছি।

তাজবীদ শিক্ষাঃ হযরত মাওলানা ইলিয়াস (র.) বলেছেন : তাবলীগ-জামাআতের শিক্ষা-সিলেবাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাজবীদকারণ আল্লাহর কালাম সহীহ-শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাজবীদ শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ সময় প্রয়োজন জামাআতে তা পাওয়া যায় না। এজন্য এই সময় শুধু চেষ্টা করতে হবে, যেন মানুষের মনে এর প্রয়োজনীয়তার অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং এর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর বিষয়টি শেখার জন্য যেন আলাদা সময় বের করতে প্রস্তুত হয়ে যায়।” –(মালফূযাত ১৩৮, মালফূয নং ২০২)

হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) আরও বলেন : আমার কাছে যারা মুরিদ হয়, তাদেরকে প্রাথমিক পর্যায়ে আমি এভাবে যিকির শিক্ষা দিয়ে থাকি, তারা প্রতি নামাযের পর তাসবিহে ফাতেমি পাঠ করবে। সকাল-বিকাল ৩ তাসবিহ পাঠ করবে। দুরুদ শরিফ ও ইস্তেগফার পাঠ করবে। সহীহ-শুদ্ধ করে একপারা কোরআন পাক তেলাওয়াত করবে ও তাহাজ্জুদের নামায আদায় করবে। তাহাজ্জুদের নামাযের প্রতি আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যিকিরকারী পীর-মাশায়েখের দরবারে যাতায়াত করার বিশেষ জোর দিয়ে থাকি। কারণ আল্লাহর নামের যিকিরে অভ্যস্থ হওয়া ছাড়া ইলম গোমরাহীর নামান্তর। আর সঠিক ইলম ছাড়া শুধু যিকির ফেতনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। -(মালফুজাত নং ৪৯/ ৬২ পৃ.) বর্তমান তাবলীগ জামাত এ নসিহত থেকে অনেক দুরে!

অতীব পরিতাপের বিষয় হল সাধারন তাবলিগী ভাই তো দুরের কথা, বছরের পর বছর যারা চিল্লায় সময় লগিয়েছেন তাদের অনকেই সূরা ফাতিহাও তাজবীদ সহকারে সহীহভাবে পড়তে পারেন না। ফাজায়েলের কিতাবসমূহ তালিমের জন্য যেমন গুরুত্ব প্রদান করা হয় এবং সময় নিয়ে তালিম করা হয়, কুরআন শিক্ষা বা তাজবীদ শিক্ষার জন্য ততখানি গুরুত্ব প্রদান করা হয় না। যদি গুরুত্ব দেয়া হত তাহলে সকল মারকাজ মাসজিদে তাজবীদ শিক্ষার জন্য বয়স্ক মক্তব কায়েম হতো। এ ছাড়া বর্তমানে তাযকিয়ায়ে নাফসের জন্য যিকিরকারী পীর-মাশায়েখের দরবারের কোন গুরুত্ব তাদের কাছে নাই। অনেকে একথাও বলে থাকেন- দাওয়াতের কাজ শুরু হওয়ার পর বেলায়েতের কাজ অর্থাৎ পীর-মাশায়েখের কাজের আর কোন গুরুত্ব বা প্রয়োজন নাই।
 
মনে রাখবেন! দ্বীনি তালিমের ১ নং বিষয় হল-সহীহ তিলাওয়াত শিক্ষা করা, যা সবার জন্যই ফরজে আইন। যে তালিম ও মেহনতের মধ্যে আল্লাহর কালাম সহীহভাবে তিলাওয়াত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে না, সে তালিম ও মেহনতে কি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কোন কল্যাণ থাকতে পারে? তাছাড়া রূহানী তাজকিয়ার আমল ছাড়া শুধু দাওয়াতী আমলে ফিতনার সৃষ্টি হতে পারে আশা করি তাবলিগ জামাতের মুরব্বীগণ বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখবেন।

হাদীস শিক্ষাঃ তাবলিগ জামাতের মেহনত যতদিন ভারতবর্ষের মধ্যে সীমাবব্ধ ছিল ততদিন ফাজায়েলে আমল কিতাবের তালীম হয়ত প্রাথমিকভাবে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমানে এ মেহনত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মাযহাব ও ফিরকার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় হাদীসের তালীমের জন্য এমন কিতাব (যেমন- রিয়াজুস সালেহীন) নির্বাচন করা জরুরী, যা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সব দেশের সব মাজহাব ও ফিরকার সকল শ্রেনীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যথায় হয়ত এমন এক সময় আসতে পারে, যখন দেখা যাবে একই জামাতের অন্তর্গত আরব অঞ্চলের সাথী ভাইয়েরা মাসজিদের এক পাশে বসে রিয়াজুস সালেহীনের তালীম করছে আর অন্য পাশে একই জামাতের অন্যান্য সাথীরা বসে ফাজায়েলে আমলের তালীম করছে! 

দ্বীন শিক্ষাঃ তাবলীগ জামাতে যারা সময় লাগায় তাদের দায়িমী সুন্নাতগুলো দুরুস্ত হয়ে যায়। কিন্তু তালীমের মধ্যে ঈমান-আকিদা ও দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদির বুনিয়াদী তালীমের বড় অভাব। ফলে একজন সাথী দাড়ি, টুপি, লম্বা জামা, মিসওয়াক, তকবীরে উলা... ইত্যাদি ছুটে যাওয়া যতটা ভয়াবহ অপরাধ মনে করেন সহীহ তিলাওয়াত করতে না পারা, খাস পর্দা লংঘন করা, ইসলাম বিরোধী শক্তির সাথে সম্পর্ক রাখা, অনৈসলামিক কালচারের সাথে সম্পর্ক রাখা, সুদের সাথে সম্পর্ক রাখা.... ইত্যাদি ততটা ভয়াবহ অপরাধ মনে করেন না। আসলে এগুলোর মৌলিক কোন তালীম সেখানে না থাকার কারনেই মূলতঃ এমনটি ঘটে।


ইসলামী সংহতিঃ পূর্ববর্তী যামানায় তাবলীগ জামাতকে একটি ইবতেদায়ী ইসলামী তাহরিক মনে করা হত, বিধায় সমস্ত পীর-মাশায়েখ ও উলামাগণ নিজেরা এই মেহনতে অংশ গ্রহন করতেন এবং তাদের ভক্ত-ছাত্রদেরকেও অংশ গ্রহনে উৎসাহিত করতেন। বর্তমানে তাবলীগ জামাত নিজেদেরকেই নবীওয়ালা কাজের একমাত্র ধারক মনে করায় এবং অন্যান্যদের উপেক্ষা করায় পীর-মাশায়েখ ও উলামাগণের সাথে তাদের দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পীর-মাশায়েখ ও উলামাগণ নিজেরা যেমন এই মেহনতে অংশ গ্রহন করেন না তেমনি তাদের ভক্ত-ছাত্রদেরকেও অংশ গ্রহনে উৎসাহিত করেন না। উদাহরণ স্বরূপ পূর্ববর্তী যামানায় কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় মারকাজের ছয় সদস্যের শুরার মধ্যে যেখানে উলামাগণের আধিক্য ছিল, সেখানে শুরার মধ্যে বর্তমানে উলামাগণের আধিক্যতো দুরের কথা কোন কোন মারকাজে ছয় সদস্যের শুরার মধ্যে একজন আলেমও দেখা যায় না। বিষয়গুলো তাবলীগ জামাতের প্রতি যারা সহানুভুতিশীল তাদের আন্তরিকতার সাথে ভেবে দেখা দরকার।

No comments:

Post a Comment