Monday, November 10, 2014

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফযীলত


তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও ফযীলত
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য- যিনি রব্বুল আ'লামীনদুরদ ও সালাম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আ'লামীন, তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিআল্লাহু আনহুম) ও সালিহীন (র) বান্দাগণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত

রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ হল সমস্ত আম্বিয়াগণের সুন্নাত, আল্লাহ তায়ালার মাহবুব বান্দাগণের অভ্যাস আর আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা তাহাজ্জুদের গুরুদায়িত্ব ও ফজিলত প্রসংগে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন :

﴿ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩ ﴾-(الاسراء: ٧٩)

অর্থাৎ -“রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করএটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (সূরা বানী-ইসরাইল : আয়াত ৭৯) তিনি আরও বলেন :

﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾- (السجدة: ١٦)

অর্থাৎ -“তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছিতা হতে তারা দান করে” -(সূরা সেজদা : আয়াত ১৬)
   
হাদীস শরীফে তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মাতগণকে উৎসাহিত করা হয়েছে এ প্রসংগে বহু মুল্যবান হাদীস পবিত্র হাদীস গ্রন্থসমুহে বর্ণিত রয়েছে। এর ভিতর থেকে কয়েকটি বাছাইকৃত হাদীস সবার বিবেচনার জন্য পেশ করা হল

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত তিনি বলেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রির একাংশে (নামাযে) এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করতেন যেতাঁর পা ফুলে ফাটার উপক্রম হয়ে পড়ত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি এত কষ্ট সহ্য করছেন কেনঅথচ আপনার তো পূর্ব ও পরের গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বললেন, “আমি কি শুকরগুযার বান্দা হব না?” -(বুখারী ও মুসলিম) মুগীরা ইবনে শুবা হতেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) বললেন, “আব্দুল্লাহ ইবনে উমার কতই না ভাল মানুষ হতযদি সে রাতে (তাহাজ্জুদের) নামায পড়ত।” সালেম বলেন, ‘তারপর থেকে (আমার আব্বা) আব্দুল্লাহ রাতে অল্পক্ষণই ঘুমাতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম) 

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্যান্য মাসে (তাহাজ্জুদ) ১১ রাকআতের বেশী পড়তেন না। প্রথমে চার রাকআত পড়তেন। সুতরাং তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্নই করো না। তারপর চার রাকআত পড়তেন। সুতরাং তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে প্রশ্নই করো না। অতঃপর তিন রাকআত (বিতির) পড়তেন। (একদা তিনি বিতির পড়ার আগেই শুয়ে গেলেন।) আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি বিতির পড়ার পূর্বেই ঘুমাবেন?” তিনি বললেন, “আয়েশা! আমার চক্ষুদ্বয় ঘুমায়কিন্তু অন্তর জেগে থাকে।” -(বুখারী ও মুসলিম) 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : “হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হইয়ো না। সে রাতে উঠে নামায পড়ততারপর রাতে উঠা ছেড়ে দিল।” (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও ফাতেমার নিকট রাত্রি বেলায় আগমন করলেন এবং বললেন, “তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) কি (তাহাজ্জুদের) নামায পড় না?” -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন) তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেনএমন একটি লোকের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করা হলযে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে রাত্রি যাপন করে। তিনি বললেন, “এ এমন এক মানুষযার দুকানে শয়তান প্রস্রাব করে দিয়েছে।” অথবা বললেন, “যার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্ন দাও এবং লোকে যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -(তিরমিযী : হাসান  ও সহীহ)

হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত  তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমযান মাসের রোযার পর সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হচ্ছে রাতের (তাহাজ্জুদের) নামায।” (মুসলিম) 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রাতের নামায দু’ দু’ রাকআত করে। অতঃপর যখন ফজর হওয়ার আশংকা করবেতখন এক রাকআত বিতির পড়ে নেবে।” -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় দু’ দু’ রাকআত করে নামায পড়তেন এবং এক রাকআত বিতির পড়তেন।’ -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘কোন কোন মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে রোযা ত্যাগ করতেন যেমনে হত তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মাসে আর রোযাই রাখবেন না। অনুরূপভাবে কোন মাসে এমনভাবে (একাদিক্রমে) রোযা রাখতেন যেমনে হত তিনি ঐ মাসে আর রোযা ত্যাগই করবেন না। (তাঁর অবস্থা এরূপ ছিল যে,) যদি তুমি তাঁকে রাত্রিতে নামায পড়া অবস্থায় দেখতে না চাইতেতবু বাস্তবে তাঁকে নামায পড়া অবস্থায় দেখতে পেতে। আর তুমি যদি চাইতে যেতাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখবে নাকিন্তু বাস্তবে তুমি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেতে।’ -(সহীহ বুখারী) 

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকআত নামায পড়তেনঅর্থাৎ রাতে। তিনি মাথা তোলার পূর্বে এত দীর্ঘ সেজদা করতেন যেততক্ষণে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারবে। আর ফরয নামাযের পূর্বে দুরাকআত সুন্নত নামায পড়ে ডান পাশে শুয়ে আরাম করতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর নিকট নামাযের ঘোষণাকারী এসে হাযির হত।’ -(সহীহ বুখারী)

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে আরও বর্ণিত হয়েছে যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত রাতের প্রথম দিকে ঘুমাতেন ও শেষের দিকে উঠে নামায পড়তেন। -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে এক রাতে নামায পড়েছি। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রইলেন যেশেষ পর্যন্ত আমি একটা মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম।’ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘সে ইচ্ছাটা কি করেছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আমার ইচ্ছা হয়েছিল যেতাঁকে ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ি।’ -(বুখারী ও মুসলিম) 

হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেনআমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক রাতে নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাকারাহ আরম্ভ করলেন। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘একশত আয়াতের মাথায় তিনি রুকু করবেন।’ (কিন্তু) তিনি তারপরও কিরাত চালু রাখলেন। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘তিনি এরই দ্বারা (সূরা শেষ করে) রুকু করবেন।’ কিন্তু তিনি সূরা নিসা পড়তে আরম্ভ করলেন এবং সম্পূর্ণ পড়লেন। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরান আরম্ভ করলেন এবং সম্পূর্ণ করলেন। তিনি স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন। যখন এমন আয়াত আসতযাতে তাসবীহ পাঠ করার উল্লেখ আছেতখন (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠ করতেন। যখন কোন প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত অতিক্রম করতেনতখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। যখন কোন আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত অতিক্রম করতেনতখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (অতঃপর) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু করলেন। সুতরাং তিনি রুকুতে ‘সুবহানা রাবিবয়াল আযীম’ পড়তে আরম্ভ করলেন। আর তাঁর রুকু ও কিয়াম (দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থা) এক সমান ছিল। তারপর তিনি রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহরাববানা অলাকাল হামদ’ (অর্থাৎ আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রশংসা শুনলেনযে তা তাঁর জন্য করলহে আমাদের পালনকর্তা তোমার সমস্ত প্রশংসা) পড়লেন। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ (কওমায়) দাঁড়িয়ে থাকলেন রুকুর কাছাকাছি সময় জুড়ে। তারপর সেজদা করলেন এবং তাতে তিনি পড়লেন, ‘সুবহানাল্লা রাবিবয়াল আলা’ (অর্থাৎ আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি) আর তাঁর সেজদা দীর্ঘ ছিল তার কিয়াম (দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থা)র কাছাকাছি। -(সহীহ মুসলিম) 

হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলতিনি বললেন, “দীর্ঘ কিয়াম-যুক্ত নামায।” -(সহীহ মুসলিম)

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাতে (তাহাজ্জুদের) জন্য উঠতেনতখন দু’ রাকআত সংক্ষিপ্ত নামায পড়ার মাধ্যমে আরম্ভ করতেন।’ -(সহীহ মুসলিম)

হযরত আয়েশা  রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘দৈহিক ব্যথা-বেদনা বা অন্য কোন অসুবিধার কারণে যদি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের নামায ছুটে যেততাহলে তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকআত নামায পড়তেন।” -(সহীহ মুসলিম) 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম নামাযদাউদ عليه السلام -এর নামায এবং আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম রোযাদাউদ عليه السلام -এর রোযাতিনি অর্ধরাত নিদ্রা যেতেন এবং রাতের তৃতীয় ভাগে ইবাদত করার জন্য উঠতেন। অতঃপর রাতের ষষ্ঠাংশে আবার নিদ্রা যেতেন। (অনুরূপভাবে) তিনি একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন রোযা ত্যাগ করতেন।” -(বুখারী ও মুসলিম) 

হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বললেনআমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “রাত্রিকালে এমন একটি সময় আছেকোন মুসলিম ব্যক্তি তা পেয়েই দুনিয়া ও আখিরাত বিষয়ক যে কোন উত্তম জিনিস প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে তা দিয়ে থাকেন। ঐ সময়টি প্রত্যেক রাতে থাকে।” -(সহীহ মুসলিম) 

হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ রাতে নামায পড়ার জন্য উঠবেসে যেন হাল্কা-ভাবে দু’ রাকআত পড়ার মাধ্যমে নামায শুরু করে।” -(মুসলিম)

হরত উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় অযীফা (দৈনিক যথা নিয়মে তাহাজ্জুদের নামায) অথবা তার কিছু অংশ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়েঅতঃপর যদি সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা পড়ে নেয়তাহলে তার জন্য তা এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়যেন সে তা রাতেই পড়েছে।” (মুসলিম)

হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুনযে রাতে উঠে নামায পড়ে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করেতাহলে তার মুখে পানির ছিটা মারে। অনুরূপ আল্লাহ সেই মহিলার প্রতি দয়া করুনযে রাতে উঠে নামায পড়ে এবং নিজ স্বামীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করেতাহলে সে তার মুখে পানির ছিটা মারে।” -(আবু দাউদসনদ বিশুদ্ধ) 

হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় হতে বর্ণিততাঁরা বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাতে জাগিয়ে উভয়ে নামায পড়ে অথবা তারা উভয়ে দু’ রাকআত করে নামায আদায় করে,তবে তাদেরকে (অতীব) যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীদের দলে লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূ দাউদ, সনদ বিশুদ্ধ) 

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নামাযের মধ্যে তন্দ্রাভিভূত হবেতখন সে যেন নিদ্রা যায়যতক্ষণ না তার নিদ্রার চাপ দূর হয়ে যায়। কারণযখন কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে নামায পড়বেতখন সে খুব সম্ভবত: ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিতে লাগবে।” -(বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ রাতে উঠবে ও (ঘুমের চাপের কারণে) জিহ্বায় কুরআন পড়তে এমন অসুবিধা বোধ করবে যেসে কি বলছে তা বুঝতে পারবে নাতখন সে যেন শুয়ে পড়ে।” (মুসলিম) 


আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত অভ্যাসে পরিনত করার তৌফিক দান করুন! -মী-ন।

No comments:

Post a Comment