নবুওয়াতের নমুনায়
দাওয়াত ও তাবলীগ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর
পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং
সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল।
দুনিয়ার বুকে আল্লাহ তা’য়ালার
মনোনীত সমস্ত নবী-রসুল আলাইহিমুসসালাম-গণের নবুওয়াতী মিশনের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কর্মসুচি ছিল দাওয়াত ও
তাবলীগ।
দাওয়াত : দাওয়াত হল আল্লাহর দিকে মানুষদের আহবান করা, আল্লাহ তা’য়ালার
বান্দাদের কাছে তাদের প্রভুর পরিচয় তুলে ধরা, প্রভুর গোলামীর দিকে ডাকা ও প্রভু
সাথে বান্দার সংযোগ স্থাপন। আল্লাহ তা’য়ালা
বলেন :
ادْعُ إِلِى
سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم
بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ
وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
-আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান
করুন প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে কথা বলুন সবচেয়ে সুন্দরভাবে।
নিশ্চয় আপনার রব ভাল জানেন কে তার পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও
ভাল জানেন যারা সঠিক পথে পরিচালিত। -(সূরা নহল : ১২৫)
তাবলীগ : তাবলীগ হল- আল্লাহর দিকে দাওয়াতে যারা সাড়া দিয়েছেন তাদের
কাছে আল্লাহর নির্দেশনাসমূহ পৌঁছে দেয়া। এ প্রসংগে তিনি বলেন :
....
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ
مِن رَّبِّكَ
হে রসুল (স)! আপনার রবের তরফ
থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি সবার কাছে পৌঁছে দিন.... (সূরা মায়েদা : ৬৭)।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমার পক্ষ থেকে একটি মাত্র বাক্য হলেও তা মানুষের কাছে
পৌঁছে দাও- (বোখারী, তিরমিজি)।
দাওয়াত ও তাবলীগের মর্যাদাঃ
আল্লাহ দা’য়ীর অবিভাবক : দা’য়ীগণ আল্লাহ তা’য়ালা
মনোনীত মাকবুল বান্দাহ। তিনি নিজেকে তাদের অবিভাবক ও সাহায্যকারী হিসাবে ঘোষনা
করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
وَجَاهِدُوا
فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي
الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ مِلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ
الْمُسْلِمِينَ مِنْ قَبْلُ وَفِي هَذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ
وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ
وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلَى وَنِعْمَ
النَّصِيرُ০
- তোমরা আল্লাহ পথে সর্বাত্মক সাধনা কর,
যেভাবে তাঁর পথে সর্বাত্মক সাধনা করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে (দ্বীনের
জন্য) মনোনীত করেছেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি।
এটা তোমাদের জাতির পিতা ইব্রাহীমের আাদর্শ। ইতিপূর্বে এবং এই কুরআনেও তিনি তোমাদের
নাম রেখেছেন মুসলিম, যেন রাসূল তোমাদের সাক্ষী হন আর তোমরা
সাক্ষী হও মানবজাতির জন্য। অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত
আদায় কর এবং সুদৃঢ়ভাবে আল্লাহকে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। কতই না উত্তম
অভিভাবক আল্লাহ, কতই
না উত্তম সাহায্যকারী। -(সূরা হজ্জ : ৭৮)
সর্বোত্তম কথা ও আমল : আল্লাহ তা'য়ালা দাওয়াতকে সর্বোত্তম কথা বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা দা’য়ীর মর্যাদা
প্রসংগে বলেন :
وَمَنْ
أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي
مِنَ الْمُسْلِمِينَ০
-তারচেয়ে উত্তম কথা আর কার যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে
ডাকে,
সৎকাজ করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি একজন মুসলিম। - (সূরা হা-মীম
সিজদা : ৩৩)
সমপরিমান বিনিময়
: হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন : যে ব্যক্তি হিদায়াতের পথে ডাকে সে তার অনুসারীর সমপরিমান সওয়াব পাবে,
তবে অনুসারীর সওয়াব থেকে মোটেও কমানো হবেনা। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর
দিকে ডাকে সে তার অনুসারীদের সমপরিমান পাপের ভাগী হবে, তবে
অনুসারীদের পাপ থেকে মোটেও কমানো হবে না। -(মুসলিম, তিরমিজি-২৬১১
: হাসান ও সহীহ্)
দাওয়াত অবহেলার ভয়াবহ
পরিনাম : হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ করবে এবং
অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন। তখন তোমরা
দোয়া করলেও তিনি সেই দোয়া কবুল করবেন না। -(তিরমিযী- ২১১৫ : হাসান)
নবুওয়াতের নমুনায় দাওয়াতী মিশনের বৈশিষ্ট্যঃ
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ারিস হিসাবে হক্কানী ওলামা, ইমাম, মুয়াল্লিম ও মুবাল্লিগগনকে সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুম এর নমুনায় দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি
লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন-
(১) দা’য়ীগণকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে : দাওয়াতে দ্বীনের জন্য যারা মেহনত করতে চান তাদের সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। এ ব্যাপারে যুক্তি
ভিত্তক বা মনগড়া ব্যাখ্যার কোন অবকাশ নাই। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
وَمَا
أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ
الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ০
- আপনার আগে আমি ওয়াহীসহ মানুষই প্রেরণ
করেছিলাম। তোমরা যদি না জান তাহলে আহলুজ্জিকিরদের (জ্ঞানীদেরকে) জিজ্ঞাসা কর। -(সুরা
আম্বিয়া: ৭)
উলামাগণই
নবীগণের উত্তরাধিকারী : হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসি করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তায় চলে
আল্লাহ তাআলা এ কারণে তাকে জান্নাতের রাস্তাসমূহ থেকে এক রাস্তায় চালিয়ে দেন। ফেরেশতাগণ তালেবে ইলমের সন্তুষ্টির জন্য আপন
পাখা বিছিয়ে দেন। আরেমের জন্য আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুক এবং মাছ যা পানিতে রয়েছে
সকলেই মাগফিরাতের দুআ করে। নিঃসন্দেহে আবেদের উপর আলেমের ফযীলত এরূপ যেরূপ
পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। নিঃসন্দেহে উলামায়ে কেরাম আম্বিয়া
আলাইহিস সালামের উত্তরাধিকারী। আর আম্বিয়াগণ দিনার ও দিরহাম এর উত্তারাধিকারী বানন
না। তারাতো ইলমের উত্তরাধিকারী বানান। অতএব যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন হাসিল করল, সে পরিপূর্ণ অংশ লাভ করল। -[সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস নং-৩৬৪১, মুসনাদুশ শামীনঃ হাদীস নং-১২৩১, কানযুল উম্মালঃ হাদীস নং-২৮৭৪৬]
মনের খেয়ালমত কুরআন ও সুন্নাহ-এর ব্যাখ্যা মানুষের কাছে উপস্থাপনের পরিনাম
মারাত্মক ভয়াবহ : হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নিশ্চিতভাবে যা
তোমাদের জানা আছে তা ছাড়া আমার পক্ষ থেকে হাদীস বর্ণনা থেকে তোমরা বিরত থাকবে।
কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামকে
নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিল। আর যে ব্যক্তি খেয়াল খুশীমত কুরআন সম্পর্কে কোন কথা
বলে, সেও যেন জাহান্নামকে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিল।
-(তিরমিযী-২৮৮৬: হাসান, মুসনাদে আহমাদ)
দাওয়াতে দ্বীনের
ব্যাপারে কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে : দাওয়াতে
দ্বীনের জন্য যারা মেহনত করতে চান তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক
স্বীয় জীবনে বাস্তব প্রতিফলন থাকতে হবে। নিজের জীবনে উক্ত বিষয়ে আমল না থাকা
আল্লাহর নিকট খুবই ঘৃণিত বিষয় হিসাবে গণ্য। আমল বিহিন দাওয়াতে সওয়াবের পরিবর্তে
পরকালে শাস্তির কারণ হবে। এ প্রসংগে আল্লাহ্
তা’য়ালা বলেন :
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ০ كَبُرَ
مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ ০
-হে মুমিনগণ! তোমরা তা কেন বল যা তোমরা কর না?
তোমরা যা করো না তা বলা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয়- (সফ : ২-৩)। তিনি আরও বলেন :
أَتَأْمُرُونَ
النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلاَ
تَعْقِلُونَ০
- তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দাও এবং
তোমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর।
তাহলে কি তোমরা বুঝো না? -(সূরা বাকারাহ : ৪৪)। কথায়-কাজে যাদের মিল রয়েছে, এমন দা’য়ীর প্রশংসায় তিনি বলেন:
وَمَنْ
أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي
مِنَ الْمُسْلِمِينَ০ وَلَا تَسْتَوِي
الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ
وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ০ وَمَا
يُلَقَّاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ ০
- তারচেয়ে উত্তম কথা আর কার যে ব্যক্তি
মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎকাজ করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি
একজন মুসলিম। ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে ভাল দিয়ে প্রতিহত কর। তাহলে যে
তোমার শত্রু সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। এ জাতীয় চরিত্রের অধিকারী কেবল সে
সকল লোকদেরকে করা হয় যারা ধৈর্যশীল। এ গুণের অধিকারী কেবল তারা যারা মহাসৌভাগ্যের
অধিকারী। -(সূরা হা-মীম সিজদা : ৩৩-৩৫)
যারা দাওয়াতে
দ্বীনের কাজ করে অথচ নিজেরা তার আমল করে না এমন ব্যক্তির পরিনাম মারাত্মক ভয়াবহ : আমাদের সমাজে এমন অনেক
মানুষ আছে যারা অন্যকে ভাল কাজের আদেশ দেয় কিন্তু নিজে করে না। আবার অন্যকে অন্যায়
ও পাপাচার থেকে ফিরে থাকতে বলে অথচ সে নিজে তাতে লিপ্ত হয়। এমন ব্যক্তি জাহান্নামে
এক বিশেষ ধরনের শাস্তি ভোগ করবে।এ প্রসংগে সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহে এসেছে-
عن
أسامة بن زيد رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول "
يؤتى بالرجل يوم القيامة . فيلقى في النار . فتندلق أقتاب بطنه . فيدور بها كما
يدور الحمار بالرحى . فيجتمع إليه أهل النار . فيقولون : يا فلان ! مالك ؟ ألم تكن
تأمر بالمعروف وتنهى عن المنكر ؟ فيقول : بلى . قد كنت آمر بالمعروف ولا آتيه ،
وأنهى عن المنكر وآتيه " - رواه البخاري ومسلم.
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে
বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত
করা হবে, তার পেটের নাড়িভুরিগুলো ঘুরপাক খেতে থাকবে। ফলে সে গাধার
মত ঘুরতে থাকবে। গাধা যেমন চরকার পাশে ঘুরে থাকে। জাহান্নামের অধিবাসীরা তাকে দেখার
জন্য জড়ো হবে। তারা তাকে বলবে, এই! তোমার এ অবস্থা কেন?
তুমি কি সৎ কাজের আদেশ করতে না আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতে না?
সে বলবে: হ্যা, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু
তা নিজে করতাম না। আর অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু নিজে
তাতে লিপ্ত হতাম। -(বুখারী ও মুসলিম)
দাওয়াতে দ্বীনের
ব্যাপারে কোনরূপ সংকোচ করা যাবে না : যারা
দাওয়াতে দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তারা নিঃসংকোচে দ্বিধাহীন চিত্তে আল্লাহ তা’য়ালার
দিকে মানব মন্ডলীকে আহবান জানাবেন এবং মানুষের সামনে আল্লাহ তা’য়ালার বানী
উপস্থাপন করবেন। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
كِتَابٌ
أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلاَ يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَى
لِلْمُؤْمِنِينَ০
(হে রাসূল!) আপনার নিকট কিতাব নাযিল করা
হয়েছে, এর মাধ্যমে লোকদেরকে সতর্ক করার ব্যাপারে আপনার মনের
মধ্যে যেন কোন সঙ্কোচ না থাকে। মুমিনদের জন্য এ কিতাব উপদেশ স্বরূপ। (সূরা আরাফ :
২)
দাওয়াতে দ্বীনের ব্যাপারে
কারো পরোয়া করা যাবে না: যারা দাওয়াতে দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তারা অত্যন্ত
সাহসিকতার সাথে জোরে-শোরে আল্লাহ তা’য়ালার দিকে মানব মন্ডলীকে আহবান জানাবেন এবং
কারও বিদ্রুপ বা উপহাসের কোন প্রকার পরোয়া করবেন না। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন
:
فَاصْدَعْ
بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ০ إِنَّا كَفَيْنَاكَ
الْمُسْتَهْزِئِينَ০
- তাই আপনি যে আদেশ পেয়েছেন তা প্রকাশ্যে
জোরেশোরে প্রচার করুন এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা করুন। আপনার বিদ্রুপকারীদের জন্য
আমিই যথেষ্ট। -(সূরা হিজর : ৯৪-৯৫)
দ্বীনের দাওয়াত
দিতে হবে কেবলমাত্র আল্লাহর দিকে : যারা
দাওয়াতে দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তারা শুধুমাত্র আল্লাহ তা’য়ালার দিকেই মানব
মন্ডলীকে আহবান জানাবেন। নিজ দল, তরিকা, ফিরকা, খানকা, দর্শন, প্রতিষ্ঠান বা
মাজহাবের দিকে দাওয়াত দেয়া উচিৎ হবে না। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
ادْعُ
إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي
هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ
بِالْمُهْتَدِينَ০
- (হে রাসূল!) আপনি মানুষকে আপনার প্রভুর
দিকে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে কথা বলুন
সুন্দরতম পন্থায়। নিশ্চয়ই আপনার প্রভু সবচেয়ে ভাল জানেন কে বিপথগামী হয় আর তিনি
তাদের সম্পর্কেও ভাল জানেন যারা সঠিক পথে পরিচালিত । -(সূরা নহল : ১২৫)
দ্বীনের দাওয়াত
দিতে হবে লোকদের বোধগম্য ভাষায় : যারা দাওয়াতে
দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তারা লোকদের বোধগম্য বা তাদের মাঝে প্রচলিত কওমের নিজস্ব
ভাষায় মানুষদেরকে আহবান জানাবেন, যাতে তারা সহজেই দাওয়াতের বিষয়বস্তু অনুধাবন করতে
পারে। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
وَكَذَلِكَ
أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا
وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي
السَّعِير০
- আর এভাবেই আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায়
কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার চারপাশের লোককে
সতর্ক করতে পারেন। যেন আপনি তাদেরকে সেই কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন,
যেদিন সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল লোক
জান্নাতে প্রবেশ করবে আর একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। -(সূরা শুরা : ৭)
দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে কোন
প্রকার জবরদস্তি বা বাড়াবাড়ি নাই : যারা দাওয়াতে দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তাদের
মনে রাখতে হবে যে, ঈমান গ্রহণের ব্যাপারে কারও উপর কোন প্রকার জবরদস্তি বা শক্তি
প্রয়োগ করা যাবে না। দা’য়ীর কাজ শুধু দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা
বলেন :
لاَ
إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ
وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا
وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ০
-
দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। মিথ্যা পথ হতে সত্য
পথ আলাদা হয়ে গেছে। কাজেই যে আল্লাহ বিরোধী শক্তিকে অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহর
প্রতি ঈমান এনেছে সে এমন এক মজবুত হাতল ধারণ করেছে যা কখনো ভাঙবে না। আর আল্লাহ সব
কিছু শোনেন,
সবকিছু জানেন। -(সূরা বাকারাহ : ২৫৬)
وَلَوْ
شَاء رَبُّكَ لآمَنَ مَن فِي الأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ
حَتَّى يَكُونُواْ مُؤْمِنِينَ০
-
আপনার প্রতিপালক যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে পৃথিবীর সকল লোকই ঈমান আনত। তাহলে কি আপনি মুমিন
হওয়ার জন্য মানুষের উপর জোর প্রয়োগ করবেন? (সূরা ইউনূস : ৯৯)
দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে কোন
বেতন-ভাতা গ্রহণ করা যাবে না : যারা দাওয়াতে দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তারা দ্বীন
প্রচারের বিনিময়ে কোন বেতন-ভাতা গ্রহণ করবেন না। দ্বীনের জন্য মেহনত একটি
মর্যাদাপূর্ণ ইবাদাত। আর কোন ইবাদাতের বিনিময়ে মজুরী গ্রহণ করা যায় না। এ প্রসংগে আল্লাহ
তা’য়ালা বলেন :
قُلْ
مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِلَّا مَن شَاء أَن يَتَّخِذَ إِلَى رَبِّهِ
سَبِيلًا০
-
আপনি বলুন! দ্বীন প্রচারের জন্য আমি তোমাদের নিকট কোন
বিনিময় চাই না। যার ইচ্ছা সে তার প্রভুর পথ অনুসরণ করুক। (সূরা ফুরকান : ৫৭)
কুরআনের সাহায্যে
উপদেশ প্রদান করতে হবে : যারা দাওয়াতে
দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তারা দ্বীন প্রচারের জন্য নিজের মনগড়া যুক্তি বা বল
প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরং কুরআনের মাধ্যমে মানব মন্ডলীর সামনে নসিহত পেশ
করবেন। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
نَحْنُ
أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِجَبَّارٍ فَذَكِّرْ بِالْقُرْآنِ
مَن يَخَافُ وَعِيدِ ০
-
কাফিররা যা বলে আমি তা জানি। (হে রাসূল!) আপনি তাদের উপর
বলপ্রয়োগকারী নন। তাই যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দান
করুন। (সূরা কাফ : ৪৫)
দাওয়াতে সাড়া না
দিলেও দায়ীর দুঃখের কোন কারণ নাই : যারা
দাওয়াতে দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, তারা আল্লাহ তা’য়ালার
বান্দাদের উপর রক্ষক নন, তাদের দায়িত্ব শুধু আল্লাহ দ্বীন মানুষের সামনে সঠিকভাবে
উপস্থাপন করা। সুতরাং দাওয়াত সঠিকভাবে উপস্থাপনের পরও যদি কেউ দ্বীন গ্রহন না করে
তাহে দুঃখিত হওয়ার কোন কারণ নাই। এ
প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
فَإِنْ
أَعْرَضُوا فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا إِنْ عَلَيْكَ إِلَّا الْبَلَاغُ
وَإِنَّا إِذَا أَذَقْنَا الْإِنسَانَ مِنَّا رَحْمَةً فَرِحَ بِهَا وَإِن تُصِبْهُمْ
سَيِّئَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَإِنَّ الْإِنسَانَ كَفُورٌ০
-
(হে রাসূল!) আল্লাহর এই উদাত্ত আহ্বান ও আপনার দাওয়াতের পরও
তারা (কাফির-মুশরিকরা) যদি তা গ্রহণ না করে বরং মুখ ফিরিয়ে চলে যায়
তাহলে আপনার দুঃখিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কেননা আমি তো আপনাকে তাদের রক্ষক করে
প্রেরণ করিনি। আপনার কাজ হল কেবল তাদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া। আমি
মানুষকে যখন নি’আমত দান করি, তখন সে আনন্দিত হয় আর যখন তাদের মন্দ কাজের পরিণাম হিসেবে তাদের বিভিন্ন বিপদ-আপদ ঘটে তখন তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। -(সূরা শুরা : ৪৮)
কুরআন ও ছুন্নাহর
বাণী হুবহু পৌঁছে দিতে হবে : আল্লাহর কুরআন ও
রসূলুল্লাহ (স)-এর ছুন্নাহ মানুষের কাছে হুবহু পৌঁছে দিতে হবে। যারা রসূলুল্লাহর
ওয়ারিস তাদের জন্য যতই কষ্টদায়ক হোক না কেন, এর ভাবার্থগত কোন রদবদল করা যাবে না
বা কোন অংশ গোপন করা যাবে না। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
إِنَّ
الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا
قَلِيلاً أُولَـئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ
اللّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيم০
-
নিশ্চয় যারা আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন তা গোপন রাখে এবং
একে পার্থিব স্বার্থে বিক্রি করে, তারা তাদের পেট
কেবল আগুন দিয়েই পূর্ণ করে। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না আর তাদের জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি
রয়েছে। -(সূরা বাকারাহ : ১৭৪)
দাওয়াত দিতে হবে কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন যুক্তিসহকারেঃ
কাফির ও
মুশরিকদেরকে কুরআনের মাধ্যমে দাওয়াতের নমুনা : যারা দাওয়াতে দ্বীনের জন্য মেহনত করবেন তারা দ্বীন প্রচারের জন্য কুরআনে
বর্ণিত বিভিন্ন যুক্তিপূর্ণ আয়াতসমূহ মানুষের সামনে তুলে ধরবেন এবং কুরআন পড়ে পড়ে
মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালার দিকে দাওয়াত দিবেন। যেমন, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
يَا
أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ
لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ০ الَّذِي جَعَلَ
لَكُمُ الأَرْضَ فِرَاشاً وَالسَّمَاء بِنَاء وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ
بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقاً لَّكُمْ فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ
تَعْلَمُونَ০
- হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের
ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের আগের
লোকদেরও সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে
পারবে। যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা করেছেন এবং আকাশসমূহকে করেছেন ছাদ,
আকাশসমূহ হতে বর্ষণ করেছেন পানি, অতঃপর তা
দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। কাজেই তোমরা জেনে শুনে কাউকে তাঁর
সমকক্ষ সাব্যস্ত কর না। -(সূরা বাকারাহ : ২১-২২) তিনি আরও বলেন :
كَيْفَ
تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتاً فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ
يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ০ هُوَ الَّذِي خَلَقَ
لَكُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيعاً ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ
سَمَاوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ০
- তোমরা কীভাবে আল্লাহর সাথে কুফরি করতে পার?
অথচ তোমরা মৃত ছিলে, তিনি তোমাদেরকে জীবিত
করেছেন। এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন তারপর তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করবেন অতঃপর
তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তিনিই (আল্লাহ) যিনি তোমাদের (কল্যাণের) জন্য পৃথিবীর
সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আকাশসমূহের প্রতি মনোযোগ দিলেন এবং আকাশসমূহকে
সাতটি স্তরে বিন্যস্ত করলেন। আর তিনি প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে মহাজ্ঞানী। -(সূরা
বাকারাহ : ২৮-২৯) তিনি আরও বলেন :
إِنَّ
رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ
بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
- নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ,
যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে
অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি সকল কাজ পরিচালনা করেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ
নেই। তোমাদের আল্লাহ, তোমাদের প্রভু তিনিই । সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত
কর। এরপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? -(ইউনুস : ৩)। তিনি আরও বলেন :
يَا
أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن
دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِن يَسْلُبْهُمُ
الذُّبَابُ شَيْئًا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ০
- হে মানুষ! একটি উদাহরণ দেয়া হচ্ছে।
মনোযোগের সাথে উদাহরণটি শোন। তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদাত কর তারা কখনো
একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, এমনকি তারা সকলেও যদি এ
উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের নিকট থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়,
তারা মাছির নিকট থেকে তাও উদ্ধার করতে পারে না। পূজারী এবং যাদের পূজা করা হয় তারা উভয়েই কত
দূর্বল! - (সূরা হজ্জ : ৭১)। তিনি আরও বলেন :
قُلْ
أَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ أَرُونِي مَاذَا خَلَقُوا مِنَ الْأَرْضِ
أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي السَّمَاوَاتِ اِئْتُونِي بِكِتَابٍ مِّن قَبْلِ هَذَا أَوْ
أَثَارَةٍ مِّنْ عِلْمٍ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ০ وَمَنْ أَضَلُّ
مِمَّن يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَن لَّا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَومِ الْقِيَامَةِ
وَهُمْ عَن دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ০
- আপনি বলুন: তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে
ডাক, তাদের ব্যাপারে ভেবে দেখেছো কি? দেখাওতো,
পৃথিবীতে তারা কী সৃষ্টি করেছে বা আকাশ সৃষ্টিতে তাদের কোন
অংশীদারিত্ব আছে কি? যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে আমার কাছে পূর্বের কোন কিতাব বা পরম্পরাগত কোন জ্ঞান উপস্থিত কর। সে
ব্যক্তির চেয়ে বেশি বিভ্রান্ত আর কে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে
বাদ দিয়ে এমন কিছুকে ডাকে যারা কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের ডাকে কোন সাড়া দেবে না,
এমনকি তাদের ডাকা সম্পর্কেও অবহিত নয়! -(সূরা আহকাফ : ৪-৫)
আহলি কিতাবদেরকে
কুরআনের মাধ্যমে দাওয়াতের উদাহরণ : আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর কিতাব ও তাঁর রসূলের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য ও যুক্তি দিয়ে
আহলি কিতাবদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। রসূলের ওয়ারিস হিসাবে মুয়াল্লিম ও মুবাল্লিগগণকে
সেই পন্থায় দাওয়াত ও নসিহত পেশ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ পবিত্র কুরআন থেকে কয়েকটি আয়াত
পেশ করা হল। যেমন, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :
قُلْ يَا أَهْلَ
الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ
إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا
مِّن دُونِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُولُواْ اشْهَدُواْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ০
- (হে রাসূল!) আপনি বলুন, হে আহলি কিতাব! এস আমরা এমন একটি কথায় ঐক্যবদ্ধ হই, যে
কথাটি তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে অভিন্ন। সে কথাটি হল- আমরা যেন আল্লাহ ছাড়া আর কারো
ইবাদাত না করি, তাঁর সাথে যেন কাউকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ
যেন তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ না করি। এ কথার পরও যদি তারা
মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বলুন : তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম (আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী)। -(সূরা আলে ইমরান : ৬৪)
وَإِذْ
أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لاَ تَعْبُدُونَ إِلاَّ اللّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ
إِحْسَاناً وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْناً
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلاَّ قَلِيلاً
مِّنكُمْ وَأَنتُم مِّعْرِضُونَ০ وَإِذْ
أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ لاَ تَسْفِكُونَ دِمَاءكُمْ وَلاَ تُخْرِجُونَ أَنفُسَكُم مِّن
دِيَارِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ০
- (৮৩) (স্মরণ কর!) যখন আমি ইসরাঈল জাতির নিকট
থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম- তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবে না। মাতা-পিতা,
নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকীনের সাথে সদাচার করবে।
মানুষের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত
আদায় করবে। অতঃপর কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া তোমরা (অধিকাংশই) অবাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে।
(৮৪) যখন আমি তোমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম- তোমরা পরস্পরের রক্তপাত করবে
না এবং তোমাদের নিজেদের লোকদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে না। তোমরা এগুলো মেনে চলার
দৃঢ় অঙ্গীকার করেছিলে এবং তোমরাই ছিলে এর সাক্ষী। -(সূরা বাকারাহ : ৮৩-৮৪) তিনি আরও
বলেন :
وَمَنْ
يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهُ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ
فِي الدُّنْيَا وَإِنَّهُ فِي الْآَخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ ০ إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ
أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ০ وَوَصَّى
بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ
الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ০
- (১৩০) যে নিজেকে নির্বোধ করে রেখেছে সে ব্যক্তি
ছাড়া কে আর ইব্রাহীমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? অথচ ইব্রাহীমকে
আমি পৃথিবীতে (নেতা ও নবী) মনোনীত করেছি। আর নিশ্চয়ই আখিরাতেও সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
(১৩১) যখন ইব্রাহীমকে তার প্রভু বলেছিলেন : আত্মসমর্পণ কর। তখন ইব্রাহীম বলেছিলেন
: আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। ১৩২) ইব্রাহীম ও ইয়াকূব তাদের সন্তানদের
বলেছেন : হে আমার সন্তানেরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন মনোনীত করেছেন।
কাজেই তোমরা মুসলিম না হয়ে কখনো মৃত্যুবরণ কর না। (সূরা বাকারাহ : ১৩০-১৩২) তিনি আরও
বলেন :
أَمْ
تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالأسْبَاطَ
كَانُواْ هُودًا أَوْ نَصَارَى قُلْ أَأَنتُمْ أَعْلَمُ أَمِ اللّهُ وَمَنْ أَظْلَمُ
مِمَّن كَتَمَ شَهَادَةً عِندَهُ مِنَ اللّهِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ০
- (হে রসূল! আপনি ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে জিজ্ঞেস
করুন) তোমরা কি বল যে - নিশ্চয়ই ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের বংশধরগণ ইহুদী ছিল বা খৃষ্টান
ছিল? বলুন (হে রাসূল!) আল্লাহ বেশি জানেন, নাকি তোমরা বেশি জান? যার কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে কোন
প্রমাণ আছে আর সে তা গোপন করে, তারচেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে?
আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ বেখবর নন। (সূরা বাকারাহ : ১৪০) তিনি
আরও বলেন :
قُلْ
إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ
حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ০
- বলুন! আমার পালনকর্তা আমাকে সৎপথে পরিচালিত
করেছেন। ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, দ্বীনে ইব্রাহীম, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের
অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। (সূরা আন’আম : ১৬১) তিনি আরও বলেন
:
لَقَدْ
كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ وَقَالَ الْمَسِيحُ
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ ُ مَنْ يُشْرِكْ
بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا
لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ০ لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ
اللَّهَ ثَالِثُ ثَلَاثَةٍ وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلَّا إِلَهٌ وَاحِدٌ وَإِنْ لَمْ يَنْتَهُوا
عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ০ أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى اللَّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ
وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ০ مَا
الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ وَأُمُّهُ
صِدِّيقَةٌ كَانَا يَأْكُلَانِ الطَّعَامَ انْظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ الْآَيَاتِ
ثُمَّ انْظُرْ أَنَّى يُؤْفَكُونَ ০ قُلْ
أَتَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا وَاللَّهُ
هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ০ قُلْ
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعُوا
أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيرًا وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ
السَّبِيلِ ০
- (৭২) যারা বলে- মারইয়ামের পুত্র মসীই আল্লাহ,
তারা তো কুফরি করেছে। অথচ মসীহ বলেছেন : হে ইসরাঈল জাতি! তোমরা আমার
প্রভু ও তোমাদের প্রভু আল্লাহর ইবাদত কর। যে ব্যক্তি আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করবে আল্লাহ
তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং জাহান্নামকে তার বাসস্থান নির্ধারণ করবেন। আর
ফাসিকদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (৭৩) যারা বলে- আল্লাহ হলেন তিনজনের মধ্যে একজন,
তারা অবশ্যই কুফরি করেছে। অথচ এক ইলাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তারা যা
বলে তা থেকে তারা যদি বিরত না থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তাদের উপর অবশ্যই
ভয়ঙ্কর শাস্তি আপতিত হবে। (৭৪) তাহলে কি তারা আল্লাহর নিকট তওবা করবে না এবং তাঁর কাছে
ক্ষমা চাইবে না? আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল, অসীম করুণাময়। (৭৫) মারইয়ামের পুত্র মসীহ তো একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নয়। তার
আগে অনেক রসূল গত হয়েছেন, তাঁর মা ছিলেন সত্যনিষ্ঠ। তারা দুজনেই
খাবার গ্রহণ করতেন। দেখুন, আমি কেমন করে তাদের জন্য আয়াতসমূহ
বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি অতঃপর দেখুন, কীভাবে তারা সত্য থেকে
বিমুখ হচ্ছে! (৭৬) আপনি বলুন! তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কারো ইবাদত কর,
তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার কোন ক্ষমতা যার নেই? আল্লাহ সব কিছু শোনেন, তিনি মহাজ্ঞানী। (৭৭) আপনি বলুন!
হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ি কর না আর তোমরা সে
জাতির অনুসরণ কর না, যারা আগেই পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সঠিকপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। -(সূরা মা-ইদা : ৭৩-৭৭)
তিনি আরও বলেন :
يَا
أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تُحَاجُّونَ فِي إِبْرَاهِيمَ وَمَا أُنْزِلَتِ التَّوْرَاةُ
وَالْإِنْجِيلُ إِلَّا مِنْ بَعْدِهِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ০ هَا أَنْتُمْ هَؤُلَاءِ حَاجَجْتُمْ فِيمَا
لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَاجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَاللَّهُ
يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ০ مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا
نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ০ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِإِبْرَاهِيمَ
لَلَّذِينَ اتَّبَعُوهُ وَهَذَا النَّبِيُّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَاللَّهُ وَلِيُّ
الْمُؤْمِنِينَ ০
- (৬৫) হে আহলি কিতাব! ইব্রাহীম সম্পর্কে তোমরা
কেন বিতর্ক কর? অথচ তাওরাত ও ইনজীল তো তাঁর অনেক পরে নাযিল হয়েছিল,
তাহলে কি তোমরা বোঝো না! (৬৬) হ্যাঁ, তোমরা তো
সেসব লোক যারা এর আগে এমন বিষয়ে বিতর্ক করেছো, যে বিষয়ে সামান্য
হলেও তোমাদের কিছু জ্ঞান ছিল। কিন্তু এখন সে বিষয়ে কেন বিতর্ক করছো যে বিষয়ে তোমাদের
কোন জ্ঞানই নেই? আর আল্লাহ জানেন, তোমরা
জান না। (৬৭) ইব্রাহীম ইয়াহূদী ছিলেন না এবং খৃষ্টানও ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ
মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।(৬৮) মানবজাতির মধ্যে ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম
মানুষ তারা যারা তাঁর অনুসরণ করেছে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠতম হলেন এই নবী আর যারা ঈমান এনেছে।
আর আল্লাহ মুমিনগণের অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান : ৬৫-৬৮) তিনি আরও বলেন :
وَقَالُوا
كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَى تَهْتَدُوا قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا
وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ০ قُولُوا آَمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ
إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ
وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ
لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ ০ فَإِنْ آَمَنُوا بِمِثْلِ مَا آَمَنْتُمْ
بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ فَسَيَكْفِيكَهُمُ
اللَّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ০
- (১৩৫) তারা বলে- ইহুদী হও অথবা খৃষ্টান হও,
তাহলে তোমরা হিদায়াত পাবে। আপনি বলুন! আমরা বরং একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের
দ্বীন অনুসরণ করব আর ইব্রাহীম মুশরিক ছিলেন না। (১৩৬) তোমরা বল! আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর
প্রতি, আল্লাহ যা আমাদের প্রতি নাযিল করেছেন ও যা নাযিল করেছেন
ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার বংশধরদের প্রতি আর মূসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবীগণকে তাদের প্রভুর
নিকট থেকে যা দেয়া হয়েছে তার প্রতিও। আমরা তাঁদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না আর আমরাতো
তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কারী মুসলিম (১৩৭) কাজেই তারাও যদি তোমাদের মত ঈমান আনে তাহলে
তারা হিদায়াত পাবে আর যদি তারা ঈমান না এনে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে
তারা শত্রুভাবাপন্ন আর তাদের বিরুদ্ধে আপনার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ সবকিছু শোনেন,
সবকিছু জানেন। -(সূরা বকারা : ১৩০-১৩৪) তিনি আরও বলেন :
وَلَمَّا
جَاءهُمْ رَسُولٌ مِّنْ عِندِ اللّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ
الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ كِتَابَ اللّهِ وَرَاء ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لاَ
يَعْلَمُونَ০
- আর যখন আল্লাহর পক্ষ হতে রাসূল (মুহাম্মাদ স)
তাদের কাছে এলেন তাদের কাছে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী হিসেবে, তখন যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের একটি দল আল্লাহর কিতাবকে পেছনে রেখে দিল
এমনভাবে যেন তারা কিছু জানেই না। (সূরা বাকারাহ : ১০১)
মুমিনদেরকে
কুরআনের মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণ অনুসরণের দাওয়াতের উদাহরণ : মুমিনের জিম্মাদারী দায়িত্ব হল পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন,
পাড়া-প্রতিবেশীসহ সকল মুমিনদেরকে দ্বীন ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়ার জন্য
তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহ পূর্ণাংগভাবে মেনে চলার জন্য সর্বদা দাওয়াত দেয়া, নসিহত করা এবং জাহান্নামের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা। মনে রাখবেন!
মুসলিমদের জন্য ইসলামের বিধি-বিধান আংশিকভাবে মেনে চলার কোন সুযোগ নাই। আল্লাহ তা’য়ালা
বলেন :
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ
خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ০ فَإِن زَلَلْتُمْ
مِّن بَعْدِ مَا جَاءتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ০
(২০৮) মুমিনগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পুরোপুরি
দাখিল হও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (২০৯) তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আদেশ আসার পরও যদি তোমরা পথভ্রষ্ট
হও, তাহলে জেনে রেখ! নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী,
মহাবিজ্ঞানী। (সূরা বাকারাহ : ২০৮-২০৯)
وَمِنَ
النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ
وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ
ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ০
- কোন কোন মানুষ (ঈমান ও কুফরির) মাঝামাঝি থেকে
দ্বিধার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করে। এরপর তার যদি পার্থিব কোন কল্যাণ হয় তাহলে সে প্রশান্তি
লাভ করে, কিন্তু তার যদি কোন ক্ষতি হয় বা তার উপর যদি কোন বিপর্যয়
নেমে আসে, তাহলে সে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। এতে সে দুনিয়া ও আখিরাত
উভয় জায়গায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বস্তুত এটাই হল সুস্পষ্ট ক্ষতি। -(সূরা হজ্জ : ১১)
....أَفَتُؤْمِنُونَ
بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ
إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ
الْعَذَابِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ০
...তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান আন আর কিছু
অংশে কুফরি কর? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে পৃথিবীর জীবনে তাদের
প্রতিদান হল লাঞ্ছনা- অপমান এবং কিয়ামাতের দিন তাদেরকে কঠিনতম শাস্তিতে নিক্ষেপ করা
হবে। আর তারা যা করে আল্লাহ সে ব্যাপারে বেখবর নন। -(সূরা বাকারাহ : ৮৫)
দাওয়াত ও তাবলীগের সম্ভাব্য কর্মকৌশলঃ
১) সম্ভাব্য মক্তব কায়েম :
বাসস্থান, কর্মক্ষেত্র, স্থায়ী
ঠিকানা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুমহলসহ সকল ক্ষেত্রে দাওয়াত
পৌঁছিয়ে জান-মাল কুরবাণীর মাধ্যমে অন্তত একটি করে দ্বীনের মক্তব গড়ে তোলার চেষ্টা
করা।
২) ব্যক্তিগত দাওয়াত : কুরআন
ও ছুন্নাহর বানী মহল্লাবাসীর কাছে তুলে ধরা এবং তদানুযায়ী সার্বিক জীবন গঠনের জন্য
সবাইকে অনুপ্রাণিত করা।
৩) গ্রুপ ভিত্তিক দাওয়াত :
৩/৫ জন একত্রে জামাতবদ্ধ হয়ে মহল্লাবাসীর কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরার
জন্য প্রয়াস চালানো।
৪) অমুসলিমদের কাছে দাওয়াত :
দরদী মনে আশে-পাশের অমুসলিম ভাইদের কাছে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের দাওয়াত পেশ করা।
৫) জামাত ও মক্তবের দাওয়াত :
নিয়মিত নামাজের জামাত ও কুরআনের মক্তবে উপস্থিতির জন্য সবাইকে আন্তরিকভাবে দাওয়াত
দেয়া।
৬) দাওয়াতী উপকরণের মাধ্যমে
দাওয়াত : দাওয়াতী উপকরণ সর্বদা সাথে রাখা এবং প্রতিটি সুযোগকে দাওয়াতী কাজে
লাগানো। অন্তত একটি বুনিয়াদি কেন্দ্র কায়েম করে করে সাথে নিয়মিত সম্পর্ক রাখা।
৭) যোগাযোগ মাধ্যম : চিঠিপত্র, এসএমএস, ফোন-তার, ওয়েব
সাইট ও অন্যান্য যোগাযোগ প্রক্রিয়া ও
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সর্বত্র দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার জন্য
যথাসাধ্য চেষ্টা করা।
৮) লিখনী ও ভাষণ : দ্বীনি
মাহফিল, মাজলিস, সমাবেশ,
খুতবা, লিখনী ইত্যাদির মাধ্যমে উম্মাহর সংশোধন,
পরিপূর্ণ দ্বীনি চেতনার বিকাশ সাধন এবং কুরআন ও ছুন্নাহ ভিত্তিক
ইত্তিহাদের লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করা।
৯) আল্লাহর কাছে দোয়া :
হিদায়াত ও ইসলাহের জন্য দরদী মনে, নম্র ভাষায়,
সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর তরিকায় দাওয়াত ও তাবলীগী কাজ করবেন এবং
হিদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
১০) মুবাল্লিগ ও মুয়াল্লিমগণের
বৈশিষ্ট্য : মুয়াল্লিম ও মুবাল্লিগগণ হবেন আল্লাহ্র বন্ধু, রসূলুল্লাহ্র সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ারিস,
সাহাবা (রা)-গণের নমুনা, মহল্লাবাসীর শিক্ষক ও
মানবতার বন্ধু যাকে দেখে সবাই দ্বীন সম্পর্কে জানতে, শিখতে ও
আমল করতে পারেন।
ইমাম, মুয়াল্লিম ও মুবাল্লিগগণ সর্বদা এসব কৌশল অনুসরণ করে প্রতিটি
সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মহল্লাবাসীকে আল্লাহর ইবাদাত ও রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর ইত্তেবার দিকে দাওয়াত দেবেন। আল্লাহ তা’য়ালা
আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম
রাখুন! তাঁদের বজামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।
No comments:
Post a Comment