Sunday, June 1, 2014

বায়তুল্লাহ (কাবা ঘর) ও হজ্জ


বায়তুল্লাহ (কাবা ঘর) ও হজ্জ
 
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীনদুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাইআমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।
 
বায়তুল্লাহ বা কাবা ঘর সর্বপ্রথমে ফেরেশতাগণ নির্মাণ করেন। অতঃপর হযরত আদম (আলাইহিসসালাম) হযরত জিব্রাইল (আলাইহিসসালাম) ইঙ্গিত মতে এর পুনর্নিমাণ করেন । তারপর হযরত নূহ (আলাইহিসসালাম)-এর তূফানের সময় বায়তুল্লাহর প্রাচীর বিনষ্ট হলেও ভিত্তি আগের মতই থেকে যায়। পরবর্তীতে আল্লাহর হুকুমে একই ভিত্তি ভূমিতে হযরত ইবরাহীম (আলাইহিসসালাম) তা পুনর্নির্মাণ করেন। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ  
 
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَفِيهِ آيَاتٌ بَيِّـنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ0
 
-নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ (কাবা) ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়এ ঘরটিতে রয়েছ অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন, মাকামে ইব্রাহীম তার অন্যতম। যে লোক বায়তুল্লাহর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছেআর বায়তুল্লাহ-এর হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছারআর যে লোক তা মানে না, (তার যেন রাখা উচিৎ) আল্লাহ সারা বিশ্ব জাহানের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না -(সরা আল ইমরানঃ আয়াত নং ৯৬-৯৭)
 
পুনর্নিমাণ কালে হযরত ইবরাহীম(আলাইহিসসালাম) কেনআন থেকে মক্কায় এসে বসবাস করেন।  ঐ সময় মক্কায় বসতি গড়ে উঠেছিল এবং হযরত ইসমাঈল (লাইহিসসালাম) তখন বড় হয়েছেন এবং পিতা-পুত্র মিলেই কাবা গৃহ পুনর্নিমাণ করেন। তখন থেকে হরম ও তার অধিবাসীগণ পূর্ণ শান্তি, নিরাপত্তা ও মর্যাদা সহকারে সেখানে বসবাস করে আসছেন। এ বিষয়ে আল-কুরআনের মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ 
 
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْناً وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
 
-আমি কাবা ঘরকে সারা বিশ্বের মানব জাতির জন্য মিলনকেন্দ্র ও শান্তির স্থান নির্ধারণ করেছি; আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও আর আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। - (সুরা আল বাক্কারাহঃ ১২৫)
 
হযরত ইব্রাহীম ‘আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল ‘আলাইহিস সালাম কর্তৃক বায়তুল্লাহ শরীফ নির্মান কার্য  সমাপ্ত হওয়ার পর আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইব্রাহীম ‘আলাইহিস সালাম-কে বিশ্ববাসীর সামনে হজ্বের ঘোষণা জারী করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।  বিষয়ে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ   
 
وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ
 
- ‘আর তুমি মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা জারি করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং (দীর্ঘ সফরের কারণে) সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হতে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং (কুরবানীর) নির্দিষ্ট দিনগুলিতে তাঁর দেওয়া চতুষ্পদ পশু সমূহ যবেহ করার সময় তাদের উপরে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আহার করাও অভাবী ও দুস্থদেরকে’ - (সুরা হজ্জ : আয়াত নং ২৭-২৮)।
 
হযরত ইবরাহীম (লাইহিসসালাম) মাক্বামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে এবং কোন কোন বর্ণনা মতে আবু কুবায়েস পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে দুই কানে আঙ্গুল ভরে সর্বশক্তি দিয়ে উচ্চ কণ্ঠে চারদিকে ফিরে বারবার আল্লাহর পক্ষ থেকে হজ্জের উক্ত ঘোষণা জারি করেন। ইমাম বাগাভী হযরত ইবনু আববাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) -এর সূত্রে বর্ণনা করেনঃ  ইবরাহীম লাইহিসসালাম র উক্ত ঘোষণা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন সাথে সাথে বিশ্বের সকল প্রান্তে মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেন। আর মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন-এর ইচ্ছায় তখন থেকে অদ্যাবধি কাবা গৃহে অবিরত ধারায় হজ্জ, উমরাহ ও ত্বাওয়াফ চালু আছে ।
 
হযরত ইবনু আববাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবরাহীমী আহবানের জওয়াবই হচ্ছে হাজীদের লাববায়েক আল্লা-হুম্মা লাববায়েক’ (হাযির, হে প্রভু আমি হাযির) বলার আসল ভিত্তি। সেদিন থেকে এযাবত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মানুষ চলেছে কাবার পথে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ উটের পিঠে চড়ে, কেউ গাড়ীতে, কেউ বিমানে, কেউ জাহাযে ও কেউ অন্য কোন পরিবহনে করে। 
 
আবরাহার মত অনেকে বার বার চেষ্টা করেও আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন-এমেহমানগণের মানব স্রোত কখনো ঠেকাতে পারেনিপারবেও না কোনদিন ইনশাআল্লাহদিন-রাত, শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে সর্বদা চলছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও ছাফা-মারওয়ার সাঈ। আর হজ্জের পরে চলছে কুরবানী। আর এভাবে হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল (লাইহিসসালাম)-এর স্মৃতি চির অম্লান হয়ে আছে মানব ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে। এক কালের চাষাবাদহীন বিজন পাহাড়ী উপত্যকা হযরত ইবরাহীম (লাইহিসসালাম)-এর দোআর বরকতে হয়ে উঠলো সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মিলনকেন্দ্র হিসাবে। আর হজ্জ হল সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ও বিধিবদ্ধ বাৎসরিক তালীমি ও ইসলাহী বিশ্ব সম্মেলন।

হজ্জ যাত্রার প্রস্তুতিঃ

মনে রাখবেন! যারা হজ্জে যাচ্ছেন তারা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন-এমেহমান। সুতরাং যাত্রা করার আগেই আল্লাহর সম্মানিত মেহমান হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মিক, মানসিক, শারীরিক ও বৈষয়িক প্রস্তুতি নিতে হবে। যথাঃ- (১) আল্লাহর দরবারে খাঁটি তওবা করা, (২) কারো কোন প্রকার হক নষ্ট হয়ে থাকলে তার ক্ষতিপুরণ করা এবং তার কাছে ক্ষমা চাওয়া, (৩) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক দ্বীনের উপর মজবুতভাবে কায়েম থাকার জন্য জীবনের শেষ নসিহতের ন্যায় বিশেষ নসিহত করা, (৪) ফিরে আসার সম্ভাব্য সময় পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের জন্য সম্ভাব্য ভরণ-পোষণসহ প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশন প্রদান করা এবং (৫) কোন প্রকার শারীয়াত সম্মত অসিয়াত থাকলে শারীয়াত মোতাবেক স্বাক্ষীসহ লিপিবদ্ধ করে রেখে যাওয়া।

ধারাবাহিক নিয়মাবলী

হজ্জের ধারাবাহিক নিয়মাবলী সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করছি। হজ্জযাত্রীগ সফরসংগী হক্কানী ওলামা ও পুরানো হাজীগণের সাথে আলোচন করে বিস্তারিত ধারণা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। মনে রাখবেন! হজ্জ  বায়তুল্লাহ কে কেন্দ্র করে সারা জীবনে মাত্র একবার আমলের জন্য একটি বিশেষ ফরজ ইবাদাত। অনেকের কাছে ঐ সব পবিত্র স্থানসমূহ অপরিচিত থাকায় তথা হরম এলাকার মর্যাদা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে ভুল-ত্রুটি হওয়ার আশংকা থাকে। আর ভুল হয়ে গেলে শোধরানোর সুযোগ অনেকের জীবনে দ্বিতীয়বার নাও আসতে পারে। শুধু কিতাব পড়ে বাস্তব জ্ঞান লাভ করা যায় না। সুতরাং সর্বদা সফরসংগী হক্কানী ওলামা ও পুরানো হাজীগণের সাথে থেকে সতর্কভাবে হজ্জ পালন করতে হবে।

ক) বাড়ি থেকে রওনা দেয়ার আপনার ব্যাগ গুছিয়ে মালামাল চেক করে একটি তালিকা তৈরী করবেন। ইহরামের কাপড়, পা-খোলা সেন্ডেল, প্রয়োজনীয়-সম্ভাব্য ঔষধ-পত্র নিতে ভুলবেন না। পাসপোর্ট, ডলার, রিয়াল ও টাকা-পয়সা শরীরের সাথে রাখবেন। প্রত্যেক মনজিলে আপনার মালামাল লিষ্টের সাথে মিলিয়ে দেখবেন। কখনো সহযাত্রী অন্যান্য ভাইদের উপর নির্ভর করবেন না। অন্যের কোন মালামাল বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করবেন না। পথে কারও সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবেন না এবং কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না। কাফেলায় কোন আলেম বা পুরানো অভিজ্ঞ হাজী থাকলে তার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করবেন।

খ) যারা প্রথমে মক্কা শরীফে প্রবেশ করবেন তারা প্রথমে শুধু উমরাহ এর নিয়াতে নিজ বাড়ি থেকে বা দেশের বিমান বন্দর বা সমুদ্র বন্দর থেকে বা মীক্বাত থেকে ইহরাম বেঁধে সরবে তালবিয়াহপড়তে পড়তে কাবা গৃহে পৌঁছবেন। যদি ভুলক্রমে কারও ইহরাম বাঁধা না হয়ে থাকে তবে জেদ্দা বিমান বন্দরে ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। মনে রাখবেন! হরম এলাকার বাইরের লোকদের জন্য ইহরাম ছাড়া হরম এলাকায় প্রবেশ নিষেধ।

গ) যারা প্রথমে মদিনায় প্রবেশ করবেন তাদের নিজ বাড়ি বা দেশের বিমান বন্দর বা সমুদ্র বন্দর থেকে বা মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধার এবং পথে পথে তালবিয়াহপড়ার কোন প্রয়োজন নাই। কারণ জেদ্দা বিমান বন্দর ও মদিনার পথ হরম এলাকার বাইরে অবস্থিত। তারা মক্কায় যাত্রাকালীন মদিনা থেকে বা হরম সীমন্তে অবস্থিত মাসজিদে আয়শা (রাঃ) থেকে ইহরাম বেঁধে তালবিয়াহপড়তে পড়তে কাবা গৃহে পৌঁছবেন।

ঘ) যারা প্রথম দিকের হজ্জযাত্রী প্রথমে মক্কায় প্রবেশ করবেন, অতঃপর মদিনায় যাবেন, অতঃপর হজ্জের পূর্বে আবার মক্কায় ফিরে আাসবেন - তারা প্রথমে শুধু উমরাহ-এর নিয়াতে নিজ বাড়ি থেকে বা দেশের বিমান বন্দর বা সমুদ্র বন্দর থেকে বা মীক্বাত থেকে ইহরাম বেঁধে সরবে তালবিয়াহপড়তে পড়তে কাবা গৃহে পৌঁছবেন। অতঃপর উমরাহ শেষ করে হালাল হয়ে যাবেন। অতঃপর মক্কা থেকে মদিনায় যাবেন। এরপর হজ্জের পূর্বে মদিনা থেকে আবার মক্কায় ফিরে আসার সময় মদিনার অবস্থান থেকে অথবা হরম সীমান্তে অবস্থিত মাসজিদে আয়শা (রাঃ) থেকে ইহরাম বেঁধে সরবে তালবিয়াহপড়তে পড়তে কাবা গৃহে পৌঁছবেন।

ঙ) হজ্জের কার্যক্রম মূলতঃ ৭ই যিলহাজ্জ শুরু হবেযারা ৭ই যিলহাজ্জ-এর পূর্বে মক্কায় প্রবেশ করবেন তাদের জন্য তামাত্তু হজ্জ (পৃথক নিয়াতে আলাদাভাবে উমরাহ ও হজ্জ) সম্পাদন করা সহজতর হবে। আর যারা ৭ই যিলহাজ্জ মক্কায় প্রবেশ করবেন তাদের জন্য কিরান হজ্জ (একই নিয়াতে উমরাহ ও হজ্জ) সম্পাদন করাই উত্তম। বদলী হজ্জ, বয়োবৃদ্ধ ও দুর্বল মহিলাদের জন্য ইফরাদ হজ্জ (শুধু হজ্জের নিয়াতে ইহরাম বাঁধা) সহজসাধ্য হবে।

৭ই যিলহাজ্জঃ

ইহরাম বাধাঃ মীক্বাতথেকে ইহরাম বেঁধে যাত্রা শুরু করতে হবে। ইহরাম বাধার নিয়ম হল (১) ওজু ও গোসলের (সম্ভব হলে বা হাজাত থাকলে) মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা, খুশবু লাগানো, পুরুষদের জন্য ইহরামের কাপড় পরিধান করা, (৩) দুই রাকাআত নামাজ পড়া, (৪) উমরা বা হজ্জ বা একত্রে উমরা ও হজ্জ- এর নিয়াত করা এবং (৫) সরবে একবার তালবিয়াহ পাঠ করা। অতঃপর সরবে তালবিয়াহপড়তে পড়তে কাবা গৃহে পৌঁছবেন। মহিলাগণ তাদের স্বাভাবিক পোষাকে থাকবেন এবং ফিতনার আশংকা না থাকা অবস্থায় মুখ খোলা রাখবেন। পুরুষদের জন্য ইহরামের কাপড় দুই সেট রাখা উত্তম।

ত্বাওয়াফ করাঃ কাবা গৃহে পৌঁছার সাথে সাথে তালবিয়াহপাঠ বন্ধ করবেন। এখন সর্বপ্রথম কাজ হল ত্বাওয়াফ করা। হাজারে আসওয়াদতে ত্বাওয়াফ শুরু করে পুনরায় হাজারে আসওয়াদে এসে এক তাওয়াফ হবে।  হাজারে আসওয়াদবরাবর একটি কাল দাগ দেখতে পাবেন। ঐ দাগের উপর দাড়িয়ে হাজারে আসওয়াদ-এর দিকে মুখ ফিরিয়ে ইশারায় চুম্বন করে তাকবীর তহরীমার ন্যায় আল্লাহু আকবার বলে  ত্বাওয়াফ শুরু করতে হবে। এভাবে সাত ত্বাওয়াফ সমাপ্ত করবেনরুকনে ইয়ামানীহাজারে আসওয়াদ’-এর মধ্যে রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আ-খিরাতি হাসানাওঁ ওয়া ক্বিনা আযাবান্না-র দোআটি পড়বেন। প্রথম তিন ত্বাওয়াফে পুরুষগণ রমল করবেন। মহিলাদের জন্য রমল নাই। ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে অথবা হারামের যে কোন স্থানে দুরাকআত নফল নামাজ আদায় করবেন। অতঃপর যমযমের পানি পান করবেন।

সাঈ অতঃপর প্রথমে ছাফাপাহাড়ে উঠে কাবার দিকে মুখ করে দুহাত উঠিয়ে কমপক্ষে তিন বার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; আ-য়িবূনা তা-ইবূনা আ-বিদূনা সা-জিদূনা লি রবিবনা হা-মিদূনা; ছাদাক্বাল্লা-হু ওয়াদাহু ওয়া নাছারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াহদাহু দোআটি পড়ে মারওয়ার দিকে সাঈশুরু করবেন। অল্প দূর গিয়ে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যে কিছুটা দ্রুত চলবেন। তবে মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। ছাফাতে মারওয়াপর্যন্ত একবার সাঈধরা হবে। আবার মারওয়াতে ছাফাপর্যন্ত একবার সাঈধরা হবে। এইভাবে সপ্তম বারে মারওয়ায়গিয়ে সাঈশেষ হবে। সাঈ-এর দোয়াসমূহ সহযাত্রী উলামাগণের কাছে জেনে নিবেন।

মাথা মুন্ডন সাঈশেষে মাথা মুন্ডন করবেন অথবা সব চুল ছোট করবেন। মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ সামান্য চুল ছাঁটবেন। হজ্জে তামাত্তুসম্পাদনকারী প্রথমে ওমরাহ শেষ করে হালাল হয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। কিন্তু হজ্জে ইফরাদক্বিরানসম্পাদনকারীগণ ইহরাম অবস্থায় ইহরামের কাপড়ে থেকে যাবেন। সর্বাবস্থায় আল্লাহর মহান দরবারের আদব রক্ষা করে চলবেন। তারা মাথা মুন্ডন বা চুল ছাটবেন না।

৮ই যিলহাজ্জঃ

৮ই যুলহিজ্জার দিন মক্কায় স্বীয় আবাসস্থল হতে গোসল করে ও খোশবু লাগিয়ে হজ্জের ইহরাম বেঁধে  লাববাইকা আল্লা-হুম্মা লাববায়েক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববায়েক; ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারীকা লাক বলতে বলতে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন। মিনায় পৌঁছে সেখানে যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের ছালাত পৃথক পৃথকভাবে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে ক্বছরসহ আদায় করবেন। দুই ওয়াক্তের ছালাত একত্রে  জমা করা চলবে না। মিনায় আপনার জন্য নির্ধারিত তাবুতে অবস্থান করবেন। একা ঘুরতে বের হওয়া অনুচিৎ। কখনও হারিয়ে গেলে মনোবল না হারিয়ে সৌদি পুলিশ বা মিশন অফিসের সহায়তা নিবেন। যারা ইহরামের হালতে আছেন তাদের জন্য সে ইহরামই যথেষ্ট হবে।

৯ই যিলহাজ্জঃ

৯ তারিখে সূর্যোদয়ের পর মীনা থেকে যাত্রা করে ধীরস্থিরভাবে তালবিয়াতাকবীরবলতে বলতে আরাফার ময়দানের দিকে যাত্রা করবেন। অতঃপর সেখানে গিয়ে অবস্থান করে ক্বিবলামুখী হয়ে দুহাত উঠিয়ে দোআ ও যিকর-আযকার অধিক মাত্রায় করবেন এবং হজ্জের খুৎবা শ্রবণ শেষে সূর্য পশ্চিমে ঢলার পরে যোহর ও আছরের ছালাত যোহরের আউয়াল ওয়াক্তে ক্বছর সহ একত্রে জমা তাক্বদীমকরে পড়বেন।

মুযদালেফায় অবস্থানঃ

অতঃপর সূর্যাস্তের পর আরাফা হতে মুযদালেফার দিকে রওয়ানা হবেন এবং সেখানে পৌঁছে এক আযান ও দুই ইক্বামতে মাগরিবের তিন রাকআত ও এশার দুরাকআত ছালাত ক্বছর সহ এশার আউয়াল ওয়াক্তে জমা তাখীরকরে আদায় করবেন। অতঃপর ঘুমিয়ে যাবেন। অতঃপর ঘুম থেকে উঠে আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের ছালাত আদায় করে ক্বিবলামুখী হয়ে দুহাত তুলে দোআ-দরূদ ও যিকর-আযকারে লিপ্ত হবেন। অতঃপর ফর্সা হলে সূর্যোদয়ের আগেই মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন। এ সময় মুযদালিফা হতে ৭টি কংকর সংগ্রহ করে সাথে নিবেন।

১০ই যিলহাজ্জঃ

(১) ১০ই যিলহাজ্জ সূর্যোদয়ের আগেই মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন।  মিনায় পৌঁছে সূর্যোদয়ের পর জামরাতুল আক্বাবায় অর্থাৎ বড় জামরায় গিয়ে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন ও প্রতিবারে আল্লাহু আকবারবলবেন। কংকর নিক্ষেপ শেষলে কুরবানী করবেন। তামাত্তু এবং কিরান হাজীদের জন্য কুরবানী ওয়াজিব। এ ছাড়া হজ্জের কোন ওয়াজিব ক্ষতিগ্রস্থ হলে (আর একটি কুরবানীর ন্যায়) দম আদায় করতে হবে।

(২) অতঃপর মাথা মুন্ডন করবেন অথবা ছোট করে সমস্ত মাথার চুল ছাঁটবেন। মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ সামান্য চুল কাটবেন। এরপর ইহরাম খুলে প্রাথমিক হালালহয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। অতঃপর স্বামী-স্ত্রী মিলন ব্যতীত বাকী সব কাজ হালাল হয়ে যাবে।

(৩) অতঃপর মক্কায় গিয়ে ত্বাওয়াফে ইফাযাহসেরে তামাত্তু হাজীগণ ছাফা-মারওয়া সাঈ করবেন। কিন্তু ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় পৌঁছে সাঈ সহ ত্বাওয়াফে কুদূমকরে থাকলে ত্বাওয়াফে ইফাযাহ-এর পর সাঈ করবেন না। কাবা থেকে সেদিনই মিনায় ফিরে এসে রাতে অবস্থান নিবেন।

১১, ১২ ও ১৩ ই যিলহাজ্জঃ

(১) অতঃপর ১১ তারিখ দুপুরে সূর্য ঢলার পর অপরাহ্নে প্রতিটি জামরায় ৭টি করে তিন জামরায় মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। সূর্য ঢলার পর ২১টি কংকর সাথে নিয়ে প্রথমে ছোট জামরায় ৭টি, তারপর মধ্য জামরায় ৭টি ও সবশেষে বড় জামরায় (জামরাতুল আক্বাবাহ) ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবারবলবেন। ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপ শেষে একটু দূরে নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দুহাত উঠিয়ে প্রাণ খুলে আল্লাহ নিকটে দোআ করবেন।

(২) অতঃপর ১ তারিখ একই নিয়মে অপরাহ্নে প্রতিটি জামরায় ৭টি করে তিন জামরায় মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। সূর্য ঢলার পর ২১টি কংকর সাথে নিয়ে প্রথমে ছোট জামরায় ৭টি, তারপর মধ্য জামরায় ৭টি ও সবশেষে বড় জামরায় (জামরাতুল আক্বাবাহ) ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবারবলবেন। ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপ শেষে একটু দূরে নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দুহাত উঠিয়ে প্রাণ খুলে আল্লাহ নিকটে দো-মুনাজাত করবেন।

(৩) ১২ তারিখে কংকর মারার পর সূর্যাস্তের পূর্বেই যদি কেউ মক্কায় ফিরতে চান, তবে ফিরতে পারেন। কিন্তু যদি ১২ তারিখে রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই সূর্য মিনায় ডুবে যায়, তাহলে তাকে মিনায় অবস্থান করতে হবে এবং  ১৩ তারিখেও একই নিয়মে কংকর মেরে আসতে হবে।

ত্বাওয়াফে বিদা

সবশেষে ১২/১৩ তারিখে মক্কায় ফিরে বা পরবর্তী দিন-রাত যে কোন সময়ে ত্বাওয়াফে বিদাবা বিদায়ী ত্বাওয়াফ করতে হবে। তবে ঋতুবতী ও নেফাস ওয়ালী মেয়েদের জন্য এটা মাফ। ত্বাওয়াফে বিদার মাধ্যমে হজ্জ সমাপ্ত হবে -(মুসলিম,  মিশকাত হা/২৫৫৫; ‘বিদায় হজ্জের বিবরণ)

মক্কায় অবস্থানঃ

হজ্জ সমাপ্তির পর দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত যদি আপনাকে মক্কায় অবস্থান করতে হয় তাহলে এ সময়গুলো আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্যে কাজে লাগাতে পারেন। যথাঃ-

(১) নফল উমরাহঃ একজন সামর্থ্যবান ব্যাক্তি ইচ্ছা করলে রোজ ২/৩ টি নফল উমরাহ সম্পাদন করতে পারেন। তবে অসুস্থ ব্যাক্তির জন্য নফল উমরাহ সম্পাদনের ঝুকি নেয়া উচিনয়।

(২) নফল ত্বাওয়াফ ত্বাওয়াফ বায়তুল্লাহ-এর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি ইবাদাত। দুনিয়ার অন্য কোথাও এই ইবাদাতের সুযোগ নাই। তাই যত খুশী নফল ত্বাওয়াফ করা যায়। যারা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল, নফল উমরাহ সম্পাদনের সামর্থ্য নাই, তারা নফল ত্বাওয়াফ করে অফুরন্ত সাওয়াব পেতে পারেন।

(৩) বায়তুল্লাহ দর্শনঃ মহব্বতের সাথে বায়তুল্লাহ দর্শনও অতীব সাওয়াবের কাজ। যারা শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল, নফল উমরাহ বা নফল ত্বাওয়াফ সম্পাদনের সামর্থ্য নাই, তারা মহব্বতের সাথে বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে শুধু চোখ দিয়ে মহব্বতের সাথে দৃষ্টিপাত করেও সাওয়াব অর্জন করতে পারেন।

(৪) নামাজ আদায়ঃ মাসজিদুল হারামে নামাজ আদায় দুনিয়ার অন্যত্র নামাজ আদায়ের তুলনায় একলক্ষ গুণ বেশী মর্তবা রাখে। যারা বায়তুল্লাহ শরীফের কাছে থেকেও সেখানে জামাতে শরীক হতে পারে না, তারা বড়ই হতভাগ্য। অতএব আপনি সেখানে জামাতের সাথে নিয়মিত নামাজ আদায় করবেন। অনেকে বলেন, তারা যখন আসরের নামাজ পড়েন হানাফী মতে তখন আসরের ওয়াক্ত হয় না। আপনি এমন ধারণায় জামাত ত্যাগ করবেন না। আপনি শরয়ী মুসাফির, আপনি বরং সেখানে তাদের মাযহাব অনুসারে তাদের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করবেন। অবশ্য কোন কারনে জামাত না পেলে আপনি আপনার মাযহাব অনুসারে নামাজ আদায় করতে পারেন। এ ছাড়া সেখানে আপনার উমরী কাজা নামাজ এবং নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

(৫) অন্যান্য ইবাদাতঃ আপনার মূল্যবান সময় সেখানে গল্প-গুজবে না কাটিয়ে তিলাওয়াত, জিকির, দুরূদ পাঠ, নফল ইতিক্বাফ, ইস্তিগফার, দুয়া-মুনাজাত ও অন্যান্য নফল ইবাদাতে অতিবাহিত করাই উত্তম। এ জন্য সম্ভাব্য আমল হতে পারে- (ক) ফজরের নামজ জামাতের সাথে আদায় করা, (খ) ফজর থেকে চাশত পর্যন্ত বিশ্রাম ভোরের নাস্তা, (গ) চাশত থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্যান্য হাজী ভাইদের সাথে মত-বিনিময়, দাওয়াত-তা’লীম-তাযকিয়ার কাজ করা, (ঘ) দুপুর থেকে জোহর পর্যন্ত দুপুরের খাবার ও নামাজের প্রস্তুতী এবং (ঙ) জোহর থেকে ঈশা পর্যন্ত মাসজিদুল হারামে নফল ইতিক্বাফের নিয়াতে অবস্থান করে নামাজ ও অন্যান্য নফল ইবাদাতে অতিবহিত করা। এছাড়া সম্ভব হলে তাহাজ্জুদে শামীল হতে পারেন। মক্কা শরীফ থেকে আপনি যদি কিছু বরকতময় হাদিয়া বাড়িতে আনতে চান তা হল জমজমের পানি।

মদীনায় অবস্থানঃ

হাজীগন হজ্জের আগে বা পরে যখনই মদীনায় অবস্থান করবেন, তখন সেখানের আদবের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তাঁর মহান দরবারে সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-গণ যেরূপ আদব বজায় রাখতেন, বর্তমানেও ঠিক সেরূপ আদব বজায় রাখতে হবে। হাজীগন মদীনায় অবস্থান কালীন সময়গুলোও বিশষভাবে কাজে লাগাতে পারেন। যথাঃ-

(১) রওজা জিয়ারাতঃ মদীনায় পৌঁছে সর্বপ্রথম কাজ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  রওজা শরীফ জিয়ারাত করা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহব্বতের সাথে সালাম পেশ করা এবং হযরত আবু বকর ও হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-দ্বয়কে সালাম পেশ করা। এ ছাড়া প্রত্যেক নামাজের প্রত্যক নামাজের জন্য মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ও ঐভাবে সালাম পেশ করা উচি যেভাবে তাঁরা জীবিত থাকলে পেশ করা হত।

(২) নামাজ আদায়ঃ মাসজিদুন্নবী-তে নামাজ আদায় দুনিয়ার অন্যত্র নামাজ আদায়ের তুলনায় পঞ্চাশ হাজার গুণ বেশী মর্তবা রাখে। অতএব আপনি সেখানে জামাতের সাথে নিয়মিত নামাজ আদায় করবেন। এ ছাড়া সেখানে আপনার উমরী কাজা নামাজ এবং সম্ভাব্য নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।

(৩) রিয়াজুল জান্নাহঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামানার মিম্বর ও তাঁর মধ্যবর্তী স্থানকে রিয়াজুল জান্নাহ বলা হয়। হাদীস শরীফে সেখানে নামাজ আদায়ের বহু ফজিলত বর্ণিত আছে। তাই সম্ভব হলে সেখানে ফরজ বা নফল যে কোন নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।

(৪) অন্যান্য ইবাদাতঃ মাসজিদুল হারামের ন্যায় এখানেও আপনার মূল্যবান সময় সেখানে গল্প-গুজবে না কাটিয়ে তিলাওয়াত, জিকির, দুরূদ পাঠ, নফল ইতিক্বাফ, ইস্তিগফার, দুয়া-মুনাজাত, নফল নামাজ ও অন্যান্য নফল ইবাদাতে অতিবাহিত করাই উত্তম। যাবতীয় আদব রক্ষা করে চলতে হবে।

(৫) মাসজিদে কুবাঃ মদীনার উপকন্ঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্মিত প্রথম মাসজিদ হল মাসজিদে কুবা। হাদীস শরীফে সেখানে নামাজ আদায়ের বহু ফজিলত বর্ণিত আছে। তাই সম্ভব হলে সেখানে ফরজ বা নফল যে কোন নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।

এ ছাড়া জান্নাতুল বাকীতে অবস্থিত উম্মুল মুমিনীন ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-গণের কবর এবং উহুদের প্রান্তরে অবস্থিত শহীদগণের কবর জিয়ারত করার মধ্যে বহুত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মদীনা শরীফ থেকে আপনি যদি কিছু বরকতময় হাদিয়া বাড়িতে আনতে তা হল মদীনা আজওয়াহ খেজুর।

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলতঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:  হজ্জ ও উমরা পালনকারীগণ হলো দাওয়াতী যাত্রীদল (আল্লাহর মেহমান) তারা যদি আল্লাহর কাছে দোয়া করে তবে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে তিনি তাদের ক্ষমা করেন। -(ইবনে মাজাহ)

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু যাকে তাঁর মা এ মুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। -[সহীহ বুখারী]

হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি হজ্জ পালন করলো এবং হজ্জ চলা-কালীন অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করলো না, সে নিজের গুনাহ ও অপরাধ থেকে তার জন্মের দিনের মতো নিষ্পাপ শিশুর মতো মুক্ত ও পাক-পবিত্র হয়ে ঘরে ফিরে আসলো। -[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা তো দেখেছি জিহাদই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, তাহলে আমরা (মেয়েরা) জিহাদ করবো না কেনো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেনঃ মাবরূর হজ্জই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জিহাদ। -[বুখারী]

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আরাফাতের দিনের চেয়ে বেশী (সংখ্যায়) আর কোন দিন আল্লাহ বান্দাকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন না।অপর এক বর্ণনায় আছে, “আল্লাহ আরাফাতের দিনে কোন হাজী-র হাত ফিরিয়ে দেন না।” -[মুসলিম]

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:  হজ্জ ও উমরা পালনকারীগণ হলো দাওয়াতী যাত্রীদল (আল্লাহর মেহমান) তারা যদি আল্লাহর কাছে দোয়া করে তবে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে তিনি তাদের ক্ষমা করেন। -(ইবনে মাজাহ)

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু যাকে তাঁর মা এ মুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। -[সহীহ বুখারী]

হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি হজ্জ পালন করলো এবং হজ্জ চলা-কালীন অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করলো না, সে নিজের গুনাহ ও অপরাধ থেকে তার জন্মের দিনের মতো নিষ্পাপ শিশুর মতো মুক্ত ও পাক-পবিত্র হয়ে ঘরে ফিরে আসলো। -[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]

হযরত কুতায়বা ইবনে সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা ধারাবাহিক হজ্জ ও উমরা আদায় করতে থাকো। এ দুটো আমল দারিদ্র ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়। যেমন ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা-জং দূরিভূত হয়ে থাকে। আর একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। -[তিরমিযী]

বাড়িতে পত্যাবর্তনঃ


হজ্জ পালনের সুযোগ লাভের জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ। আল্লাহর মেহমানগণ নিস্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তাই তাদের বাকী জীবন আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্যে কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালনা করা উচিৎ। আর দ্বীনের খিদমতের জন্য বাকী জীবন নিয়োজিত করা উচিৎ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবার জন্য হজ্জে মাবরূর সম্পাদন করার তৌফিক দান করুন। আ-মী-ন! 

No comments:

Post a Comment