মুসলমানদের ঈমান
কিভাবে নষ্ট হয়
ডাঃ গাজী মোঃ
নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি
রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ
পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীন বান্দাগণের জন্যই নির্ধারিত।
আল্লাহ তা'য়ালা
মানব জাতিকে দুনিয়ার বুকে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসাবে কেবলমাত্র তাঁরই
ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানব জাতির
হিদায়াতের জন্য তিনি যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম) প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক
উম্মাতের নিকট এ মর্মে রসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা একমাত্র
আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে অস্বীকার কর। -(সূরা নাহলঃ আয়াত-৩৬)
পরকালীন সৌভাগ্যের মূল ভিত্তি হল বিশুদ্ধ ঈমান। আল্লাহ তা'য়ালার কোন
বান্দা যখন অটল বিশ্বাসের সংগে ঘোষণা করেন : ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রসূল’ তখন তিনি আল্লাহ
তা'য়ালার
ইবাদাতের বুনিয়াদী স্তরে অর্থাৎ মুমিনীনের স্তরে দাখিল হবেন। মু’মিনীনের স্তরে
বহাল থাকতে হলে উক্ত ঘোষণার পরিপন্থী কোন আকিদা ও আমলের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে
না। তাহলে তিনি আল্লাহর তা’য়ালার
উপর মৌলিক ঈমান ও তাঁর গোলামী থেকে খারিজ হয়ে যাবেন।
আল্লাহ তা'য়ালার কোন বান্দা যখন ঘোষণা করেন- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তখন আল্লাহর
সমস্ত হুকুম মেনে নেয়া তার জন্য বাধ্যতামুলক হয়ে যায়। আর যখন ঘোষণা করেন-
মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রসূল, তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
আদর্শ মেনে নেয়াও বাধ্যতামুলক হয়ে যায়। আল্লাহকে ইলাহ এবং মুহাম্মাদ (স)-কে রসূল
হিসাবে মেনে নেয়ার পর আল্লাহর কোন হুকুম পালন করতে বা রসূলের কোন আদর্শ মেনে চলতে
কোন ওজর বশতঃ অপারগ হলে তিনি গুণাহগার হবেন কিন্তু ঈমান থেকে খারিজ হবেন না বা
আল্লাহর গোলামী থেকে খারিজ হবেন না। আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করলে মেহেরবানী করতঃ
বান্দার ওজর কবুল করে ক্ষমা করে দিতে পারেন বা ইনসাফ করতঃ গোণাহের মাত্রা অনুযায়ী
শাস্তি দিতে পারেন।
কিন্তু আল্লাহর কোন একটি বিধান বা রসূলের কোন একটি নীতি ও
আদর্শ মেনে নিতে অস্বীকার বা ইনকার করলে কিম্বা তার তুলনায় অন্য কোন বিধি-বিধান, আইন, নীতি ও আদর্শকে
উত্তম মনে করলে তিনি আল্লাহ তা’য়ালার গোলামী সম্পূর্ণ থেকে খারিজ হয়ে কাফির হয়ে যাবেন, অথচ অনেকেই তা
উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন না। মনে রাখবেন! বিশুদ্ধ ঈমান হতে হবে কুফর, শিরক, নিফাক
ও তাগুত মুক্ত।
বর্তমান বিশ্বে মুসলিম হিসাবে অসংখ্য দাবীদার রয়েছে। মুসলিম
সমাজের অন্তর্ভূক্ত এমন কতিপয় মুসলমান রয়েছে, যারা দুনিয়ার জীবনে ঈমানদার ও
মুসলমান হিসাবে দাবী করলেও মহান আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে তারা ঈমানদার ও মুসলমান হিসাবে গণ্য
নয়। আর হাশরের ময়দানে তারা মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভূক্ত হবে না, বরং অন্যান্য
ধর্মীয় সম্প্রদায়ভূক্ত হয়ে তারা আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। ঈমান কিভাবে নষ্ট হয়-এ
বিষয়ে মুসলিমদের সতর্কতার জন্য বর্তমান প্রবন্ধে এর কতিপয় দিক সবার বিবেচনার জন্য
তুলে ধরা হল।
আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতের প্রতি অবজ্ঞা
প্রদর্শনঃ ইবলিস আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে মানুষদেরকে
প্ররোচিত করে। ফলে মানব জাতির মাঝে শুরু হয় সেচ্ছাচারিতা, নাস্তিকতা, পূর্ব পুরুষদের
প্রচলিত রসম, মুর্তিপুজা, প্রকৃতিপুজা, জাহিলিয়াত বা
মূর্খতা, মানব
রচিত তন্ত্র-মন্ত্র ও বিধি-বিধানের অন্ধ অনুসরণ।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ "তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে
বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে
আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি।" -(সূরা আল হাশরঃ আয়াত ১৬)
তিনি আরও বলেন : “আর যদি তুমি তাদের জিজ্ঞেস করো, তাদের বিদ্রুপ পূর্ণ আচরণের বিষয়ে তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলেছিলাম এবং কৌতুক করেছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের
সাথে
ঠাট্টা করছিলে। ছলনা করনা, তোমরা কাফের হয়ে গেছ, ঈমান প্রকাশ করার পর।” -(সূরা তাওবাঃ আয়াত ৬৫-৬৬)
তিনি আরও বলেন : "যখন আমি
ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল
ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব
তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমরা যে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের
অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে তা কত নিকৃষ্ট!" -[সুরাহ
কাহাফঃ আয়াত-৫০]
তিনি আরও বলেন : “হে ঈমানদারগণ! শয়তানের
পদাংক অনুসরণ করে চলো না। যে কেউ তার অনুসরণ করবে তাকে সে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ
করার হুকুম দেবে। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না থাকতো তাহলে
তোমাদের একজনও পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহই যাকে চান তাকে পবিত্র করে দেন
এবং আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞাত”। - (সুরা নুর: আয়াত ২১)
তিনি আরও বলেন : “হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত
করো না, সে
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ। -[সুরা ইয়াসিনঃ ৬০-৬১]
তিনি আরও বলেন : ''তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুর
ইবাদত করে, যারা না পারে তাদের ক্ষতি করতে আর না পারে কোন ভাল করতে এবং বলে,
এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। আপনি বলে দিন! তোমরা কি
আল্লাহকে আসমান ও জমিনের মধ্যে ঐ জিনিস শিখাতে চাও যা তিনি জানেন না। তারা যে
সমস্ত শিরক করছে আল্লাহ পাক এর ত্থেকে পবিত্র ও উচ্চ।'' -[সূরা
ইউনুস : ১৮]
তিনি আরও বলেন : “সে আমার সম্পর্কে এক
অদ্ভুত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়।
সে বলে, কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে, যখন
সেগুলো পচে গলে যাবে? বলুন, যিনি
প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি
সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন,
তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ,
তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।” -(সূরা ইয়াসীন : আয়াত ৭৮-৮১)
তিনি আরও বলেন : “হে মুহাম্মাদ ! তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, আমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকবো, যারা
আমাদের উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না ? আর আল্লাহ যখন আমাদের সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তখন আবার কি আমরা উল্টো দিকে
ফিরে যাবো ? আমরা কি নিজেদের অবস্থা সে ব্যক্তির মতো করে
নেবো, যাকে শয়তানরা মরুভূমির বুকে পথ ভুলিয়ে দিয়েছে এবং সে
হয়রান, পেরেশান ও উদ্ভান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ? অথচ তার সাথীরা তাকে চীৎকার করে ডেকে বলছে, এদিকে
এসো, এখানে রয়েছে সোজা পথ ? বলো,
আসলে আল্লাহর হেদায়াতই একমাত্র সঠিক ও নিভুর্ল হেদায়াত এবং তাঁর
পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে, বিশ্ব-জাহানের প্রভুর
সামনে আনুগ্রত্যের শির নত করে দাও।” -[সূরা আল-আন'আমঃ আয়াত
৭১]
তিনি আরও বলেন : "কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন,
আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর
তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য
যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি।
বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।" -[সূরা বাকারা:২৮-২৯]
আল্লাহ্ তা’আলার
ইবাদাত পরিত্যাগ করার ভয়াবহ পরিণামঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন
বলেন : “তারা কি দেখেনি তাদের পূর্বে এমনি ধরনের কত মানব
গোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যারা নিজ নিজ যুগে ছিল দোর্দণ্ড
প্রতাপশালী? পৃথিবীতে তাদেরকে এমন কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম,
যা তোমাদেরকেও দেইনি। তাদের ওপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ
করেছিলাম এবং তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম। (কিন্তু যখন তারা নিয়ামতের
প্রতি অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করলো তখন) অবশেষে তাদের গোনাহের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে
দিয়েছি এবং তাদের জায়গায় পরবর্তী যুগের মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছি”। -(সূরা আনআমঃ
০৬)
তিনি আরও বলেন : “আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের
কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস,
কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি
ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না;
কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে। যারা আল্লাহর
পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপেগ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব
ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত।”
-(সূরা আল আনকাবুতঃ ৪০-৪১)
আল্লাহ তা’য়ালার সাথে শরিক করাঃ আল্লাহর সাথে কোন প্রকার শরিক
সাব্যস্ত করা বান্দার জন্য অমার্জনীয় অপরাধ। আল্লাহ তা'য়ালা উপর বিশ্বাস স্থাপনের পর আল্লাহর
ইবাদাতের সাথে সাথে জীবনের কোন ক্ষেত্রে যদি অন্য কিছু প্রশয় দেয়া হয় তাহলে তার
ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে এবং তা শিরক হিসাবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা’য়ালা এই
ব্যক্তির ঈমান বা শিরক মিশ্রিত আমল তথা ইবাদাত কোন কিছুই কবুল করবেন না।
ঈমানদার বান্দাগণের শিরক করা প্রসংগে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল
‘আলামীন বলেনঃ “অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। তারা কি নির্ভীক হয়ে গেছে এ বিষয়ে যে,
আল্লাহর আযাবের কোন বিপদ তাদেরকে আবৃত করে ফেলবে অথবা তাদের কাছে
হঠাৎ কেয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা টেরও পাবে না? ” -[সূরা ইউসুফঃ আয়াতঃ ১০৬-১০৭]
ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শরীক করাঃ মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “(হে রাসূল!) আপনি বলুন,
আমি তো একজন মানুষ তোমাদেরই মতো, আমার প্রতি
অহী করা হয় এ মর্মে যে, এক আল্লাহ তোমাদের ইলাহ, কাজেই যে তার রবের সাক্ষাতের প্রত্যাশী তার সৎকাজ করা উচিত এবং বন্দেগীর
ক্ষেত্রে নিজের রবের সাথে কাউকে শরীক করা উচিত নয়।”
- [সুরা আল কাহফ : আয়াত ১১০]
তিনি আরও বলেনঃ "মানুষের মধ্যে কেউ
কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে গেলে আল্লাহর এবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়,
তবে এবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই
প্রকাশ্য ক্ষতি। সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে, যে
তার অপকার করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। এটাই চরম পথভ্রষ্টতা।" -[সূরা হাজ্জঃ আয়াত ১১-১২]
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ওয়াসীলা মনে করে শিরকঃ মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : "জেনে রাখো! নিষ্ঠাপূর্ণ
এবাদত শুধুমাত্র আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে
রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে
তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে
সৎপথে পরিচালিত করেন না।" - [সূরা ঝুমারঃ আয়াত ৩]
ভালবাসার ক্ষেত্রে শিরক করাঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “আর কোন লোক এমনও
রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি
ভালবাসা পোষণ করে, যেমন
আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের
ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন-কোন
আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর
আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর।”
-(সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ৯৬)
তাওয়াক্কুলের ক্ষেত্রে শরীক করাঃ আল্লাহ্ বলেনঃ যদি আল্লাহ
তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে
কেউ তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না। আর যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের
সাহায্য করতে পারে? আর
আল্লাহর উপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত। -[ সূরা আলেইমরানঃ ১৬০]
বন্ধুত্ব স্থাপনের
মাধ্যমে শিরক করাঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তার সংঙ্গীগণের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা
তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহ
ব্যাতীত যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।
আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের ও
আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।”-(সূরা
মুমতাহানাহঃ ৪)
জীবন-মৃত্যর ব্যপারে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে শিরক করাঃ মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “আল্লাহর
হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক
দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব।
পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি
তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো”। - [সূরা আলে-ইমরানঃ
আয়াত ১৪৫]
তিনি আরও বলেনঃ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কাফের
হয়েছে এবং নিজেদের ভাই বন্ধুরা যখন কোন অভিযানে বের হয় কিংবা জেহাদে যায়, তখন তাদের
সম্পর্কে বলে, তারা
যদি আমাদের সাথে থাকতো,
তাহলে মরতোও না আহতও হতো না। যাতে তারা এ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে
সংশ্লিষ্টদের মনে অনুতাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু
দেন। তোমাদের সমস্ত কাজই,
তোমরা যা কিছুই কর না কেন, আল্লাহ সবকিছুই দেখেন। -(সূরা আলে-ইমরানঃ আয়াত ১৫৬)
লোক দেখানো ইবাদাতের মাধ্যমে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন
বলেনঃ আর সে সমস্ত লোক যারা ব্যয় করে
স্বীয় ধন-সম্পদ লোক-দেখানোর উদ্দেশে এবং যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না, ঈমান আনে না
কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং শয়তান যার সাথী হয় সে হল নিকৃষ্টতর সাথী। আর কিই বা ক্ষতি
হত তাদের যদি তারা ঈমান আনত আল্লাহর উপর কেয়ামত দিবসের উপর এবং যদি ব্যয় করত
আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক থেকে! অথচ আল্লাহ, তাদের ব্যাপারে যথার্থভাবেই অবগত। নিশ্চয়ই আল্লাহ
কারো প্রাপ্য হক বিন্দু-বিসর্গও রাখেন না; আর যদি তা সৎকর্ম হয়, তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের
পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান করেন। -[সূরা নিসাঃ আয়াত ৩৮-৪০]
জীবন-বিধান গ্রহণের ক্ষেত্রে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন :
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব
দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র
পরস্পর বিদ্বেষ বশত, যারা
আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে
আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত। -[সুরা আলে ইমরান: ১৯]
তিনি আরও বলেন : “তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য
দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত্য
হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।” -[সূরা আলেইমরানঃ ৮৩]
পন্ডিত ও ধর্মীয় নেতাদের আনুগত্যের মাধ্যমে শিরকঃ মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন
বলেন : “তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে
এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোন
(হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র”। -(সূরা তাওবা:
আয়াত ৩১)
নেতৃবৃন্দ ও বড়দের আনুগত্যের মাধ্যমে শিরকঃ মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “যেদিন তাদের মুখমণ্ডল
অগ্নি উলট-পালট করে দিবে সেদিন তারা বলবে, হায় আফসোস! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম ও
তাঁর রাসুলকে মানতাম! তারা
আরও বলবে, হে আমাদের রব! আমরা
আমাদের নেতা ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল,হে আমাদের রব! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান
করুন এবং তাদেরকে দিন মহা অভিশম্পাত।” - [সূরা আহযাব : আয়াত ৬৬-
৬৮]
বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের আনুগত্যর মাধ্যমে শিরকঃ মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “যখন
তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে
এসো তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে
পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয়
তবুও কি তারা তাই করবে? -(সূরা মায়েদাহ : আয়াত ১০৪)
হযরত উম্মে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতের কারো
আনুগত্য চলবে না।” -(জামেউল আহাদীস: ১৩৪০৫, মুয়াত্তা: ১০,
মু’জামূল কাবীর: ৩৮১, মুসনাদে
শিহাব: ৮৭৩ আবি শাইবা: ৩৩৭১৭, কানযুল উম্মাল: ১৪৮৭৫)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “গুনাহের কাজে কোনো আনুগত্য নাই , আনুগত্য শুধু নেক কাজে ব্যাপারে।”
-[ বুখারী ও মুসলিম]
দুয়া বা প্রার্থনার ক্ষেত্রে শিরকঃ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন
বলেন : “সত্যের আহ্বান তাঁরই, আর যারা তাকে ছাড়া অন্যদেরকে ডাকে, তারা তাদের ডাকে
সামান্যও সাড়া দিতে পারে না, বরং (তাদের দৃষ্টান্ত) ঐ ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে
তার দু’হাত বাড়িয়ে দেয় যেন তা তার মুখে পৌঁছে অথচ তা তার কাছে পৌঁছবার
নয়। আর
কাফেরদের ডাক তো শুধু ভ্রষ্টতায় পর্যবসিত হয়। -(সূরা
রাদঃ আয়াত ১৪)
তিনি আরও বলেন : “হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা
শোন, তোমরা
আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ
উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি
মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও
যার কাছে অন্বেষণ করা হয় উভয়েই দুর্বল।” -(সূরা হজ : আয়াত ৭৩)
লোক দেখানো ইবাদাত গোপন শিরকঃ হযরত মাহমুদ ইবনে লাবীদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম (এক দিন) বাহিরে তাশরিফ আনলেন এবং ইরশাদ করলেন, গোপন শিরক থেকে তোমরা বেঁচে থাক! সাহাবগণ আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসূল!
গোপন শিরক কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করলেন, গোপন শিরক হলো, এক
ব্যক্তি যখন নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়ায় তখন সে তার নামাযকে খুবই গুরুত্ব সহকারে
পড়তে থাকে শুধু এই উদ্দেশ্যে যে, কেউ তাকে নামায পড়তে
দেখতেছে। সুতরাং এটাই হলো গোপন শিরক। -(তারগীব-১/৩৪, ইবনে মাজাহ-২/৩১০ ও মিশকাত-৪৫৬)
শিরক বিহীন ইবাদাতই আল্লাহ তা’য়ালার নিকট গ্রহণযোগ্যঃ মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “যারা ঈমান
আনবে এবং এর সাথে কোন প্রকার জুলুম (শিরক) মিশ্রিত করবে না, তাদের
জন্য রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত”। - (সূরা
আনআম : আয়াত ৮২)
আল্লাহর সাথে শরিককারীর জন্য জান্নাত হারামঃ মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : “আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য
জান্নাতকে হারাম করে দেন আর তার চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর ঐ সমস্ত
জালিমদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” -(সূরা মায়েদা : ৭২)
আল্লাহ তা’য়ালার রসূলের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনঃ নবুওয়াতী ছিলছিলার শেষ প্রান্তে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য
আগমন করেন হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার আগমন সম্পর্কে সমস্ত নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণ নিজ
নিজ কওমকে অবহিত করেছেন এবং তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। স্থান, কাল, গোত্র,
বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে
কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানব জাতির জন্য তিনিই সর্বশেষ ও একমাত্র নবী। অতএব রসূলের
অবমাননা বা উপহাস করলে বা তাঁর কোন একটি বিধান মেনে নিতে অস্বীকার বা ইনকার করলে
কিম্বা তার তুলনায় অন্য কোন বিধি-বিধান, আইন, নীতি ও আদর্শকে উত্তম মনে করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : “নিশ্চয়ই আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের সাথেও উপহাস করা হয়েছে। অতঃপর যারা তাঁদের সাথে উপহাস করেছিল, তাদেরকে ঐ শাস্তি বেষ্টন করে নিল, যা নিয়ে তারা উপহাস করত।” –[সূরা আন'আমঃ আয়াত
১০]
তিনি আরও বলেনঃ “কেমন করে আল্লাহ এমন জাতিকে হেদায়েত দান করবেন, যারা ঈমান আনার পর এবং রসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের নিকট
প্রমাণ এসে যাওয়ার পর কাফের হয়েছে। আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান
করেন না।” –[সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত
৮৬]
তিনি আরও বলেনঃ “যে কেউ রসূলের
বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব
মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব
যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর
গন্তব্যস্থান।” -[ সূরা নিসাঃ আয়াত ১১৫]
তিনি আরও বলেনঃ “আমি রাসূলগনকে সুসংবাদ
দাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী স্বরূপই প্রেরণ করি আর কাফেররাই মিথ্যা অবলম্বনে বিতর্ক
করে, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে এবং তারা
আমার নিদর্শনাবলীও যে সব বিষয় দ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা হয়, সেগুলোকে ঠাট্টা স্বরূপ গ্রহণ করেছে।” -( সূরা
কাহফঃ আয়াত ৫৬)
আল্লাহ তা’য়ালার কিতাবের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনঃ মানব জাতির জন্য আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা
হল ইসলাম। আর এই জীবন ব্যবস্থার আল্লাহ পদত্ত সর্বশেষ সংবিধান হল আল-কুরআন। বিশ্বময় কিয়ামাত পর্যন্ত মানব জাতির মুক্তি ও
কল্যাণের একমাত্র পথ হল জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ পদত্ত সংবিধানের বাস্তবায়ন অর্থাৎ
আল-কুরআনের পরিপূর্ণ অনুসরণ। অতএব কুরআনের কোন বিধানের অবমাননা বা উপহাস
করলে বা কোন একটি বিধান মেনে নিতে অস্বীকার বা ইনকার করলে কিম্বা তার তুলনায় অন্য
কোন বিধি-বিধান, আইন, নীতি ও আদর্শকে
উত্তম মনে করলে ঈমানদার ও মুসলমান দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন : “আর যে আমার স্মরণ
(নাজিলকৃত কিতাব) থেকে বিমুখ থাকবে, তার জীবন-জীবিকা
সংকুচিত করা হবে আর হাশরের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাবো। সে বলবে: হে আমার পভু!
আমাকে কেন অন্ধ করে উঠালেন? আমি তো দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন
ছিলাম! তিনি বলবেন: ‘আমার আয়াতসমূহ তোমার কাছে এসেছিল,
যেভাবে তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হয়েছে।
যে বাড়াবাড়ি করে ও তার পভুর আয়াতসমূহে ঈমান আনে না, আমি
এভাবেই তার প্রতিফল দেই। আর আখিরাতের শাস্তি অত্যন্ত কঠিন এবং চিরস্থায়ী।” -(সূরা
ত্ব-হা : আয়াত ১২৪-১২৭)
তিনি আরও বলেন :
“তোমরা কি ধর্মগ্রন্থের অংশবিশেষে বিশ্বাস কর ও অন্য অংশে অবিশ্বাস পোষণ
কর? অতএব তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা
ছাড়া আর কী পুরস্কার আছে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত
পাঠানো হবে কঠোরতম শাস্তিতে। আর তোমরা যা করছো আল্লাহ্ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন।” -(সূরা
বাকারাহঃ আয়াত-৮৫)
তিনি আরও বলেনঃ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড়
যালিম (অত্যাচারী) আর কে হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওযা হয়েছে
স্বীয় প্রভুর আয়াত সমূহ দ্বারা অত:পর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কারী”। -[সূরা সাজদাহ্
: আয়াত ২২]
তিনি আরও বলেন : “নিশ্চয় যারা গোপন করে,
আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের
জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত
লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য সকল অভিসম্পাতকারীগণেরও অভিসম্পাত। তবে যারা তওবা
করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।” -[সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৯-১৬০]
তিনি আরও বলেনঃ “নিশ্চয় যারা সেসব বিষয়
গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প
মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায়
না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না
তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক
আযাব। এরাই হল
সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে)
ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর
কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।”
- [ সূরা বাকারাহ : ১৭৪-১৭৫]
তিনি আরও বলেনঃ ''যারা আল্লাহর বিধান ও
হিদায়াত মানতে অস্বীকার করে এবং তাঁর নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে আর এমন লোকদের
প্রাণ সংহার করে, যারা মানুষের মধ্যে ন্যায়, ইনসাফ ও সততার নির্দেশ দেবার জন্য এগিয়ে আসে, তাদের
কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দাও৷ এরা এমন সব লোক যাদের কর্মকাণ্ড (আমল) দুনিয়া ও আখেরাত
উভয় স্থানেই নষ্ট হয়ে গেছে এবং এদের কোন সাহায্যকারী নেই।'' –(সূরা আল-ইমরান : ২১-২২)
তিনি আরও বলেনঃ “ফেরাউনের বংশধররাও তাদের
পূর্ববর্তীদের মতো আমার আয়াতকে মিথ্যা মনে করে অস্বীকার করেছিল। তাই, আল্লাহ তাদের পাপের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন। আল্লাহ তো শাস্তি দানে
অত্যন্ত কঠোর। যারা অবিশ্বাস করে, তাদেরকে বলে দিন, 'তোমরা শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং তোমাদের জাহান্নামে একত্র করা হবে। আর তা খুব
খারাপ জায়গা।” - [সূরা আল ইমরানঃ ১১-১২]
তিনি আরও বলেনঃ “যারা কুফরী অবলম্বন করেছে এবং (জেনে শুনে)
সত্য চাপা দিয়ে রেখেছে, আল্লাহ কখনও তাদের ক্ষমা করবেন না এবং সরল
পথ দেখাবেন না। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের পথ। সেখানে তারা বাস
করবে অনন্তকাল।” -( সূরা আন-নিসাঃ আয়াত ১৬৮-১৬৯)
মনের খেয়ালমত কুরআনের ব্যাখ্যার ভয়াবহ পরিনামঃ হযরত ইবনে
আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “নিশ্চিতভাবে যা তোমাদের জানা
আছে তা ছাড়া আমার পক্ষ থেকে হাদীস বর্ণনা থেকে তোমরা বিরত থাকবে। কারণ যে ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামকে নিজের বাসস্থান
বানিয়ে নিল। আর যে ব্যক্তি খেয়াল খুশীমত কুরআন সম্পর্কে কোন কথা বলে, সেও যেন জাহান্নামকে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিল।”
- (তিরমিযী-২৮৮৬:
হাসান, মুসনাদে আহমাদ)
কুরআনের হারামকে হালাল গন্য করলে ঈমান নষ্ট হয়ঃ হযরত সুহাইব
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কুরআনের হারামসমূহকে হালাল মনে
করে সে আসলে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি। -(তিরমিযীঃ
হাদীস নং ২৮৫৩)
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের
প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনঃ মানব
জাতির জন্য আল্লাহ পদত্ত সংবিধান আল-কুরআনকে কিভাবে মেনে চলবে তার জীবন্ত মডেল
হচ্ছেন রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমাদের নবী সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ হল আল-কুরআনের ব্যাখ্যা ও
বাস্তবায়ন পদ্ধতি। আর খুলাফায়ে রাশিদীন এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু
আনহুম)-গণ হলেন মানব জীবনে সুন্নাহ বাস্তবায়নের বাস্তব মডেল। অতএব নাজাতের একমাত্র
পথ হল রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে
রাশিদীন এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের আদর্শ। এর কোন একটি অংশ অবমাননা বা
উপহাস করলে, তাঁর কোন একটি আদর্শ মেনে নিতে অস্বীকার বা ইনকার করলে কিম্বা তার
তুলনায় অন্য কোন বিধি-বিধান, আইন, নীতি ও আদর্শকে
উত্তম মনে করলে ঈমানদার ও মুসলমান দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমার পিতা একজন কুরাইশি মেয়ের সাথে আমাকে
বিয়ে করিয়ে দিলেন। উক্ত মেয়ে আমার ঘরে আসল। আমি নামায রোযা ইত্যাদি এবাদতের প্রতি
আমার বিশেষ আসক্তির দরুণ তার প্রতি কোন প্রকার মনোযোগ দিলাম না। একদিন আমার পিতা-
আমর ইবনে আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তার
পুত্রবধুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামীকে কেমন
পেয়েছ? সে জবাব দিল, খুবই ভালো লোক
অথবা বললো খুবই ভালো স্বামী। সে আমার মনের কোন খোঁজ নেয় না এবং আমার বিছানার কাছেও
আসে না। এটা শুনে তিনি আমাকে খুবই গালাগাল দিলেন ও কঠোর কথা বললেন এবং বললেন,
আমি তোমাকে একজন কুরাইশি উচ্চ বংশীয়া মেয়ে বিয়ে করিয়েছি আর তুমি
তাকে এরূপ ঝুলিয়ে রাখলে? তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর কাছে গিয়ে আমার বিরূদ্ধে নালিশ করলেন। তিনি আমাকে ডাকালেন। আমি
উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি দিনভর রোযা রাখ?
আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি
কি রাতভর নামায পড়? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, কিন্তু আমি রোযা রাখি ও রোযা ছাড়ি, নামায পড়ি ও
ঘুমাই, স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করি। যে ব্যক্তি আমার
সুন্নাতের প্রতি আগ্রহ রাখে না সে আমার দলভুক্ত না। -[মুসনাদে
আহমাদঃ হাদিস নং- ৬৪৪১]
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহা হতে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : বিবাহ আমার
সুন্নাত। যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার
উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার
উম্মতের আধিক্য নিয়ে আল্লাহর দরবারে গর্ব করবো। যার সামর্থ্য আছে সে অবশ্যই বিবাহ
করবে আর যার সামর্থ্য নেই তার উপর কর্তব্য হলো রোজা রাখা। কারণ, রোজা তার জন্য প্রতিষেধক। -[ইবনে মাজাহ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে
মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি
তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও আমার
সুন্নাহ”।
-[ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৩৩৩৮]
খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর
আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন
বলে উঠলো,
হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও
মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের
মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন
তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরবে।
তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের
মধ্যে নতুন সৃষ্টিসমূহ হ’তে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের মধ্যে)
যেকোন নতুন সৃষ্টি হ’ল বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আত হ’ল পথভ্রষ্টতা।’ -[আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ]
সাহাবাগণের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর
দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে
যাবে। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন- এই দল কারা? রসূলুলাহ
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের ছুন্নাতের
উপর কায়েম থাকবে।” - (তিরমিযীঃ ২৫৭৮, আবু দাউদ, তারগীবঃ ৪৮)
খাঁটি ঈমানদার বান্দাগণের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনঃ যারা আল্লাহ তা'য়ালা এবং তাঁর রসূলের উপর
বিশ্বাসী তারা কখনও খাঁটি মুমিন বান্দাগণের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন বা দুশমনী পোষণ
করেন না। তাহলে আল্লাহর রহতত থেকে বঞ্চিত হয়ে ঈমান নষ্ট এবং কুফরীত পতিত হওয়ার
আশংকা রয়েছে। প্রকৃত মুমিনের বন্ধুত্ব ও ভালবাসা শুধুমাত্র আল্লাহ তা'য়ালা, তাঁর রসূল ও প্রকৃত মুমিনের জন্যই নির্ধারিত। এ প্রসংগে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন :
-তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং যারা ঈমান এনেছে তারা, যারা বিনীত
ভাবে রুকূর সাথে সালাত কায়িম করে এবং যাকাত আদায় করে। যারা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে নিশ্চয়ই তারাই হবে
আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী হবে। -(সূরা মায়েদা : ৫৫-৫৬)
যারা খাঁটি মুমিন বান্দাগণের প্রতি অবজ্ঞা
প্রদর্শন করে তাদের প্রসংগে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন : “পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা
ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই
কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা
সীমাহীন রুযী দান করেন।” -[সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২১২]
তিনি আরও বলেন : “যারা
সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ
করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে
গুরুতর শাস্তি।” - (সূরা আন-নূরঃ আয়াত ২৩)
তিনি আরও বলেন : “আর
যারা আল্লাহর অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে, সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, ওরা
ঐ সমস্ত লোক যাদের জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত এবং ওদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব।” -(সূরা রাদঃ আয়াত ৪৭)
মুসলাম ভাইয়ের কোন বিপদ দেখে খুশি হওয়াঃ হযরত
ওয়াছিলা ইবনে আসকয়ীল লাইছী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “তুমি (কোন) মুসলাম
ভাইয়ের কোন বিপদ দেখে খুশি প্রকাশ করো না। কেননা, হতে পারে
আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন। আর তোমার উপর ঐ মুসিবত চাপিয়ে দিবেন।”
-(তিরমীযীঃ ২/৭৩, শুয়াবুল ঈমানঃ ৫/৩১৫ ও মেশকাত-৪১৪)
একে অপরকে উপহাস প্রসংগে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “মুমিনগণ! কেউ যেন
অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম
হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ
করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে
ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।" - [সুরা হুজুরাত: আয়াত
১১]
পারস্পরিক অহংকার প্রসংগেঃ হযরত আব্দুল্লাহ
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার অন্তরে সরিষার দানার পরিমানও অহংকার
আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর যার অন্তরে সরিষার দানার পরিমানও ঈমান আছে সে
দোযখে প্রবেশ করবে না। -(মুসলিম)
মিথ্যা কসমের মারাত্মক পরিণাম : হযরত আবু উমামাহ (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে
বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম
দ্বারা কোন মুসলিমের অধিকার হরণ করে আল্লাহ তার জন্য দোযখ ওয়াজিব ও জান্নাত হারাম
করেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল,
হে আল্লাহর রসূল! যদিও সামান্য কিছু হয়, তাহলেও? তিনি বললেন: যদিও পিল্লুগাছের একটি সামান্য ডালও হয়।
-(মুসলিমঃ হাদীস নং-১৩৭)
কাউকে কাফের বলা প্রসংগেঃ হযরত আবু যার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কাউকে কাফের বলে ডাকে অথবা
আল্লাহর শত্রু বলে, অথচ ( যাকে কাফের ও আল্লাহ তাআলার শত্রু
বলা হচ্ছে) সে তা নয়, তখন তার কথা নিজের দিকে ফিরবে।
(বুখারী ও মুসলিম)
অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা উভয়ের
যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যেমন বলেছে বাস্তবে তা’ই
হয়, তাহলে তো ঠিক আছে, নতুবা উক্ত বিষয়টি
যে বলেছে তার দিকেই ফিরে আসবে। -{সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং-২২৫,
সহীহ ইবনে হিব্বানঃ হাদীস নং-২৫০, মুসনাদে
আহমাদঃ হাদীস নং-৫০৩৫, মুসনাদে আবী আওয়ানাঃ হাদীস নং-৫৪,
শুয়াবুল ঈমানঃ হাদীস নং-৬২৩৭}
মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো প্রসংগে মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন : “যারা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তাদের জন্য
পৃথিবীতে ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ্
জানেন, তোমরা
জান না।” – [আন-নূরঃ আয়াত ১৯]
নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা প্রসংগেঃ হযরত আবু হুরাইরা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : লজ্জা ও সম্ভ্রমবোধ ঈমানের অংগ আর ঈমানের
স্থান জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা জুলুমের অংগ আর জুলুমের স্থান দোযখে।
-(আহমাদ, তিরমিযী- ১৯৫৮ : হাসান ও সহীহ্)
অবান্তর কথাবার্তার প্রসার ঘটানো প্রসংগে মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ মানুষের মধ্যে এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে
আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে
এবং আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে
রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সুরা লুকমানঃ
আয়াত-৬)
স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড
করা প্রসংগে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ "নিশ্চয়ই যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড
করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে,
তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা`আয়ালার নিকট সমর্পিত।
অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে।"- [সুরা আন-আমঃ আয়াত ১৫৯]
কোন মুমীনকে অন্যায়ভাবে হত্যা প্রসংগে মহান আল্লাহ্
রাব্বুল ‘আলামীন
বলেনঃ যে ব্যক্তি জেনে শুনে কোনো মুসলমানকে
হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি ক্রুদ্ধ
হয়েছেন, তাকে
অভিশাপ করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। -(সূরা আন
নিসাঃ ৯৩)
তিনি আরও বলেন : “হত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয়
সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া যদি কেউ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে, তাহলে সে যেন (পৃথিবীর) সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর যদি কেউ কোন
ব্যক্তিকে জীবন দান (রক্ষা) করল, সে যেন (পৃথিবীর) সমস্ত
মানুষকে জীবন দান করল। -(সূরা আল-মায়েদা : ৩২)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন : মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী আর হত্যা বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা
কুফরী। -(বুখারী, মুসলিম)
পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়
জাহান্নামী হবেঃ হযরত আবু বাকরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যদি কোনো
মুসলমান অন্য মুসলমানের বিরুদ্ধে তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে তারা উভয়ই জাহান্নামী
হবে। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল!
হত্যাকারী জাহান্নামী হবে এটাতো বুঝতে পারলাম (অর্থাৎ হত্যা করার কারণে) কিন্তু যাকে
হত্যা করা হয়েছে সে কেন জাহান্নামী হবে? রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে-ও অন্যজনকে
হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল।" - (সহীহ বুখারীঃ ৬৮৭৫ ও সহীহ মুসলিমঃ ২৮৮৮)
খাঁটি মুমিন বান্দাগণের সাথে দুশমনী পোষণঃ হযরত আবু
হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন : “যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে দুশমনী পোষণ করে আমি তার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। বান্দারা যে সব আমল দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে এর
মধ্যে ফরজ আমলসমূহ আমার নিকট অধিক প্রিয়। বান্দা যখন নফল আমলের মাধ্যমে আমার
নৈকট্য লাভ করতে থাকবে তখন আমিও তাকে ভালবাসব। যখন আমি তাকে
ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শোনে, চোখ হয়ে যাই যা
দ্বারা সে দেখে, হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে, পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে। যদি সে আমার
নিকট কিছু প্রার্থনা করে তবে অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যা থেকে
বাচঁতে চায় তা থেকে বাচাঁই। আমি কোন কাজ করতে দ্বিধা করি না, শুধু ঐ মুমিন বান্দার রুহু কবজ ছাড়া। সে মৃত্যুকে
অপছন্দ করে এবং আমিও তার অনিচ্ছায় জোর করতে চাই না, অথচ তাকে মরতে
হবে।” - (সহীহ বুখারী)
ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনঃ ঈমান
হতে হবে কুফরমুক্ত। মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা
হল ইসলাম। সুতরাং যদি কেউ আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত করতে চায় তাহলে তাকে
আল্লাহর দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করতে হবে এবং ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল
হতে হবে। মুসলিম দাবীদার কোন ব্যক্তি যদি কুরআন ও ছুন্নাহ-এর প্রতি তথা ইসলামী
জীবন ব্যবস্থার কোন কোন আইন, বিধি-বিধান, নীতিমালা ও আদর্শে প্রতি
অবজ্ঞা প্রদর্শন করে, তাহলে সে ঈমান থেকে খারিজ
হয়ে কাফির ও মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে সে আর
মুমিন বান্দাগণের অন্তর্ভূক্ত থাকবে না।
এ প্রসংগে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ “নিঃসন্দেহে
আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া
হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশত, যারা আল্লাহর
নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে
আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।” -[সুরা আলে ইমরান: ১৯]
মানব জাতির জন্য বিধিবদ্ধ দ্বীন প্রসংগে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন
বলেনঃ “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) বিধিবদ্ধ
করে দিয়েছেন; (তা হচ্ছে ঐই জীবন ব্যবস্থা) যার ব্যাপারে
তিনি নূহ-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আমি (আল্লাহ) তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং
ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা-কে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল,
তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এই ব্যাপারে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ো না।” - (সুরা শু’রা : ১৩)
ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল
প্রসংগে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন : “ হে ঈমানদার গন! তোমরা
পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না।
নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। অতঃপর তোমাদের মাঝে পরিস্কার নির্দেশ
এসে গেছে বলে জানার পরেও যদি তোমরা পদস্খলিত হও, তাহলে নিশ্চিত
জেনে রেখো, আল্লাহ, পরাক্রমশালী,
বিজ্ঞ।” -[সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২০৮-২০৯]
তিনি আরও বলেন : “কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন
(জীবন-ব্যবস্থা) চায়, কখনোই তা গ্রহন করা
হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” - ( সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ৮৫)
তিনি আরও বলেন : “তারা কি আল্লাহর দ্বীন (জীবন
ব্যবস্থা)-এর পরিবর্তে অন্য দ্বীন (জীবন
ব্যবস্থা) তালাশ করছে? অথচ আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায়
হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে
যাবে।” -[সূরা আলে-ইমরানঃ আয়াত ৮৩]
তিনি আরও বলেন : “আল্লাহর দ্বীন মেনে নেয়ার পর যারা সে
সম্পর্কে বিতর্কে প্রবৃত্ত হয়, তাদের বিতর্ক তাদের প্রভুর কাছে
বাতিল, তাদের প্রতি আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর
আযাব।" - (সূরা আশ-শুরা : ১৬)
তিনি আরও বলেন : “হে ঈমানদারগণ! শয়তানের
পদাংক অনুসরণ করে চলো না। যে কেউ তার অনুসরণ করবে তাকে সে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ
করার হুকুম দেবে। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না থাকতো তাহলে
তোমাদের একজনও পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহই যাকে চান তাকে পবিত্র করে দেন
এবং আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞাত।” - (সুরা নুরঃ ২১)
তিনি আরও বলেন : “আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ
করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই, যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত
হয়।” – (সূরা আল-আহযাব : আয়াত ৩৬)
তিনি আরও বলেন : “অতএব, তোমার
পালনকর্তার কসম! ! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক
বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম
সংকীর্নতা থাকবে না, বরং হৃষ্ট চিত্তে তা কবুল করে নেবে”। -(সুরা নিসাঃ আয়াত ৬৫)
তিনি আরও বলেন : “মু’মিনদেরকে
যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মু’মিনদের
জওয়াব তো এই হয় যে,তারা বলে, আমরা শুনলাম ও
মেনে নিলাম, আর
তারাই সফলকাম।” -[সূরা নূরঃ আয়াত ৫১]
তিনি আরও বলেন : “তারা কি জাহেলী আইন ও শাসন চায়?
বিশ্বাসী কওমের জন্য আল্লাহর আইন ও শাসনের চেয়েকার আইন ও শাসন
উত্তম হতে পারে, ” (আল- মায়েদাহ: ৫০)
তিনি আরও বলেন : “অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে
মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ্ ও রাসূলের নিকট, যদি
তোমরা আল্লাহ্ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।”
– (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯)
তিনি আরও বলেন : “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে
ফায়সালা করলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর নিজেদের কোন ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার থাকবে না।
কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”
-(সূরা আহযাবঃ ৩৬)
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত ।
তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন: “যে আমাদের এ ধর্মে এমন কোন নতুন বিষয়
উদ্ভাবন করবে যা ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত হবে”। -(বুখারী
ও মুসলিম)
ঈমানের মাঝে নিফাক বা কপটতাঃ খাঁটি ঈমান হতে
হবে সকল প্রকার নিফাক বা কপটতা মুক্ত। ঈমানের ঘোষণা দেয়ার পরও অন্তরের মাঝে কোন
প্রকার নিফাক বা কপটতার অনুপ্রবেশ ঘটলে তাঁর ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। মানব সমাজে সে
মুসলিম হিসাবে পরিচিত হলেও আল্লাহর কাছে সে মুনাফিক হিসাবে গণ্য হবে। আল্লাহ
তায়ালার মহান দরবারে তার কপট বিশ্বাস এবং প্রদর্শনী আমল কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ "আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ করা হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাগুতকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে।" - [সুরা আন-নিসাঃ আয়াত ৬০-৬১]
তিনি আরও বলেনঃ "আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে,
দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি ।
মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না । আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত ! মনে
রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু
তারা তা বোঝে না । আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন
বলে, আমরা ঈমান এনেছি । আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে
একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা
তোমাদের সাথে রয়েছি । আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা । বরং আল্লাহই
তাদের সাথে উপহাস করেন । আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও
কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।" - (সূরা আল বাক্বারাহঃ আয়াত ১১-১৫)
তিনি আরও বলেনঃ “এরা এমনি মুনাফেক যারা তোমাদের
কল্যাণ-অকল্যাণের প্রতীক্ষায় ওঁৎপেতে থাকে। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের যদি
কোন বিজয় অর্জিত হয়, তবে তারা বলে, আমরাও
কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? পক্ষান্তরে কাফেরদের যদি আংশিক
বিজয় হয়, তবে বলে, আমরা কি তোমাদেরকে
ঘিরে রাখিনি এবং মুসলমানদের কবল থেকে রক্ষা করিনি? সুতরাং
আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কেয়ামতের দিন মীমাংসা করবেন এবং কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে
মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।” -( সূরা আন নিসাঃ আয়াত ১৪১)
তিনি আরও বলেনঃ "তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়,
তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত
হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু
করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।"- [সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ১২০]
তিনি আরও বলেনঃ "যাদের কলবের মধ্যে ব্যাধি রয়েছে,
আপনি দেখবেন, তারা অতি দ্রুত ইহুদি, খৃষ্টান ও মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে। তারা বলবে :
আমরা আমাদের উপর যে কোন রকমের বিপদ আপতিত হওয়ার আশংকা করি। অচিরেই আল্লাহ
বিজয় দান করবেন কিংবা তাঁর নিজের পক্ষ থেকে এমন কিছু দেবেন যাতে তারা অন্তরে যা
লুকিয়ে রেখেছিল সে জন্য লজ্জিত হবে।" - (সূরা মায়িদা :
আয়াত ৫২)
মুসলিম নামধারী কপট বিশ্বাসীদের পরিণতি প্রসংগে মহান
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ “সেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার
পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে
তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে। বলা হবে, আজ তোমাদের জন্যে
সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য। সেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট
বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবে, তোমরা আমাদের জন্যে
অপেক্ষা করো, আমরাও কিছু আলো নিবো তোমাদের জ্যোতি থেকে।
বলা হবে, তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ করো। অতঃপর
উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব।” -[সূরা হাদীদঃ আয়াত
১২-১৩]
তিনি আরও বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের বাদ দিয়ে
কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। তোমরা কি তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে আল্লাহর
নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করতে চাও? নিশ্চয়ই জাহান্নামের সর্বনিম্ন
স্তরে হবে মুনাফিকদের অবস্থান, আর আপনি তাদের জন্য কোন
সাহায্যকারী পাবেন না। তবে যারা তওবা করে, আত্মশুদ্ধি করে,
আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে দ্বীনে
সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে, তারা মুমিনদের সাথেই থাকবে। আর আল্লাহ
মুমিনদেরকে শীঘ্রই মহাপুরস্কার প্রদান করবেন।” -(সূরা নিসাঃ আয়াত ১৪৪-১৪৬)
তাগুতের সাথে সম্পর্ক স্থাপনঃ খাঁটি ঈমান হতে
হবে সকল প্রকার তাগুত মুক্ত। তাগুত হল ঐ শক্তি-যারা নিজেরাই শুধু কুরআন ও
ছুন্নাহ-এর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং মনগড়া আইন, বিধি-বিধান ও নীতিমালা তৈরী করে শক্তি ও ক্ষমতার জোরে জনগণকে তা মানতে
বাধ্য করে। খাঁটি মুমিনের সাথে তাগুতী শক্তির কোন সম্পর্ক থাকতে পারে
না। তাগুতের সাথে মুসলিম দাবীদার কোন ব্যক্তির কোন প্রকার সম্পর্ক থাকলে তার ঈমান
নষ্ট হবে। আল্লাহ তা’য়ালার মহান দরবারে সে আর মুমিন বান্দাগণের
অন্তর্ভূক্ত থাকে না।
দুনিয়ার বুকে সমস্ত নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণ
আল্লাহদ্রোহী শক্তি বা তাগুতকে অমান্য করে আল্লাহ তা’য়ালার উপর বিশ্বাস স্থাপন এবং
আল্লাহর ইবাদাতের দিকে মানব জাতিকে আহ্বান করেছেন। খাঁটি ঈমানদার হতে হলে
আল্লাহদ্রোহী শক্তি বা তাগুতকে চিনতে হবে এবং তাকে অমান্য করে সেচ্ছায় আল্লাহ
তা’য়ালার উপর ঈমান আনতে হবে এবং তাঁর ইবাদাতের দিকে নিজেকে রুজু করতে হবে।
এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : “নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মাতের নিকট এ মর্মে রসূল প্রেরণ করেছি যে,
তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে অমান্য কর।” -(সূরা নহল : আয়াত ৩৬)
তাগুতের পরিচয় ও পরিনাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন
বলেন : “যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা মনে করে অস্বীকার করেছে এবং বিদ্রোহীর
ভূমিকা অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজা কখনো খোলা হবে না।
তাদের জান্নাতে প্রবেশ করা ততোখানি অসম্ভব যতোখানি অসম্ভব সূচের ছিদ্রের ভেতন
দিয়ে উষ্ট্র প্রবেশ। অপরাধীদের জন্য প্রতিফলন এমন হওয়াই উচিত। তাদের জন্য আগুনের
শয্যা ও চাদর নির্দিষ্ট আছে। আমরা জালেমদেরকে এ ধরণের প্রতিফলনই দিয়ে থাকি।
-(সূরা আরাফ: আয়াত ৪০-৪১)
তিনি আরও বলেনঃ “নিশ্চয়ই যারা কাফের এবং
আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের জন্যে সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর
রসূলের (সঃ) বিরোধিতা করে, তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে
পারবে না এবং তিনি ব্যর্থ করে দিবেন তাদের কর্মসমূহকে।” -(সূরা মুহাম্মাদঃ আয়াত
৩২)
তাগুতের সাথে সম্পর্ক প্রসংগে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন
আরও বলেন : “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে
যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ করা হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার
পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়,
অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা
তাগুতকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে
চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে
এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি তাদেরকে
দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে।
-[সুরা আন-নিসাঃ ৬০-৬১]
তিনি আরও বলেন : “দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে
কোন জোর-জবরদস্তি নেই। সুপথ গোমরাহীর পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি
তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধারণ করবে, যা কখনও বিচ্ছিন্ন
হবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।” (সূরা বাকারাহ :
২৫৬)
তিনি আরও বলেন : “যারা তাগুতের দাসত্ব
থেকে দুরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য রয়েছে
সুসংবাদ, অতএব আমার বান্দাগণকে সুসংবাদ দিন।” -( সূরা যুমার : আয়াত ১৭)
হযরত কাব বিন উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "জেনে রাখো অচিরেই
অনেক জালিম শাসক আসবে। যারা সেই সকল শাসকদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের অন্যায়গুলোকে সমর্থন দিবে এবং তাদের জুলুমে সহযোগিতা করবে সে আমার
উম্মত নয় এবং আমিও তাঁদের দায়িত্ব নিবো না এবং (কিয়ামতের
দিন)
তাকে আমার হাউজে কাউসারের সামনে আসতে দেয়া হবে না।
আর যাঁরা সেই সকল জালিম শাসকদের সাথে আঁতাত করবে না, তাদের জুলুমে
সহায়তা করবে না তাঁরা আমার উম্মত এবং আমি তাঁদের দায়িত্ব নিবো এবং তাঁদেরকেই
কিয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি পান করানো হবে।” - [ তিরমিযি,
হাদিস নং ৬১৪, হাদীসটি সহিহ]
বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনঃ খাঁটি
ঈমানদারদেরকে বাদ দিয়ে বিধর্মীদের সাথে মুমিনের কোন আন্তরিক ভালবাসা হতে পারে না।
যদি কোন মুসলিম তাদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করে তাহলে আল্লাহর সাথে তার
কোন সম্পর্ক থাকবে না, বরং সে তাদেরই দলভূক্ত বলে গন্য হবে। তবে
কোনরূপ দুনিয়াবী ক্ষতি বা ফিতনার আশংকা থাকলে সেক্ষেত্রে বাহ্যিক সতর্কতা অবলম্বন
দোষনীয় হবে না।
তিনি আরও বলেনঃ “মুমিনগণ যেন মুমিনগণকে বাদ দিয়ে কোন
কাফিরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। যে মুমিনকে বাদ দিয়ে কাফিরকে বন্ধু হিসেবে
গ্রহণ করবে তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে তোমরা যদি তাদের নিকট থেকে
কোনরূপ ক্ষতির আশংকা কর, তার কথা স্বতন্ত্র। আল্লাহ তাঁরই সম্পর্কে
তোমাদেরকে সতর্ক করছেন। আর আল্লাহর নিকটই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।” -(সূরা
আলে-ইমরানঃ আয়াত ২৮)
তিনি আরও বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ছাড়া
অন্য কাউকে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না। কেননা অন্যরা তোমাদের ক্ষতি করতে
দ্বিধা করে না এবং যা তোমাদেরকে কষ্ট দেয় তারা তাই কামনা করে। তাদের মুখ থেকে কখনো
কখনো বিদ্বেষ প্রকাশ পায়, কিন্তু তাদের মনে যা গোপন রয়েছে তা আরো
ভয়ঙ্কর। আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছি, যেন তোমরা বুঝতে পার। (মুমিনগণ!) তোমরা এমন যে, তোমরাই
তাদেরকে ভালবাসো, কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। আর
তোমরা কিতাবের প্রতিটি বিষয়ে ঈমান রাখ। তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে, তখন তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আর যখন তারা একান্তে
মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে নিজেদের আঙুলের মাথা কামড়াতে থাকে। বলুন (হে
রাসূল!), তোমরা মরো তোমাদের আক্রোশেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের
অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে সবকিছুই জানেন। যদি তোমাদের ভাল কোন কিছু হয় তাহলে তা
তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে তারা তাতে আনন্দিত হয়। যদি
তোমরা ধৈর্যশীল ও মুত্তাকী হও, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের
কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।”
-(সূরা আলে-ইমরানঃ আয়াত ১১৮-১২০)
তিনি আরও বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে
বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা এক অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যারাই তাদেরকে
বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ
(এসব) জালিম সম্প্রদায়কে সুপথে পরিচালিত করেন না। বস্তুতঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি
রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখতে পাবেন যে, দৌড়ে গিয়ে
তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে এবং তারা বলে, আমরা আশংকা করি যে,
আমাদেরকে কোন বিপদ এসে আক্রমন করে নাকি। অতএব সেদিন বেশী দুরে নয়,
যেদিন আল্লাহ বিজয় প্রকাশ করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ
দিবেন, ফলে সেদিন তারা স্বীয় মনোভাবের জন্য অনুতপ্ত হবে।
মুমীনগণ বলবে- এরা কি সেই সব লোক, যারা আল্লাহর নামে
প্রতিজ্ঞা করে বলত যে আমরা তোমাদের সাথে আছি! তাদের কর্মফল বিফল হয়ে গেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।” -(সূরা মায়েদাঃ আয়াত ৫১-৫৩)
তিনি আরও বলেন : “হে মুমিনগণ! তোমরা
আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রু-কে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর না।
তোমরা তাদের নিকট বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠিয়েছো আর তারা তোমাদের নিকট যে সত্য
এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কারণে
রাসূলকে ও তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। যদি তোমরা আমার পথে জিহাদ করার জন্য
এবং আমার সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে বের হয়ে থাক, তাহলে তাদের
সাথে কেন গোপনে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছ? তোমরা যা গোপন কর এবং
তোমরা যা প্রকাশ কর আমিই তা সবচেয়ে বেশি জানি। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এমন করবে
সে সঠিক-সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে। যদি তারা তোমাদেরকে বশীভূত
করতে পারে, তাহলে তারা তোমাদের শত্রুই হয়ে যাবে। তারা তাদের
হাত ও মুখ দিয়ে তোমাদের ক্ষতি করবে এবং কামনা করবে যে, তোমরাও
কাফির হয়ে যাও। অথচ তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্ততি কিয়ামাতের দিন তোমাদের কোন কাজেই আসবে
না। আল্লাহ তোমদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। তোমরা যা কর,
আল্লাহ তা দেখেন। ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। যখন তারা
তাদের জাতিকে বলেছিলেন: ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা
যার উপাসনা কর তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের সম্পর্ক অস্বীকার
করি। যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ও আমাদের
মধ্যে চিরকালের শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেল।’ তবে তার
পিতার প্রতি ইব্রাহীমের কথা এ থেকে ভিন্ন ছিল। তিনি বলেছিলেন: ‘আমি অবশ্যই আপনার জন্য ক্ষমা চাইব, তবে আল্লাহর নিকট
আপনার ব্যাপারে আমি কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখি না।’ ইব্রাহীম
ও তাঁর অনুসারীগণ বলেছিলেন: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা
আপনার উপরই নির্ভর করেছি, আপনার প্রতি অগ্রসর হয়েছি এবং ফিরে
আসব আপনার কাছেই।’‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে
কাফিরদের জন্য পরীক্ষা পাত্র বানাবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে
ক্ষমা করুন। আপনি তো মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাময়। তোমরা
যারা আল্লাহর সান্নিধ্য ও আখিরাতে সফলতা প্রত্যাশা কর নিশ্চয় তাদের জন্য ইব্রাহীম
ও তার অনুসারীদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর কেউ তাদের আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ মহাধনী (অমুখাপেক্ষী),
মহাপ্রশংসিত।– (সূরা মুমতাহিনাঃ আয়াত ১-৬)
তিনি আরও বলেন : “আর তোমরা তোমাদের
দ্বীনের অনুসরণকারী ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলুন (হে রাসূল!), আল্লাহর হিদায়াতই একমাত্র হিদায়াত। তোমরা যা পেয়েছিলে অন্য কেউ তেমন কেন
পাবে অথবা তারা কেন তোমাদের প্রতিপালকের সামনে বিতর্কে তোমাদেরকে পরাজিত করবে?
বলুন! নিশ্চয়ই যাবতীয় অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তা
দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যবান, মহাজ্ঞানী।” -(সূরা আলে
ইমরান : ৭৩)
যারা অন্য জাতির কালচারের সাথে সামঞ্জস্য রাখাঃ যারা
অন্য জাতির কালচারের সাথে সামঞ্জস্য রাখে তারা মূলতঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের চেয়ে সে জাতির কালচারকে বেশী উত্তম
মনে করে মহব্বত করে এবং প্রাধান্য দেয়। আর যারা কোন কালচারকে সুন্নাতের চেয়ে বেশী
প্রাধান্য দেয়, তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে, রসূলের উম্মাতভূক্ত থাকবে না আর তারা
তাদেরই দলভূক্ত বলে গন্য হবে।
এ প্রসংগে হাদীসে এসেছেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য বা মিল রাখে, সে তাদেরই দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর
তাদের সাথেই হবে।” -(মুসনাদে আহমদ)
হযরত আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেনঃ “যে
ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচারের অনুকরণ করবে, সে
তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়কে মহব্বত করবে, তাদের সাথে তার হাশর হবে।” -(সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস
নং ৩৫১৪)
আল্লাহ তা’য়ালা
আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! উল্লেখিত বিষয়সমূহে সাবধানতা
অবলম্বনের তৌফিক দান করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা
(রাদিয়াল্লাহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের
সংগে আমাদের হাশর করুন! আর রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে
জান্নাত লাভের তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।
No comments:
Post a Comment