আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে তাঁর মনোনীত দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) মোতাবেক
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি,তার পরিবারবর্গ,বংশধর,সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ
(রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।
নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে
রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের
মধ্যেই নিহিত।
আল্লাহ
তা’য়ালা
মানব জাতিকে তাঁর মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা মোতাবেক তাঁরই ইবাদাতের দিকে
আহবান জানিয়েছেন। মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হল
ইসলাম। সুতরাং
যদি কেউ আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করতে চায় তাহলে তাকে আল্লাহর দরবারে নিঃশর্ত
আত্মসমর্পন করতে হবে এবং ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে হবে। এ প্রসংগে
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
-"নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র
দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) হল ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট
প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশত, যারা
আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ
হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।"
-(সুরা আলে
ইমরানঃ আয়াত ১৯)
সমস্ত নবী-রসূল (আ)-গণের দ্বীন ছিল ইসলামঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন
ব্যবস্থা) বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। (তা হচ্ছে ঐ জীবন ব্যবস্থা) যার ব্যাপারে তিনি নূহ কে নির্দেশ
দিয়েছিলেন। আর আমি (আল্লাহ) তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল,
তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এই ব্যাপারে একে অপরের
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" -(সূরা শু’রাঃ আয়াত
১৩)
ইসলাম হল দ্বীনে হানীফ তথা দ্বীনে ইব্রাহীমঃ আল্লাহ তা’য়ালা
বলেন : "(হে রসূল!) আপনি বলুন! আমার
পালনকর্তা আমাকে সৎ পথে পরিচালিত করেছেন। ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, দ্বীনে ইব্রাহীম, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।"
- (সূরা আনআমঃ আয়াত ১৬১)
তিনি আরও
বলেনঃ "যে নিজেকে নির্বোধ করে রেখেছে সে
ব্যক্তি ছাড়া কে আর ইব্রাহীমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? অথচ ইব্রাহীমকে আমি পৃথিবীতে (নেতা ও নবী) মনোনীত করেছি। আর
নিশ্চয়ই আখিরাতেও সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। যখন ইব্রাহীমকে তার প্রভু বলেছিলেন:
আত্মসমর্পণ কর। তখন ইব্রাহীম বলেছিলেন: আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট আত্মসমর্পণ
করলাম। ইব্রাহীম ও ইয়াকূব তাদের সন্তানদের বলেছেন : হে আমার সন্তানেরা! নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলিম না হয়ে কখনো
মৃত্যুবরণ কর না।"
- (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৩০-১৩২)
সব নবী-রসূল এবং তাদের অনুসারীগণ ছিলেন মুসলিমঃ আল্লাহ তা’য়ালা
বলেন, "হে আহলি কিতাব! ইব্রাহীম সম্পর্কে
তোমরা কেন বিতর্ক কর? অথচ তাওরাত ও ইনজীল তো
তাঁর অনেক পরে নাযিল হয়েছিল, তাহলে
কি তোমরা বোঝো না! হ্যাঁ, তোমরা তো সেসব লোক যারা এর আগে এমন বিষয়ে বিতর্ক করেছো,
যে বিষয়ে সামান্য হলেও তোমাদের কিছু জ্ঞান ছিল।
কিন্তু এখন সে বিষয়ে কেন বিতর্ক করছো যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞানই নেই? আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। ইব্রাহীম ইয়াহূদী ছিলেন না এবং খৃষ্টানও
ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
মানবজাতির মধ্যে ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম মানুষ তারা যারা তাঁর অনুসরণ করেছে এবং তাঁর
ঘনিষ্ঠতম হলেন এই নবী আর যারা ঈমান এনেছে। আর আল্লাহ মুমিনগণের অভিভাবক।" - (সূরা আলে ইমরানঃ
আয়াত ৬৫-৬৮)
আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করবেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা
বলেন : "তারা চায় তাদের মুখের ফুৎকারে
আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে। কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পূর্ণতা দান না করে ক্ষান্ত
হবেন না, তা কাফেরদের কাছে যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন। আল্লাহই তার রসূলকে
পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দ্বীনের ওপর
বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন।" -(সুরা তাওবাঃ আয়াত ৩২-৩৩)
ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন (জীবন-ব্যবস্থা) আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়ঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন
(জীবন-ব্যবস্থা) চায়, কখনোই তা গ্রহন করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের
অন্তর্ভূক্ত হবে।" -(সূরা
আলে ইমরানঃ আয়াত ৮৫)
তিনি আরও
বলেনঃ "তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে! অথচ আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।"
-(সূরা আলে ইমরানঃ ৮৩)
ইসলামে দাখিল হতে হবে পূর্ণাংগভাবেঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "হে
ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক
অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। অতঃপর তোমাদের মাঝে পরিস্কার নির্দেশ এসে
গেছে বলে জানার পরেও যদি তোমরা পদস্খলিত হও, তাহলে নিশ্চিত জেনে রেখো! আল্লাহ পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী।" -(সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২০৮-২০৯)
মৃত্যুর আগেই পূর্ণাংগ মুসলিম হতে হবেঃ আল্লাহ বলেন : "হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে
মৃত্যু বরণ করো না। আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে একত্রে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো এবং
বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" -
(সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ১০২-১০৩)
দ্বীনের হেফাজতের পথ হল সন্দেহজনক বিষয় পরিহারঃ হযরত নুমান ইবনে বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন
: "হালাল ও হারাম উভয়টি স্পষ্ট। তবে উভয়ের
মাঝে কিছু সন্দেহযুক্ত বস্তু আছে, যা অধিকাংশ মানুষ জানে না। যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত
বস্তু হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও ইজ্জত-সম্মানকে অটুট রাখল। আর যে ব্যক্তি
সন্দেহযুক্ত বস্তু হতে বেঁচে থাকল না, তার জন্য সমূহ সম্ভাবনা আছে যে, সে হারামে পতিত হবে। যেমন- একজন রাখাল সে ক্ষেতের পাশে ছাগল চরায় তার মধ্যে এ আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত নষ্ট করবে। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে প্রত্যেক বাদশার জন্য একটি নির্ধারিত ময়দান রয়েছে, আর জমিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ময়দান হল, তার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, মানুষের দেহের মধ্যে একটি গোস্তের টুকরা রয়েছে, যখন তা সংশোধন হয়, তাহলে পুরো দেহটি ঠিক থাকে আর যখন তার মধ্যে যে টুকরা রয়েছে, তা নষ্ট হয়, তাহলে তার পুরো দেহটাই নষ্ট হয়। আর তা হল মানুষের অন্তর।" -(বুখারিঃ ৫২ ও মুসলিমঃ ১৫৯৯)
ইসলাম হল ফিতরাত বা স্বভাবজাত ধর্মঃ দ্বীন ইসলাম-এর বিধানাবলীর সাথে সামাঞ্জস্য রেখে আল্লাহ তা'য়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে দ্বীন ইসলাম এর উপর প্রতিষ্ঠিত
রাখ। এটাই আল্লাহর ফিতরাত,যার উপর তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।"
-(সূরা রুমঃ আয়াত ৩০)
হযরত আবু
হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "প্রতিটি
সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে।এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী,
নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে, যেভাবে চতুস্পদ জন্তু একটি পরিপূর্ণ জন্তুই জন্ম দিয়ে
থাকে।তোমরা এতে কোন কমতি দেখতে পাও কি? তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন : তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে দ্বীন (ইসলাম)-এর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না-সূরা রুমঃ আয়াত নং-৩০।" -(বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলাম সহজ ও সরল পথঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "আর
এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে
তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এ গুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ
দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।" -(সূরা
আনআমঃ আয়াত ১৫৩)
হযরত
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসে ছিলাম। তখন তিনি এভাবে তাঁর সামনে একটি সরলরেখা আঁকলেন এবং বললেন, এটি মহিমাময় পরাক্রমশালী
আল্লহর পথ। তিনি সেই রেখার ডানে দটি রেখা ও বামে দুটি রেখা আঁকলেন। তিনি বললেন : "এগুলো শয়তানের পথ। এরপর তিনি মাঝের সরলরেখার ওপর নিজের হাত রাখলেন এবং কুরআনের নিম্নক্ত আয়াত পাঠ করলেন- ‘এবং এই পথই আমার সরল পথ, সুতরাং এরই আনুসরণ করবে এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমদের তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এইভাবে আল্লহ তোমাদের নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও’ -সূরা আনআমঃ ১৫৩।" -(মুসনাদে আহমাদঃ হাদিস নং-৫, ইবনে মাযাহঃ হাদিস নং-১১)
মুমিনগণ ইসলাম পরিপূর্ণ অনুসরণ না করলে আল্লাহ অন্য সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেনঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "হে মুমিনগণ! তোমাদের
মধ্যকার কোন দল দ্বীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের পরিবর্তে অচিরেই এমন অন্য দলকে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যাঁরা
আল্লাহকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর
পথে জিহাদ করবে এবং নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা
তিনি এ অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহ মহাপ্রাচুর্যের অধিকারী, মহাজ্ঞানী। তোমাদের বন্ধু
তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং যারা ঈমান এনেছে তারা -যারা বিনয়ের সাথে সালাত কায়িম করে
ও যাকাত আদায় করে। যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে নিশ্চয়
তারাই হবে আল্লাহর দল, তারা বিজয়ী হবেই।"-(সূরা মায়েদাঃ আয়াত ৫৪-৫৬ )
দ্বীন ইসলাম হল সহজ ও মধ্যম পন্থাঃ হযরত
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "দ্বীন
সহজ, যে ব্যক্তি দ্বীনের ব্যাপারে বেশী কড়াকড়ি করে, তাকে দ্বীন অবশ্যই পরাজিত করে
দেয়। কাজেই তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর এবং কাছাকাছি হও। আর হাসিমুখ নিয়ে থাক। আর সকাল-বিকাল এবং
রাতের কিছু অংশে (আল্লাহ তা’য়ালার) সাহায্য প্রার্থনা কর।" -(বুখারীঃ হাদিস নং-৩৯)
হযরত
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : "তোমরা
(দীনের ব্যাপারে) সহজ পন্থা অবলম্বন করবে, কঠিন পন্থা অবলম্বন করবে না, মানুষকে
সুসংবাদ শোনাবে, বিরক্তি সৃষ্টি করবে না।" -(বুখারীঃ হাদিস নং-৬৯)
হযরত আবু
হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "তোমরা (দ্বীনের ব্যাপারে) ভারসাম্য বজায় রাখ এবং
সোজা হয়ে থাক। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে কেউই স্বীয় কর্মের দ্বারা (পরকালে)
পরিত্রাণ পাবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল! আপনিও নন? তিনি বললেন, আমিও নই। তবে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ায়
আমাকে ঢেকে রেখেছেন।" -[বুখারীঃ ৫৬৭৩, ৩৯,৬৪৬৩;মুসলিমঃ ২৮১৬; নাসায়ীঃ
৫০২৩; ইবনু মাজাহঃ ৪২০১; আহমাদঃ ৭১৬২, ৭৪৩০,
৭৫৩৩]
ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ির ভয়াবহ পরিণামঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "হে মানব সকল!
তোমরা ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কারণ তোমাদের পূর্ববর্তী সকল উম্মত কেবল এ
কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।" -( ইবনে মাজাহঃ ৩০৮৫ ও ইবনে হিব্বানঃ ১০১১)
নবুওয়াতের ধারাবাহিকতায় ইসলামের পূর্নাংগতাঃ নবুওয়াতী ছিলছিলার শেষ প্রান্তে রসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
মাধ্যমে ইসলামকে কিয়ামাত পর্যন্ত সর্বকালের মানব সভ্যতার জন্য একমাত্র অনুসরণীয়
পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা বিদায় হজ্জের দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।
এ
প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেনঃ আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের
দ্বীন (জীবনব্যবস্থা)-কে পূর্ণাংগ করে দিলাম।
তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা)
হিসাবে মনোনীত করলাম। -(সূরা মায়িদাঃ আয়াত ৩)
ইসলামী
জীবন ব্যবস্থায় কোনরূপ সংযোজন-বিয়োজন
চিরদিনের জন্য রহিত করা হয়েছে। এ প্রসংগে হাদীসে এসেছেঃ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।" - (বুখারীঃ ২৪৭৯ ও মুসলিমঃ ১৭১৮)
অবশ্য
মানব সভ্যতায় নতুন কোন সমস্যার সমাধানের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর মুলনীতির আলোকে
ইজতিহাদ বা গবেষণা করার যোগ্যতা সম্পন্ন মুজতাহিদ-গণের জন্য গবেষণার পথ সর্বদা খোলা রাখা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলের সাথে
সমকালীন অধিকাংশ হক্কানী উলামাগণ একমত হলেই তা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উপধারা
হিসাবে সংযুক্ত হতে পারে। এ প্রসংগে হাদীসে এসেছেঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআজ রাদিয়াল্লাহু
আনহু-কে ইয়ামানে শাসকরূপে প্রেরণ কালে জিজ্ঞাসা করলেন, মুআজ! কোন বিষয়ে যখন ফায়সালা করতে হবে তখন কিসের ভিত্তিতে ফায়সালা করবে? হযরত মুয়াজ উত্তরে বললেন, কিতাবুল্লাহর ভিত্তিতে ফায়সালা করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, যদি কিতাবুল্লাহতে সমাধান না পাও? তিনি (মুয়াজ রা:) বললেন, সুন্নাতে রাসুল দ্বারা ফায়সালা করব। যদি সুন্নাতে রাসুলে না পাও? তিনি বললেন : তাহলে চিন্তা ভাবনা করে ইজতিহাদের ভিত্তিতে ফায়সালা করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার উত্তর ও উত্তরের ধারাবাহিকতায় খুসি হয়ে তার বুকে চাপড় দিলেন এবং বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর রাসুলের প্রতিনিধিকে এমন বিষয়ে তাওফিক দিয়েছেন।- " আবুদাউদ ও তিরমিযী
মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের উপায়ঃ হযরত
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "যে
ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে
দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে পেয়ে
আমি সন্তুষ্ট। তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।"
-(আবু দাউদঃ হাদীস নং ১৫২৯)
আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে ইসলামের মধ্যে দাখিল হওয়ার, জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামকে আঁকড়ে
ধরার, মুসলিম হিসাবে দুনিয়ার বুকে জীবন যাপন করার এবং মুসলিম হিসাবে দুনিয়া থেকে
মৃত্যুবরণ করার তৌফিক দান করুন! আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে এ মহাসত্য অনুধাবন করার
তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।
No comments:
Post a Comment