Thursday, April 2, 2015

আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতঃ পর্ব-৫


মানব জীবনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর ইবাদাত করতে হবে
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ মোতাবেক
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি,তার পরিবারবর্গ,বংশধর,সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।

আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে তাঁর পাঠানো নবী-রসূল (আ)-গণের শিক্ষা মোতাবেক তাঁরই ইবাদাতের দিকে আহবান জানিয়েছেন। আল্লাহর মনোনীত নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণ হলেন আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ইবাদাতের জীবন্ত মডেল। নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম) -গণের আগমনের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ প্রান্তে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আগমন করেন হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,যার আগমন সম্পর্কে সমস্ত নবীগণ (আলাইহিমুসসালাম) নিজ নিজ জাতিকে অবহিত করেছেন এবং তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেনস্থান, কাল, গোত্র, বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের সমগ্র জনপদের জন্য তিনিই সর্বশেষ ও একমাত্র নবী

এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেনঃ "আমি আপনাকে বিশ্ববাসী সব মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে প্রেরণ করেছি, অথচ অধিকাংশ মানুষ তা জানে না" - (সূরা সাবাঃ আয়াত ২৮)

তিনি আরও বলেনঃ "(হে রসূল!) বলুন! হে মানব জাতি! অবশ্যই আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি জীবিত করেন, তিনিই মৃত্যু দান করেন। কাজেই তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রসূল নিরক্ষর নবীর প্রতি ঈমান আন, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান রাখেন এবং তা মেনে চলেন, তাহলেই তোমরা হিদায়াত (সুপথ) প্রাপ্ত হবে।" - (সূরা আরাফঃ আয়াত ১৫৮)

তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্যসহ সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্পর্কে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন না।" - (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১১৯)

তিনি আরও বলেনঃ "হে নবী! নিশ্চয়ই আপনাকে আমি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। আপনাকে প্রেরণ করেছি আল্লাহর অনুমতি-ক্রমে আল্লাহর দিকে আহবানকারী এবং (হিদায়াতের) উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে। আর আপনি মুমিনদেরকে এ সুসংবাদ দিন, নিশ্চয়ই তাদের জন্য আল্লাহর নিকট বিরাট নিয়ামত রয়েছে।" -(সূরা আহযাবঃ আয়াত ৪৫-৪৭)

রূহের জগতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের বাইয়াতঃ রুহের জগতে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র আদম সন্তান-সন্ততিদের নিকট থেকে তাঁর প্রভুত্বের বাইয়াত গ্রহণের পর তাদের মধ্য থেকে কতিপয় বান্দাকে নবুওয়াত ও রিসালাতের জন্য মনোনীত করেন। অতঃপর সব নবী-রাসূলগণের রূহকে পৃথক করে তাদের নিকট থেকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের উপর বাইয়াত বা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন।

এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ  "স্মরণ কর! আল্লাহ নবীদের নিকট হতে এই প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, আজ আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত এবং কর্মকৌশল ও বুদ্ধি দিয়ে ধন্য করেছি, অতঃপর তোমাদের নিকট এমন একজন রাসূল আসবেন যিনি তোমাদের নিকট যে কিতাব আছে তাকে সত্যায়িত করবেন। তাঁর প্রতি ঈমান তোমরা অবশ্যই ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। এই কথা বলে আল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি এর ওয়াদা করছ এবং এই সম্বন্ধে আমার নিকট হতে প্রতিশ্রুতির গুরুদায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছ? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা ওয়াদা করছি। আল্লাহ বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম।" -(সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ৮১)

নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণেনবুওয়াতী মিশনের কাজ

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর মনোনীত নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণ হলেন আল্লাহ তায়ালার কিতাব অনুযায়ী ইবাদাতের জীবন্ত মডেল। রসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও কার্যক্রম নবুওয়াতী মিশনের সর্বশেষ মডেল। নবুওয়াতী মিশনের জিম্মাদারী দায়িত্ব পালন করতে হলে এর সবগুলোই আঁকড়ে ধরতে হবে। এ সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত নমুনা স্বরূপ পেশ করা হল।

দাওয়াত ও তাবলীগঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে কথা বলুন সবচেয়ে সুন্দরভাবে। নিশ্চয় আপনার রব ভাল জানেন কে তার পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও ভাল জানেন যারা সঠিক পথে পরিচালিত।" 
-(সূরা নহলঃ আয়াত ১২৫)

তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল!) বলুন, এটাই আমার পথ। আমি প্রমাণের উপর অধিষ্ঠিত থেকে মানুষকে আল্লাহর (ইবাদাতের) দিকে আহ্বান করি। আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করে তারাও। আর আল্লাহ মহাপবিত্র। যারা আল্লাহর শরীক করে আমি তাদের দলভুক্ত নই।" - (সূরা ইউসুফঃ আয়াত ১০৮)

তিনি আরও বলেনঃ "তারচেয়ে উত্তম কথা আর কার যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎকাজ করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি একজন মুসলিম। ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে ভাল দিয়ে প্রতিহত কর। তাহলে যে তোমার শত্রু সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। এ জাতীয় চরিত্রের অধিকারী কেবল সে সকল লোকদেরকে করা হয় যারা ধৈর্যশীলএ গুণের অধিকারী কেবল তারা যারা মহাসৌভাগ্যের অধিকারী।" -(সূরা হা-মীম সিজদাঃ আয়াত ৩৩-৩৫)

তালীম ও তাজকিয়াঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "মুমিনদের প্রতি আল্লাহ নিঃসন্দেহে অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের নিকট একজন রসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত। যদিও আগে তারা সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই ছিল।"
- (আলে ইমরানঃ আয়াত ১৬৪)

তিনি আরও বলেনঃ "তিনিই নিরক্ষর লোকদের নিকট তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনান, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। যদিও আগে তারা সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই ছিল।" - (সূরা জুময়াহঃ আয়াত ২)

তিনি আরও বলেনঃ "আমি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন;আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর;অকৃতজ্ঞ হয়ো না।" -(সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৫১-১৫২)

সমাজ সংশোধনঃ মহান আল্লাহ বলেন : "আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করে দিন। যে সকল মুমিন আপনার অনুসরণ করে সে সকল মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হোন। তারা যদি আপনার অবাধ্যতা করে, তাহলে তাদেরকে বলে দিন: তোমরা যা কর তা থেকে আমি দায়মুক্ত। আর আপনি মহাপরাক্রমশালী, অসীম দয়ালু আল্লাহর উপর ভরসা করুন" -(সূরা শুয়ারাঃ আয়াত ২১৪ - ২১৭)

মানব জাতির সংশোধনঃ মহান আল্লাহ বলেন : "হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে। আর যদি তোমরা তা না মান, জেনে রাখ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবকিছুই আল্লাহর। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা,প্রাজ্ঞ।" 
-(সূরা আন নিসাঃ আয়াত ১৭০)

তিনি আরও বলেনঃ "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।" -(সূরা আহযাবঃ আয়াত ২১)

ইকামাতে দ্বীনঃ মহান আল্লাহ বলেন : "তিনিই তাঁর রসূল-কে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি প্রচলিত সমস্ত দ্বীনের উপর তাকে বিজয়ী করে দেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।" (সূরা আছ ছফঃ আয়াত- ৯)

নবুওয়াতী মিশনের আরও অনেক ব্যাপক কাজ রয়েছে। এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ তথা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম- গণের জীবনধারা থেকে সবার শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।

আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের অন্যতম ভিত্তি হল সুন্নাত

আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করতে হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় আইন, বিধি-বিধান, নীতি-আদর্শ, তন্ত্র-মন্ত্র, পথ-মত, রসম-রেওয়াজ, বিদআত, জাহিলিয়াত ও নাফসানিয়াত পরিহার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসে প্রচুর উদ্ধৃতি বিদ্যমান। এর মধ্য থেকে কিছু বাছাইকৃত আয়াত ও হাদীস বর্তমান প্রবন্ধে সবার বিবেচনার জন্য পেশ করা হল

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "(হে রাসূল! আপনি) বলুন! যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমুহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।" -(সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ৩১)

তিনি আরও বলেনঃ "রাসূল যা আদেশ দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক" 

তিনি আরও বলেনঃ "হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের, অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও তাঁর  রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই তোমাদের জন্য উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টত্বর" -(সূরা নিসাঃ আয়াত ৫৯)

তিনি আরও বলেনঃ "অতএব তোমার প্রভুর কসম! কখনও সে ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকেই ন্যায় বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মিমাংসার ব্যাপারে অন্তরে কোন রকম সংকীর্ণতা থাকে না, বরং হৃষ্টচিত্তে তা মেনে নেবে।" -(সুরা নিসাঃ আয়াত ৬৫)

তিনি আরও বলেনঃ "যারা নিরক্ষর নবী রাসূল (মুহাম্মাদ) এর অনুসরণ করে,যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায় (সেই নিরক্ষর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেন ও অন্যায় করতে নিষেধ করেন। তিনি তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু সমূহ হালাল করে দেন এবং অপবিত্র বস্তু সমূহকে তাদের জন্যে হারাম করে দেন। আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদের মুক্ত করেন। অতএব যেসব লোক তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য লাভ করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সেই নূরের (কুরআনের) অনুসরণ করেছে যা তাঁর নিকট নাযিল হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই সফলতা লাভ করেছে।" - (সূরা আরাফ: আয়াত ১৫৭)

তিনি আরও বলেনঃ "আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত বা পথ গ্রহণের ক্ষমতা নেই যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।" - (সূরা আল-আহযাবঃ আয়াত ৩৬)

তিনি আরও বলেনঃ "মুমিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মুমিনদের জওয়াব তো শুধু এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই হবে সফলকাম" -(সূরা নূরঃ আয়াত ৫১)

তিনি আরও বলেনঃ "যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকারান্তরে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, আমি আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি" -(সূরা নিসাঃ আয়াত ৮০)

রসূলের আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করার ভয়াবহ পরিণামঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের আহবানের মত গণ্য করো না। আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। কাজেই যারা তার (রাসূলের) আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে" -(সূরা আন-নূরঃ আয়াত ৬৩)

ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সুন্নাতের গুরুত্ব

সুন্নাতের পরিচয়ঃ ইসলামী জীবন ব্যবস্থার ভিত্তি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওয়াহী। ওয়াহী দুই প্রকার: এক-ওয়াহী মাতলু ও দুই-ওয়াহী গাইরে মাতলু। ওয়াহী মাতলু হল কুরআন মাজীদ। আর সূন্নাহ বা হাদিস হল ওয়াহী গায়রে মাতলু। সূন্নাহ বা হাদিস ও আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে প্রেরিত ওহী। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ "আর তিনি মনগড়া কথাও বলেন না তাতো ওয়াহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়" 

সুন্নাহ হল হিকমাহঃ আল্লাহ তাআলা কুরআনে সূন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা ও বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ পদ্ধতি। আল্লাহ তাআলা যেমনিভাবে কুরআন নাযিল করার কথা বলেছেন, অনুরূপভাবে হিকমাহ অর্থাৎ সূন্নাহ নাযিল করার কথাও বলেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সূন্নাহও আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিলকৃত ওয়াহী। সুতরাং কুরআন যেমন আল্লাহর ওয়াহী অনুরূপভাবে সূন্নাহও আল্লাহর ওয়াহী। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ "এবং আল্লাহ তোমার প্রতি গ্রন্থ ও হিকমাহ অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা জানতে না, তিনি তাই তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন" 

মুমিনের জীবনে সুন্নাহ-এর ব্যপকতা ও অপরিহার্য্যতাঃ মানব জাতির ইহ-পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণের সনদ হল আল-কুরআন। কুরআনের জীবন্ত মডেল হল রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন। মানব জীবন ও সভ্যতায় এর সফল বাস্তবায়নের মডেল হল খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরামসুতরাং মুক্তি ও কল্যাণের পথ শুধুমাত্র কুরআন ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম-গণের আদর্শ পর্যন্ত ব্যপৃত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত মালিক ইবনু আনাস থেকে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি জিনিস আঁকড়ে থাকবে,ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ
- (মুয়াত্তা ইমাম মালিকঃ ৩৩৩৮)

খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহবল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটা যেন বিদায়ী উপদেশঅতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিনতখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : "আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ভীতির উপদেশ দিচ্ছিআমি তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হনকেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবেতখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরবেতাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবেসাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টিসমূহ তে দূরে থাকবেকেননা (দ্বীনের মধ্যে) যেকোন নতুন সৃষ্টি বিদআতআর প্রত্যেক বিদআত পথভ্রষ্টতা" -(আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী ইবনু মাজাহ)

মুহাজীর ও আনসারগণের অনুসরণ প্রসংগেঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন : "মুহাজীর ও আনসারদের অগ্রগামী দল আর যারা যথাযথভাবে তাদের অনুসারী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এমন জান্নাত যার পাদদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এটা হল মহান সফলতা।" 
-(সূরা তওবাহঃ  আয়াত ১০০)

সাহাবাগণের সুন্নাত প্রসংগেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "বানী-ইসরাইলীগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে, সকলেই জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে" সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, এই দল কারা? রসূলুলাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : "যারা আমার ও আমার সাহাবাগণের ছুন্নাতের উপর কায়েম থাকবে" 
- (তিরমিযীঃ ২৫৭৮, আবু দাউদ, তারগীবঃ ৪৮)

মুমিনের জীবনের কামনা-বাসনা হবে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের নমুনাঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কামনা-বাসনা আমার আনীত আদর্শের অনুবর্তী হবে" -(শারহুস সুন্নাহ)

হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই। -(সহীহ বুখারীঃ ১৩)

জান্নাতের পথ হল সুন্নাতঃ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : "জান্নাত পেতে আগ্রহী নয় এমন ব্যক্তি ছাড়া আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে এমন ব্যক্তি আছে যে জান্নাতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে" -(সহীহ বুখারী)

হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু সংখ্যক ফিরিস্তা আসলেন, তাদের কেউ বললেন, তিনি ঘুমন্ত, আবার কেউ বললেন: তাঁর চক্ষু ঘুমন্ত কিন্তু অন্তর জাগ্রত। অতঃপর তারা বললেন,তাঁর একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে তোমরা সে দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর, অতঃপর বললেন, তাঁর দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে সুসজ্জিত করে একটি গৃহ নির্মাণ করল, অতঃপর সেখানে খাওয়ার আয়োজন করল এবং একজন আমন্ত্রণকারী প্রেরণ করল, অতঃপর যে আমন্ত্রণ গ্রহণ করল, গৃহে প্রবেশ করল এবং আয়োজিত খানা খেল। আর যে আমন্ত্রণ গ্রহণ করল না, গৃহেও প্রবেশ করল না এবং আয়োজিত খানাও খেল না। এ দৃষ্টান্ত বর্ণনার পর তারা বললেন: দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা করে দিন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারবেন, কারণ চক্ষু ঘুমন্ত হলেও অন্তর জাগ্রত, তখন তারা ব্যাখ্যায় বললেন, "নির্মিত গৃহটি হল জান্নাত, আর আমন্ত্রণকারী হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অতএব যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য স্বীকার করে, সে যেন প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তাআলরই আনুগত্য স্বীকার করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অমান্য করল, সে যেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলাকেই অমান্য করল। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে (ন্যায় ও অন্যায়ের) পার্থক্যকারী।"  -(বুখারীঃ হাদিস নং ৭২৮১)

বিনা যুক্তিতে সুন্নাত অনুসরণ করতে হবেঃ হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, "আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না"
-(বুখারীঃ ১৫৯৭

হযরত ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পড়তে লাগল। এরপর (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি সোনার আংটি পরছিলাম-তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন : আমি আর কোন দিনই তা পরব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল" -(বুখারীঃ হাদিস নং ৭২৯৮)

সুন্নাহ অমান্যকারীর সঙ্গে সম্পর্ক কিরূপ হবেঃ হযরত উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "অচিরেই তোমাদের উপর এমন কতিপয় শাসক হবে যাদের কিছু কাজ (সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়ার কারণে) তোমরা পছন্দ করবে আর কিছু কাজ (সুন্নাহ বিরোধী হওয়ার কারণে) অপছন্দ করবে। যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের ভাগী হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো না? তিনি বললেন : না, যতক্ষন তারা তোমাদের মাঝে নামাজ কায়েম করে
- (মুসলিমঃ ৪৬৪৯ ও তিরমিযীঃ ২২১১)

অনুরূপ বর্ণনাঃ হযরত কাব বিন উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "জেনে রাখো অচিরেই অনেক জালিম শাসক আসবে। যারা সেই সকল শাসকদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের অন্যায়গুলোকে সমর্থন দিবে এবং তাদের জুলুমে সহযোগিতা করবে সে আমার উম্মত নয় এবং আমিও তাঁদের দায়িত্ব নিবো না এবং (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের সামনে আসতে দেয়া হবে না। আর যাঁরা সেই সকল জালিম শাসকদের সাথে আঁতাত করবে না, তাদের জুলুমে সহায়তা করবে না তাঁরা আমার উম্মত এবং আমি তাঁদের দায়িত্ব নিবো এবং তাঁদেরকেই (হাশরের ময়দানে) হাউজে কাউসারের পানি পান করানো হবে।"  
-(তিরমিযিঃ হাদিস নং ৬১৪- সহীহ)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তার কাছে তার এক ভাতিজা বসা ছিল। সে তখন কংকর নিক্ষেপ করছিল। তিনি তাকে তা থেকে নিষেধ করলেন এবং বললেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে নিষেধ করছেন। তিনি আরও বললেন : এতে না শিকার করা হয়, আর না শত্রু পরাভূত হয়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় অথবা চক্ষু নষ্ট করে দেয়। রাবী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় পাথর নিক্ষেপ করলে তিনি [ইবনে মুগাফ্ফাল রা.] বলেন: আমি তোমাকে হাদিস শুনাচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। অথচ এরপরও তুমি কংকর নিক্ষেপ করছআমি তোমার সাথে আর কখনও কথা বলব না। 

হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (মহিলাদের) মসজিদে সালাত আদায় করতে মানা করো না। তখন ইবনে উমারের এক পুত্র বললেন: আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব। রাবী বলেন: এতে তিনি (ইবনে উমার) ভয়ানক রাগান্বিত হয়ে বললেন: আমি তোমার নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস বর্ণনা করছি, অথচ তুমি বলছ যে, আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব?" 

যারা সুন্নাহ পূনর্জীবিত করে তাদের জন্য সুসংবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহ 'আনহু থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "দ্বীন ইসলাম তো অপরিচিত অবস্থায় যাত্রা শুরু করেছিল এবং অচিরেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সুসংবাদ সেই অপরিচিতদের জন্য" (তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৫৬৬) তাদের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছে- "যারা আমার ছুন্নাহ মানুষের দ্বারা বিপর্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ইসলাহ বা পূণর্জীবিত করে।" 
-(তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৫৬৭)  

সুন্নাত জিন্দাকারী রসূলের সাথে জান্নাতে যাবেঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন : "বেটা! সকাল-সন্ধ্যায় যদি এমনভাবে থাকতে পার যে, তোমার মনে কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই তাহলে এমনভাবেই থাক। বেটা! এটি আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নাতকে যিন্দা করে সে আমাকে ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।" -(তিরমিযীঃ ২৬৭৮)

সুন্নাতকে আঁকড়ে থাকায় একশত শহীদের সওয়াবঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় যে আমার ছুন্নাতকে আঁকড়ে থাকবে তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব" -  (বায়হাকী)

সুন্নাত অবহেলাকারী রসূলের উম্মাতভূক্ত নয়ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত  তিনি বলেন, আমার পিতা একজন কুরাইশি মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। উক্ত মেয়ে আমার ঘরে আসল। আমি নামায রোযা ইত্যাদি এবাদতের প্রতি আমার বিশেষ আসক্তির দরুণ তার প্রতি কোন প্রকার মনোযোগ দিলাম না। একদিন আমার পিতা- আমর ইবনে আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তার পুত্রবধুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামীকে কেমন পেয়েছ? সে জবাব দিল, খুবই ভালো লোক অথবা বললো খুবই ভালো স্বামী। সে আমার মনের কোন খোঁজ নেয় না এবং আমার বিছানার কাছেও আসে না। এটা শুনে তিনি আমাকে খুবই গালাগাল দিলেন ও কঠোর কথা বললেন এবং বললেন, আমি তোমাকে একজন কুরাইশি উচ্চ বংশীয়া মেয়ে বিয়ে করিয়েছি আর তুমি তাকে এরূপ ঝুলিয়ে রাখলে? তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গিয়ে আমার বিরূদ্ধে নালিশ করলেন। তিনি আমাকে ডাকালেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি দিনভর রোযা রাখ? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি রাতভর নামায পড়? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, কিন্তু আমি রোযা রাখি ও রোযা ছাড়ি, নামায পড়ি ও ঘুমাই, স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতের প্রতি আগ্রহ রাখে না সে আমার দলভুক্ত না। -(মুসনাদে আহমাদঃ হাদীস নং ৬৪৪১)

হযরত আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেন তিন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের নিকট তার ইবাদতের অবস্থা জানার জন্য আসেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদতের খবর শুনে তারা যেন তার ইবাদতকে কম মনে করলেনতারা পরস্পর আলাপ করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনায় আমরা কীআল্লাহ তাআলা তার আগের-পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেনতাদের একজন বললেন, আমি সারা রাত সালাত আদায় করবোদ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো নাতৃতীয় জন বললেনআমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো নাতাদের এই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পড়লেন এবং বললেন, "তোমরা কি ধরনের কথাবার্তা বলেছিলেখবরদার! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশী তাকওয়া অবলম্বন করিকিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন ছেড়ে দিইরাতে সালাত আদায় করি আবার ঘুমও যাইনারীদেরকে বিয়েও করিএটাই আমার পথ তাই যে ব্যক্তি আমার পথ ছেড়ে দিয়েছে সে আমার (উম্মতের মধ্যে) গণ্য হবে না"  

সুন্নাহ অবহেলাকারীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনঃ আবু রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "আমি যেন তোমাদের মাঝে কাউকে এমন না পাই, সে তার খাটের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর আমি যা আদেশ দিয়েছি অথবা যা থেকে নিষেধ করেছি, তা তার কাছে পৌছলে সে তখন বলবে: এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব" -(ইবনু মাযাহঃ ১৩, আহমদঃ ২৩৮৭৬,আবুদ দাউদঃ ৪৬০৫ ও তিরমিযিঃ ২৬৬৩)

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আল-কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক জীবন গঠনের বাস্তব নমুনা। আর রসূলের সুন্নাত অনুসরণের মডেল হলেন খুলাফায়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরাম। সুতরাং তাদেরই মহান আদর্শের অনুকরণে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহান সুন্নাত মোতাবেক জীবন গঠন ও জীবনের সর্বক্ষেত্রে কায়েমের মধ্যেই নিহিত রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির জন্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে এ মহাসত্য অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।


No comments:

Post a Comment