আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে তাঁর পাঠানো কিতাব মোতাবেক
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি,তার পরিবারবর্গ,বংশধর,সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি
আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন
ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি
কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীনে এবং
সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।
আল্লাহ
তা’য়ালা
মানব জাতিকে তাঁর পাঠানো দিক-নির্দেশনা মোতাবেক তাঁরই ইবাদাতের দিকে আহবান
জানিয়েছেন। দুনিয়ার বুকে আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত কিভাবে করতে হবে তার নির্দেশনা মানব জাতির আদি
পিতা হযরত আদম আলাইহিসসালাম ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ কালেই সুস্পষ্টভাবে
জানিয়ে দিয়েছেন। যুগে যুগে মানব জাতির কল্যাণের জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে
নির্দেশিকা বা কিতাব পাঠানো হবে আর মানব জাতিকে তার বিধান মেনে চলতে হবে।
মহান
আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ "অতঃপর তার প্রভু তাকে (আদম) নবী হিসেবে মনোনীত করলেন এবং তাকে সঠিক পথে
পরিচালিত করলেন। তিনি বললেন : তোমরা (মানব এবং ইবলিস) উভয়ে একসাথে পরস্পরের শত্রু
হিসাবে জান্নাত থেকে নেমে যাও পরে আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে সঠিক পথের কোন
নির্দেশনা আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং কোন দুঃখ-কষ্টও
পাবে না।" -(সূরা ত্ব-হাঃ আয়াত ১২২-১২৩)
তিনি আরও বলেনঃ "আমি বললাম, তোমরা
(মানব এবং শয়তান) উভয়ে একসাথে এখান থেকে নেমে যাও, অতঃপর যখনই আমার পক্ষ থেকে
তোমাদের জন্য পথ-নির্দেশনা যাবে, যারা সে পথ-নির্দেশনা মেনে চলবে তাদের না কোন ভয়
থাকবে, না তারা চিন্তাগ্রস্ত হবে।" - (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ৩৮)
দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব, সহীফা
এবং তাঁর মনোনীত নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণের শিক্ষাই হল হিদায়াত। সুতরাং
আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করতে হলে মানব জাতিকে অবশ্যই সেই পথ-নির্দেশিকা বা হিদায়াতকে
পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। যুগে যুগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পক্ষ থেকে
দুনিয়ায় মানব জাতির জন্য প্রেরিত পথ-নির্দেশিকা বা হিদায়াতের যারা তোয়াক্কা করবে
না তাদের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কেও তিনি সতর্ক করে দেন। এ প্রসংগে তিনি বলেনঃ
-"আর যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, তার
জীবন-জীবিকা সংকুচিত করা হবে আর হাশরের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাবো। সে বলবে, হে
আমার পভু! আমাকে কেন অন্ধ করে উঠালেন?
আমি তো দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছিলাম! তিনি বলবেন, আমার আয়াতসমূহ তোমার কাছে এসেছিল, যেভাবে
তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হয়েছে। যে বাড়াবাড়ি করে ও
তার পভুর আয়াতসমূহে ঈমান আনে না, আমি এভাবেই তার প্রতিফল দেই। আর আখিরাতের শাস্তি
অত্যন্ত কঠিন এবং চিরস্থায়ী।" -(সূরা
ত্ব-হাঃ ১২৪-১২৭)
মানব সভ্যতায় বিভিন্ন জাতির বিভক্তির কারণঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : "সকল
মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা পয়গম্বর পাঠালেন
সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকরী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবর্তীণ করলেন সত্য কিতাব,
যাতে মানুষের মাঝে বিতর্ক মূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ কিতাবের
ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি;কিন্তু
পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ তারাই করেছে, যারা কিতাব
প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ মুমীনদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে
তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন।" – (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২১৩)
মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সর্বশেষ হিদায়াত হল আলকুরআনঃ মহান আল্লাহ বলেন : "হে
মানবকুল! তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সনদ পৌঁছে গেছে। আর আমি
তোমাদের প্রতি প্রকৃষ্ট আলো (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি। অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান
এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান
দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মত সরল পথে তুলে দেবেন।"
- (সূরা নিসাঃ আয়াত ১৭৪-১৭৫)
- (সূরা নিসাঃ আয়াত ১৭৪-১৭৫)
পরিপূর্ণ কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন এবং মেনে চলতে হবেঃ এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : "তোমরা কি ধর্মগ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর
অন্য অংশ অবিশ্বাস পোষণ কর? অতএব
তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কী পুরস্কার আছে?
আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত পাঠানো হবে কঠোরতম শাস্তিতে। আর
তোমরা যা করছো আল্লাহ্ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন।"
-(সূরা বাকারাহঃ আয়াত ৮৫)
হিদায়াত গোপন করার পরিনামঃ মহান আল্লাহ
বলেন : "নিশ্চয়ই যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত
তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা
করার পরও;সে সমস্ত লোকের প্রতিই
আল্লাহর অভিসম্পাত এবং সকল অভিসম্পাতকারীগণেরও অভিসম্পাত। তবে যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা
বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবুলকারী, পরম
দয়ালু।" -(সূরা
বাকারাহঃ আয়াত ১৫৯-১৬০)
তিনি আরও
বলেনঃ "নিশ্চয়ই যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা
আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া
নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না
তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী
খরিদ করেছে এবং ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য
ধারণকারী।" -(সূরা বাকারাহঃ আয়াত
১৭৪-১৭৫)
আল্লাহর বানীসমূহ অবজ্ঞার ভয়াবহ পরিনামঃ মহান আল্লাহ বলেন : "ফেরাউনের বংশধররাও তাদের পূর্ববর্তীদের মতো আমার
আয়াতকে মিথ্যা মনে করে অস্বীকার করেছিল। তাই, আল্লাহ তাদের পাপের জন্য তাদের
শাস্তি দিয়েছিলেন। আল্লাহ তো শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর। যারা অবিশ্বাস করে,
তাদেরকে বলে দিন, তোমরা শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং তোমাদের জাহান্নামে একত্র করা হবে।
আর তা খুব খারাপ জায়গা।" -(সূরা আলে
ইমরানঃ আয়াত ১১-১২)
তিনি আরও বলেনঃ "ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড়
যালিম (অত্যাচারী) আর কে হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওযা হয়েছে স্বীয় প্রভুর আয়াত
সমূহ দ্বারা অত:পর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কারী।" -(সূরা সাজদাহঃ আয়াত ২২)
তিনি আরও
বলেনঃ "যারা আল্লাহর বিধান ও হিদায়াত মানতে
অস্বীকার করে এবং তাঁর নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে আর এমন লোকদের প্রাণ সংহার
করে, যারা মানুষের মধ্যে ন্যায়, ইনসাফ ও সততার নির্দেশ দেবার জন্য এগিয়ে আসে,
তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দাও৷এরা এমন সব লোক যাদের কর্মকাণ্ড (আমল) দুনিয়া ও
আখেরাত উভয় স্থানেই নষ্ট হয়ে গেছে এবং এদের কোন সাহায্যকারী নেই।" -(সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ২১-২২)
কুরআনের অপব্যাখ্যার ভয়াবহ পরিনামঃ হযরত
ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : "নিশ্চিতভাবে যা তোমাদের জানা আছে তা ছাড়া আমার পক্ষ থেকে হাদীস
বর্ণনা থেকে তোমরা বিরত থাকবে। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে
সে যেন জাহান্নামকে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিল। আর যে ব্যক্তি খেয়াল খুশীমত কুরআন
সম্পর্কে কোন কথা বলে, সেও যেন জাহান্নামকে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নিল।" - (তিরমিযীঃ ২৮৮৬ ও
আহমাদ)
কুরআনের হারামকে হালাল গন্য করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়ঃ হযরত সুহাইব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "যে ব্যক্তি কুরআনের হারামসমূহকে হালাল মনে করে
সে আসলে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি।" -(তিরমিযীঃ হাদীস নং ২৮৫৩)
সুতরাং সমগ্র বিশ্বের মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে
নাযিলকৃত সর্বশেষ কিতাব হল আল-কুরআন। সুতরাং আল-কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক জীবন
গঠন এবং মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে কায়েমের মধ্যেই নিহিত রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত
বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির জন্য আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত, যার জন্য তিনি মানব জাতিকে
সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে এ মহাসত্য অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন!
আ-মী-ন।
আ-মী-ন।
No comments:
Post a Comment