Thursday, April 2, 2015

আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতঃ পর্ব-৩


মানব জাতির প্রতি মহান প্রভুর ইবাদাতের আহবান
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি,তার পরিবারবর্গ,বংশধর,সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।

আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন যুক্তি সহকারে তাঁর ইবাদাতের দিকে মানব জাতিকে আহবান জানিয়েছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে স্বয়ং তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন এবং মানব জাতিকে তাঁর ইবাদাতের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দিকে বিভিন্ন যুক্তি ও উপমা তুলে ধরে উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। নমুনা স্বরূপ কয়েকটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হল।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের আগের লোকদেরও সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা করেছেন এবং আকাশসমূহকে করেছেন ছাদ, আকাশসমূহ হতে বর্ষণ করেছেন পানি, অতঃপর তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। কাজেই তোমরা জেনে শুনে কাউকে তাঁর সমকক্ষ সাব্যস্ত করো না।" - (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২১-২২)

তিনি আরও বলেনঃ "নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি সকল কাজ পরিচালনা করেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই তোমাদের আল্লাহ, তোমাদের প্রভু। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত কর। এরপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে, আল্লাহর ওয়াদা সত্যতিনিই সৃষ্টি করেন প্রথমবার আবার পুনর্বার তৈরী করবেন তাদেরকে বদলা দেয়ার জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে ইনসাফের সাথে। আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের পান করতে হবে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করতে হবে যন্ত্রনাদায়ক আযাব এ জন্যে যে, তারা কুফরী করছিল।" 
- (সূরা ইউনুসঃ আয়াত ৩-৪)

তিনি আরও বলেনঃ "কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তোমাদেরকে তিনিই প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন, পুনরায় জীবনদান করবেন, অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।" 
- (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২৮-২৯)

তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল!) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, তাদের ব্যাপারে ভেবে দেখেছো কি? দেখাওতো, পৃথিবীতে তারা কী সৃষ্টি করেছে বা আকাশ সৃষ্টিতে তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে কি? যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে আমার কাছে পূর্বের কোন কিতাব বা পরম্পরাগত কোন জ্ঞান উপস্থিত কর। সে ব্যক্তির চেয়ে বেশি বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে! যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুকে ডাকে, যারা কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের ডাকে কোন সাড়া দেবে না, এমনকি তাদের ডাকা সম্পর্কেও অবহিত নয়!"   -(সূরা আহকাফঃ আয়াত ৪-৫)

তিনি আরও বলেনঃ "হে মানুষ! একটি উদাহরণ দেয়া হচ্ছে। মনোযোগের সাথে উদাহরণটি শোন। তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদাত কর তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, এমনকি তারা সকলেও যদি এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের নিকট থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তারা মাছির নিকট থেকে তাও উদ্ধার করতে পারে না।  পূজারী এবং যাদের পূজা করা হয় তারা উভয়েই কত দূর্বল!"  - (সূরা হজ্জঃ আয়াত ৭১)

তিনি আরও বলেনঃ "(হে রসূল! আপনার কাছে) আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমি তো নিকটেই আছি। কোন আহ্বানকারী যখন আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার উপর ঈমান আনুক, তাহলে তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।"-(সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৮৬)

তিনি আরও বলেনঃ "হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।" (সূরা লোকমানঃ আয়াত ৩৩)

তিনি আরও বলেনঃ "হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, আমরা কি আল্লাহ-কে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকবো, যারা আমাদের উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না? আর আল্লাহ যখন আমাদের সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তখন আবার কি আমরা উল্টো দিকে ফিরে যাবো? আমরা কি নিজেদের অবস্থা সে ব্যক্তির মতো করে নেবো, যাকে শয়তানরা মরুভূমির বুকে পথ ভুলিয়ে দিয়েছে এবং সে হয়রান, পেরেশান ও উদ্ভান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ? অথচ তার সাথীরা তাকে চীৎকার করে ডেকে বলছে, এদিকে এসো, এখানে রয়েছে সোজা পথ? বলো, আসলে আল্লাহর হেদায়াতই একমাত্র সঠিক ও নিভুর্ল হেদায়াত এবং তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে, বিশ্ব-জাহানের প্রভুর সামনে আনুগ্রত্যের শির নত করে দাও।" - (সূরা আনআমঃ আয়াত ৭১)

তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল! আপনি) বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা রহমত করেন। তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।" (সূরা আনকাবূতঃ আয়াত ২০-২১)

তিনি আরও বলেনঃ "আল্লাহ ব্যতীত আর কোনোই উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন কেয়ামতের দিন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আল্লাহর চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে! " - (সূরা নিসাঃ আয়াত ৮৭)

তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল! আপনি) বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন,তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না ?" - (সূরা আল-কাসাসঃ আয়াত ৭১)

তিনি আরও বলেনঃ "সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভুত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলে, কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে, যখন সেগুলো পচে গলে যাবে? বলুন,যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।"-(সূরা ইয়াসীনঃ আয়াত ৭৮-৮১)

তিনি আরও বলেনঃ "হে জিন ও মানবকূল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্তসীমা অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?" - (সুরা আর-রহমানঃ আয়াত ৩৩-৩৪)

সুতরাং দুনিয়ার বুকে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল- আল্লাহর আহবানে সাড়া দিয়ে তাঁর মহান দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করা। সকল প্রকার তাগুতী শক্তি, শয়তানী শক্তি, মুর্তিপূজা, মানব রচিত তন্ত্র-মন্ত্র, বিধি-বিধান, রসম-রেওয়াজ ও  পূর্বপুরুষদের কুসংস্কার পরিহার করে শুধু তাঁরই ইবাদাত করা।

জীবনের সর্বত্র আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে তাঁর পাঠানো কিতাব মোতাবেক, তাঁর প্রেরিত রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ মোতাবেক এবং তাঁর মনোনীত দ্বীন মোতাবেকএছাড়া আল্লাহ তায়ালার উপর বিশুদ্ধ ঈমান এবং নিস্কলুষ ইবাদাত হতে হবে সকল প্রকার শিরক, কুফর, নিফাক, তাগুত এবং রিয়া থেকে মুক্ত আর শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যই নিবেদিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর খাঁটি মাহবুব বান্দাগণের অন্তর্ভূক্ত করুন।


No comments:

Post a Comment