Thursday, April 2, 2015

আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতঃ পর্ব-২


যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের দিকে মানব জাতিকে আহবান
অবাধ্যতা ও বিরোধিতার ভয়াবহ পরিনাম
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি,তার পরিবারবর্গ,বংশধর,সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত।

আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন যুক্তি সহকারে তাঁর ইবাদাতের দিকে মানব জাতিকে আহবান জানিয়েছেন। মোহময় দুনিয়ার পরিবেশে পথ ভোলা মানব জাতির হিদায়াতের জন্য তিনি যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসূল (আলাইহিমুস সালাম) প্রেরণ করেছন। কিন্তু যারা নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণের আহবানে সাড়া দেয়নি, আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদাত পরিত্যাগকারী এ সব জাতিসমূহ দুনিয়া থেকে চিরতরে বিলীন করে দিয়েছেন। এ প্রসংগে পবিত্র কুরআনে বহু জাতির ইতিহাস বর্ণিত রয়েছে। উদাহরণ সরূপ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা হল।

হযরত নূহ আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ মানব জাতি যখন আল্লাহর নির্দেশনা ভুলে যায় তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত নূহ (আলাইহিসসালাম) -কে তাদের মাঝে প্রেরণ করেন। তিনি দুনিয়ার বুকে পথ ভোলা মানুষদেরকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের দিকে ৯৫০ বছর দাওয়াত দেন।

এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "আমি নূহকে তার জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন : হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য ভয়ঙ্কর দিনের শাস্তির ভয় করছি। তাঁর কওমের নেতারা বলেছিল : আমরা তো দেখছি তুমি সুস্পষ্ট ভুলের মধ্যে আছ। নূহ বলেছিলেন, হে আমার জাতি! আমার মধ্যে কোন ভুল নেই, আমি জগতসমূহের প্রভুর নিকট থেকে প্রেরিত রসূল। আমি তোমাদের নিকট আমার প্রভুর বাণী পৌঁছে দিচ্ছি, তোমাদেরকে ভাল উপদেশ দিচ্ছি, কেননা আমি আল্লাহর নিকট থেকে যা জানি, তোমরা তা জান না। তোমরা কি এতে অবাক হচ্ছো! তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে তোমাদের নিকট উপদেশ এসেছে, যেন তিনি তোমাদেরকে সতর্ক করতে পারেন, যেন তোমরা তাকওয়াবান হও এবং যেন তোমাদেরকে দয়া করা হয়। অতঃপর তারা নূহকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করল। তখন আমি তাকে এবং তার সাথে যারা নৌকায় ছিল তাদেরকে রক্ষা করি, আর আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করেছিল তাদেরকে ডুবিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তারা তো ছিল এক অন্ধ জাতি।" - (সূরা আরাফঃ আয়াত ৫৯-৬৪)

মুষ্টিমেয় জনগোষ্ঠী তাঁর এ মহান দাওয়াত কবুল করেন। অবশেষে আল্লাহ সমগ্র অবিশ্বাসীদেরকে মহাপ্লাবনের মাধ্যমে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে মুছে ফেলেন। অতঃপর হযরত নূহ (আলাইহিসসালাম) যাদেরকে জাহাজে আশ্রয় দিয়েছিলেন, তাদের বংশধরদের মাধ্যমে পুনরায় সমগ্র দুনিয়া আবাদ করেন। আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত ও নবীর অনুসরণের মধ্যেই যে কল্যাণ নিহিত আর আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত ও নবীর বিরোধিতায় ধ্বংস অবধারিত- এ মহাপ্লাবন ছিল ভবিষ্যত মানব জাতির জন্য এর শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। মানুষের দুনিয়ায় আগমন থেকে মহাপ্লাবন পর্যন্ত মানব সভ্যতার বয়স প্রায় ৩০০০ বছর।

হযরত হুদ আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ হযরত নূহ আলাইহিসসালাম এর পর তাঁর মুষ্টিমেয় অনুসারীর বংশধরগণ বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যায়। ধীরে ধীরে ভুলে যায় তাদের আত্মপরিচয় এবং পৃথিবীতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদের অন্যতম শক্তিশালী কওম আদ জাতির কাছে আল্লাহ হযরত হুদ আলাইহিসসালাম-কে প্রেরণ করেন। তিনি পথ ভোলা মানুষদেরকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের দিকে দাওয়াত দেন।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর দাওয়াত ও কওমের পরিণতি প্রসংগে বলেনঃ "আদ জাতির নিকট আমি তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন : হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তারপরও কি তোমরা মুত্তাকী হবে না? হুদের জাতির প্রধানরা, যারা কুফরি করেছিল তারা বলেছিল : আমরা লক্ষ্য করছি- তুমি একটি বুদ্ধিহীন লোক এবং অবশ্যই আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি। হুদ বললেন : হে আমার জাতি! আমি নির্বোধ নই, বরং আমি বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত রাসূল। আমি আমার প্রভুর বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিচ্ছি আর আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত শুভাকাংখী তোমরা কি এটা ভেবে অবাক হচ্ছো যে, তোমাদের নিকট তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে উপদেশ এসেছে, যাতে তিনি তোমাদেরকে সতর্ক করতে পারেন? স্মরণ কর! আল্লাহ তোমাদেরকে নূহের জাতির পরে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং তোমাদেরকে দৈহিক গঠনে তাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ করেছেন। অতএব তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, তাহলে তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে। হুদের জাতির লোকেরা বলল : তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্য এসেছো যে, আমরা যেন এক আল্লাহর ইবাদাত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যার ইবাদাত করত তা ত্যাগ করি? তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে যার ভয় আমাদেরকে দেখাচ্ছ তাকে নিয়ে এস। হুদ বললেন : তোমাদের প্রভুর শাস্তি ও ক্রোধ তো তোমাদের জন্য নির্ধারিত হয়েই আছে, তা সত্ত্বেও কি তোমরা আমার সাথে এমন কিছু দেব-দেবীর নাম নিয়ে বিতর্ক করতে চাও যা মূলত তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা বানিয়েছ, যার পক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি? তাহলে তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি। এরপর আমি হুদ ও তার অনুসারীদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করি আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করেছিল ও যারা মুমিন হয়নি তাদেরকে নির্মূল করি।" - (সূরা আরাফঃ আয়াত ৬৫-৭২)

হযরত সালিহ আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ হযরত হুদ আলাইহিস-সালাম এর কওমের ধ্বংসের পর দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী কওম সামুদ জাতির কাছে মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত সালিহ আলাইহিসসালাম-কে প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর কওমের পথ ভোলা মানুষদেরকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাতের দিকে দাওয়াত দেন।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর দাওয়াত ও কওমের পরিণতি প্রসংগে বলেনঃ "আর  ছামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালিহ-কে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন : হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের নিকট তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। এ উটনিটি তোমাদের জন্য আল্লাহর একটি নিদর্শন। কাজেই তোমরা একে আল্লাহর যমীনে বিচরণ করে খেতে দাও এবং একে কোন কষ্ট দিও না। যদি একে কষ্ট দাও, তাহলে তোমাদের উপর ভয়ানক শাস্তি পতিত হবে। স্মরণ কর! আদ জাতির পর আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল জমিতে প্রাসাদ এবং পাহাড় কেটে আবাস নির্মাণ করেছ। অতএব তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর আর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। সালিহের জাতির অহঙ্কারী নেতারা তাদের দুর্বল লোকদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে বলল : তোমরা কি জান যে, সালিহ তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল? তারা বললেন : তার প্রতি যে বাণী প্রেরিত হয়েছে আমরা অবশ্যই তাতে বিশ্বাসী। অহঙ্কারী নেতারা বলল : তোমরা যা বিশ্বাস কর, আমরা তা অবিশ্বাস করি। অতঃপর তারা সে উটনিটি হত্যা করে, তাদের প্রভুর আদেশ লংঘন করে এবং বলে : হে সালিহ! তুমি যদি রাসূল হয়ে থাক, তাহলে আমাদেরকে যে আযাবের ভয় দেখাতে তা নিয়ে এস। অতঃপর তাদের আক্রমণ করল প্রবল ভূমিকম্প, ফলে তারা তাদের ঘরের মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে থাকল। এরপর সালিহ তাদের নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন : হে আমার জাতি! আমি তো আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দিয়েছিলাম কিন্তু তোমরা উত্তম উপদেশদানকারীকে ভালবাস না।" -(সূরা আরাফঃ আয়াত ৭৩-৭৯)

হযরত ইব্রাহীম আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ নমরূদ নামে এক শক্তিধর রাজা মানব জাতির প্রভুত্ব দাবী করল। দয়াময় আল্লাহ তার হিদায়াতের জন্য হযরত ইব্রাহীম আলাইহিসসালামকে প্রেরণ করেন। তিনি নমরূদ ও পথ ভোলা কওমকে মহান আল্লাহর ইবাদাতের দিকে দাওয়াত দেন।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর দাওয়াত ও কওমের পরিণতি প্রসংগে বলেনঃ "আপনি লোকদের কাছে ইব্রাহীমের ঘটনা বর্ণনা করুন। ইব্রাহীম যখন তার পিতা ও তার জাতিকে বলেছিলেন : তোমরা কিসের ইবাদাত কর? তারা বলেছিল : আমরা মূর্তির ইবাদাত করি এবং মূর্তির ইবাদাতে আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিবেদিত রয়েছি। ইব্রাহীম বললেন : প্রার্থনা করলে মূর্তিরা কি শোনে? অথবা তারা কি তোমাদের কোন উপকার বা অপকার করতে পারে? তারা বলল : না, তবে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে মূর্তির ইবাদাত করতেই দেখেছি। তিনি (ইব্রাহীম) বললেন : তোমরা কি ভেবে দেখেছো, তোমরা কিসের ইবাদাত করছো? এবং কিসের ইবাদাত করেছে তোমাদের পূর্বপুরুষেরা? বিশ্ব জাহানের প্রভু আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদাত কর অবশ্যই তারা সকলেই আমার শত্রু যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। তিনিই আমাকে খাদ্য ও পানীয় দান করেন। যখন আমি রোগে আক্রান্ত হই, তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। তিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন এরপর তিনিই আমাকে আবারো জীবিত করবেন। আশা করি যে, কিয়ামাতের দিন তিনি আমার অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।" 
- (সূরা শুয়ারাঃ আয়াত ৬৯-৮২)

হযরত ইব্রাহীম আলাইহিসসালাম এর কওমের আরও বিবরণ অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে। নমরূদ এবং তার কওম হযরত ইব্রাহীম আলাইহিসসালাম-কে আগুনে নিক্ষেপ করে, যদিও আল্লাহর হুকুমে আগুন তাঁর জন্য শান্তিদায়ক হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ এই পাপাচারী কওমকে মশককুল দ্বারা ধ্বংস করেন।  

হযরত লূত আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ আল্লাহ তায়ালা হজরত লূত আলাইহিসসালাম-কে তাঁর কওমের হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর কওমের মানুষদেরকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের দিকে দাওয়াত দেন।

আল্লাহ তাঁর দাওয়াত ও কওমের পরিণতি প্রসংগে বলেনঃ "আমি লূতকেও তার জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তিনি তার জাতিকে বলেছিলেন: তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, তোমাদের আগে পৃথিবীর কেউ কখনোই করে নি! তোমরা তো যৌনচাহিদা পুরণের জন্য নারীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের নিকট যেয়ে থাক। তোমরা তো অবশ্যই সীমালংঘনকারী জাতি। লূতের জাতি এর কোন জবাব দিল না, তারা শুধু বলল: লূত ও তার অনুসারীদের তোমাদের দেশ থেকে বের করে দাও। তারা তো অবশ্যই এমন লোক, যারা অত্যন্ত পবিত্র থাকতে চায়! এরপর আমি লূতের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে তাঁর সকল পরিজনকে রক্ষা করেছিলাম। পেছনে যারা ছিল লূতের স্ত্রী তাদের সাথেই থেকে গিয়েছিল। আমি লূতের জাতির সমকামী লোকদের উপর ভয়ঙ্কর পাথরবৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। লক্ষ্য করে দেখুন! পাপাচারীদের পরিণতি কত ভয়ঙ্কর হয়েছিল।"
- (সূরা আরাফঃ আয়াত ৮০-৮৪)

হযরত শুয়াইব আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ আল্লাহ  হযরত শুয়াইব আলাইহিসসালাম-কে তাঁর কওমের হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর কওমের মানুষদেরকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের দিকে দাওয়াত দেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর দাওয়াত ও কওমের পরিণতি প্রসংগে বলেনঃ 

-"মাদায়েনের অধিবাসীদের নিকট আমি তাদের ভাই শুয়াইবকে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন : হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। অতএব তোমরা সঠিকভাবে পরিমাপ দেবে এবং ওজন করবে। মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং শান্তি স্থাপনের পর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তাহলে এসব তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। আল্লাহর প্রতি যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য তোমরা পথে পথে বসে থেকো না, আল্লাহর পথে চলার ক্ষেত্রে তাদেরকে বাধা দেবে না এবং আল্লাহর পথে কোন বক্রতা খুঁজবে না। স্মরণ কর! যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে তখন আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। আর লক্ষ্য কর, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কী ভয়ানক পরিণতি হয়েছিল! আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তাতে যদি তোমাদের একদল ঈমান আনো এবং একদল ঈমান আনা থেকে বিরত থাকো, তাহলে ধৈর্যধারণ কর, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেন। আর আল্লাহই তো সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। শুআয়বের জাতির অহঙ্কারী নেতারা বলল : হে শুয়াইব! আমরা তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের এলাকা থেকে অবশ্যই বের করে দেব অথবা তোমাদেরকে আমাদের আদর্শে ফিরে আসতে হবে। শুয়াইব বললেন : তোমাদের আদর্শকে ঘৃণা করার পরও কি আমাদেরকে তা গ্রহণ করতে হবে? তোমাদের আদর্শ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত করার পর আমরা যদি আবারো তাতেই ফিরে যাই তাহলে তো আমরা মিথ্যা আরোপকারী হব আল্লাহর প্রতি। আমাদের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আমাদের পক্ষে আর তোমাদের আদর্শে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। সকল কিছু আমাদের প্রভুর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আমরা একান্তভাবে তাঁর উপরই নির্ভর করি। হে আমাদের প্রভু! আমাদের জাতি ও আমাদের মধ্যে ন্যায্যভাবে ফায়সালা করে দিন। আর আপনিই তো সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। শুয়াইবের জাতির নেতারা জাতির সাধারণ লোকদের বলল : তোমরা যদি শুয়াইবকে অনুসরণ কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর তারা ভূমিকম্পে আক্রান্ত হল, ফলে তাদের ভোর হল নিজেদের ঘরে উপুড় হওয়া অবস্থায়। যারা শুয়াইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, মনে হল তারা যেন কখনো এখানে বসবাসই করেনি। বস্তুত যারা শুয়াইবকে মিথ্যাবাদী মনে করেছিল তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর শুয়াইব তাঁর জাতির লোকদের নিকট থেকে ফিরে গেল এবং বলল : হে আমার জাতি! আমি তো তোমাদের নিকট আমার প্রভুর বাণী পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দিয়েছি। কাজেই এখন আমি কাফির জাতির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য কীভাবে আক্ষেপ করি! " 
- (সূরা আরাফঃ আয়াত ৮৫-৯৩)

হযরত মূসা আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী শাসক ফিরআউনের কাছে আল্লাহ হযরত মূসা আলাইহিসসালাম-কে প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর কওমের পথ ভোলা মানুষদেরকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাতের দিকে দাওয়াত দেন।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর দাওয়াত ও কওমের পরিণতি প্রসংগে বলেনঃ "এ সকল নবীগণের পর আমি মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহ সহ ফিরআউন ও তার সভাষদদের নিকট প্রেরণ করি। কিন্তু তারা এর প্রতি সীমালংঘন করে। লক্ষ্য কর! বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কী ভয়ানক পরিণতি হয়েছিল! মূসা বললেন : হে ফিরআউন! আমি তো বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট থেকে প্রেরিত একজন রসূল। এটা নিশ্চিত যে, আমি আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া কোন কথা বলব না। আমি তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি, অতএব তুমি ইসরাঈল জাতিকে আমার সাথে চলে যেতে দাও। ফিরআউন বলল : তুমি যদি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা দেখাও, যদি তুমি সত্যবাদী হও। এরপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন আর তা সত্যিকারের অজগরে পরিণত হল। এরপর তিনি তার হাত বগলে ঢুকিয়ে সেখান থেকে বের করলেন আর দর্শকরা তাকে সাদা ধবধবে দেখতে পেল। ফিরআউন জাতির নেতারা বলল : নিশ্চয়ই মূসা হল একজন সুদক্ষ যাদুকর। সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এ অবস্থায় তোমরা তার ব্যাপারে কী পরামর্শ দাও? তারা বলল: মূসা ও তার ভাইকে খানিকটা সুযোগ দিন এবং শহরে শহরে জনসমাবেশের জন্য লোক প্রেরণ করুন। যেন তারা আপনার নিকট সুদক্ষ যাদুকরদের উপস্থিত করে। যাদুকররা ফিরআউনের নিকট এসে বলল : যদি আমরা বিজয়ী হই তাহলে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো? ফিরআউন বলল : হ্যাঁ, অবশ্যই তোমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে। যদি তোমরা বিজয়ী হও, তাহলে অবশ্যই তোমরা আমার নিকটজনের অন্তর্ভুক্ত হবে। যাদুকররা মূসাকে বলল : হে মূসা! তুমি কি আগে নিক্ষেপ করবে, নাকি আমরা আগে নিক্ষেপ করব? মূসা বললেন : তোমরাই আগে নিক্ষেপ কর। যখন তারা (তাদের লাঠি) নিক্ষেপ করল, তখন তারা লোকের চোখে ভেল্কি লাগিয়ে দিল এবং তাদেরকে আতঙ্কিত করল। আর তারা বড় রকমের যাদুই দেখাল। আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম : আপনিও আপনার লাঠি নিক্ষেপ করুন। এরপর তা যাদুকররা যা বানিয়েছিল তার সবগুলোকে খেয়ে ফেলল। ফলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হল এবং যাদুকররা যা বানিয়েছিল তা বাতিল হয়ে গেল। সেখানে তারা পরাজিত হল ও লাঞ্ছিত হল এবং যাদুকররা সিজদায় অবনত হল। যাদুকররা বলল : আমরা বিশ্বজাহানের প্রভুর প্রতি ঈমান আনলাম। যিনি মূসা ও হারূনের প্রভু। ফিরআউন বলল : আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয়ই এটা তো একটা ষড়যন্ত্র। শহরের লোকদেরকে শহর থেকে বের করে দেয়ার জন্য জেনে শুনেই এ ষড়যন্ত্র তোমরা করেছ। অতএব অচিরেই তোমরা এর পরিণাম জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব, এরপর তোমাদেরকে অবশ্যই শূলে চড়াব। তারা বলল : অবশ্যই আমরা আমাদের প্রভুর নিকট প্রত্যাবর্তন করব। তুমি তো আমাদেরকে কেবল এ কারণে শাস্তি দিচ্ছ যে, আমরা আমাদের প্রভুর নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের নিকট এসেছে। হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা দিন এবং মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন। ফিরআউন জাতির নেতারা ফিরআউনকে বলল: আপনি কি মূসা ও তার জাতিকে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এবং আপনার ইলাহদেরকে বর্জন করতে দেবেন? ফিরআউন বলল : আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব, তাদের মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখব, আর আমরা তো তাদের উপর অবশ্যই ক্ষমতাবান। মূসা তার জাতিকে বললেন : আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও এবং ধৈর্যধারণ কর। পৃথিবী তো অবশ্যই আল্লাহর। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পৃথিবীর ওয়ারিস বানান আর মুত্তাকীদের জন্য তো রয়েছে শুভ পরিণাম। মূসার জাতির লোকেরা বলল : আমাদের কাছে আপনি আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং আপনি আসার পরও নির্যাতিতই হচ্ছি। মূসা বললেন : শীঘ্রই তোমাদের প্রভু তোমাদের শত্রদের ধ্বংস করবেন এবং পৃথিবীতে তোমাদেরকে খিলাফত দান করবেন। এরপর তোমরা কী কর, তা তিনি পরীক্ষা করবেন। আমি ফিরআউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষ ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে আক্রান্ত করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। যখন তাদের ভাল কিছু হত, তারা বলত : এটাই আমাদের প্রাপ্য। আর যখন তাদের অকল্যাণকর কিছু হত, তখন তারা মূসা ও তার সাথীদেরকে সেই অকল্যাণের কারণ মনে করত। জেনে রেখ! তাদের অকল্যাণ আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু তাদের বেশিরভাগ লোকই তা জানে না। ফিরআউনের অনুসারীরা বলল : আমাদেরকে যাদু করার জন্য তুমি যত নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন, আমরা তোমার উপর ঈমান আনব না। এরপর আমি তাদের উপর আমি জলোচ্ছাস, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রেরণ করি। এগুলো ছিল সুস্পষ্ট মুজিযা। কিন্তু এরপরও তারা অহঙ্কারেই লিপ্ত রইল। তারা তো ছিল পাপাচারী জাতি। ফিরআউনের অনুসারীদের উপর যখন শাস্তি আসত, তারা বলত : হে মূসা! তুমি তোমার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর। তোমার সাথে তাঁর যে ওয়াদা রয়েছে সে অনুসারে তুমি যদি আমাদের উপর থেকে শাস্তি দূর করে দাও, তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার উপর ঈমান আনব এবং ইসরাঈল জাতিকেও তোমার সাথে নিঃসন্দেহে যেতে দেব। এরপর যখনই আমি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের উপর থেকে তাদের শাস্তি অপসারিত করতাম, তখনই তারা তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করত। কাজেই আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি, এরপর তাদেরকে আমি সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছি। কেননা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করেছিল এবং তারা আয়াতগুলো সম্পর্কে উদাসীন ছিল। যে জাতিকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমি সে রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের উত্তরাধিকারী মনোনীত করি আর ধৈর্য ধারণ করার কারণে ইসরাঈল জাতি সম্পর্কে আপনার প্রভুর শুভবাণী পূর্ণ হয়। ফিরআওন ও তার জাতির লোকেরা যে শিল্প গড়ে তুলেছিল, যে প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল তা আমি ধ্বংস করে দেই।"-(সূরা আরাফঃ আয়াত ১০৩-১৩৭)

হযরত ঈসা আলাইহিসসালাম এর কওমের বিবরণঃ দুনিয়ার অন্যতম সম্মানিত বনি ইসরাঈল জাতির কাছে আল্লাহ হযরত ঈসা আলাইহিসসালাম-কে প্রেরণ করেন। আল্লাহ তাকে ইঞ্জিল দান করেন। তিনি তাঁর কওমের লোকদেরকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাতের দিকে দাওয়াত দেন।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর দাওয়াত ও কওমের পরিণতি প্রসংগে বলেনঃ "(স্মরণ করুন!) যখন ফেরেশতাগণ বলেছিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম হবে মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম। তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত হবেন এবং আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্যতম হবেন। তিনি দোলনায় থাকা অবস্থায় এবং পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবেন এবং তিনি হবেন সৎকর্মশীলদের অন্যতম। মারইয়াম বললেন, হে আমার প্রভু! কীভাবে আমার সন্তান হবে অথচ কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি! আল্লাহ বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন কেবল বলেন হও- আর তা হয়ে যায়। আর আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল শিক্ষা দেবেন। আর তাকে ইসরাঈল জাতির জন্য রাসূল মনোনীত করবেন। ঈসা বলবেন- আমি তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে নিদর্শন নিয়ে তোমাদের কাছে আবির্ভূত হয়েছি। তোমাদের জন্য আমি  কাদামাটি দিয়ে একটি পাখির আকৃতি গঠন করব, অতঃপর তাতে ফুঁ দেব, আল্লাহর হুকুমে তা পাখি হয়ে যাবে। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত লোকদেরকে ভাল করে তুলবো এবং আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করব, তোমরা তোমাদের ঘরে যা খেয়ে আস আর যা রেখে আস তা তোমাদেরকে বলে দেব। তোমরা যদি মুমিন হও, তবে এর মধ্যে তোমাদের জন্য নির্দশন রয়েছে। আমি এসেছি আমার আগে তাওরাতের যা কিছু আছে সেগুলোকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য, তোমাদের জন্য যা হারাম ছিল তার কিছু বিষয় হালাল করার জন্য এবং আমি তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর। নিশ্চয়ই আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ, কাজেই তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। এটাই সরল সঠিক পথ। এরপর ঈসা যখন তাদের কুফরি উপলব্ধি করলেন, তিনি বললেন : আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলল- আমরাই আল্লাহর পথে আপনার সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আপনি সাক্ষী থাকুন! নিঃসন্দেহে আমরা মুসলিম। হে আমাদের রব! আপনি যা নাযিল করেছেন আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করছি। কাজেই আমাদেরকে আপনি (সত্যের) সাক্ষীগণের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। কাফিররা ষড়যন্ত করেছিল আর আল্লাহ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। আর আল্লাহ হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। (স্মরণ করুন!) যখন আল্লাহ বলেছিলেন, হে ঈসা! নিশ্চয় আমি আপনার জন্য নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করব, আপনাকে আমার কাছে তুলে নেবো এবং যারা কুফরি করছে তাদের কবল থেকে আপনাকে মুক্ত করব। আর আপনার অনুসারীগণকে কিয়ামাত পর্যন্ত কাফিরদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেব। এরপর আমারই কাছে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। তখন যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে, আমি তার মীমাংসা করে দেব।" - (সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ৪৫-৫৫)

দুনিয়ার বুকে বিভিন্ন জাতির ধ্বংসের কারণ ও আমাদের দায়িত্ব

যুগে যুগে সভ্যতার ধ্বংসের কারণঃ মানব সভ্যতার শুরু থেকে অদ্যাবধি নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম) বা সতর্ককারী না পাঠিয়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার বুকে কোন জাতিকে ধ্বংস করেন নাই। নবী-রসূল (আ)-গণের ডাকে যারা সাড়া দেয়নি তারা দুনিয়ার বুক থেকে কওমে নূহ, আদ, সামুদ, নমরূদ ও ফিরআউনের ন্যায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। নবী-রসূল (আ)-গণের নিষ্ঠাবান অনুসারীদের মাধ্যমে আবার পৃথিবী আবাদ হয়েছে। সারা দুনিয়ায় ছড়ানো-ছিটানো বিভিন্ন জাতি ও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এরই সুস্পষ্ট সাক্ষ্য ও শিক্ষা বহন করছে।

এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "তারা কি দেখেনি তাদের পূর্বে এমনি ধরনের কত মানব গোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যারা নিজ নিজ যুগে ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপশালী? পৃথিবীতে তাদেরকে এমন কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকেও দেইনি। তাদের ওপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম এবং তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম। অবশেষে তাদের গোনাহের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদের জায়গায় পরবর্তী যুগের মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছি" 
-(সূরা আনআমঃ আয়াত ৬)

তিনি আরও বলেনঃ "সতর্ককারী না পাঠিয়ে আমি কোন জনপদ ধ্বংস করিনি। আমি সতর্ককারী পাঠিয়েছিলাম জনপদের অধিবাসীদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। কেননা আমি যালিম নই।" - (সূরা শুয়ারাঃ আয়াত ২০৮ -২০৯)

তিনি আরও বলেনঃ "আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুমকারী ছিলেন না; তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়, আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত" -(সূরা আনকাবুতঃ ৪০-৪১)

আমাদের দায়িত্বঃ দুনিয়ার বুকে বিভিন্ন জাতি ও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যত মানব সভ্যতাকে শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের জীবনকে আল্লাহর রঙে রঙিন করতে হবে। তাগুতসমুহ বর্জন করে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্র সুশোভিত ও বিকশিত করতে হবে।

এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "তোমাদের আগে যে সকল জাতি চলে গিয়েছে তাদের মধ্যে এমন লোক কেন থাকল না, যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা দিতে পারত? তবে কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া, যাদেরকে আমি তাদের মধ্য থেকে রক্ষা করেছিলাম। আর যালিমদেরকে যে ঐশ্বর্য্য দেয়া হয়েছিল সেগুলো নিয়েই তারা মেতে রইল, তারা ছিল পাপাচারী। আপনার প্রভু এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে এমন জনপদ ধ্বংস করে দেবেন যার অধিবাসীরা সংশোধনরত।" - (সূরা হূদঃ আয়াত ১১৬-১১৭)

আমাদেরকে পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়েছেঃ এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন : "আমি তোমাদের আগে অনেক মানব জাতিকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা সীমালংঘন করেছিল। তাদের নিকট সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নিয়ে তাদের রাসূলগণ এসেছিলেন। কিন্তু তারা ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবেই আমি সীমালংঘনকরীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি। অতঃপর তোমরা কীভাবে এবং কেমন কাজ কর তা দেখার জন্য আমি তাদের পরে তোমাদেরকে দুনিয়ায় খলীফা বানিয়েছি" -(সূরা ইউনুসঃ আয়াত ১৩-১৪)

মানব সভ্যতার সংশোধনের দায়িত্বঃ  মানব সভ্যতার সংশোধনের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব রয়েছে। সর্বদা সংশোধনরত থাকলে সমাজের কলুষতা থেকে সংশোধনকামীগণ দুনিয়ার বুকে সর্বদা নিরাপদে থাকবেন।

এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "হে মুমিনগণ! তোমাদের সংশোধনের দায়িত্ব তোমাদের নিজেদেরই উপর। তোমরা যদি সঠিক পথ অবলম্বন কর, তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর কাছেই তোমাদের সকলের ফিরে আসা। এরপর তিনি সে সম্পর্কে জানাবেন যা তোমরা করতে।" -(সূরা মায়েদাঃ আয়াত ১০৫)

সুতরাং মানব সভ্যতা ধ্বংসের অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে এবং ভবিষ্যত সভ্যতাকে গড়ে তুলতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে এ মহাসত্য অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।


No comments:

Post a Comment