দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য হল
আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি,তার পরিবারবর্গ,বংশধর,সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালেহীণ
(রহমাতুল্লাহি আলাইহিম)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।
নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে
রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের
মধ্যেই নিহিত।
দুনিয়ার বুকে মানুষের পদবী ও মর্যাদাঃ আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে খলিফার মর্যাদায় সমগ্র মাখলুকের
উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে সৃষ্টি করে দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেন। খিলাফাতের মর্যাদা প্রসংগে মানব সৃষ্টির সূচনা
লগ্নে ফিরিশতাদের সংগে আলোচনাকালে তিনি ঘোষণা করেনঃ "নিশ্চয়ই
আমি দুনিয়ার বুকে খলিফা পাঠাতে চাই।" - (সূরা
বাকারাহঃ আয়াত ৩০)
মানব
জাতির শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি তথা খিলাফাতের মর্যাদার সুচনাঃ খিলাফাতের মর্যাদায় মহান
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিসসালামকে
সৃষ্টি করেন। অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালার হুকুমে হযরত আদম
আলাইহিসসালাম-কে ফিরিশতাগণের সিজদা (বশ্যতা স্বীকার) করার মাধ্যমে তিনি সমগ্র
মাখলুকের উপর মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি তথা বাইয়াত সম্পন্ন করে খিলাফাতের মর্যাদার
সুচনা করেন।
খিলাফাতের
বাইয়াত প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ঘোষণা করেনঃ “(স্মরণ করুন!) যখন আমি ফিরিশতাগণকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা (বশ্যতা স্বীকার) কর। অতঃপর ইবলিস ছাড়া তারা সকলেই সিজদা করল। ইবলিস অবাধ্য হল, অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল”।-(সূরা বাকারাহঃ আয়াত-৩৪)
দুনিয়ায় মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে দুনিয়ায় শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাতের জন্য প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ঘোষণা করেনঃ "আর আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে কেবলমাত্র আমার ইবাদাতের
জন্যই সৃষ্টি করেছি।" -(সূরা যারিয়াতঃ আয়াত ৫৬)
আল্লাহ তা’য়ালার
প্রভুত্বের স্বীকৃতি ও মানব জাতির ইবাদাতের সুচনাঃ হযরত আদম আলাইহিসসালাম -এর সাথে
তার বংশধরসহ সমগ্র মানব জাতির রূহকে একত্রিত করে তাদের নিকট আল্লাহ তা’য়ালা তার প্রভুত্বের
স্বীকৃতি আদায় করেন। তাঁর প্রভুত্বের বাইয়াতের ঘটনা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ
রাব্বুল ‘আলামীন
মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কুরআনে ঘোষণা করেনঃ
-"স্মরণ করুন! যখন আপনার প্রতিপালক আদম
সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করলেন এবং তাদের নিকট থেকে তাদের
নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন এবং বললেন : আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল : হ্যাঁ, (অবশ্যই আপনি আমাদের
প্রতিপালক) এবং আমরা সাক্ষী রইলাম। এই স্বীকারোক্তি ও সাক্ষ্য এ কারণে যে, কিয়ামাতের
দিন যেন তোমরা বলতে না পার- আমরা তো এ ব্যাপারে কিছু জানতাম না।"
-(সূরা আরাফঃ আয়াত ১৭২)
-(সূরা আরাফঃ আয়াত ১৭২)
সুতরাং
দুনিয়ার বুকে সমস্ত মাখলুকের মাঝে মানব জাতির মর্যাদা ও পদবী হল- মানুষ আল্লাহর
খলিফা। আর তার দায়িত্ব হল আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাত। সুতরাং দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র দায়িত্ব ও
কর্তব্য হল মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে খিলাফাতের মর্যাদায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর
ইবাদাত।
দুনিয়ায় বুকে মানব সভ্যতার সুচনা ও ক্রমবিকাশঃ আল্লাহ তা’য়ালা হযরত
আদম আলাইহিসসালাম -এর সংগী হিসাবে হযরত হাওয়া (আ) -কে সৃষ্টি করেন। দুনিয়ায় প্রেরণের
পূর্বে তিনি তাদেরকে সব কিছু শিক্ষা দেন। শয়তান তাদের বংশধরকে কীভাবে বিপথগামী করতে
পারে উভয়কে তার বাস্তব প্রশিক্ষণ দেন। অতঃপর তাঁর খিলাফাতের মর্যাদা দিয়ে
কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাতের জন্য দুনিয়ার বুকে পাঠালেন এ ঘোষণা দিয়েঃ
-"যুগে যুগে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য হিদায়াত
বা পথ-নির্দেশনা (ইবাদাতের পন্থা) যাবে,যারা সে নির্দেশনা মেনে চলবে
তাদের না কোন ভয় থাকবে,না তারা চিন্তাগ্রস্ত হবে।" - (সূরা বাকারাহঃ
আয়াত ৩৮)
মানব
জাতির হিদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর উক্ত
ঘোষণা মোতাবেক যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম) প্রেরণ করেছেন। তাঁরা সবাই সকল
প্রকার আল্লাহ বিরোধী তাগুতকে পরিহার করে আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদাতের দিকে মানব
জাতিকে আহবান জানিয়েছেন। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ঘোষণা করেনঃ "নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক জাতির নিকট এ মর্মে রসূল
প্রেরণ করেছি যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর
ইবাদাত কর এবং তাগুতকে অস্বীকার কর।" -(সূরা নাহলঃ আয়াত ৩৬)
সুতরাং
দুনিয়ার বুকে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল সকল তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর
বান্দা হিসাবে শুধু তাঁরই ইবাদাতে জীবন অতিবাহিত করা। মানব জাতিকে অবশ্যই পৃথিবীতে
তার এ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে
প্রতি পদক্ষেপে তার সফল বাস্তবায়নে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে।
No comments:
Post a Comment