নবুওয়াতী মিশনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি
যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং
সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই ইহ-পরকালীন কল্যাণ কেবলমাত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের অনুসৃত
কল্যাণময় আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।
রসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-নবুওয়াতঃ নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)
-গণের আগমনের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ প্রান্তে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আগমন করেন হযরত
মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,যার আগমন সম্পর্কে সমস্ত নবীগণ
(আলাইহিমুসসালাম) নিজ নিজ জাতিকে অবহিত করেছেন এবং তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থান, কাল, গোত্র, বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের সমগ্র জনপদের
জন্য তিনিই সর্বশেষ ও একমাত্র নবী। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ঘোষণা করেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ
-"আমি
আপনাকে বিশ্ববাসী সব মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে প্রেরণ করেছি, অথচ
অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।" - (সূরা সাবাঃ ২৮)
তিনি আরও বলেনঃ "(হে রসূল!) বলুন! হে মানব জাতি! অবশ্যই আমি তোমাদের
সকলের জন্য আল্লাহর রসূল, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তিনি
ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি জীবিত করেন, তিনিই মৃত্যু দান করেন। কাজেই তোমরা আল্লাহ
এবং তাঁর রসূল নিরক্ষর নবীর প্রতি ঈমান আন, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান
রাখেন এবং তা মেনে চলেন, তাহলেই তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত (সঠিক পথপ্রাপ্ত) হবে।" - (সূরা
আরাফ : ১৫৮)
তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্যসহ সুসংবাদ দাতা ও
সতর্ক-কারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্পর্কে আপনি জিজ্ঞাসিত
হবেন না।" (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১১৯)
আল্লাহর মনোনীত নবী-রসূল (আলাইহিমুসসালাম)-গণ হলেন আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী
ইবাদাতের জীবন্ত মডেল। রসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও
কার্যক্রম নবুওয়াতী মিশনের সর্বশেষ মডেল। নবুওয়াতী ছিলছিলা সমাপ্ত করে আল্লাহ তা’য়ালা এ
মহান কাজের জিম্মাদারী উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপর ন্যাস্ত করেছেন। খুলাফায়ে রাশিদীনে
এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণ তার মডেল স্থাপন করেছেন। সুতরাং আমাদেরকে এ
মহান দায়িত্ব পালনের জন্য অবশ্যই রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে
রাশিদীনে এবং সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গণের পদাংক অনুসরণ করতে হবে। শুধুমাত্র
দাওয়াত ও তাবলীগই নবুওয়াতী মিশনের কাজ নয়,বরং নবুওয়াতী মিশনের কাজের একটি
অংশ বা প্রাথমিক অংশমাত্র। নবুওয়াতী মিশনের কাজ সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত নমুনা স্বরূপ
পেশ করা হল।
দাওয়াত ও তাবলীগঃ
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ "আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও
উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে কথা বলুন সবচেয়ে সুন্দরভাবে। নিশ্চয় আপনার
রব ভাল জানেন কে তার পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও ভাল জানেন যারা
সঠিক পথে পরিচালিত।" -(সূরা নহল : আয়াত ১২৫)
তিনি আরও বলেনঃ "তারচেয়ে উত্তম কথা আর কার যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর
দিকে ডাকে, সৎকাজ করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি একজন মুসলিম। ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে
না। মন্দকে ভাল দিয়ে প্রতিহত কর। তাহলে যে তোমার শত্রু সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু
হয়ে যাবে। এ জাতীয় চরিত্রের অধিকারী কেবল সে সকল লোকদেরকে করা হয় যারা ধৈর্যশীল। এ গুণের অধিকারী কেবল তারা যারা মহাসৌভাগ্যের অধিকারী।"
-(সূরা হা-মীম সিজদা : ৩৩-৩৫)
তিনি আরও বলেনঃ "হে নবী! নিশ্চয় আপনাকে আমি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং
সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। আপনাকে প্রেরণ করেছি আল্লাহর অনুমতিক্রমে আল্লাহর
দিকে আহ্বানকারী এবং (হিদায়াতের) উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে। আর আপনি মুমিনদেরকে এ
সুসংবাদ দিন যে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য আল্লাহর নিকট বিরাট নিয়ামত রয়েছে।" -(সূরা আহযাবঃ আয়াত ৪৫-৪৭)
তালীম ও তাজকিয়াঃ
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ "আমি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল পাঠিয়েছি,
যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন;আর
তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা
কখনো তোমরা জানতে না। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো
এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর;অকৃতজ্ঞ হয়ো না।" -[সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৫১-১৫২]
তিনি আরও বলেনঃ "মুমিনদের প্রতি আল্লাহ নিঃসন্দেহে অনুগ্রহ করেছেন, তিনি
তাদের মধ্য থেকে তাদের নিকট একজন রসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ
পাঠ করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত। যদিও আগে তারা
সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই ছিল।" - (আলে ইমরান : ১৬৪)
তিনি আরও বলেনঃ "তিনিই নিরক্ষর লোকদের নিকট তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল
প্রেরণ করেছেন, যে রাসূল তাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনান, তাদেরকে
পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত । এর আগে তারা সুস্পষ্ট
পথভ্রষ্টতার মধ্যে ছিল।" - (সূরা জুময়াহ্ : ২)
সমাজ সংশোধনঃ
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ "আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করে দিন। যে সকল মুমিন
আপনার অনুসরণ করে সে সকল মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হোন। তারা যদি আপনার অবাধ্যতা করে, তাহলে
তাদেরকে বলে দিন: তোমরা যা কর তা থেকে আমি দায়মুক্ত। আর আপনি মহাপরাক্রমশালী, অসীম
দয়ালু আল্লাহর উপর ভরসা করুন।" -
(সূরা শুয়ারা : ২১৪ - ২১৭)
মানব জাতির সংশোধনঃ
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ "হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে
তোমাদের নিকট রসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে। আর
যদি তোমরা তা না মান, জেনে রাখ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবকিছুই
আল্লাহর। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা,প্রাজ্ঞ।" -[সূরা আন নিসাঃ
আয়াত ১৭০]
তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল!) আপনি বলুন, এটাই আমার পথ। আমি প্রমাণের উপর
অধিষ্ঠিত থেকে মানুষকে আল্লাহর (ইবাদাতের) দিকে আহ্বান করি। আমি এবং যারা আমার
অনুসরণ করে তারাও। আর আল্লাহ মহাপবিত্র। যারা আল্লাহর শরীক করে আমি তাদের দলভুক্ত
নই।" - (সূরা ইউসুফঃ ১০৮)
তিনি আরও বলেনঃ "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে
যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।" -[সূরা
আহযাবঃ আয়াত ২১]
তিনি আরও বলেনঃ "(হে রাসূল! আপনি) বলুন! যদি তোমরা আল্লাহর ভালবাসা পেতে
চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ
সমুহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।" -(সূরা আলে
ইমরানঃ আয়াত ৩১)
ইকামাতে দ্বীনঃ
তিনি আরও বলেনঃ "তিনিই তাঁর রসূল (স)-কে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ
করেছেন যাতে তিনি প্রচলিত সমস্ত দ্বীনের উপর তাকে বিজয়ী করে দেন, যদিও মুশরিকরা তা
অপছন্দ করে।" (সূরা আছ ছফ : আয়াত- ৯)
নবুওয়াতী মিশনের আরও অনেক ব্যাপক কাজ রয়েছে। এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ তথা
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম- গণের জীবনধারা থেকে
সবার শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। যিনি যতটুকু পারেন দ্বীনি কাজ করে যাবেন
এবং অন্য ভাইয়ের দ্বীনি কাজে যথাসম্ভব সহায়তা করবেন। শুধুমাত্র নিজের কাজকেই একমাত্র নবীওয়ালা কাজ মনে করে বিভ্রান্তিতে নিপতিত
হবেন না, অন্যকে বিভ্রান্ত করবেন না, দ্বীনি ভাইদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করবেন না,
ফতোয়াবাজী করবেন না এবং নবুওয়াতী মিশনের মহান কাজের অপব্যাখ্যা করে নিজের পরকালকে
ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না। এ ব্যাপারে সবাইকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম
রাখুন! তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।
ভাইজান আপনারা রাসুলের (স) দাত ভাঙ্গা দিনের জন্য যে মেহনত করে যাচ্ছেন শুকর আল্লাহর দরবারে আল্লাহপাক আপনাদের মেহনত কবুল করেন আমিন ছুম্মা আমিন
ReplyDelete