পরকালীন
নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি
রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতি। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স)
তাঁর বান্দাহ ও রসূল। নিশ্চয়ই শুভ
পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্যই নির্ধারিত।
হাশরের ভয়াবহ ময়দানে সমস্ত মানুষদেরকে যখন সমবেত করা হবে তখন সে দিনের
ভয়াবহতায় সবাই অস্থির হয়ে দিক-বিদিক ছুটাছুটি করবে। ভয়াবহ যন্ত্রনা ও পেরেশানীতে
অস্থির হয়ে তারা দ্রুত বিচার শুরু হওয়ার সুপারিশের জন্য বিভিন্ন নবী
(আলাইহিসসালাম)-গণের কাছে ছুটে যাবে। সর্বশেষে তারা আমাদের নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে সুপারিশের আবেদন জানাবে। তখন আল্লাহর অনুমোদক্রমে তিনি বিচার শুরু
করার জন্য মহান প্রভুর দরবারে আবেদন করবেন। আল্লাহ তা’য়ালা তার আবেদন মঞ্জুর করত
বিচার শুরু করবেন। সমগ্র মানব জাতির জন্য এই শাফায়াতকে বলা হয় শাফায়াতে কুবরা। আর আল্লাহ তা’য়ালা এই শাফায়াতের অধিকার
শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন।
বিচারের সময় কতিপয় বান্দা আল্লাহ তা’য়ালার আদালতে হাজিরা দিয়ে সরাসরি
আল্লাহর জিম্মায় ও তাঁর মহান অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তাদের জন্য কোন
প্রকার সুপারিশের প্রয়োজন হবে না। কতিপয় গোনাহগার বান্দা বিচার চলাকালীন নবী-রসূল
(আলাইহিসসালাম)-গণের সুপারিশে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশের অনুমোদন লাভ
করবেন। কতিপয় ঈমানদার গোনাহগার বান্দাগণকে অপরাধের মাত্রাধিক্যের কারণে বা
তাৎক্ষণিক সুপারিশের সুযোগ লাভের অভাবে জাহান্নামে যেতে হবে। পরবর্তীতে আল্লাহর
বিশেষ অনুগ্রহে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বা নবী-রসূল (আলাইহিস সালাম)-গণ ও নেককার
বান্দাগনের সুপারিশে বা অপরাধের শাস্তি ভোগের পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে
জান্নাতে প্রবেশের অনুমোদন লাভ করবেন। এ সব সুপারিশ শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য সংরক্ষিত নয়। বর্তমান প্রবন্ধে আমরা এ প্রসংগে বিভিন্ন প্রকার
সুপারিশের বিষয়ে আলোচনা করব। মনে রাখবেন! যারা ঈমানদার নয় তাদের জন্য কোন
সুপারিশের অনুমতি নাই, তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।
হযরত আবু সায়ীদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যারা (বেঈমান) জাহান্নামবাসী
তারা মরবেও না আবার বাঁচবেও না। কিন্তু যে সকল (ঈমানদার) মানুষ পাপের কারণে জাহান্নামে যাবে তাদের এক ধরনের
মৃত্যু ঘটানো হবে।তারা পুরে কয়লা হয়ে
যাবে। তখন তাদের ব্যাপারে শুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে। তাদেরকে এক এক দল করে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অত:পর জান্নাতের নদীতে রাখা হবে। এরপর বলা হবে হে জান্নাতবাসীরা! তোমরা তাদের উপর পানি
ঢালো। ফলে তারা উদ্ভিদের মত জীবন লাভ করবে যেমন বন্যার পানির
পলি পেয়ে উদ্ভিদ জন্ম লাভ করে থাকে। -(সহীহ মুসলিম)
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুপারিশঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন : প্রত্যেক নবীর রয়েছে কিছু দুআ যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সকল নবী এ
দুআগুলো করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমার উম্মতকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করার জন্য এ
দুআগুলো আমি ব্যবহার করিনি। ইনশা আল্লাহ সেই শাফাআত পাবে আমার অনুসারী ঐ সকল
ব্যক্তিবর্গ যারা কখনো আল্লাহ তাআলার সাথে কোন কিছু শরীক করেনি। -(বুখারী ও মুসলিম)
শাফাআত যাদের জন্য প্রয়োজন হবেঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
: আমার উম্মাতের মধ্যে কবিরা গুনাহের অপরাধে অপরাধীদের জন্য আমার শাফায়াত।
-[তিরমিযীঃ ২৩৭৭, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ও হাকেম]
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে কিয়ামতের দিন আমার জন্য সুপারিশের আবেদন জানালাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, (হ্যাঁ) আমি তোমার জন্য সুপারিশ করব। আমি
বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি (সেদিন) আপনাকে কোথায় খুঁজব। নবীজী বললেন, প্রথমে (পুল)সিরাতের কাছে খুঁজবে। বললাম, সেখানে যদি
আপনার সাথে আমার সাক্ষাৎ নাহয় তাহলে কোথায় খুঁজব? তিনি
বললেন, তাহলে আমাকে মীযানের কাছে খুঁজবে। আমি বললাম, সেখানেও যদি আপনাকে না পাই? নবীজী বললেন, তাহলে হাউজের (হাউজে কাউসার) কাছে খুঁজবে। কারণ আমি সেদিন এই তিন স্থানের
কোনো না কোনো স্থানে থাকবই। -{জামে তিরমিযী, হাদীস :২৪৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস
: ১২৮২৫}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর
জিয়ারতঃ হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি
আমার কবর যিয়ারত করল, তার জন্য
আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। - {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৯৪, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১০০৫৩, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৬৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-৩১১২, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪১৫৩}
একই বিষয়েঃ হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত।
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি নিষ্টার সাথে মদীনা মুনাওয়ারায়
হাজির হয়ে আমার যিয়ারত করবে, আমি ক্বিয়ামত দিবসে তার সাক্ষী
হব এবং তার জন্য সুপারিশকারী হব। -[বায়হাক্বী, শিফাউস সিক্বাম)
একনিষ্ঠভাবে তাওহীদের ঘোষণা এবং এর উপর অবিচল থাকাঃ হযরত
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ, কেয়ামতের দিন আপনার শাফাআত দ্বারা কে ভাগ্যবান
হবে? তিনি বললেন, হে আবু হুরাইরা আমি
জানি তোমার পূর্বে কেহ এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি। তোমাকে
হাদীসের বিষয়ে বেশী আগ্রহী দেখছি। কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ঐ
ব্যক্তি যে অন্তর দিয়ে নির্ভেজাল পদ্ধতিতে বলেছে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (সহীহ বুখারী)
সকালে ও সন্ধ্যায় দশবার করে দুরূদ
শরীফ পাঠ করাঃ হযরত উম্মে
দারদা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : যে ব্যাক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় দশবার করে দুরূদ শরীফ পাঠ করে, সে কিয়ামতের দিন
আমার সুপারিশ লাভ করবে। -(তারগীব : সহীহ্)
আযানের পরে
নিয়মিত দুয়া পাঠ করাঃ হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে- ‘আল্লা-হুম্মা
রব্বা হা-জিহিদ্দা’ওয়াতিত্তা-ম্মা-তি ওয়াসসলা-তিলক্ব-য়িমাতি
আতি মুহাম্মাদানিলওয়াসি-লাতা ওয়ালফাদিলাতা ওয়াবআসহু মাক্বামাম্মাহমু-দানিল্লাজী-
ওয়াআত্তাহু’ [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও
প্রতিষ্ঠিত সালাতের তুমিই প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কে অসীলা বা বিশেষ মর্যাদা দান কর এবং তাকে তোমার ওয়াদাকৃত প্রশংসিত স্থানে
পৌঁছাও]- তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। -(তিরমিযী : হাসান
ও সহীহ, বুখারী, আবুদাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)
অন্য বর্ণনাঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান
শুনবে তখন তার মত বল। তারপর আমার
উপর দরূদ পড়। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তা‘আলা
তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন। তারপর তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য উসীলার দো‘আ
করবে। কারণ উসীলা হল জান্নাতে একটি উচ্চতর মর্যাদা, যা আল্লাহর
বান্দাদের মধ্য থেকে শুধু একজনই প্রাপ্ত হবে। আমি আশা করি আমিই হব সেই ব্যক্তি।
অতএব যে ব্যক্তি আমার জন্য আল্লাহর কাছে উসীলার দো‘আ করবে সে আমার সুপারিশ প্রাপ্তহবে। -[সহীহ মুসলিম : ৩৮৪]
মদীনা মুনাওয়ারার কষ্টে ধৈর্য
ধারণ করা ও সেখানে মৃত্যু বরণ করাঃ ঐতিহাসিক
হাররার ঘটনার সময় আবু সাঈদ মাওলা আল মাহরী আবু সাঈদ খুদরীর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর
নিকট এসে মদীনা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ চাইলেন। তিনি অভিযোগ করলেন, মদীনার আসবাব-পত্র ও পণ্যের দাম বেশি এবং তার সন্তান-সন্ততির সংখ্যাও
প্রচুর। এও বললেন, মদীনার এই দু:খ ও কষ্টে ধৈর্য ধারণ করার
ক্ষমতা তার নেই। আবু সাঈদ খুদরী তাকে বললেন,আফসোস! তোমাকে এ
পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ, আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: "যে ব্যক্তি মদীনার
দু:খ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য
শুপারিশকারী বা সাক্ষী হব যদি সে মুসলিম হয়।" -(সহীহ
মুসলিম,অনুচ্ছেদ: মদীনায় বসবাস করা ও সেখানকার দু:খ কষ্টে
ধৈর্য ধারণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দান,হাদীস নং ৩৪০৫,শামেলা)
অধিক পরিমাণ সেজদা করাঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার খাদেমকে লক্ষ্য করে যে সব কথা বলতেন সেগুলোর
মধ্যে একটি কথা হল, “তোমার কি কোন দরকার
আছে?” একদিন
তিনি তার খাদেমকে এ কথাটি বললে- খাদেম: হে আল্লাহর রাসূল,আমার
একটি জিনিস দরকার। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: "তোমার
কী জিনিস দরকার?" খাদেম: আপনি কিয়ামতের দিন আমার জন্য
সুপারিশ করবেন। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: "কে তোমাকে এ
বিষয়টির সন্ধান দিলো?" খাদেম: আমার প্রতিপালক। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: "এটাই যদি তোমার চাওয়া হয় তবে অধিক পরিমাণ
সেজদা করা তথা বেশি বেশি নফল সালাত আদায়ের মাধ্যমে আমাকে (এ ব্যাপারে) সাহায্য
করো।" -(মুসনাদ আহমদ,হাদীস নং ১৬৫০২,শামেলা)
একই বিষয়ে অন্য বর্ণনাঃ হযরত রাবীয়া বিন কা'ব আসলামী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (খেদমতের উদ্দেশ্যে) তাঁর সাথেই রাতে থাকতাম। (একদিন) আমি তার জন্য ওযুর পানি ও তার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে তার নিকট হাজির হলে তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন: চাও। আমি: আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: এটা ছাড়া অন্য কিছু? আমি: এটাই। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম: "তোমার এ বিষয়ে আমাকে সাহায্য করো অধিক পরিমাণে সেজদা করার মাধ্যমে অর্থাৎ বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করার মাধ্যমে। (সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: সেজদা করার মর্যাদা ও তাতে উদ্বুদ্ধ করণ, হাদীস নং ১১২২)
জিহ্বা ও লজ্জা স্থানের হেফাজত করাঃ হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আমার কাছে ওয়াদা করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দুই উরুর মধ্যস্থিত অঙ্গের (লজ্জাস্থান) হেফাযত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।-(বুখারী)
কখনও কারো নিকট
হাত না পাতাঃ হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আমাকে এ
বিষয়ে জিম্মাদারি দিবে যে, সে কারো নিকট কখনো হাত পাতবে না
আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব -[আবু দাউদঃ হাদিস-১/১৪৪৬]
ছয়টি শর্ত
পালনঃ হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তোমরা আমাকে ছয়টি আমলের প্রতিশ্রুতি দাও, আমি তোমাদের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি- ১) কথা বললে সত্য বলবে। ২)
ওয়াদা করলে পূর্ণ করবে।৩) আমানতের মাল যথাযথভাবে পৌঁছে দিবে। ৪) লজ্জাস্থানের
হিফাজত করবে। ৫) দৃষ্টি অবনত রাখবে। ৬) হারাম উপার্জন থেকে হাতকে বিরত রাখবে।
-[মুসনাদে আহমাদ]
জালিম শাসকদের সাথে যারা আঁতাত করবে নাঃ হযরত কাব বিন উজরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ " জেনে রাখো অচিরেই অনেক জালিম শাসক আসবে। যারা সেই সকল
শাসকদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের
অন্যায়গুলোকে সমর্থন দিবে এবং তাদের জুলুমে সহযোগিতা করবে সে আমার উম্মত নয় এবং
আমিও তাঁদের দায়িত্ব নিবো না এবং (কিয়ামতের দিন)
তাকে আমার হাউজে কাউসারের
সামনে আসতে দেয়া হবে না। আর
যাঁরা সেই সকল জালিম শাসকদের সাথে আঁতাত করবে না, তাদের জুলুমে সহায়তা করবে না তাঁরা আমার উম্মত এবং আমি
তাঁদের দায়িত্ব নিবো এবং তাঁদেরকেই (কিয়ামতের দিন)
হাউজে কাউসারের পানি পান
করানো হবে। " -[ তিরমিযি, হাদিস
নং ৬১৪, হাদীস সহিহ]
আল্লাহর কিতাব আল-কুরআনের সুপারিশঃ হযরত আবু উমামা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা
কুরআন পাঠ কর। কারণ
কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসাবে আবির্ভূত হবে। -(সহীহ্ মুসলিম)
নিয়মিত সুরা মুলক পাঠ করাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘৩০ আয়াত বিশিষ্ট কুরআনের একটি সূরা, এর পাঠকের জন্য
জান্নাতে না নেয়া পর্যন্ত সুপারিশ করতেই থাকবে। সূরাটি হল তাবারাকাল্লাজী..’’
(অর্থাৎ সূরা মূলক)। -[তাবারানী]
অন্য
বর্ণনায়ঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
: কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা কোন ব্যক্তির
জন্য সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সুরাটি হল তাবা-রকাল্লাজী বিয়াদিহিল
মুলক। -(তিরমিযী, নাসাই,
আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)
অধিক পরিমানে সূরা
ইখলাস পাঠ করাঃ হযরত আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি মাসজিদে কোবায় আনসার সাহাবীদের
ইমামতি করতেন। তিনি প্রতি রাকাতেই সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কোন কারণে প্রতি রাকাতে এ সূরাটি
পাঠ কর? উত্তরে সে সাহাবী বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ সূরাটি খুব পছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, এ সূরাটি পছন্দ করার কারণেই
তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে। -[বুখারী ও তিরমিযী]
একই বিষয়েঃ হযরত
উবাইদ ইবন হুনাইন বলেন, আমি হযরত আবু
হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে সূরা ইখলাস পাঠরত অবস্থায়
দেখে বললেন, ওয়াজাবাত (ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে) অতঃপর আমি
তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ওয়াজিব হয়েছে ইয়া রাসূলুল্লাহ?
উত্তরে বললেন, জান্নাত। -[সূনানে তিরমিযি,
হাদিস: ২৮৯৭]
সিয়াম
কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবেঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সিয়াম ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের
জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক ! আমি দিনের বেলা
তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল
কর। কোরআন বলবে হে প্রতিপালক ! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি তাই তার
ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতঃপর
উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। -[মুসনাদে আহমদ]
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাহাবাগণের সুপারিশঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু লোকেরা একটি লাশ নিয়ে গেলো। তারা মৃত
ব্যক্তির প্রশংসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়াজিব
হয়ে গেছে। তারপর লোকেরা আর একটি লাশ নিয়ে গেল। তারা মৃত
ব্যক্তির দুর্নাম করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়াজিব
হয়ে গেছে। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জিজ্ঞেস করলেন, কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? তিনি জবাব দিলেনঃ মৃতের তোমরা
এই যে প্রশংসা করলে তাতে তার জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর মৃতের তোমরা
এই যে দুর্নাম গাইলে তাতে তার জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তোমরা হচ্ছ
পৃথিবীতে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সাক্ষী। - (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ
তা’য়ালার দরবারে শহীদগণের সুপারিশঃ হযরত উবাদ ইবনে সামেত
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ একজন শহীদ আল্লাহর পক্ষ হতে সাতটি পুরষ্কার লাভ করেন-১) তার রক্তের প্রথম
ফোঁটা পতনের সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ২) তিনি
জান্নাতে তাঁর মর্যাদা দেখতে পারেন ৩) ঈমানের পোশাকে তাকে আচ্ছাদিত করা হয়ে থাকে। ৪) তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ৫) হাশরের ময়দানের ভয়াবহ চিন্তা ও উতকন্ঠা থেকে নিরাপদে
থাকবেন। ৬) তার মাথায় একটি সম্মানের মুকুট
স্থাপন করা হবে। ৭) তিনি তাঁর
পরিবারের সত্তর জন সদস্যের জন্য শাফায়াত করা সুযোগ পাবেন।
-{মুসনাদ আহমাদ, তাবারানী, আত তারগীব ওয়া তারহীব-২/৪৪৩}
মুমিন
বান্দাগণের মধ্যে কুরআন বাহকগণের সুপারিশঃ হযরত
আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কুরআন পড়েছে এবং তা মুখস্থ
রেখেছে, এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনেছে- আল্লাহ
তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ জন লোক সম্পর্কে তার সুপারিশ
কবুল করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য দোযখ অবধারিত ছিল। (তিরমিযী-২৮৪০
: গরীব, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী)
মুমিন
বান্দাগণের মধ্যে হজ্জ ও উমরা পালনকারীগণের
সুপারিশঃ হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: হজ্জ
ও উমরা পালনকারীগণ হলো দাওয়াতী যাত্রীদল (আল্লাহর মেহমান) তারা যদি আল্লাহর কাছে
দোয়া করে তবে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে তিনি তাদের
ক্ষমা করেন। -(ইবনে মাজাহ)
শিরকমুক্ত
খাঁটি মুমিন বান্দাগণের সুপারিশঃ হযরত ইবনে
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে কোনো মুসলিম মারা যায় আর তার জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক শরীক হয়,
যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না। নিশ্চয় আল্লাহ তার ব্যাপারে
তাদের সুপারিশ কবূল করেন।’’ [মুসলিম ৯৪১, আহমাদ ২৫০৫]
নেককার
বান্দাগণের সুপারিশঃ হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমার উম্মাতের
কেউ বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য সুপারিশ করবে, কেউ একটি গোত্রের জন্য, কেউ একটি ছোট দলের
জন্য, কেউ একজন লোকের জন্য সুপারিশ করবে এবং তারা জান্নাতে যাবে। --[তিরমিযীঃ
২৩৮২]
আল্লাহ তা’য়ালা
আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুন! কঠিন
হাশরের ভয়াবহ ময়দানে আল্লাহ তা’য়ালার মহান বিচারালয়ে উল্লেখিত সকল ধরণের সুপারিশ
লাভের তৌফিক দান করুন! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
সাহাবা (রাদিয়াল্লাহুম)-গনের আদর্শের উপর সর্বদা কায়েম রাখুন!
তাঁদের বরকতময় জামাআতের সংগে আমাদের হাশর করুন! আ-মী-ন।
No comments:
Post a Comment