মৃত্যের পরিত্যাক্ত সম্পদে নারী-পুরুষ ওয়ারিসদের অধিকার
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম
পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়গণের ত্যাজ্য
সম্পত্তিতে আল্লাহ তা’য়ালার নির্ধারিত বিধান মোতাবেক পরিবারের
অন্তর্গত নারী-পুরুষ ওয়ারিসদের অধিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অধিকার
সমান নয়, বরং পার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে নারী ও পুরুষের অধিকার
সমান করা বা, আল্লাহ তা’য়ালার নির্ধারিত
বিধানের চেয়ে কম-বেশী করা বা কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
অবাধ্যতা এবং সীমা লংঘন করার কারণে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ প্রসংগে
আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেনঃ
لِّلرِّجَالِ نَصيِبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالأَقْرَبُونَ
وَلِلنِّسَاء نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ
أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا
- পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত
সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে
নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা
বেশী। এ অংশ নির্ধারিত। - (সূরা আন নিসাঃ ৭) তিনি আরও বলেনঃ
وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ
وَالأَقْرَبُونَ وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ إِنَّ
اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا
- “পিতা-মাতা
এবং নিকটাত্নীয়গণ যা ত্যাগ করে যান সেসবের জন্যই আমি ওয়ারিস নির্ধারণ করে দিয়েছি।
আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও। আল্লাহ তা’আলা নিঃসন্দেহে সব কিছুই প্রত্যক্ষ করেন।“ -[সূরা
নিসাঃ আয়াত ৩৩] তিনি আরও বলেনঃ
يُوصِيكُمُ
اللّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الأُنثَيَيْنِ فَإِن كُنَّ
نِسَاء فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً
فَلَهَا النِّصْفُ وَلأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا
تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ
أَبَوَاهُ فَلأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلأُمِّهِ السُّدُسُ
مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَآؤُكُمْ وَأَبناؤُكُمْ لاَ
تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعاً فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ إِنَّ اللّهَ
كَانَ عَلِيما حَكِيمً
- আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের
সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই
হয় দুই এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ
যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের
পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ,
যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়,
তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে,
তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক
উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ,
রহস্যবিদ। - (সূরা আন-নিসাঃ আয়াত ১১)
وَلَكُمْ
نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ فَإِن كَانَ
لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ
بِهَا أَوْ دَيْنٍ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ
وَلَدٌ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم مِّن
بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ
كَلاَلَةً أَو امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا
السُّدُسُ فَإِن كَانُوَاْ أَكْثَرَ مِن ذَلِكَ فَهُمْ شُرَكَاء فِي الثُّلُثِ مِن
بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَى بِهَآ أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَآرٍّ وَصِيَّةً مِّنَ
اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ
- আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের
স্ত্রীরা যদি তাদের সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে
তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়;
ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর।
স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে
যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা
তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের
পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার
যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে,
তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে,
তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না
করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। -(সূরা আন-নিসাঃ
আয়াত ১২)
ِلْكَ حُدُودُ اللّهِ وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَرَسُولَهُ
يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا
وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
وَمَن يَعْصِ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ
يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ
- এগুলো আলাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেহ আল্লাহ ও তার রসুলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে
স্রোতস্বিনী প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে আর এ হল বিরাট সফলতা। আর যে কেহ আল্লাহ
ও তার রসূলের অবধ্যতা করে এবং সীমা অতিক্রম করে, তিনি তাকে জলন্ত
আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
-(সূরা আন-নিসাঃ আয়াত ১৩-১৪)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর কল্যাণময় বিধান অনুধাবন করার এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন, রসূলের বংশধর ও সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-গনের আদর্শের মেনে চলার তৌফিক দান করুন! আ-মী-ন।
No comments:
Post a Comment