Thursday, December 3, 2015

পারিবারিক জীবনে হালাল বা বৈধ উপার্জন


পারিবারিক জীবনে হালাল বা বৈধ উপার্জন
ডাঃ গাজী মোঃ নজরুল ইসলাম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীনদুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং সালেহীন (র)-গণের প্রতিআমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাইআমরা আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রসূলনিশ্চয়ই শুভ পরিণতি শুধুমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য নির্ধারিত।

পারিবারিক জীবনে ভরন-পোষণের জণ্য যাবতীয় আয়-রোজগার বৈধ পন্থায় হালাল উপার্জন হতে হবে। হালাল বা বৈধ পন্থায় আয়-রোজগারের জন্য মেহনত করা একটি ফরজ ইবাদাত। মানুষের আয়-রোজগার যখন হালাল হয় এবং হালাল রিজিক দ্বারা রক্ত-মাংস গঠিত হয়, তখন তার হৃদয় ঈমানের নুরে আলোকিত থাকে। পক্ষান্তরে আয়-রোজগার যখন হারাম হয় এবং হারাম রিজিক দ্বারা রক্ত-মাংস গঠিত হয়, তখন তার হৃদয় থেকে ঈমানের নুর বের হয়ে যায়। সুতরাং অবৈধ পন্থায় আয়-রোজগারের সকল উৎস থেকে সর্বদা দুরে থাকতে হবে।

পারিবারিক জীবনে ভরন-পোষণের জণ্য যাবতীয় আয়-রোজগারের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা পরিবার প্রধান পুরুষের উপর ন্যাস্ত করেছেন। আর মহিলাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পরিবারের আভ্যান্তরীন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পন করেছেন। অবশ্য মহিলাগণ পর্দা সংরক্ষণ করে হালাল পন্থায় পরিবারের মাঝে কিছু আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারে। যেমন- ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ, ছাত্রীদের টিউশনির মাধ্যমে আয়, হাঁস-মুরগী-কবুতর পালন, ঘরের পাশেই শাক-সবজি চাষ ও ফল-ফলাদি উৎপাদন ইত্যাদি।

অনেক সময় বিধবা মহিলাদের জন্য অর্থ উপার্জন জরুরী হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পর্দা সংরক্ষণ করেই উপার্জন করতে হবে। বিধবা, অনাথ এতিমদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করার জন্য তাদের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজ ও সমাজপতিদের দায়-দায়িত্ব রয়েছে। তাদের এ দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে এসব বিধবা, অনাথ এতিমগণ পেটের দায়ে যদি অনৈতিক বা অবৈধ পথে পা বাড়ায়, তাহলে তাদের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজ ও সমাজপতিদেরকেও এই পাপের অংশীদার হতে হবে।

হালাল ও পবিত্র জীবিকা পাওয়ার মাধ্যমঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "আর যে আল্লাহ্‌কে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।" - (সূরা ত্বালাকঃ আয়াত ২-৩)

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগী কর। তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।" 
[সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৭২-১৭৩]

তিনি আরও বলেনঃ "হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য।" 
- [সূরা নিসাঃ আয়াত ২৯-৩০]

হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "কোন প্রাণী তার নির্দিষ্ট রিযিক পরিপূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যু বরণ করবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং রিযিক অনুসন্ধানের জন্য সুন্দর (বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর। যা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তা গ্রহণ কর, আর যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ কর।" 
- (ইবনু মাজাহ, হাকেম ও ইবনু হিব্বান)

হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "হে লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র,তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ মুমীনদেরকে সেই কাজের নির্দেশ দিয়েছেন,যার নির্দেশ পয়গম্বরদেরকে দিয়েছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ বলেছেন: হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর - (সূরা মুমিনূন ৫১ আয়াত) তিনি আরও বলেছেন: হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর;যদি তোমরা শুধু তাঁরই উপাসনা করে থাক-(সূরা বাকারাহ ১৭২ আয়াত) অতঃপর তিনি সেই লোকের কথা উল্লেখ করে বললেন, যে এলোমেলো চুলে, ধূলামলিন পায়ে সুদীর্ঘ সফরে থেকে আকাশ পানে দুহাত তুলে ইয়া রব! ইয়া রব! বলে দোআ করে। অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম এবং হারাম বস্তু দিয়েই তার শরীর পুষ্ট হয়েছে। তবে তার দোআ কিভাবে কবুল করা হবে? " - (সহীহ মুসলিম)

ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, রাহাজানী-ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, জুয়া-লটারীর, অবৈধ পেশা (যেমন- নাচ, গান, অভিনয়, জীব-জন্তুর ছবি অংকন, মুর্তি-মুরাল-প্রতিকৃতি তৈরী, যৌনসেবা ইত্যাদি), অবৈধ চাকুরি, অবৈধ ব্যবসা (যেমন- মদের ব্যবসা, সিনেমার ব্যবসা), অবৈধ ব্যবসার শেয়ার, সুদ ভিত্তিক ব্যবসার শেয়ার ইত্যাদির মাধ্যমে যিনি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তার উপার্জিত অর্থ হারাম। হারাম অর্থে দেহের যখন পুষ্টি সাধিত হয় তার ইবাদাত ও প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়, জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান

ব্যবসা বানিজ্যে সততার ফজিলতঃ হযরত আবু খালিদ হাকিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অপর থেকে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেনা-বেচা বাতিল করার অধিকার রাখেযদি তারা উভয়ে সত্য পথে থাকে, তাহলে তাদের কেনা-বেচায় বরকত হয়আর যদি মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তাহলে তাতে বরকত নষ্ট করে দেওয়া হয় - (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "ব্যবসায়ে মিথ্যা শপথে হয়ত বেশী পণ্য বিক্রয় হতে পারে, কিন্তু তা উপার্জনের বরকত নষ্ট করে দেয়।" 
-( বুখারী ও মুসলিম)

অন্যায়ভাবে অপরের অধিকার হরণের পরণামঃ হযরত আবু উমামা ইয়াস ইবনে সালাবা আল-হারিসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে কোন মুসলমানের সামান্যতম অধিকার বা মালিকানা বা সম্মান আত্মসাৎ করল, আল্লাহ তাঁর জন্য দোযখ অবশ্যম্ভাবী করে দেন এবং বেহেশত হারাম করে দেন।" -(মুসলিম)

হযরত আবূ সালামা বর্ণনা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "তার ও কিছু লোকের মধ্যে জমি-জমা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ ছিল। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা - এর কাছে ব্যাপারটি উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, হে আবূ সালামা! জমি নিয়ে বিবাদ-বিসম্বাদ হতে আত্নরক্ষা করে চল। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এক আংগুল পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে কেড়ে নিবে কিয়ামতের দিনে সাত তবক জমির বেষ্টনি তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে।" -(বুখারিঃ হাদীসঃ নং- ২৪৫৩)

হযরত আবূ উসামাহ ইবনে সালাবা হারেসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি (মিথ্যা) কসম খেয়ে কোন মুসলমানের হক মেরে নেবে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম ওয়াজিব এবং জান্নাত হারাম করে দেবেন। একটি লোক বলল, যদি তা নগণ্য জিনিস হয় হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, যদিও তা পিল্লু গাছের একটি ডালও হয়।" -(মুসলিমঃ ১৩৭, নাসায়ীঃ ৫৪১৯, ইবনু মাজাহঃ ২৩২৪, মুসনাদে আহমাদঃ ২১৭৩৬, মুয়াত্তা মালেকঃ ১৮৩৫, দারেমীঃ ১৬০৩)

যে সব উপার্জন হারামঃ হযরত আবু মাসঊদ আল-বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, দেহ ব্যবসার উপার্জন ও গণকের পারিশ্রমিক হারাম করেছেন। -(বুখারী ও মুসলিম) 

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি কোন অন্যায় করেছে, অথবা তার সম্মানহানী করেছে কিংবা অন্যকোনভাবে তার ক্ষতি করেছে সে যেন যেদিন কোন টাকা-পয়সা কাজে আসবে না সে দিন আসার পূর্বে আজই (দুনিয়াতে থাকাবস্থায়) তার প্রতিকার করে নেয়। কেয়ামতের বিচারে অন্যায়কারীর কোন নেক আমল থাকলে তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাওনা আদায় করা হবে। আর যদি অন্যায়কারীর নেক আমল না থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।" -(বুখারী)

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার কোন টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, অথচ দুনিয়াতে বসে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্নসাত করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল ফলে তার নেক আমলগুলো থেকে নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের পাপগুলো তাকে দেয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। -(মুসলিমঃ ২৫৮১; তিরমিযীঃ ২৪১৮; আহমাদঃ ৭৯৬৯, ৮২০৯, ৮৬২৫)

পরিতাপের বিষয়! মুসলিম উম্মাহর মাঝে যারা প্রচুর বিত্ত-ভৈববের মালিক, তাদের অধিকাংশের অর্থসম্পদ হারাম পথে অর্জিত। আল্লাহ তায়ালার দরবারে মুসলিম হিসাবে গণ্য হতে চাইলে সমস্ত হারাম উপার্জনের সকল পথ পরিহার করতে হবে। এ ব্যপারে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক করতে হবে।


1 comment:

  1. Watch:Sonic the Hedgehog (USA) - YouTube - VideoDl.cc
    Watch:Sonic the Hedgehog (USA) - YouTube.com. $10.99. FOR SALE! 바카라 The youtube downloader Sega Mega Drive youtube to mp3 (Genesis) console revolutionized the console war with the

    ReplyDelete